#অতুলনীয়া
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ফাতেমার দিনগুলো এখন বেশ ভালোই যাচ্ছে। সোহেল এবং নয়না দুজনেই এখন জেলে। তাই তার জীবনে কোন বিপদ-আপন তৈরি করার মতো মানুষ নেই আপাতত। সে বেশ দেদারসে জীবন অতিবাহিত করছে। নিজের পড়াশোনা সামলাচ্ছে, মেয়েকেও সামলাচ্ছে। সব মিলিয়ে ব্যস্ত জীবন!
আজ সকালে ফাতেমার দিন শুরু হলো নামাজ দিয়ে। নামাজ আদায় করে ফাতেমা চলে এলো শ্রেয়াদের বাসার রান্নাঘরে। শাবানা বেগম সকালে উঠেই রান্নাঘরে প্রবেশ করেছেন। ফাতেমা তাকে এভাবে রান্নাঘরে দেখে বলে,
‘আন্টি আপনি এত সকালে রান্নাঘরে?! কোন বিশেষ কিছু আছে কি আজ?’
শাবানা বেগম মুখে হাত দিয়ে ফাতেমাকে চুপ করার ইশারা করেন। ফাতেমা চুপ করতেই তিনি বলেন,
‘আজ শ্রেয়াকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসছে। তাই এত আয়োজন। তুমি আবার ওকে কিছু বলো না আবার। কেমন?’
ফাতেমা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। শাবানা বেগম বলতে থাকেন,
‘মেয়েটার তো বয়স হচ্ছে বলো। সামনের বছর ২৮ এ পা দেবে। ওর মতো বয়সে আমি দুই ছেলে-মেয়ের মা হয়ে পাকা গিন্নি ছিলাম।আর ও এখনো বিয়েই করছে না। আমি জোর না করলে হয়তো করবেও না। তুমি তো জানো মা, ওর মা ছাড়া আর কেউ নেই। ওর বাবার মৃত্যুর পর ওর দায়িত্ব যে এখন আমার কাঁধেই। ওর ভাই…সে তো থেকেও নেই। একই ফ্ল্যাটে থাকি অথচ দেখেছ কোনদিন আমাদের খোঁজ নিতে? শুনলাম গতকাল নাকি বউ-বাচ্চাকে নিয়ে মালদ্বীপ ঘুরতে গেছে। সে যাক গে, আমার এসব নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। ছেলে বড় হয়েছে এখন সে যা করার করুক। আমার মেয়েকে নিয়ে তো আমাকেই ভাবতে হবে। জন্ম যখন দিয়েছি তখন ওর দায়িত্ব তো আমারই। এখন শুধু একটা সুযোগ্য পাত্রের হাতে মেয়েটাকে তুলে দিতে পারলেই আমার শান্তি।’
ফাতেমা মৃদু হেসে বলে,
‘চিন্তা করবেন না আন্টি। দেখবেন, শ্রেয়ার জন্য আপনি অনেক ভালো পাত্র খুঁজে পাবেন।’
‘জানো, আজ যে আসছে সেই ছেলেটা শহরের একজন নাম করা উকিল। সকলের মুখে তার অনেক প্রশংসা। আমার খালাতো বোনের মাধ্যমে ছেলেটার খোঁজ পেয়েছি। সেই ছেলে নাকি তার স্বামীকে ভাসুরের সাথে জমিজমা সংক্রান্ত ঝামেলা কেইসে সাহায্য করেছিল। পরে ওর পরিবারের সাথেও সম্পর্ক গড়ে ওঠে পরিচিতির খাতিরে। ঐ ছেলের মা’ই নাকি ছেলের জন্য কোন শিক্ষিত সুযোগ্যা মেয়ে খুঁজছে। তখন উনি ছেলেটার মাকে আমার শ্রেয়ার কথা বলেন। আমাকেও জানান এই ব্যাপারে। দুই পরিবারই দেখা-সাক্ষাতের ডেট ফাইনাল করি তবে গোপনে। এখন দেখা যাক শ্রেয়া কি রিয়্যাক্ট করে।’
‘আপনি চিন্তা করবেন না, আন্টি। আমি আছি তো। দরকার পড়লে আমি শ্রেয়াকে বোঝাবো যেন ও এই সম্মন্ধে রাজি হয়ে যায়।’
শাবানা বেগম প্রসন্ন হন। ফাতেমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
‘তোমার উপর আমার বিশ্বাস আছে। আমি জানি, তুমি আমার বিশ্বাসের অমর্যাদা করবে না।’
২৫.
সোহেলের জেলে কাটানোর মাস দুয়েক অতিবাহিত হয়েছে। জেলে থাকতে তার একদম ভালো লাগে না। কত আয়েশের জীবন ছিল আর আজ কি অবস্থা। সোহেলের কাছে নয়নার জেলে যাওয়ার খবরও পৌঁছে গেছে। সব মিলিয়ে সে এখন বিরক্ত। নয়নার ভরসায় ছিল, যে নয়না তাকে বাঁচাবে। অথচ এখন সেই নয়নাই জেলে।
সোহেল এখন যেন এই অবরুদ্ধ কারাগারেই নিজের ভবিষ্যৎ মেনে নিয়েছে। তবে ভাগ্য বোধহয় তার জন্য আশার আলো বাকি রেখেছিল।
আজকে হঠাৎ করে একজন পুলিশ অফিসার এসে সোহেলকে বলে,
‘আপনার জামিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
সোহেল খুশি হয়ে বলে,
‘সত্যি? কে করেছে আমার জামিনের ব্যবস্থা?’
‘আমি।’
বলেই তার সামনে এসে দাঁড়ায় এক মহিলা। সোহেল যেন চিনতে পারে মহিলাকে। কাছে আসতেই আরো পরিস্কার হয়। অস্ফুটস্বরে বলে,
‘মিস নেহা মির্জা!’
‘জ্বি, আমি।’
‘আপনি লন্ডন থেকে কবে ফিরলেন?’
‘কিছুদিন আগেই। তোমার এরেস্টের খবরে আমার আর মন টিকল না লন্ডনে! তাই চলে এলাম।’
সোহেল লজ্জা পায় যেন। খানিক লাজুক হেসে বলে,
‘আমি কিন্তু আপনাকে আশা করিনি?’
‘আশা না করতেই তো মানুষ কত কি পেয়ে যায়। এই যেমন তুমি তো নয়নাকেও আশা করো নি লাইফে, তবে পেয়ে গেলে! বরাবরই তোমার বড়লোক পরিবারের দিকে নজর, সাথে সুন্দরী বউ! যাইহোক, আমি তোমাকে এখান থেকে বের করার জন্য জামিনের ব্যবস্থা করেছি তবে তুমি আমাকে খুব ভালো করেই চেনো তাই জানো আমি কোন কারণ ছাড়া তোমার জামিনের ব্যবস্থা করিনি।’
‘হ্যাঁ, সেটা তো আমি বুঝতেই পারছি। তো বলুন এই জামিনের বদলে আপনি আমার কাছে কি চান?’
‘বেশি কিছু চাই না। শুধু এটুকুই চাই যে তুমি নয়নাকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকে বিয়ে করো!’
সোহেল বড়সড় একটা ধাক্কা খায়। এ কি বলছে নেহা!
নেহা বলে,
‘কি অবাক হলে তো?! এমন কিছু আশা করো নি, তাইনা?’
সোহেল কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলে,
‘কিন্তু আপনি তো বিবাহিত। লন্ডনের কোন এক শিল্পপতিকে..’
‘ডিভোর্স হয়ে গেছে! আর যুক্তরাজ্যের প্রচলিত আইন অনুসারে এখন আমার স্বামীর অর্ধেক সম্পত্তির মালিক আমি। কত ক্ষমতা বুঝতেই পারছ। যাইহোক, আমি জানি তুমি নিজের প্রোফিট টা খুব ভালোই বোঝো। তো বলো, কি করবে?’
সোহেল বাকা হেসে বলে,
‘আমি আপনার সব শর্তে রাজি। এই জেলে থাকতে থাকতে বোর হয়ে গেছি। এবার একটু জেলের বাইরের বাতাস খেতে চাই।’
নেহা মির্জা হাসে। বড়ই তৃপ্তির সে হাসি।
২৬.
ফাতেমা এলো একটা গ্রোসারি শপে। ফারিয়া স্ন্যাকস খেতে খুব পছন্দ করে। তাই ওর জন্য ওর পছন্দের কিছু স্ন্যাকস কিনছিল। গ্রোসারি শপ থেকে বেরোতেই হঠাৎ করে তার সাথে দেখা হয়ে গেল প্রত্যুষ চৌধুরীর। প্রত্যুষ চৌধুরী যেন ফাতেমাকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছে। ফাতেমা মুচকি হেসে এগিয়ে গিয়ে বলেন,
‘কেমন আছেন? অনেকদিন পর দেখা হলো আপনার সাথে।’
‘আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?’
‘আমিও। এখানে কোন কাজে এসেছিলেন?’
‘না, আসলে আমি একটা যায়গায় যাচ্ছিলাম। ভালোই হলো আপনার সাথে দেখা হয়ে গেলো। আমার জন্য দোয়া করবেন।’
‘দোয়া কেন?’
‘আমি নতুন জীবনে পা রাখতে চলেছি মনে হয়। নট শিওর, বাট ফ্যামিলি যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছে..আই থিংক আমার সিঙ্গেল লাইফ খুব শীঘ্রই ইতি ঘটবে।’
ফাতেমা মৃদু হেসে বলে,
‘বাহ, এটা তো অনেক ভালো খবর। আপনাকে অনেক অনেক অভিনন্দন। আশা করি, আপনার জীবন ভালো হবে সামনে। আমার দোয়া রইল।’
‘আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।’
‘ধন্যবাদ দেয়ার দরকার নেই। আপনার কাছে তো আমি ভীষণ ভাবে কৃতজ্ঞ। জানি না, কোনদিন এই ঋণ শোধ করতে পারব কিনা।’
‘এমন ভাবে বলবেন না। আপনাকে সাহায্য করতে পেরে আমি কৃতার্থ। আপনার মতো এত চমৎকার ব্যক্তিত্বের নারী আমি খুব কমই দেখেছি কিংবা বলতে গেলে দেখিই নি। আপনার ব্যক্তিত্ব আমায় ভীষণ ভাবে মুগ্ধ করেছিল। কম কেইস তো লড়িনি, বাঙালি বধূ তথা মা সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল তারা ভীষণ পতিভক্ত এবং ভীরু হয়। লড়াই শব্দটা তাদের ডিকশিনারিতে থাকেই না! তবে আপনি একদম অন্যরকম। লড়াকু স্বভাবের এক মুগ্ধতায় মোড়ানো নারী। যাকে পড়তে গেলে পাতায় পাতায় মুগ্ধ হতে হবে। এত মনের জোর আপনার, এত সাহসিকতার প্রশংসা না করলেই নয়। আপনার জীবনে ভালো কিছু হবে দেখবেন!’
‘দেখাই যাবে। আমার জন্য মনে হয় আপনার দেরি হচ্ছে।’
‘না, তেমন না। তবে আমায় যেতে হবে। বিদায়।’
‘বিদায়।’
অতঃপর দুজনে চলে গেলো ভিন্ন দিকে। ভিন্ন দুই পথে। যে পথ কখনো এক হবার নয়।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
#অতুলনীয়া
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ফাতেমা বাসায় ফিরে শ্রেয়ার রুমে ঢু মা’রল। শ্রেয়া মুখ ভার করে বসে আছে। ফাতেমা তার হাতে থাকা শাড়িটার দিকে তাকায়। মূলত শাবানা বেগমই তাকে দায়িত্ব দিয়েছে শ্রেয়াকে সাজিয়ে, বুঝিয়ে শুনিয়ে পাত্রপক্ষের সামনে উপস্থিত করার জন্য। ফাতেমা শাড়ি নিয়ে শ্রেয়ার রুমে প্রবেশ করা মাত্রই শ্রেয়া বলে ওঠে,
‘আম্মু এটা কি কাজ করল ফাতেমা? এভাবে আমাকে না বলেই বিয়ের বন্দোবস্ত করে নিল!’
ফাতেমা শ্রেয়াকে বোঝানোর জন্য বলে,
‘তুই ভুল ভাবছিস! আন্টি মোটেই তোর বিয়ের বন্দোবস্ত করেনি। পাত্রপক্ষ তো শুধু দেখতে আসছে। আগে দেখা-সাক্ষাৎ হোক। তারপর তোদের একে অপরকে পছন্দ হলে বিয়েটা হবে। আর নাহলে নয়।’
শ্রেয়া তবুও যেন ভরসা পায়না। সে বলতে থাকে,
‘আমার সেটা মনে হয় না। বিভিন্ন নাটক সিনেমায় দেখিস না কিভাবে দেখতে এসেই কাবিন পড়িয়ে দেয়। আমার মনে হয় আম্মুও এমন কিছু ভেবেছে। নাহলে তোকে এই লাল শাড়ি দিয়ে পাঠিয়েছে কেন?’
ফাতেমার হাতে থাকা শাড়িটার দিকে ইশারা করে উক্ত কথাটি বলে শ্রেয়া। ফাতেমা বলে,
‘তুই বেশিই ভাবছিস। আন্টি আমায় বলেছে এমন কিছু নয়। তাছাড়া পাত্রপক্ষের সামনে তো যেমন তেমন ভাবে যাওয়া যায়না। তাই তুই আর কথা না বাড়িয়ে শাড়িটা পড়ে নে।’
শ্রেয়া তবুও মানতে চাইছিল না। তবে ফাতেমা বেশি জোরাজোরি করায় বাধ্য হয়েই শাড়িটা পরিধান করে নেয়। ফাতেমা শ্রেয়াকে আয়নার সামনে নিয়ে গিয়ে মৃদু হেসে বলে,
‘মাশাল্লাহ, কি সুন্দর লাগছে তোকে। তুই পছন্দ করবি কি না জানি না। কিন্তু তোকে যে দেখতে আসবে সে নিশ্চয়ই তোকে অপছন্দ করবে না।’
শ্রেয়া কিছুই বলে না। তার মুখ তখনো ভাড় ছিল।
শাবানা বেগমের ডাকে শ্রেয়াকে বাইরে পাত্রপক্ষের সামনে নিয়ে যায়। অতঃপর সোফায় বসিয়ে দেয়। ফাতেমা শাবানা বেগমের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। পাত্রের মা-চাচি শ্রেয়ার রূপের প্রশংসা করতে থাকে। পাত্রের মা বলে,
‘মাশাল্লাহ, কি সুন্দর দেখতে মেয়েটা। একদম চাঁদের টুকরো। এমন কাউকেই তো আমার ছেলের বউ হিসেবে চেয়েছিলাম। আমার ছেলের পাশে বেশ ভালোই মানাবে।’
এভাবেই টুকটাক কথাবার্তা এগোতে থাকে। শ্রেয়া হাতের তালা ঘষছিল। ভীষণই নার্ভাস ফিল হচ্ছিল। চোখ বন্ধ করে নেয় সে উত্তেজনায়। এরমধ্যেই কলিং বেল বেজে উঠতেই শ্রেয়ার বুক ধড়পড় করা বাড়ে। পাত্রের মা বলেন,
‘আমার ছেলে বোধহয় এসে গেছে।’
শাবানা বেগম পাত্রপক্ষের সাথে আলাপচারিতায় ব্যস্ত ছিলে। তাই ফাতেমাই যায় দরজাটা খুলে দিতে। দরজাটা খুলেই হতবাক হয়ে যায় সে। অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে,
‘আপনি!’
২৭.
নয়না জেলে বসে ছিল। তার আশেপাশে আরো কয়েকজন মহিলা কয়েদীকে রাখা হয়নি। এরা প্রত্যেকেই ভীষণ ভয়ানক। সবাই খু**ন অথবা বড় ক্রাইমের সাথে জড়িত। নয়না যতই কুটিলা হোক এদের কাছে সে চুনোপুঁটি। তাই সবসময় এদের সাথে সমঝে চলতে হয়। আর এখানে আসার পর ফাতেমার প্রতি তার ঘৃণা আরো বেড়েছে। নয়না তো প্রতিজ্ঞাই করে নিয়েছে জেল থেকে বেরোনোর পর ফাতেমার জীবন জেরবার করে দেবে!
নয়না যখন বসে বসে এসব ভাবনায় ব্যস্ত ছিল তখনই কারাগারের বাইরে দাঁড়িয়ে কেউ একজন বলে ওঠে,
‘হ্যালো, মাই লিটল সিস্টার। কেমন আছিস তুই?’
নয়না অবাক হয়ে উপরের দিকে তাকায়। উপরে তাকিয়েই সে নিজের বড় বোন নেহা মির্জাকে দেখতে পায়। নয়না উঠে দাঁড়িয়ে নেহার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘আপু তুই এসেছিস!’
নেহা হেসে বলে,
‘আসবো না কেন? আমার বোনটা জেলে বন্দি হয়ে আছে আর আমি চুপ করে বসে থাকব! যতই তুই আমার সৎ বোন হোস না কেন, আমাদের শরীরে তো একই রক্ত বইছে। মা আলাদা হলেও আমাদের বাবা তো একজনই।’
নয়না যেন ভরসা পায় নেহার কথায়। নেহাকে বলে,
‘তুই আমার জামিনের ব্যবস্থা করেছিস নিশ্চয়ই?’
নেহা হাসে। হেসে বলে,
‘তোর জামিনের ব্যবস্থা তো করিনি তবে তোর স্বামীর জামিনের ব্যবস্থা করেছি।’
নয়নার মুখ চুপসে যায়। সে বলে,
‘তুই আমাকে সাহায্য না করে সোহেলের সাহায্য করলি?!’
নেহা নয়নার চুপসে যাওয়া মুখ দেখে পৈশাচিক আনন্দ পায়। আর বলে,
‘কেন আমি তোর জামিনের ব্যবস্থা করব? তুই এটা ভাবলি কি করে? তোর মা আমার মায়ের কাছ থাকে আমার বাবাকে কেড়ে নিয়েছিল, তোর মায়ের জন্য আমার মা এবং আমার প্রতি বাবার একটা উদাসীনতা তৈরি হয়েছিল। তারপর তুই জন্ম নিলি! তুই জন্মাতেই বাবার সব ভালোবাসা তোর উপর এসে পড়লো। আমার সব সুখ কেড়ে নিয়েছিস তুই। একদম নিজের মায়ের স্বভাবই পেয়েছিস। ছোটবেলা থেকে আমার সব পছন্দের খেলনা, জামা সব কেড়ে নিয়েছিস। আবার এখন তো শুনলাম অন্য একজনের স্বামীও কেড়ে নিয়েছিস। কাড়তে শুধু তুই একাই পারিস না, আমিও পারি! এতদিন তুই সবার সবকিছু কেড়ে নিয়েছিস আর এবার আমি তোর সবকিছু কেড়ে নেব নয়না। তোকে একদম ধ্বংস করে দেব আমি।’
নয়না নেহার মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। নয়নার মাকে তার বাবা ভালোবাসত জন্য সে এটাকে ব্যবহার করে মির্জা পরিবারের সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছিল। নেহা ও তার মাকে সবসময় দমিয়ে রাখত। নেহা এবং তার মা এমনিতেই বেশ সহজ সরল ছিল। তার উপর বাবার সাপোর্টও যেহেতু নয়নার উপর ছিল তাই নয়না সবকিছুতেই নিজের কতৃত্ব রাখতে চাইত। মৃত্যুর আগে নয়নার বাবা অবশ্য দুই বোনকে সমান সম্পত্তি দিয়ে গেছেন তবে তার পূর্বে অনেক বৈষম্য করেছেন।
নয়না তো জানত নেহা লন্ডনে গিয়ে এক ধনী বিজনেসম্যানকে বিয়ে করেছে। তাই ভেবেছিল আর কখনো দেশে ফিরবে না। কিন্তু এতদিন পর যে এমন প্রতিশোধের নেশা নিয়ে ফিরবে সেটা তো সে কস্মিনকালেও ভাবতে পারেনি!
নেহা মির্জা বলে,
‘প্রার্থনা কর তোর এই জেলের আয়ুষ্কাল যেন দীর্ঘ হয়। কারণ তুই জেল থেকে বের হতেই আমি সবকিছুর জন্য তোর উপর প্রতিশোধ নেব।’
২৮.
ফাতেমা অবাক হয়ে প্রত্যুষকে দেখছিল। প্রত্যুষ চৌধুরীর অবস্থাও অনেকটা এক। প্রত্যুষ চৌধুরীর মা এসে প্রত্যুষকে বলেন,
‘তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আয় ভেতরে আয়।’
বলেই তিনি প্রত্যুষকে ভেতরে নিয়ে যান। প্রত্যু্ষকে নিজের হবু বর হিসেবে দেখে শ্রেয়া যেমন অবাক তেমনি খুশি। লোকটা বেশ নিষ্ঠাবান এটা জানে শ্রেয়া। তাই তাকে স্বামী হিসেবে পেলে মন্দ হয় না। পারিবারিক ভাবে কথাবার্তা এগোতে থাকে। অতঃপর শ্রেয়া ও প্রত্যুষ দুজনের কাছেই জানতে চাওয়া হয় তারা একে অপরকে পছন্দ করে কিনা। প্রত্যুষের এমনিতে কাউকে পছন্দ ছিল না, তবে শ্রেয়ার ব্যাপারে সে যতোটা জানে এই মেয়েটাই ফাতেমাকে তার বিপদের দিনে আশ্রয় দিয়েছিল। তাই প্রত্যুষ বুঝতে পারে মেয়েটার মন ভালো। তার এমন ভালো মানসিকতারই জীবনসঙ্গীর দরকার ছিল। তাছাড়া শ্রেয়ার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ডও ভালো এবং সে দেখতেও যথেষ্ট সুন্দরী। প্রত্যুষের পরিবারও শ্রেয়াকে পছন্দ করেছে। তাই সব দিক বিবেচনা করে সে বিয়েতে মত দিয়ে দেয়।
শ্রেয়াও যেহেতু প্রত্যুষ চৌধুরীর উপর মুগ্ধ ছিল তাই সেও রাজি হয়ে যায়। প্রত্যুষ চৌধুরীর মা-বাবা এবং শাবানা বেগম সবাই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন যে দুজনে রাজি থাকলে আজই আংটি বদল হবে এবং সামনেই একটা ভালো দিন দেখে তাদের বিয়ে ঠিক করা হবে। যেহেতু দুজনেরই আপত্তি নেই তাই আজই আংটি বদল করানো হলো। যেখান থেকে শুরু হলো এক নতুন অধ্যায়। ফাতেমা মন ভরে দোয়া করল এই হবু দম্পত্তির জন্য।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/