অতুলনীয়া #পর্বঃ১৬ #লেখিকাঃদিশা_মনি

0
164

#অতুলনীয়া
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ফাতেমা ফারিয়াকে ঘরে শুইয়ে দিয়ে নিচে আসে। তখনই ফাহিম ও মোহনা তার সাথে কথা বলতে আসে। ফাতেমা তাদেরকে দেখে হেসে বলে,
‘তোমরা এখানে? খেয়েছ তো?’

ফাহিম ফাতেমাকে প্রশ্ন করে,
‘কোথায় ছিলি তুই? আমরা সেই কখন থেকে খুঁজছি। কোন যায়গা বাকি রাখিনি। হঠাৎ করে কোথায় গায়েব হয়ে গেছিলি?’

ফাতেমা থতমত খেয়ে যায়। আমতাআমতা করে বলে,
‘একটু বাইরে গেছিলাম।’

মোহনা ফাতেমার কাছে আসে। তার হাতে রক্ত দেখে বলে,
‘তোমার হাতে রক্ত কোথা থেকে এলো?’

ফাতেমা দ্রুত শাড়ির আঁচলে হাত লুকিয়ে মৃদু হেসে বলে,
‘কেঁটে গেছে হয়তো কোনভাবে!’

মোহনা ফাতেমার সামনে মাথা নিচু করে বলে,
‘আমি জানি, আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি। এরজন্য হয়তো আমি ক্ষমারও যোগ্য নই। তবুও আমি ক্ষমা চাইছি তোমার কাছে। পারলে আমায় ক্ষমা করে দাও।’

‘আমি কিছু মনে রাখিনি ভাবি।’

‘তুমি আর কত দিন এখানে পড়ে থাকবে? এবার তুমি নিজের বাড়িতে ফিরে চলো।’

‘আমিও ভাবছিলাম যাবো। আপাতত তো শ্রেয়ার বিয়ে হলো। বৌভাত টা পেরোক তারপর আমি যাব।’

‘ঠিক আছে।’

ফাতেমা মৃদু হেসে চলে আসে সেই স্থান থেকে। যাওয়ার সময় আবারো নিজের হাতে থাকা রক্তের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।

৩১.
প্রভাতের আবির্ভাবে ধরণী আলোয় আলোকিত। সূর্যের কিরণ জানান দিচ্ছে নতুন দিন, নতুন শুরুর৷ ফাতেমা সকাল সকাল ফারিয়াকে ঘুম থেকে তুলে দিলো। দুই মা-মেয়ে একসাথে নামাজ আদায় করে নিলো। অতঃপর ফাতেমা ফারিয়াকে বলল,
‘এখন থেকে নিজে নিজে ওঠার অভ্যাস করে নাও ফারিয়া। আমি তো সবসময় তোমাকে ডেকে তোলার জন্য থাকব না।’

ফারিয়া আতকে উঠে বলে,
‘তুমি এমন কথা কেন বলছ আম্মু? তুমি থাকবে না তো কোথায় যাবে?’

ফারিয়ার কথার পরে ফাতেমা আর কিছু বলে না। শুধু তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘নিজেকে শক্ত করো। তোমায় শক্ত হতে হবে। তুমি আমার মেয়ে। আমার মতো করেই তোমায় নিজেকে তৈরি করতে হবে।’

ফারিয়া কি বুঝল ফাতেমা সেটা ঠাহর করতে পারল না। মাকে শক্ত করে জড়িয়ে বসে থাকল মেয়েটি।

ফাতেমা, শাবানা বেগমকে সাহায্য করতে লাগলেন নানা কাজে। আজ শ্রেয়ার বৌভাত। একটু পরেই তাদের যেতে হবে সেখানে। শাবানা বেগম নতুন কুটুমের বাড়িতে খালি হাতে যেতে চান না। তাই নানা আয়োজন করছেন। শাবানা বেগমের ছেলে আজ অফিসের কাজে ব্যস্ত। তবে তার স্ত্রী আরমীণ এবং সন্তান শাহেদ এসেছে। তবে আরমীণের এসব কাজেকর্মে কোন আগ্রহ নেই। সে এসেই সোফায় পা তুলে বশে ফোন চাপছিল। শাহেদ, ফারিয়ার সাথে খেলছিল। শাবানা বেগম ফাতেমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কথায় কথায় তিনি বলে ফেলেন,
‘তোমার মতো এত ভালো মেয়ে আমি খুব কম দেখেছি। আমার যদি আর একটা ছেলে থাকত তাহলে তার সাথেই আমি তোমার বিয়ে দিতাম।’

আরমীণের গা জ্বালা দিয়ে উঠল কথাটা শুনে। বিয়ের পর থেকে তার শাশুড়ী তো কখনো এভাবে তার প্রশংসা করে নি। তাই সে ফাতেমার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
‘তা ফাতেমা তুমি নিজের কোন ব্যবস্থা করো নি? আর কতদিন এভাবে অন্যের বাসায় পড়ে থাকবা?’

ফাতেমা ভীষণ অপমানিত বোধ করে। শাবানা বেগম বলে ওঠেন,
‘তোমার কি সমস্যা বৌমা? ও তো তোমার বাড়িতে থাকছে না।’

ফাতেমা বলে,
‘আমি শুধু শ্রেয়ার বৌভাত পর্যন্তই আছি। আজই ফিরে যাব। আপনাকে এটা বলার ইচ্ছা ছিল আন্টি। ভেবেছিলাম বলবোও..’

‘তুমি কি আরমীণের কথায় এমন বলছ ফাতেমা? ওর কথায় পাত্তা দিও না। তুমি যতদিন ইচ্ছা এখানে থাকতে পারো।’

‘না, আন্টি। আমি অনেক আগে থেকেই এটা ভেবে রেখেছি। আপনি যে এতগুলো দিন আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন সেজন্য আমি আপনার উপর অনেক কৃতজ্ঞ। তবে ভাইয়া-ভাবি আমাকে বাসায় ফিরতে বলেছে। তাই আমায় ফিরতে হবে।’

শাবানা বেগম আর কথা বাড়ান না। আরমীণও মুখ বাকিয়ে ফোন টিপতে থাকে। এরমধ্যে হঠাৎ ফাতেমার ফোন বেজে উঠে। সে ফোনটা রিসিভ করতেই বিপরীত দিক থেকে বলে,
‘পুলিশ স্টেশন থেকে বলছি, আপনার প্রাক্তন স্বামী সোহেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে গতকাল, কেউ তাকে ভীষণ বাজেভাবে খু**ন করেছে। আপনাকে এখনই পুলিশ স্টেশনে আসতে হবে।’

ফাতেমা হতবাক। নিজেকে সামলাতে কিছুক্ষণ সময় নেয়। ফোনটা রেখে দেয়। তার হঠাৎ এমন বিমর্ষ চেহারা দেখে শাবানা বেগম জিজ্ঞেস করেন,
‘কি হয়েছে?’

ফাতেমা বলে,
‘সোহেল খু-* হয়েছে।’

৩২.
ফাতেমা পুলিশ স্টেশনে এসে বসে আছে অনেকক্ষণ। অপেক্ষা করছে এই থানার ওসির জন্য। ফাতেমার অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়। কিছুক্ষণ পরেই তার সামনে এসে উপস্থিত হয় ওসি। ফাতেমা চোখ তুলে তাকাতেই অবাক হয়! এই লোকটার সাথেই তো গতকাল তার ধাক্কা লেগেছিল। ফাতেমা চোখ বুলায় ওনার ব্যাজটির দিকে। নুহাশ খন্দকার। নামটা পড়ে ফাতেমা এবার তাকায় সুঠামদেহী পুলিশ অফিসারের দিকে। তামাটে দেহের রঙ, ঘন ভ্রু, বড় বড় দুটো চোখ, চোখা নাক, মুখে গাম্ভীর্য, পেশিবহুল হাত। সবমিলিয়ে লোকটাকে সুদর্শন আখ্যা দেওয়াই যায়। বয়স আনুমানিক ৩৩-৩৪!

ফাতেমা একপলক দেখেই চোখ ফিরিয়ে নিলো। নুহাশ খন্দকার ফাতেমার সামনে বসেই হাতে একটা ফাইল নিয়ে বলতে থাকে,
‘আপনি তাহলে ভিক্টিমের প্রাক্তন স্ত্রী?’

‘জ্বি।’

‘আপনাদের ডিভোর্স কতদিন আগে হয়েছিল?’

‘দুই মাস।’

‘তারপর আপনার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে?’

‘না, আমাদের বিবাহিত জীবন চলাকালীনই।’

‘আপনার রাগ হয়নি আপনার স্বামীর উপর?’

‘হুম, হয়েছিল।’

‘বুঝলাম। আপনার প্রাক্তন স্বামীকে যখন হ-*ত্যা করা হয়েছিল তখন আপনি কোথায় ছিলেন?’

‘বাসায়।’

‘আপনার বাবার বাসায়?’

‘না, আমার বান্ধবীর বাসায়। তার বিয়ে ছিল গতকাল।’

নুহাশ নিজের মুখ থেকে ফাইলটা সরিয়ে এবার সরাসরি ফাতেমার দিকে তাকায়। ফাতেমার দিকে তাকাতেই তার ভ্রু-যুগল কুঁচকে যায়। গতকাল রাতে এই রমণীকেই তো সে দেখেছিল নিজের খালাতো ভাই প্রত্যুষের বিয়েতে। দুই-দুই বার ইনিই তো তার সাথে ধাক্কাও খেয়েছিলেন। নুহাশ খন্দকার চুপ করে কিছুক্ষণ ফাতেমাকে পর্যবেক্ষণ করে বলে,
‘আপনি কি নিজের প্রাক্তন স্বামীর ডেড বডি দেখতে চান?’

‘আমি রক্ত সহ্য করতে পারি না!’

‘আচ্ছা, ঠিক আছে। আপনি তাহলে এখন আসতে পারেন। এরপর কোন দরকার থাকলে আমি আপনাকে ডেকে নেব।’

‘আচ্ছা।’

ফাতেমা উঠে দাঁড়ায়। ধীর পায়ে হেটে চলে যায়। নুহাশ ফাতেমার যাওয়ার পানেই তাকিয়ে ছিল। এমন সময় তার ফোনে তার আম্মুর কল আসে। নুহাশ ফোনটা রিসিভ করতেই তিনি বলেন,
‘নুহাশ তুই কোথায় রে?’

‘আমি তো থানায়। কেন?’

‘আজ তো প্রত্যুষের বৌভাত। তুই যাবি না?’

‘না, আম্মু। আমার থানায় আজ কিছু জরুরি কাজ আছে।’

‘বৌভাত তো দুপুরের দিকে। এখনো অনেক সময় আছে। তুই দেখ না একটু চেষ্টা করে যদি যেতে পারিস। তোর খালা বারবার করে বলেছে। আমি তো অসুস্থ তাই যেতে পারছি না। তুই নাহয় নাঈম আর নিহাকে নিয়ে চলে যা।’

‘তুমি নাঈমকে বলো নিহাকে নিয়ে যেতে। আমি যেতে পারবো কিনা জানিনা। যদি সময় পাই তাহলে যাব।’

‘ঠিক আছে, আমি তাহলে রাখছি।’

‘আচ্ছা।’

~~~~~~~~
ফাতেমার মন ভীষণ ভাবে খারাপ হয়ে গেছে। যতই সোহেলের সাথে তার ঝামেলা থাকুক। লোকটার সাথে তো ৬ বছরের সংসার ছিল তার। ফাতেমা ফারিয়াকে দেখে। মেয়েটা কি সুন্দর খেলছে শাহেদের সাথে। এই মেয়েটা তো তার আর সোহেলের। ফারিয়াকে এখনো সোহেলের মৃত্যুর খবর দেয়নি ফাতেমা। যতই হোক বাবা তো! মেয়েটা বোধহয় সামলাতে পারবে না এই ধাক্কা। একসময় তো বাবা অন্ত প্রাণ ছিল মেয়েটা। ভীষণ অসহায় লাগছে তার। তবে ফাতেমা নিজের চোখের জলকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। ঐ প্রতারকের জন্য চোখের জল নষ্ট করার মানে হয়না। সে নিশ্চয়ই তার কৃতকর্মের ফল ভোগ করেছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here