অতুলনীয়া #পর্বঃ৪ #লেখিকাঃদিশা_মনি

0
122

#অতুলনীয়া
#পর্বঃ৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ফাতেমা ফারিয়াকে ভাত খাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু ফারিয়া কিছুতেই খেতে চাইছে না। আসলে এত আঘাত মেয়েটা মেনে নিতে পারে নি। বাবাকে খুব ভালোবাসে যে! বাবার হঠাৎ করে এই দ্বিতীয় বিয়ে তার মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন এনেছে। ফাতেমা সবটাই বুঝতে পারছে। তার তো এখন বুকফেটে কান্না পাচ্ছ। কিন্তু সে নিজেকে শক্ত রেখেছে। নিজের মেয়েকে যে তার শক্ত হাতে সামলাতে হবে।

কোনরকমে ফারিয়াকে খাইয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয় ফাতেমা। অতঃপর নিজের ফোনটা হাতে নেয়। সোহেল ও নয়নার একসাথে একটা ছবি বার করে। এই ছবিটা তাদের ভার্সিটি লাইফের। ফাতেমা অগ্নি দৃষ্টিতে ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আমার ও আমার মেয়ের জীবনটাকে নরক বানিয়ে তোমরা শান্তিতে থাকবে এটা তো হতে পারে না। তোমাদের তো আমি কিছুতেই শান্তিতে থাকতে দেব না।’

এই বলে ফাতেমা ফেসবুকে একটি জনপ্রিয় গার্লস পেজের সাথে যোগাযোগ করেছে। এই পেজটিতে বিভিন্ন নারীরা তাদের সাথে ঘটে যাওয়া বাজে ঘটনা শেয়ার করে। সেসব ঘটনা পেজটিতে পাবলিশড করা হয়। অতীতে এই পেজটিতে অনেক পোস্টই ভাইরাল হয়েছে আর তাতে অনেকের মুখোশ জনসম্মুখে এসে পড়েছে। ফাতেমা তাই আজ নিজের সাথে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা পেজটির ইনবক্সে পাঠিয়ে দেয়। সাথে করে সোহেল এবং নয়নার ছবিটাও দেয়। যাতে সমাজের সবাই এই দুটো মানুষের কুৎসিত গল্পটা জানতে পারে।

এইবার কিছুটা শান্তি পায় ফাতেমা। তবে পরিপূর্ণ শান্তি না। যদি পেজের এডমিনটা পেজে পোস্টে পাবলিশড করে এবং পোস্টটা ভাইরাল হয় তাহলে ফাতেমা পরিতৃপ্তি লাভ করবে।

৭.
নয়না ও সোহেল আজ বেড়িয়েছে একটা রেস্টুরেন্টে ক্যান্ডেল নাইট ডিনার করার জন্য। সোহেলের আগ্রহেই মূলত এর আয়োজন করা হয়েছে। নতুন বউ পেয়ে তার মনে রং লেগেছে, জীবনটা সুন্দর ভাবে উপভোগ করতে মন চাইছে। নির্লজ্জের মতো নয়নার হাত ধরে শহরের একটা স্বনামধন্য রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে সোহেল। তাদের দেখেই একজন মহিলা ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকায়। তার সাথে বসে থাকা তার বান্ধবীকে ফোনে কিছু একটা দেখায়। ধীরে ধীরে রেস্টুরেন্টের অনেক জনই তাদের দিকে অন্ন দৃষ্টিতে তাকায়। সোহেল ও নয়না বুঝতে পারছিল না সবাই তাদের দিকে এভাবে দেখছে কেন। নয়না বলে ওঠে,
‘সবাই আমাদের এভাবে দেখছে কেন সোহেল?’

‘আমিও সেটাই ভাবছি। আচ্ছা, বাদ দাও। চলো আমরা গিয়ে একটা টেবিলে বসি।’

এই বলে সোহেল নয়নাকে নিয়ে একটা টেবিলে গিয়ে বসে। এমন সময় একজন মহিলা উঠে এসে তাদের টেবিলের কাছে এসে সোহেলের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘আপনার কোন লজ্জা নেই? নিজের স্ত্রী-সন্তান কে ছেড়ে দিয়ে এখন আরেকটা মহিলাকে নিয়ে বেয়াল্লাপনা করছেন?’

সোহেল অবাক হয় ভীষণ। নয়নার দিকে তাকায় অদ্ভুত দৃষ্টিতে। নয়না মহিলার দিকে তাকিয়ে বলেন,
‘কে আপনি? আর কিসব বলছেন?’

মহিলাটি এবার নয়নার দিকে তেড়ে গিয়ে বলে,
‘আপনি তো কথাই বলবেন না। বেহায়া মহিলা। নিজের বান্ধবীর সংসার ভেঙে এখন নাটক শুরু করছেন!’

নয়না বুঝতে পারে না এই মহিলা কিভাবে এত কিছু জানল। আশেপাশের আরো কিছুজন তাদের গিয়ে কথা বলছিল। কয়েকজন তো তাদের ছবি তুলতে লাগল। সোহেল ও নয়না এতে ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ল। সোহেল নয়নাকে বলল,
‘আমার মনে হয়, এখানে বেশিক্ষণ থাকা আমাদের জন্য নিরাপদ নয়। নয়না চলো আমরা বাসায় যাই।’

“হ্যাঁ, চলো।”

এই বলে নয়না ও সোহেল রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসে। বাসায় ফিরে অনলাইনে ঢু মা’রতেই নয়না বুঝতে পারে কেন আজ রেস্টুরেন্টে তাদের এমন অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হলো। ফাতেমার করা পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় একদম ভাইরাল হয়ে গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন এটাই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছে। সবাই সোহেল ও নয়নাকে যা নয় তাই বলে অপমান করছে। দু-একজন অবশ্য তাদের পক্ষেও কথা বলছে(সমাজে এমন মানুষ তো আর কম না!)

এসব দেখে নয়নার ভীষণ রাগ হলো। ফোনটা ছু’ড়ে মা’রল দূরে। সোহেল নয়নার কাছে এসে বলল,
‘কি হলো নয়না? তুমি এত রেগে গেলে কেন?’

‘তুমি নিজের ফোনটা বের করে সোশ্যাল মিডিয়ায় চেক করো। তাহলেই বুঝবে আমি কেন রেগে যাচ্ছি।’

সোহেল ফোন বের করতেই দেখল তার ইনবক্সে অনেক পরিচিত ব্যক্তি ম্যাসেজ করেছে। কি হয়েছে সেটার বিস্তারিত জানতে চাইছে। অনেক ফেসবুক ফ্রেন্ড তো আবার গালিও উগড়ে দিচ্ছে। এরমধ্যে সোহেলের ফোনে তার এক সহকর্মীর ফোন এলো। সেও ফোনকলে সোহেলকে বিড়ম্বনায় ফেলে দিলো। নয়না একেবারে জ্বলে যাচ্ছিল এসব দেখে।

সোহেলের উদ্দ্যেশ্যে চিৎকার করে বলল,
‘এই তুমি এখনি ঐ ফাতেমাকে ফোন করো। আমি ওর একটা ব্যবস্থা করছি তাড়াতাড়ি। কি ভেবেছে টা কি ও? এইভাবে আমাকে শায়েস্তা করবে!’

সোহেল তৎক্ষণাৎ ফাতেমাকে ফোন দিলো। ফাতেমা দ্রুততার সাথেই ফোনটা রিসিভ করল। করেই হাসিমুখে বলল,
‘কেমন লাগল আমার তরফ থেকে দেয়া তোমাদের বিয়ের উপহার?’

‘কাজটা তুমি ভালো করলে না ফাতেমা। আমরা চাইলেই বসে ব্যাপারটা মিটমাট করতে পারতাম।’

‘চুপ কর তুমি। তোমার মুখে এই কথা মানায় না।’

সোহেল আর কিছু বলার আগেই নয়না ফোনটা কেড়ে নেয়। গর্জে উঠে বলে,
‘তুই কিন্তু আমাকে চিনিস না ফাতেমা! আমার সাথে টক্কর নিতে আসিস না। তোর এমন অবস্থা করব যে তুই সেটা ভাবতেও পারছি না।’

ফাতেমা দ্বিগুণ হুংকার দিয়ে বলল,
‘তোর মতো সস্তা মেয়ের মুখে এত বড় কথা মানায় না নয়না। তোর মতো মেয়েদের থেকে তো পতি**তালয়ের পতি–তারা ভালো। তারা অন্তত কারো সংসার ভাঙে না।’

‘ফাতেমা! মুখ সামলে কথা বল।’

‘মুখ অনেক সামলেছি নয়না। এবার আর না।’

‘তুই কি ভেবে নিয়েছিস আমাদের খুব বড় ক্ষতি করে ফেলেছিস? অবশ্য তোর দম তো এটুকুই। তাহলে শুনে রাখ, আমাদের কোন ক্ষতিই হয়নি। দু-একদিন মানুষ এসব নিয়ে কথা বলবে তারপর যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়বে।’

ফাতেমা ঠান্ডা গলায় বল,
‘আমার দম কত সেটার বহিঃপ্রকাশ এখনো আমি ঘটাই নি নয়না৷ এটা তো জাস্ট আগ্নেয়গিরির আলোকছটা ছিল মাত্র। লাভা তো এখনো বাকি। তোর আর তোর স্বামীর আমি এমন ব্যবস্থা করব যেটা তোরা স্বপ্নেও ভাবতে পারছিস না।’

‘এসব বড় বড় ফুটানিই দে শুধু।’

‘ফাতেমা যে শুধু ফুটানি দেয় না এটা তুইও খুব ভালো ভাবেই জানিস নয়না। যাইহোক, তোর সাথে কথা বলার আর ইচ্ছা নেই। ফোন রাখ।’

নয়না আরো রেগে যায় ফাতেমার এমন ব্যবহারে। ফোনটা রেখে কটমট করে বলে,
‘নয়নাকে চ্যালেঞ্জ করছিস তুই! এবার দেখ এর ফল কি হয়।’

৮.
ফাতেমা ফারিয়াকে ঘুম পাড়িয়ে শ্রেয়ার সাথে তার কফিশপে এসেছে। মূলত শ্রেয়াই জোরপূর্বক তাকে এখানে এনেছে। কারণ শ্রেয়া চায় ফাতেমা যাতে চার দেয়ালের মধ্যে থেকে নিজেকে অসহায় বোধ না করে।

কফির কাপে চুমুক দিয়ে শ্রেয়া ফাতেমাকে বলে,
‘তুই কি করবি ভাবছিস?’

ফাতেমা ভাবুক হয়ে গেল। কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
‘ভাবছি আবার নতুন করে সবকিছু শুরু কর। আমি মাস্টার্সে ভর্তি হতে চাই। নিজের বাকি পড়াশোনা কমপ্লিট করতে চাই।’

‘ভালো সিদ্ধান্ত।’

ফাতেমার মুখ হঠাৎ করেই গম্ভীর হয়ে যায়। সে বলে,
‘কিন্তু সেজন্য তো আমার টাকার প্রয়োজন।’

‘এটা নিয়ে এত চিন্তা করার কি আছে? আমি সেই ব্যবস্থা করে দেব।’

‘না, শ্রেয়া। এটা হয়না। আমি শুধু শুধু তোর থেকে টাকা নিতে পারব না। এতে আমার আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে।’

‘তোকে আমার থেকে এমনি এমনি টাকা নিতে হবে না। তুই নাহয় আমার কফিশপে পার্ট টাইম জব কর।’

ফাতেমা ভাবল কিছুক্ষণ। অতঃপর বলল,
‘প্রস্তাবটা মন্দ নয়। তবে আমার নিজের জন্য এবার নিজেকেই লড়তে হবে৷ সাথে নিজের মেয়ের জন্য। তাই আমি নিজের সব অধিকার বুঝে নেব।’

‘মানে?’

‘আমার বাবার সম্পত্তির উপরেও তো আমার অধিকার আছে। কিন্তু আমি এতদিন ভাইয়ার কাছে সেই অধিকারের দাবি নিয়ে যাই নি। তবে, জীবনের এই পর্যায়ে এসে আমি আর এত মহান হতে পারছি না। আমি আজই আমার ভাইয়ের কাছে যাব। নিজের অধিকার বুঝে নেওয়ার জন্য।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here