অতুলনীয়া #পর্বঃ১৭ #লেখিকাঃদিশা_মনি

0
117

#অতুলনীয়া
#পর্বঃ১৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ফাতেমা চুপচাপ বসে ছিল। ফারিয়াকে এখনো সে সোহেলের মৃত্যুর খবরটা জানায় নি। মেয়েটা এখন অনেক আনন্দে আছে। ফাতেমা চায় না এখন তাকে এটা জানিয়ে কষ্ট দিতে। পরে সময় করে জানাবে ভাবছে। এর মধ্যে শাবানা বেগম ফাতেমাকে এসে বলেন,
‘তুমি চুপচাপ বসে আছ কেন ফাতেমা? আজ তো শ্রেয়ার বৌভাত তুমি যাবে না?’

ফাতেমা শাবানা বেগমকেও কিছু জানায় নি। তাই ভাবলো সব বলবে কিন্তু তখনই ফারিয়া সেখানে এসে বেশ আশা করে বলল,
‘আম্মু, আমায় একটা সুন্দর জামা বের করে দাও না। শ্রেয়া আন্টির বৌভাতে যাব। শাহেদ অনেক সুন্দর একটা পাঞ্জাবি পড়েছে, জানো!’

ফাতেমা মেয়ের এত উৎসাহ দেখে আর না করতে পারল না। সোহেলের জন্য তো তাকে আর তার মেয়েকে কম ভোগান্তি পোহাতে হলো না। এখন এই সুখের সময় গুলো ঐ লোকটার জন্য কেন নষ্ট করবে? ফারিয়া কতদিন পর এত আনন্দিত! এত আগ্রহ নিয়ে সাজতে চাইছে তখন ফাতেমা আর মানা করতে পারল না। ফারিয়াকে বলল,
‘এসো আমি তোমাকে সাজিয়ে দিচ্ছি।’

এরপরই ফারিয়াকে অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো ফাতেমা। নিজেও তৈরি হয়ে নিলো। সাজগোজ শেষে সবাই মিলে বেরিয়ে পড়লো। এখন তাদের উদ্দ্যেশ্য, শ্রেয়ার বৌভাতের ওখানে যাওয়া। সেখানে গিয়ে যদি ফারিয়া একটু খুশি হয় তাহলে তাই সই! কারণ ফাতেমা জানে সোহেলের মৃত্যুর খবরটা ফারিয়া এত সহজ ভাবে নেবে না।

৩৩.
নুহাশ খন্দকার কেইস সম্পর্কে কিছু ফাইল ঘাটছিল। বর্তমানে সে একটু ফ্রি ছিল। তবে প্রত্যুষের বৌভাতে যাওয়ার খুব একটা ইচ্ছা তার নেই। এমনিতেও এসব উৎসব এটেন্ড করতে তার ভালো লাগে না। খালামনি বারবার করে বলছিল জন্যই সে প্রত্যুষের বিয়েতে গেছিল। তবে এখন আর বৌভাতে যেতে মন চাচ্ছে না।

নুহাশ তাই ফাইল ঘাটায় ব্যস্ত ছিল। এমন সময় তার ফোন বেজে উঠল। নুহাশ ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল তার ছোট ভাই নাঈম ফোন করেছে। নুহাশ ফোনটা রিসিভ করে। নাঈম বলে ওঠে,
‘ভাইয়া কোথায় তুই? আমরা তোর অপেক্ষায় বসে আছি। আর তুই এখনো আসছিস না! প্রত্যুষ ভাইয়ার বৌভাতে যেতে হবে তো নাকি!’

নুহাশ বলে,
‘তুই নিহাকে নিয়ে চলে যা নাঈম। আমি যাবো না।’

‘সে কি কথা! নিহা তোমার আব্বু যাবে না বলছে।’

সাথে সাথেই নিহা নাঈমের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বলে,
‘আব্বু তুমি আসবে না?’

বছর ছয়েকের ছোট্ট নিহার কথার প্রেক্ষিতে কি উত্তর দেবে সেটা বুঝতে পারে না নুহাশ। তবুও তাকে বোঝানোর জন্য বলে,
‘আমি কাজে ব্যস্ত আছি নিহা। আমি যেতে পারবো না। তুমি চাচ্চুর সাথে চলে যাও।’

‘আমি কিছু জানি না। তোমাকে আসতেই হবে। নাহলে আমিও যাবো না।’

‘দেখ মামণি এত জেদ করতে নেই। আব্বু ব্যস্ত আছে তো। বোঝার চেষ্টা করো।’

নিহার এবার কাঁদতে শুরু করল। মেয়ের কান্না সহ্য করতে পারল না নুহাশ। এই মেয়েটাই যে তার বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল। স্ত্রীকে হারানোর পর মেয়েকে আঁকড়েই তো বেঁচে আছে। তাই নুহাশ মেয়ের জেদের কাছে হার মেনে বলে,
‘আচ্ছা, তোমায় আর কাঁদতে হবে না। তুমি চাচ্চুর সাথে যাও। আমি চলে যাব।’

‘সত্যি?’

‘হ্যাঁ, সত্যি।’

‘প্রমিস করো।’

‘ঠিক আছে, প্রমিস।’

‘মনে রেখো, তুমি কিন্তু প্রমিস করেছ। একদম প্রমিস ভঙ করবে না। নাহলে কিন্তু আমি আর তোমার সাথে কথা বলব না।’

‘আমি চলে যাব মামণী।’

‘ঠিক আছে, রাখছি। তুমি চলে এসো।’

ফোন রেখে লম্বা একটা শ্বাস নেয় নুহাশ। মেয়েকে যখন একবার কথা দিয়ে ফেলেছে তখন তো তাকে যেতেই হবে। নুহাশ উঠে দাঁড়ায়। নিহার এই জেদ দেখে তার মনে পড়ে যায় নিজের স্ত্রী অর্পার কথা। অর্পাও ঠিক এতটাই জেদি ছিল। তবে তার জেদ ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে। একজন পরাক্রমশালী, নির্ভীক সাংবাদিক ছিল সে। আর এই পরাক্রমী মনোভাবই তার জীবন কেড়ে নেয়। এসব ভেবেই নুহাশের পুরোনো কষ্ট আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। অর্পার খু**নিদের এখনো শাস্তি দিতে পারেনি সে। এই কষ্ট তাকে সবসময় কষ্ট দেবে। কত চেষ্টা তো আর করে নি। কিন্তু খু**নি অনেক চালাক ছিল। নুহাশ এখন সবটাই মহান সৃষ্টিকর্তার হাতে ছেড়ে দিয়েছে। তিনি নিশ্চয়ই অপরাধীদের উচিৎ শিক্ষা দেবেন।

৩৪.
শ্রেয়া খুব খুশি হয় ফাতেমাসহ নিজের পুরো পরিবারকে নিজের বৌভাতে দেখে। ফাতেমা নিজের সব দুঃখ লুকিয়ে হাসিমুখে শ্রেয়ার সামনে আসে। তার সাথে কথা বলতে থাকে।

‘নতুন জীবনের অভিজ্ঞতা কেমন?’

‘দারুণ! আমি জানতাম না শ্বশুর বাড়ি এত সুন্দর হয়। জানলে আরো আগেই বিয়ে করে দিতাম।’

‘তোর স্বামী মানুষটা কেমন?’

‘প্রত্যুষ! ও তো একজন দারুণ লোক। এমন কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার।’

ফাতেমা খুশি হলো শ্রেয়ার কথা শুনে। স্মিত হেসে বললো,
‘একজন ভালো জীবনসঙ্গী আল্লাহর দেওয়া অনেক বড় নেয়ামত। আমার জীবনে এমন একজন ছিল…বাদ দেই সেসব কথা। তোর জীবন সুখের হোক।’

শ্রেয়া বলে,
‘আমি চাই তুইও নতুন করে জীবনটা শুরু কর। জীবন তো কারো জন্যই থেমে থাকে না। একজন ভুল মানুষের জন্য জীবন নষ্ট করে লাভ কি? তুই চাইলেই আবার নতুন কারো সাথে….’

শ্রেয়া নিজের কথা সম্পূর্ণ করার আগেই ফাতেমা তাকে বলে,
‘এই ব্যাপারে কথা না বাড়ানোই ভালো হবে শ্রেয়া। একজন মেয়ের জীবনে বিয়ে একবারই হয়। তাছাড়া, ব্যাপারটা শুধু আমার না। আমার একটা মেয়েও আছে। এমতাবস্থায় আমি কিভাবে এমন কথা ভাবতে পারি? নিজের মেয়েই আমার কাছে সবার আগে। এখন আমার জীবনের শুধু একটাই উদ্দ্যেশ্য আর সেটা হলো আমার মেয়ের জীবনটা সুন্দর করে গুছিয়ে দেওয়া। আমার জীবন তো এলোমেলো হয়েই গেছে। সেটা আর সাজানো সম্ভব নয়।’

“আমি দোয়া করি, তোর এই এলোমেলো জীবনটা সুন্দর করে সাজানোর জন্য কেউ আসুক।”

ফাতেমা আর কথা বাড়ায় না। এরমধ্যে বৌভাতের ওখানে চলে আসে নাঈম,নিহা, নুহাশ ওরা। নুহাশ পুলিশ ইউনিফর্ম পড়েই এসেছে। তাকে দেখে বেশ ক’জন চমকেও গেছে। ফাতেমা সবার সাথে হেসে হেসে গল্পগুজব করছিল। নুহাশ আসতেই তার নজর পড়ে ফাতেমার উপর। ফাতেমাকে দেখেই নুহাশ অবাক হয়ে মনে মনে বলে,
‘ওনার প্রাক্তন স্বামী মারা গেছে অথচ ওনার মধ্যে তো কোন দুঃখ দেখতে পাচ্ছি না। কি সুন্দর হেসে সবার সাথে কথা বলছে।’

ফাতেমারও নজর যায় নুহাশের দিকে। নুহাশকে এখানে দেখে তো ফাতেমা ঘাবড়েই গেছিল। ভাবছিল লোকটা কি তাকে জেরা করার জন্যই এখানে এসেছে! কিন্তু কিছুক্ষণ পর প্রত্যুষ চৌধুরীর মা এসে যখন পরিচয় করিয়ে দেন যে উনি তার বোনের ছেলে তখন একটু নিশ্চিত হয়। তাছাড়া বিয়ের দিনও তো লোকটাকে দেখেছিল। ফাতেমার এখন এমন অবস্থা যে সবকিছু নিয়েই অতিরিক্ত চিন্তা করছে।

হঠাৎ করেই নুহাশ ফাতেমার খুব কাছে এসে বলে,
‘আপনাকে তো এতক্ষণ বেশ খুশিই লাগছিল। আমাকে দেখে আপনার খুশি মনে হঠাৎ দুঃখ এসে ভড় করলো কেন?’

ফাতেমা নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
‘তেমন কিছু নয়।’

‘আপনার ব্যবহার কিন্তু এখন আমার ভীষণ সন্দেহজনক লাগছে। আমার সন্দেহের শীর্ষে এখন আপনিই রয়েছেন।’

ফাতেমার ভয় আরো বাড়ল। নুহাশ কথাটা ফাতেমাকে পরীক্ষা করার জন্যই বলেছিল। এরইমধ্যে হঠাৎ ফাতেমা জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যেতে নিলে নাঈম এসে ফাতেমাকে আগলে নেয়।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here