#অতুলনীয়া
#পর্বঃ৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ফাতেমার বলা স্পষ্ট কথা একদম ভালো লাগে না সোহেলের। সে ভীষণ অপমানিত বোধ করতে থাকে। এদিকে ফারিয়ার স্কুলের প্রিন্সিপালও হকচকিয়ে গেছেন। তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেন। অতঃপর গলা খাকারি দিয়ে বলেন,
‘দেখুন, আপনাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কি সমস্যা হয়েছে সেটা আপনাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এই নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। তবে আপনাদের এই সমস্যার প্রভার আপনাদের সন্তানের উপর যে বাজেভাবে পড়েছে সেটা আমি বলতে পারি।’
ফাতেমা বলে,
‘কি সমস্যা হয়েছে ম্যাম?’
‘আজ ক্লাসে ফারিয়ার ইংলিশ টিচার বিশ্ব অভিভাবক দিবস হিসেবে সকলকে তাদের মা-বাবা সম্পর্কে কিছু স্পিচ দিতে বলেছিল৷ সেখানে সবাই ভালো ভাবে বললেও ফারিয়া ছিল ব্যতিক্রম। নিজের মায়ের ব্যাপারে সে ভালো কথা বললেও বাবার সম্পর্কে ভীষণ বাজে কথা বলে। এমনকি নিজের বাবাকে রাক্ষসের সঙ্গে পর্যন্ত তুলনা করে। যা শুনে সবাই ভীষণ অবাক হয়ে যায়। এমনকি ওর ইংলিশ ম্যাম যখন আমাকে ব্যাপারটা বলে তখন আমিও স্তম্ভিত হয়ে যাই। আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতেই পারছেন এতটুকু একটা বাচ্চা মেয়ের উপর কি পরিমাণ মেন্টাল প্রেসার পড়লে সে এমন কথা বলতে পারে।’
ফাতেমার মুখে বিদ্রুপের হাসি ফুটে ওঠে। সোহেলের যেই রূপ ফারিয়া দেখেছে তাতে করে তার এই কথা বলা অহেতুক নয়। অন্যদিকে সোহেল লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ফাতেমা সোহেলের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘নিজেই ভেবে দেখ কি জঘন্য কাজ করেছ তুমি। যেই মেয়ের কাছে তুমি ছিলে সুপারহিরো এখন সেই তোমাকে বিচের সাথে তুলনা করছে।’
অতঃপর সে ফারিয়ার প্রিন্সিপাল ম্যামকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘আমার এবং আমার মেয়ের উপর দিয়ে এই ক’দিন কি ঝড় বয়স গেছে সেটা বোধহয় আপনি জানেন না ম্যাম। আর আমিও সবটা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই। আমি এটা বুঝতে পারছি যে স্কুলের পরিবেশে কোন স্টুডেন্টের এমন কথা বলা ঠিক নয়। আমি ফারিয়াকে বলে দেব এরপর থেকে যাতে স্কুলে আর এসব নিয়ে কথা না বলে। তবে ওর মনে ওর বাবার প্রতি যে ঘৃণা তৈরি হয়েছে তাতে কোন ভুল নেই। বরঞ্চ আমি চাই এই ঘৃণা আজীবন বজায় থাকুক। কখনো যেন ও নিজের বাবাকে ক্ষমা না করে।’
বলেই ফাতেমা উঠে দাঁড়ায়। সোহেলের দিকে ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে।
সোহেল ফাতেমার পিছু পিছু আসে। এসেই ফাতেমার হাত টেনে ধরে। ফাতেমা এক ঝটকায় হাতটা সরিয়ে নিয়ে বলে,
‘একদম আমায় স্পর্শ করবে না। তোমার স্পর্শে আমি ঘৃণা অনুভব করি।’
‘ফাতেমা! তুমি কিন্তু এবার বেশি বাড়াবাড়ি করছ।’
‘বাড়াবাড়ির কিছু দেখো নি তুমি। সরো তো আমার সামনে থেকে। তোমায় দেখলেও আমার ঘৃণা হচ্ছে। জঘন্য তম এক পুরুষ তুমি। যাকে তার সন্তানও রাক্ষসের সাথে তুলনা করে।’
‘তুমিই তো আমার মেয়ের মনে আমার প্রতি এত ঘৃণা তৈরি করছ। কেন করছ এমন? আমরা চাইলে বসে সব ঝামেলা মিটমাটও তো করতে পারি।’
ফাতেমার মুখে বিদ্রুপের হাসি ফুটে ওঠে। সে বলে,
‘তোমার মুখে এসব কথা মানায় না সোহেল। তুমি যা করেছ তাতে তোমার চেহারাও আমি দেখতে চাইনা। তোমার সাথে বসে মিটমাট করা তো দূরের কথা।’
‘এত দেমাগ কিসের তোমার? আমি তখন থেকে সবটা ঠিকঠাক করতে চাইছি আর তুমি ঝামেলাই বাড়িয়ে চলেছ। আমি বলছি শোনো, আমি নাহয় নয়নাকে বিয়ে করেছি তো এতে কি সমস্যা? তুমি তো চাইলেই নয়নার সাথে মিলে-মিশে থাকতে পারো। আমি তোমাদের দুজনকে নিয়েই সংসার..’
সোহেল নিজের পুরো কথা সম্পূর্ণ করতে পারে না। তার আগেই ফাতেমা ঠাস করে থা**প্পড় বসিয়ে দেয় সোহেলের গালে। সোহেল হুংকার দিয়ে বলে,
‘ফাতেমা! তোমার এত বড় সাহস! তুমি আমার গায়ে হাত তোলো!’
‘সাহসের এখনো কিছু দেখোনি তুমি মিস্টার সোহেল। আমাকে কি তোমার খুব সস্তা মেয়ে মনে হয়? যে আমি তোমার ঐ রক্ষিতা নয়নার সাথে সংসার করব!’
‘ফাতেমা! কাকে কি বলছ তুমি?’
‘একদম ঠিক বলছি। ঐ নয়না একটা রক্ষিতা। বাজে মেয়ে।’
‘ভুলে যেও না তোমার সাথে এখনো আমার ডিভোর্স হয়নি। তাই এত সাহস দেখিও না। আমি এখনো তোমার স্বামী। তোমার উপর এখনো আমার অধিকার আছে।’
ফাতেমা কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যায়। তারপর বলে,
‘মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।’
বলেই সে গটগট পায়ে চলে আসে। সোহেল ফাতেমাকে কয়েকবার ডাকলেও সে আর শোনার প্রয়োজন মনে করে না।
১৩.
ফাতেমা গাড়িতে করে ফেরার পথে নয়নাকে ফোন করে। নয়না ফোনটা রিসিভ করতেই সে বলে ওঠে,
‘হ্যালো নয়না! কেমন আছিস তুই?’
‘ফাতেমা তুই! কোন সাহসে আমায় ফোন করেছিস।’
‘সাহস আমার বড্ড বেশি সেটা তো জানিসই৷ তোকে একটা জরুরি কথা বলার জন্য ফোন দিলাম। তুই বোধহয় জানিস সোহেল এখনো আমায় ডিভোর্স দেয়নি। আর ভাবছি দেবোও না। দেখি তুমি কি করতে পারো।’
‘হ্যাঁ, দু-একদিনের মধ্যেই দিয়ে দেবে।’
‘সেগুড়ে বালি। আজ সোহেলের সাথে আমার দেখা হয়েছিল। ও নিজে আমায় বলেছে ওর সংসারে ফিরে যেতে। আমার হাতে-পায়েও ধরেছে। আমার না ওর উপর ভীষণ দয়া হলো। তাই ভাবছি..’
‘না, না, না। তোকে আমি কিছুতেই আর সোহেলের জীবনে ফিরতে দেব না।’
বলেই নয়না ফোন রেখে দেয়। ফাতেমা তখন বিড়বিড় করে বলে,
‘আমি ওর জীবনে মরে গেলেও ফিরবো না। কথাটা তো তোকে নিজের স্বার্থেই জানালাম। এবার আমি কাটা দিয়েই কাটা তুলব।’
১৪.
সোহেল আজ বেশ রাত করেই বাড়ি ফিরল। সে বাড়ি ফিরেই দেখল নয়না ঘর অন্ধকার করে বসে আছে। সোহেল লাইট জ্বালিয়ে নয়নার পাশে বসে বলল,
‘এভাবে রুম অন্ধকার করে বসে আছ কেন?’
‘একদম বসবে না আমার পাশে। তুমি যাও ঐ ফাতেমার কাছে।’
‘এসব তুমি কি বলছ নয়না? আমি ফাতেমার কাছে কেন যাব? আমি তো আর ওকে ভালোবাসি না৷ আমি শুধু তোমায় ভালোবাসি।’
‘যদি আমাকেই ভালোবাসো তাহলে ফাতেমাকে এখনো ডিভোর্স লেটার পাঠাও নি কেন?’
সোহেল চুপ করে থাকে। নয়না চিৎকার করে বলে,
‘কি হলো চুপ আছ কেন? আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। তাহলে কি তুমি আমায় শুধু নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইছ? নিজের স্বার্থসিদ্ধি হলে আমায় ছুড়ে ফেলে আবার ঐ ফাতেমা আর নিজের মেয়েকে ফিরিয়ে আনবে?’
‘তুমি আমায় ভুল ভাবছ নয়না। আমি কেন এমনটা করতে যাব?’
‘আমি কিচ্ছু জানি না। তোমার উপর আমার একদম বিশ্বাস নেই। যেই মানুষ নিজের ছয় বছরের সংসার করা স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে পারে তার কাছে তো আমি কিছুই না। তুমি যদি সত্যি আমায় ভালোবেসে থাকো তাহলে কাল সকালেই ঐ ফাতেমাকে ডিভোর্সের নোটিশ পাঠিয়ে দেবে।’
‘কিন্তু…’
‘কোন কিন্তু নয়। আমি যা বলছি তাই করো। হয় তুমি আমাকে বেছে নাও আর নাহলে ফাতেমাকে। বলো কি করবে?’
সোহেল হার মেনে নেয়। বলে,
‘ঠিক আছে, তুমি যা চাও তাই হবে। আমি কালই ফাতেমাকে ডিভোর্সের নোটিশ পাঠিয়ে দেব। আমি খবর নিয়ে দেখেছি ও এখন কোথায় আছে। সেই ঠিকানাতেই পাঠিয়ে দেব।’
✨
সকাল সকাল কলিং বেলের শব্দে শ্রেয়া বিরক্ত হয়ে যায়। দরজাটা গিয়ে খুলে দিতেই দেখে একজন কুরিয়ার বয় দাঁড়িয়ে আছে। শ্রেয়া তাকে দেখে বলে,
‘জ্বি, বলুন।’
‘ফাতেমা খাতুনকে ডাকা যাবে? ওনার নামে একটা পার্সেল আছে।’
শ্রেয়া ফাতেমাকে ডাকে। ফাতেমা এসে পার্সেলটা নেয়। পার্সেলটা খুলতেই একটা কাগজ বেরিয়ে আসে। শ্রেয়া কৌতুহলী হয়ে বলে ওঠে,
‘কি ওটা?’
ফাতেমা মুখে হাসি ফুটিয়ে একটা স্বস্তির নি:শ্বাস নিয়ে বলে,❝আমার মুক্তির সনদ।❞
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
#অতুলনীয়া
#পর্বঃ৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ফাতেমা আজ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে। অঅনেকদিন পর তাকে আজ খুব খুশি খুশি লাগছে। খুশিতে আজ সে আত্মহারা। তার খুশির বহিঃপ্রকাশ তার আচরণে, কথায়-বার্তায় সবসময় উপলব্ধি করা যাচ্ছে। শ্রেয়াও অনেকটা খুশি হয়েছে এটা শুনে যে ঐ সোহেল নামক অমানুষটার সাথে ফাতেমার সব সম্পর্ক শেষ হয়েছে। তবে তার মনে একটাই খুতখুতানি রয়ে গেছে আর সেটা হলো ফাতেমা কেন এত সহজে সোহেলকে যেতে দিলো। কেন সে সোহেলকে কোন শাস্তি দিল না। তবে ফাতেমা এটাও বলেছে সে সোহেলকে অনেক ভয়ানক শাস্তি দেবে। তবে সেটা কখন এবং কিভাবে সেটা বলে নি।
ফাতেমা আজ মিষ্টি এনে দেয় শ্রেয়াকে। শ্রেয়ার মা শাবানা বেগম বলেন,
‘হঠাৎ আজ মিষ্টি কোন খুশিতে মা?’
ফাতেমা মৃদু হেসে বলে,
‘মিষ্টি এইজন্য এনেছি যে আমার ডিভোর্স হয়েছে। এটা শুনে অনেকের মনে হতেই পারে ব্যাপারটা অদ্ভুত। কারণ এখনো অনেক মেয়ের কাছেই ডিভোর্সি ট্যাগ লাগা একটা অসম্মানের মতো ব্যাপার। তবে আমার কাছে এটা এখন অনেক বড় সম্মানের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ আমি একটা ভুল মানুষের থেকে, একটা ভুল সম্পর্ক থেকে মুক্তি পেয়েছি।’
ফাতেমার কথা শুনে শাবানা বেগম বলেন,
‘তোমাকে এভাবে দেখে আমার অনেক ভালো লাগছে মা। এত কঠিন পরিস্থিতিতেও তুমি ভেঙে না পড়ে যেভাবে নিজেকে সামলেছ, যেভাবে নিজের আর নিজের মেয়ের জন্য লড়াই করে যাচ্ছ সেটা অনেক মেয়েকেই অনুপ্রেরণা যোগাবে। আমি আল্লাহর কাছে তোমার জন্য প্রার্থনা করব যেন তুমি সুখী হও। তোমার জীবন যেন উনি সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভড়িয়ে দেন।’
অতঃপর তিনি কিছু একটা ভেবে শ্রেয়াকে বলেন,
‘শ্রেয়া, তোর তো কম বয়স হয়নি। এবার তো তোর বিয়ে নিয়ে ভাবা উচিৎ। আমি আর ক’দিন বাঁচবো বল?’
শ্রেয়া বিয়ের কথা শুনে মুখটা বিকৃত করে বলে,
‘বিয়ে! আমার তো বিয়ের উপর ফোবিয়া আগে থেকেই ছিল এখন তা আরো জোরালো হয়েছ। ফাতেমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার পর আমার তো আর কোন পুরুষ মানুষের উপর বিশ্বাস নেই। তার থেকে আমি একা আছি এটাই ভালো।’
ফাতেমা মৃদু হেসে বলে,
‘দেখ শ্রেয়া, হাতের পাঁচটা আঙুল যেমন সমান হয়না তেমন পুরুষ মানুষের মধ্যেও অনেক পার্থক্য আছে। তুই শুধু সোহেলের জন্য সব ছেলেদের কাঠগড়ায় তুলতে পারিস না। সমাজে যেমন সোহেলের মতো খারাপ ছেলে আছে তেমন অনেক ভালো ছেলেও তো আছে। এই যেমন আমার ভাই, আমার ভাবি কোনদিন সন্তান জন্ম দিতে পারবে না, ভাবি মিথ্যা বলে তাকে ঠকিয়েছে এসব জানার পরেও কিন্তু সে ভাবির হাত ছেড়ে দেয়নি। বরং ভাবিকে আরো বেশি করে আগলে রেখেছে। সমাজে তুই এমন আরো অনেক ভালো ছেলে পাবি। যেমন দেখ, সোহেল তো একা নয়, নয়নাও অন্যায় করেছে। কিন্তু এইজন্য কি তুই সব মেয়েদের খারাপ বলবি? তুই আর আমিও কি নয়নার মতো? নিশ্চয়ই না। তেমনি খুঁজলে অনেক ভালো ছেলে পাওয়া যাবে। যাদের কাছে ভালোবাসা, স্ত্রী-সন্তানের মর্যাদা সবার থেকে বেশি।’
শাবানা বেগমও ফাতেমাকে সমর্থন জানিয়ে বলেন,
‘একদম ঠিক বলেছ তুমি। শ্রেয়ার বাবাও এমনই একজন যত্নবান পুরুষ ছিল। আমি তো আমার মেয়ের জন্যেও এমন কাউকে চাই।’
শ্রেয়া বলে,
‘আচ্ছা, ঠিক আছে। এমন কোন ভালো পুরুষকে পাওয়া গেলে তারপর আমি ভেবে দেখবো। আপাতত ফাতেমা চল আমরা কফিশপে যাই। আজকে অনেক কাজ আছে। আর কাল তো তোকে আবার মাস্টার্স কমপ্লিট করার জন্য এপ্লাই করতে হবে।’
‘হুম, চল।’
১৫.
ফাতেমা আজ তার মাস্টার্স কমপ্লিট করার জন্য একটা স্বনামধন্য ভার্সিটিতে ইমেইল পাঠিয়েছে। সাথে নিজের অনার্সের সার্টিফিকেটও। এমনিতে ফাতেমার সিজিপিএ অনেক ভালো। তবে সমস্যা হচ্ছে এত বছরের গ্যাপ। তবে ভার্সিটির তরফ থেকে জানানো হয়েছে ব্যাপারটা বিবেচনা করে দেখা হবে। এই কথা শুনে ফাতেমা কিছুটা স্বস্তি পায়।
অতঃপর ফারিয়াকে স্কুল থেকে আনার জন্য বেরিয়ে যায়। ফারিয়াকে স্কুল থেকে আনতে গিয়ে দ্বিতীয় দফা অবাক হয়ে যায়। কারণ আজও সোহেল বাইরে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সোহেলকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফাতেমাকে ভীষণ রেগে যায়। সরাসরি তার সামনে গিয়ে বলে,
‘তুমি কি করছ এখানে? তোমাকে না আমি স্পষ্ট করে বলেছিলাম আমার বা আমার মেয়ের সাথে কোন যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না। তাহলে কেন এসেছ তুমি এখানে?’
‘তোমার কথা শুনতে আমি বাধ্য নই। কারণ ফারিয়া শুধু তোমার একার মেয়ে নয়, ও আমারও মেয়ে। তাই ওর উপরে আমারও সমান অধিকার আছে।’
‘অধিকার! কোন অধিকারের কথা বলছ তুমি? নিজের মেয়েকে মাঝ রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দিয়ে এখন তুমি অধিকার দেখাতে এসেছ! যাও বলছি আমার সামনে থেকে।’
এমন সময় গাড়ি থেকে নেমে আসে নয়না। সে এসেই বলে,
‘ফারিয়া তোর একার মেয়ে নয়। ফারিয়া সোহেলেরও মেয়ে। আর তাই সোহেল এবার নিজের মেয়ের জন্য লড়াই করবে। সোহেল তো ঠিক করেছে এবার কোর্টে লড়াই হবে।’
‘কোর্টে লড়াই হবে মানে?’
‘মানেটা খুবই পরিস্কার। তোদের ডিভোর্সের কেসে ফারিয়ার কাস্টডি কে পাবে সেটা নিয়েও তো লড়াই হবে নাকি।’
ফাতেমা হতবাক হয়ে যায়। সে ভাবতেও পারে নি এমন কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। বিশেষ করে নয়না তো বলেইছিল যে, সে ফারিয়াকে নিজের চোখের সামনে দেখতে চায় না। তাহলে হঠাৎ করে এত বদলে গেল কেন সে?
ফাতেমা স্পষ্ট ভাষায় বলে দেয়,
‘আমার মেয়ে আমার কাছেই থাকবে। তোদের মতো জানোয়ারের কাছে আমি আমার মেয়েকে যেতে দেব না।’
নয়না কপট হেসে বলে,
‘ফারিয়া কার কাছে থাকবে সেই ফয়সালা তো কোর্ট করবে তুই না।’
ফাতেমা নয়নার দিকে আঙুল তুলে বলে,
‘তুই আমার স্বামীকে তো কেড়ে নিয়েছিস কিন্তু আমার সন্তানকে তুই আমার থেকে আলাদা করতে পারবি না। একজন মায়ের শক্তি কতোটা তুই জানিস না। একজন মা তার সন্তানের জন্য জীবনও দিতে পারে, এমনকি কারো জীবন নিতেও দুইবার ভাবে না। তাই বলছি আমার মেয়ের দিকে চোখ তুলে চাকাস না। নাহলে তোর চোখ আমি উপড়ে ফেলব।’
এই বলে ফাতেমা চলে যায়। কারণ ফারিয়ার স্কুলে ছুটির ঘন্টা বাজিয়ে দিয়েছে। এখনই তাকে আনতে যেতে হবে নাহলে দেরি হয়ে যাবে। ফাতেমা যাওয়ার পরই নয়না হিংস্র ভাবে তাকিয়ে বলে,
‘তোর যা যা প্রিয় সব আমি তোর থেকে আলাদা করে দেব ফাতেমা। তোর খুশি যে আমার সহ্য হয়না। ভেবেছিলাম সোহেলকে কেড়ে নিয়ে তোকে আমি ভেঙে গুড়িয়ে দেব কিন্তু তুই তো এখনো আগের মতোই আছিস। তাই এবার আমি এমন যায়গায় হাত দিয়েছি যেটা তোর কাছে সবথেকে দূর্বল। আমি জানি ফারিয়াকে তুই নিজের প্রাণের থেকেও বেশি ভালোবাসিস। তাই এবার তোর মেয়ে ফারিয়াকে আমি তোর থেকে আলাদা করে দেব।’
১৬.
ফারিয়া স্কুল থেকে বেরিয়ে ফাতেমার কাছে দৌড়ে আসে। ফাতেমাও পরম মমতার সহিল আগলে নেয় নিজের মেয়েকে। ফারিয়াকে জড়িয়ে ধরে আবেগপ্রবণ হয়ে বলে,
‘আমার মেয়ে! আমার কলিজার টুকরা তুই। আমি তোকে কিছুতেই নিজের থেকে আলাদা হতে দেব না।’
ফাতেমার চোখে জল চলে আসে। এই মেয়ের জন্যই তো এখন সে বেঁচে আছে। অথচ ঐ শকুনিরা এখন তার মেয়ের দিকেও নজর দিয়েছে। ফারিয়া নিজের মায়ের চোখের জল বুঝতে পেরে বলে,
‘তুমি কাঁদছ কেন আম্মু?’
ফাতেমা মেয়ের কাছে নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করতে চায় না। তাই তো চোখের জল মুছে বলে,
‘কই কাঁদছি? আচ্ছা ফারিয়া, তুমি তো আমার মেয়ে। তুমি তো সবসময় নিজের মায়ের কাছে থাকবে তাইনা?’
‘হ্যাঁ, মা। আমি সবসময় তোমার কাছেই থাকব।’
‘কেউ তোমাকে আমার থেকে আলাদা করতে পারবে না কেউ না। ওরা কোর্টে যাবে তো যাক। দেখি কিভাবে আমার কাছ থেকে তোমাকে কেড়ে নেয়। এবার গোটা জগৎ দেখবে একজন মায়ের শক্তি।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/