অতুলনীয়া #পর্বঃ১৯ #লেখিকাঃদিশা_মনি

0
98

#অতুলনীয়া
#পর্বঃ১৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ফাতেমা ফারিয়াকে সাথে নিয়ে বাসায় ফেরে। তাকে দেখেই ফাহিম এবং মোহনা দুজনেই ভীষণ খুশি হয়ে যায়। মোহনা তো ফারিয়াকে একদম কোলে তুলে নেয়। এত সব কিছুর মাঝেও ফাতেমার মুখের ভাব ছিল গম্ভীর। ফাতেমার গম্ভীর মুখশ্রী দেখে ফাহিম বলে,
‘কি হয়েছে ফাতেমা? তোকে এমন লাগছে কেন?’

ফাতেমা অশ্রু সজল চোখে বলে ওঠে,
‘সোহেল আর নেই।’

ফাতেমার মুখে এই কথা শুনে উপস্থিত সবাই বাকরুদ্ধ। মোহনা বলে ওঠে,
‘সোহেল তো তোমার স্বামীর নাম তাইনা?’

ফাহিম বলে,
‘কি হয়েছে সোহেলের ও আর নেই মানে?’

ফাতেমা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
‘কে বা কারা ওকে মা’র্ডার করেছে।’

ফাহিম, মোহনা দুজনেই হতভম্ব। ফারিয়া তো একদম কথা বলতেই ভুলে গেছে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
‘আব্বু কি মারা গেছে আম্মু?’

ফাতেমা ফারিয়াকে কি বলবে বুঝতে পারে না। কিভাবে বোঝাবে এই ছোট্ট মেয়েটাকে। হাজার হোক বাবা তো। একটা টান তো থাকবেই। খুশির পরিবেশ হঠাৎ করেই দুঃখে নিমজ্জিত হয়। মোহনা ফাতেমার কাছে এসে বলে,
‘তুমি কষ্ট পেওনা। সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো। তুমি নিজেকে সামলাও।’

ফাতেমা স্মিত থাকে। কেমন জানি অনুভূতি হীন লাগছে নিজেকে। মাথা কাজ করাই বন্ধ করে দিয়েছে। কি হবে ভবিষ্যতের ঘটনা। কোথায় বদলে যাবে জীবনের ঘটনাপ্রবাহ,? তারই উত্তর খুঁজছে জীবনের সমীকরণ গুলো। যার উত্তর নেই, যেই প্রশ্ন এখনো সন্দেহতীত।

৩৭.
নুহাশ খন্দকার সোহেলের মৃত্যুর কেসটা নিয়েই তদন্ত করে চলছিলেন। এখনো তার হাতে এই কেইস সম্পর্কে শক্ত কোন প্রমাণ আসে নি। তাই তিনি ভীষণ স্ট্রেসের মধ্যে আছেন। কারণ এই কেসটা নিয়ে অনেক জলঘোলা হচ্ছে। মৃত্যুর ভয়াবহতা সবাইকে ছাপিয়ে দিচ্ছে। সবাই ভয়ে ভীত। জনমনে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা তৈরি হয়েছে। এই জন্য উপর মহল থেকেও ক্রমানত চাপ আসছে এই কেসের একটা সমাধান বের করার জন্য। নুহাশ খন্দকারও সেই চেষ্টা করে চলেছে যাতে কোন ভাবে হলেও এই কেসের জট কাটানো সম্ভব হয়। তবে আদৌ এই কেসের সুরাহা করা সহজ হবে কিনা সেই হিসাব করা বেশ কঠিন। তবে নুহাশ খন্দকার হার মানার পাত্র নয়। সে যথাসাধ্য চেষ্টা করবে এই কেসের কোন সুরাহা বের করার। সেজন্য তাকে যতই পরিশ্রম করতে হোক না কেন সে করবে। এমনি মনোভাব থেকে নুহাশ খন্দকার সেদিন রাতের কিছু সিসিটিভি ফুটেজ চেক করতে বসেছে। এতে তেমন সন্দেহ জনক কিছু ই নেই৷ তবে একটা সিসিটিভি ফুটেজে একজন মহিলাকে হন্তদন্ত হয়ে কোথাও দৌড়ে যেতে দেখা গেছে। সিসিটিভি ফুটেজে উপস্থিত মহিলাকে নুহাশের খুব চেনা চেনা লাগে। ছবিটা ভালো ভাবে দেখে সে চমকে ওঠে। এ তো নেহা মির্জা। নেহা নুহাশের ক্লাসমেট ছিল। এজন্যই নেহাকে চেনে সে। কিন্তু নেহা এভাবে কোথায় যাচ্ছিল? তাহলে কি এই কেইসের সাথে নেহার কোন সম্পর্ক রয়েছে? এ সব উত্তর এখনো অধরা রয়েছে। যার উত্তর পাওয়াও এত সহজ না।

তবু নুহাশ খন্দকার খোঁজ লাগালো। আর এতে বেরিয়ে এলো কিছু তথ্য। যেমন নেহা মির্জা সোহেল ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী নয়না মির্জার বড় বোন। যদিও সৎ বোন। এবং কিছু দিন আগে এই নেহা মির্জাই সোহেলের সাথে দেখা করে এবং তার জামিনের ব্যবস্থা করে। এই মূলত ঘটনা। তবে এই ঘটনা গুলোর থেকে আরো বড় ঘটনা হচ্ছে সোহেলের মৃত্যুর পর থেকে নেহা মির্জা নিখোঁজ। এই ঘটনা গুলো নুহাশের চিন্তা বাড়াচ্ছে। তাহলে কি নেহা মির্জার হাত থাকতে পারে এসবের পেছনে?

এসব ভাবনার মধ্যেই নুহাশের সাথে দেখা করতে এলো তার থানারই আরেক কর্তব্যরত পুলিশ। সে হাতে নাতে এমন কিছু প্রমাণ নিয়ে এলো যা বদলে দিলো এই কেইসের পুরো গতিপথ। নুহাশ খন্দকার বলে উঠল,
‘আমার সন্দেহই তাহলে ঠিক। যাকে সন্দেহ করে ছিলাম সেই তাহলে রয়েছে এসব কিছুর পেছনে। এবার আমাকে এসব কিছুর সুরাহা করা থেকে কেউ আটকাতে পারবে না কেউ না।’

এসব ভাবনা শেষে নুহাশ ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়ে। কোথাও একটা খটকা থেকে গেলেও তাকে এখন প্রমাণ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে সে এটুকু বুঝতে পারছে কেসটা ভীষণ জটিল। তাই এর চূড়ান্ত সুরাহা করার জন্য এখনো অনেক পথ পারি দিতে হবে।

৩৮.
ফাতেমা বিষন্ন মন নিয়ে ঘরে বসে ছিল। তার মনে এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে নানারকম ভাবনা চিন্তা। সোহেলের মৃত্যুর থেকেও তাকে বেশি ভাবাচ্ছে নুহাশের তার প্রতি থাকা সন্দেহের দৃষ্টি। তাহলে কি তার ভাগ্যে কারাবাস লেখা আছে!

ফাতেমা এসব চিন্তা থেকেই তাকালো ঘুমন্ত ফারিয়ার দিকে। বাবার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে সে একদম থম মে’রে ছিল। কিছুক্ষণ আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। ফারিয়ার ঘুমন্ত মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে ফাতেমা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে। ফারিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
‘সোনা মেয়ে আমার। আমি নিজেকে নিয়ে নয় তোমাকে নিয়ে ভাবছি। আমার যা হয় হোক কিন্তু তার আগে আমি তোমার একটা ব্যবস্থা করতে চাই।’

এসব ঘটনার পরই ফাতেমা ফাহিম ও মোহনার সাথে আলাদা করে কথা বলতে যায়। তাদের কে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘ভাইয়া, ভাবি তোমাদের কাছে আমি কিছু চাইলে তোমরা না করবে না তো?’

ফাহিম বলে,
‘না, তুই বল কি বলবি। আমরা তোর কথা রাখার চেষ্টা করব।’

‘তোমাদের বেশি কিছু করতে হবে না। শুধু আমার মেয়েটাকে একটু দেখে রাখতে হবে আমার অবর্তমানে। পারবে তো?’

মোহনা বলে ওঠে,
‘এটা তুমি কেমন কথা বলছ ফাতেমা? তোমার অবর্তমানে মানে? কোথায় যাবে তুমি?’

ফাতেমা মলিন হেসে বলে,
‘ভাগ্য কাকে কখন কোথায় নিয়ে যায় সেটা কি বলা যায় ভাবি? আমিও তো পারব না নিজের ভাগ্যের কথা বলতে। শুধু আফসোস করতে পারব নিজের ভাগ্য নিয়ে। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।’

ফাহিমঃতোর কথা আমার ভীষণ সন্দেহ জনক লাগছে ফাতেমা। তুই কি আমাদের থেকে কিছু লুকাতে চাইছিস?

মোহনাঃতোমার ভাইয়া একদম ঠিক বলেছে। আমারো এমন কিছুই মনে হচ্ছে৷ তুমি প্লিজ কিছু লুকিও না আমাদের থেকে। আমরা তো তোমাদের আপন জন। আমাদের সাথেই তো নিজের সব সমস্যা শেয়ার করতে হবে তো নাকি?

ফাতেমা নিজের ভাই ভাবি দুজনের দিকে তাকিয়ে কাতর কন্ঠে বলে,
‘আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো তোমরা। আর কিছু চাওয়ার নেই আমার।’

ফাতেমার কথায় হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে দুজন। ঘটনা কোনদিকে মোড় নিতে চলেছে বোঝার চেষ্টা করে। ফাতেমা আর চুপ না থেকে বলে,
‘সোহেলের মৃত্যুর কেইসে পুলিশ আমায় সাসপেক্ট করছে। খুব শীঘ্রই হয়তো আমায় জেলে যেতে হবে।’

ফাহিম উত্তেজিত হয়ে বলে,
‘বললেই হলো নাকি? আমার বোনকে আমি জেলে যেতে দিবো না। আমি মানব না এটা। আমার বোন এমন কিছু করতে পারে না।’

মোহনাঃতোমার ভাইয়া একদম ঠিক বলেছে। আমরা তোমার পাশে আছি সবসময়।

এরইমধ্যে কলিং বেলের শব্দ ভেসে আসে। মোহনা বলে,
‘আমি গিয়ে দেখি কে এসেছে।’

দরজা খুলে পুলিশদেরকে দেখে সে হতবাক হয়ে যায়। নুহাশ খন্দকার কিছু মহিলা পুলিশকে নিয়ে এসেছে। সে বাড়িতে ঢুকে বলে,
‘ফাতেমা খাতুন আছেন বাড়িতে?’

‘হ্যাঁ, কেন?’

‘ওনার নামে এরেস্ট ওয়ারেন্ট আছে। উই হ্যাভ টু এরেস্ট হার।’

ফাহিম আসতে আসতে কথা গুলো শুনছিল। সে এগিয়ে এসে বলে,
‘আমার বোনকে এরেস্ট করবেন মানে?’

নুহাশ খন্দকার বলে,
‘আমাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে ওনার বিরুদ্ধে।’

ফাতেমাও ততক্ষণে চলে আসে। তাকে দেখেই মহিলা পুলিশ এগিয়ে এসে হাতকড়া পরায়। ফাতেমা নিশ্চুপ। ফাহিম, মোহনার বাধা টিকল না। ফাতেমাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল পুলিশ।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here