#আশার_হাত_বাড়ায়|২৫|
#ইশরাত_জাহান
🦋
চারপাশে আলো নিভে গেছে।এখন শুধু ছোট ছোট ঝাড়বাতি জ্বলছে।সোজা স্টেজ থেকে হেঁটে আসছে সুনেহরা।সুনেহরার পরনে ব্রাইডাল ড্রেস।একদম ব্রাইডাল লুক নিয়ে হাঁটছে সুনেহরা।সবাই দেখছে তাকে।কোমড়ে হাত দিয়ে একটা ঘোমটা ধরে এদিক ওদিক ফিরে নিজের লুকস দিতে থাকে।সামনে থেকে ছবি তুলছে ক্যামেরাম্যান। সুনেহরা চলে যাওয়ার পর সবাই হাততালি দিতে থাকে।এরপর আবার একটি লম্বা গাউন পরে এসেছে।সাইডে ওড়না তাও পুরো জর্জেট।গাউনের হাতা ছোট থাকায় সৃষ্টি বেগম কিছুটা চোখ মুখ ছোট করে দেখছিলেন।তিনি এসবে অভ্যস্ত নয়।সবার তালে তালে রিমলি নিজেও হাত তালি দিয়ে উপভোগ করছে।সৃষ্টি বেগম কাউকে কিছু না বললেও রিমলিকে বকতে থাকেন,”এরপর থেকে আমাকে এসব জায়গায় আনবি না।পোশাকের কি শ্রী!এগুলো পরেই তো দিন দুনিয়া উচ্ছন্নে যায়।”
রিমলি চোখ ছোট ছোট করে বলে,”উফ মা!তুমি আধুনিকতা বুঝো না।”
“হ্যাঁ তাই।আমি তো শরীর দেখানো পোশাকের আধুনিকতা বুঝি না।শোন,তুই যেনো এসব দেখে মাথায় এসবের পোকা ঢুকাবি না।আর তোর বোনও যদি এসব পরে ওরও খবর আছে।”
“আচ্ছা মা পরব না।এবার খুশি?”
“হুম।”
বলেই শাড়ির আচল আরো একটু কাছে এগিয়ে মুখ ঢাকতে থাকেন।পাশে বসে থাকা অহি এতক্ষণ সবকিছু শুনছিলেন।স্ট্যান্ডার না হলেও সৃষ্টি বেগম তার সন্তানদের শিক্ষা দিয়ে বড় করেছেন।এটাই যেনো একটা আলাদা শান্তি।অহি কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখলো সৃষ্টি বেগমকে। মনে মনে বলেন,”গরীবের মনেও শান্তি মেলে।যদি সে তার কাছের মানুষের কদর বোঝে।”
তারপর মিস্টার তিহানের দিকে তাকিয়ে ভাবছেন,”আমি তোমার কিছু করবো না।কিন্তু আমি অপেক্ষায় থাকবো।প্রকৃতি তোমার কি করে এটাই দেখতে চাই।নিজের কর্মের জন্য অনুতপ্ত তুমি হবে।”
ভালো লাগছে না অহির কাছে এসব। ফারাজকে জানিয়ে চলে যায় বাসায়।সুনেহরা এবার স্টেজ থেকে নেমে সোজা ফারাজের বিদেশী ক্লায়েন্টদের সামনে গেলো।ওরা সুনেহরার প্রশংসা করছে।অনেক সুন্দর লাগছে সুনেহরাকে আরও অনেক কিছু।সব শেষে এনি বলে,”এই লুকস ঠিক করেছে শেহনাজ।”
বিদেশী ক্লায়েন্টদের একজন যে শ্রেয়ার দিকে প্রথমদিন নজর দিয়েছিলো তার নাম জ্যাক।আজও শ্রেয়ার প্রশংসায় শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি।শ্রেয়া তার মত কাজ করতে ব্যাস্ত।সুনেহরার সাথে কথা বলছে শ্রেয়া।আর জ্যাক তাকিয়ে আছে শ্রেয়ার দিকে।ফারাজ তখন অন্য ক্লায়েন্টদের সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত।চৌধুরী ফ্যাশন হাউজের কাছে ব্রাইডাল ড্রেস সহ আরো কিছু ড্রেসের অর্ডার এসেছে।তাও কক্স বাজার থেকে।কক্স বাজারের একজন শিল্পপতি মিস্টার জায়ানের মেয়ের বিয়ে।সেখানে সমস্ত কিছু থাকবে নামিদামি।আর তাই তারা চৌধুরী ফ্যাশন হাউজের থেকে ড্রেস অর্ডার করে রেখেছেন।সেই ড্রেসের সেম্পোল হিসেবে আজ মডেলিং করলো সুনেহরা।আর লং গাউনগুলো বিদেশের বড় বড় শোরুমে সেল করা হবে।ফারাজ কথার মাঝে তাকালো জ্যাকের দিকে।মূলত কিছুক্ষণ ধরেই জ্যাককে প্রশ্ন করছে ফারাজ।কিন্তু জ্যাক কোনো উত্তর দিচ্ছে না।জ্যাকের দিকে তাকাতেই ফারাজ দেখতে পেলো জ্যাক এক দৃষ্টিতে দেখছে শ্রেয়াকে।বিষয়টাকে গুরুত্ব না দিয়ে কিছুটা জোরে ফারাজ বলে,”মিস্টার জ্যাক।”
জ্যাক ঘুরে তাকালো ফারাজের দিকে।বলে,”ইয়েস মিস্টার ফারাজ?”
“উইল ইউ রেডী ফর দিস প্রজেক্ট?”
“ইয়াহ,অফ কোর্স।”
ডিল কমপ্লিট করে এখন সবাই ড্যান্স ফ্লোরে যাচ্ছে।স্টেজে এখন কাপোল ড্যান্স চলছে।শিহাব কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ রিমলির ছবি তুলছিলো।এখন রিমলির কাছে এসে হাত বাড়িয়ে বলে,”আমার সাথে ড্যান্স করবে?”
শুকনো ঢোক গিলে সৃষ্টি বেগমকে দেখে নিলো রিমলি।সৃষ্টি বেগম এসব পছন্দ করেন না।হালকা হেসে রাগের সাথে রিমলি বলে,”না।আমি এসব ড্যান্স ফ্যান্স পারি না।”
শিহাব আর কোনো কথা না বলে পাশে একটি চেয়ারে বসে।শ্রেয়া এনির সাথে কথা বলছে।শ্রেয়ার হাত ধরে আছে মিমি।অর্পা আর মিরাজ কাপল ড্যান্স করতে ব্যাস্ত।ফারাজ ব্যাস্ত মিডিয়ার লোকদের সাথে।ফারাজ এখন সাংবাদিকদের সামনে দাড়িয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকে।জিনিয়া আর অতসী রাগী দৃষ্টিতে দেখছে সবাইকে।সবাই ব্যস্ত থাকায় শ্রেয়া মিমিকে নিয়ে ঘুরছে এদিক ওদিক।হঠাৎ শ্রেয়ার সামনে আসলো জ্যাক।শ্রেয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,”উইল ইউ ড্যান্স উইথ মী?”
শ্রেয়া সৌজন্য মূলক হাসি দিয়ে ভদ্রভাবে বলে,”সরি। আই ক্যান্ট।”
“প্লীজ।বিউটিফুল লেডি।”
শ্রেয়া বারবার না করছে কিন্তু জ্যাক শুনতে ইচ্ছুক না।সে চায় শ্রেয়ার সাথে ড্যান্স করতে।দৃশ্যটি চোখ এড়ালো না সৃষ্টি বেগমের।উঠে দাঁড়ালেন মাত্র।ওমনি রিমলি ধরে নিলো সৃষ্টি বেগমের হাত।ফিসফিস করে বলে,”আরে মা কি করছো?এরা বিদেশী ক্লায়েন্ট।বাঙালি থেরাপি দিতে যেও না।তাহলে ডিল যাবে ক্যান্সেল হয়ে টাকা যাবে পানিতে।”
চোখ রাঙিয়ে সৃষ্টি বেগম বলেন,”টাকা গেলে যাবে।টিনের ফুটো বাড়িতে না খেয়ে থাকবো কিন্তু মেয়ের জীবনকে এভাবে উচ্ছন্নে যেতে দিবো না।কত বড় সাহস দেখ।আমার মেয়ের সাথে নাচার জন্য পিছে লেগে আছে।বারবার না বলছে তারপরও ওর কোনো বিবেক নেই।”
রিমলি কোনো রকমে সৃষ্টি বেগমের হাত ধরে রেখেছে।ওদিকে জ্যাক রিকোয়েস্ট করতে করতে এখন যেনো সাহস আরো বেশি পেলো।খোপ করে ধরতে যাবে শ্রেয়ার হাত।ঠিক তখনই ফারাজ এসে ধরে নেয় জ্যাকের হাত। জ্যাক ঘুরে তাকালো ফারাজের দিকে।ফারাজ কণ্ঠে রাগ মিশিয়ে জ্যাককে বলে,”শি ইজ নট লাইক ফরেইন গার্ল।শি ইজ ভেরি নরমাল পারসন এন্ড কেরি ওল্ড বেঙ্গলি ট্রেডিশন।সো লেট হার গো।ডোন্ট ট্রাই টু ডিস্টার্ব হার।ইটস আওয়ার রিকোয়েস্ট।”
ফারাজের কথায় জ্যাক তার আরেক পার্টনারের দিকে তাকালো।তিনি চোখ দিয়ে ইশারা করতেই সরে আসলো জ্যাক।শ্রেয়া চুপ করে মাথা নিচু করে আছে।ফারাজ এবার শ্রেয়াকে বলে,”নিজেকে শক্ত রাখতে না পারলে এসব জায়গায় চাকরি করবেন কিভাবে?এখানে থাকতে হলে মুখে তালা মেরে বসে থাকবেন না।যদি মুখে তালা মেরে রাখার ইচ্ছা হয় তাহলে অন্য ব্যাবস্থা করুন নিজের জন্য।”
বলেই চলে গেলো ফারাজ।মিউজিক এর জন্য ফারাজের কথা কারো কাজে পৌঁছায়নি।কিন্তু ফারাজের এমন কথায় আহত হয়েছে শ্রেয়া।চাকরির শুরু থেকে এই পর্যন্ত লোকটা কথা বলে না বললেই চলে।কিন্তু যখন কথা বলে কড়া কথা শুনিয়ে দেয়।এনি শুনেছে ফারাজের কথা।কারণ সে পাশেই ছিলো। ফারাজকে ভালো করেই চেনে এনি।ফারাজ খুবই গম্ভীর একটি ছেলে।যে এসব আমতা আমতা পছন্দ করে না।মেয়ে হোক বা ছেলে সবাইকে স্ট্রেট আর স্ট্রং থাকতে হবে।এটাই ফারাজের কথা।এনি একটি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত হলো।শ্রেয়াকে শক্ত হতে এই কথাগুলো হজম করতে হবে।সব সময় সাপোর্ট করলে ফারাজের কথাগুলোর অর্থ শ্রেয়া বুঝবে না।এনি যেতেই মিমি শ্রেয়ার হাত ধরে ঝাঁকালো।শ্রেয়া তাকাতেই মিমি হাত দিয়ে ইশারা করে নিচু হতে।কারণ এই গান বাজনায় মিমির আস্তে আস্তে কথা শুনতে পাবে না শ্রেয়া।শ্রেয়া একটু ঝুঁকতেই মিমি শ্রেয়ার কানে কানে বলে,”আমার পাপা এমন।একটু রাগী।বোকা বোকা হয়ে থাকলে পাপা পছন্দ করে না।আমাকেও স্ট্রং বানিয়েছে পাপা।তোমাকেও স্ট্রং হতে হবে আন্টি।”
মিমির কথাগুলো বাচ্চা বাচ্চা হওয়ার কারণে শ্রেয়া হেসে দিলো।তবে শ্রেয়া বুঝতে পারল ফারাজ মিমিকে ভিন্নভাবে শিক্ষা দিয়ে বড় করছে।এই যেমন কিভাবে নিজেকে স্ট্রং রাখা যায়।কোনো কাজে ঘাবড়ে না যেয়ে সাহসী হতে হবে এমন।শ্রেয়ার মন খারাপটা ভালো হয়ে গেলো।ফারাজ এখন তার বস।অবশ্যই কোনো কর্মচারী এভাবে থাকলে তার দ্বারা কোম্পানির লস বেশি হবে।
রিমলি এবার সৃষ্টি বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে,”দেখেছো আম্মু।আপুর কাছে কেউ যেতে পারেনি।”
“ফারাজ ছিলো বলেই বেচে গেলো ওই ছেলে।নাহলে আমি ওইটাকে আজ এখানে থাপ্পড় দিতাম।”
বলতে না বলতেই সৃষ্টি বেগম হাসফাস করতে লাগলেন। রিমলি বুঝলো এসি চলার কারণে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে।তাড়াতাড়ি ব্যাগ হাতে নিয়ে ইনহেলার খুঁজতে লাগলো।কিন্তু ইনহেলার পেলো না।আতঙ্কের সাথে রিমলি বলে,”তোমার ব্যাগে আমি ইনহেলার রেখেছিলাম মা। কোথায় তাহলে?”
সৃষ্টি বেগম হাঁফাতে হাঁফাতে বলেন,”তুই রাখার পর আমি আবার ইনহেলাম নিয়েছিলাম।হয়তো ভুলে রেখে এসেছি।”
রিমলির থেকে কিছুটা দূরে শিহাব বসে ছিলো।সৃষ্টি বেগমকে এভাবে হাঁফাতে দেখে শিহাব বলে,”কি হয়েছে আন্টির?”
কান্না করে দেয় রিমলি।তাড়াতাড়ি করে উঠাতে নেয় সৃষ্টি বেগমকে আর বলে,”আম্মুর শ্বাসকষ্ট বেড়েছে।আমরা তো এসিতে অভ্যস্ত না।হয়তো তাই আজ একেবারে এসিতে এতক্ষণ থাকায় আম্মুর শ্বাসকষ্ট বেড়েছে। এসির মাত্রা অনেক।আমি আম্মুকে নিয়ে বাসায় যাব।”
“চলো আমিও যাই তোমাদের সাথে।বাসা অনেক দূর।মাঝে ফার্মেসি আছে।ওখান থেকে ইনহেলার নিতে হবে।তাড়াতাড়ি আসো।আমি গাড়ি স্টার্ট দিতে থাকি।”
বলেই শিহাব চলে যায়। রিমলি একবার শ্রেয়ার দিকে তাকালো।শ্রেয়া কাগজপত্র নিয়ে ব্যাস্ত।এনি ওদের কাছেই ছিলো। আস্তে আস্তে সৃষ্টি বেগমকে নিয়ে রিমলি এনির কাছে এসে বলে,”আপু কি ব্যাস্ত?”
এনি সৃষ্টি বেগমকে দেখে বলে,”কি হয়েছে ওনার?”
“আম্মুর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।এখানে থাকা সম্ভব না।বাসায় যেতে হবে।আপু কি যেতে পারবে?”
“শেহনাজ তো ব্যাস্ত থাকবে এখন।কজ হ্যান্ডসাম নিজেও এখন ব্যাস্ত।তবুও আমি ডেকে দিচ্ছি।”
এনিকে বাধা দিয়ে রিমলি বলে,”দরকার নেই।আমি আম্মুকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বের হই।আপনি আপুকে পরে জানিয়ে দিবেন।আম্মুকে নিয়ে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না।আমরা আসি।”
“ওকে রাস্তায় সমস্যা হলে অবশ্যই কল দিও।আমার নাম্বার এটাতে আছে।”
বলেই একটি কার্ড দিলো রিমলির হাতে।আর কোনো কথা না বলে কার্ড নিয়ে সৃষ্টি বেগমকে নিয়ে চলে যাচ্ছে রিমলি।সৃষ্টি বেগম তার মাথাটা রিমলির কাধে রেখেছে।প্রায় অজ্ঞান হয়ে আছে বলা যায়।এভাবে চলতে থাকলে ক্ষতি হবে তার।তাই তাড়াহুড়া করে চলে গেলো রিমলি।গাড়িতে উঠে ম্যাসেজ করে দিলো শ্রেয়াকে।ঘাড়ে ঝোলানো পার্স হওয়ায় ম্যাসেজ এর শব্দ পায়নি শ্রেয়া।সে তার মতো ফাইল দেখছে।পার্টিতে ইনজয় করবে কি? ফারাজ তাকে কাজ দিয়ে বসিয়ে রেখেছে।অবশ্য এতেই ভালো।নাহলে জ্যাকের যন্ত্রণায় কোনো দিকে যাওয়া যায় না।
কাগজগুলো দেখা শেষ করে মা আর বোনকে দেখতে চোখটা ঘোরালো টেবিলের দিকে।দেখতে পেলো না সৃষ্টি বেগম ও রিমলিকে।কাজের মাঝেই কিছুক্ষন পর পর তাকাচ্ছিলো মা বোনের দিকে।মাত্র পনেরো কি বিশ মিনিট হলো ফাইল দেখছে মনোযোগ দিয়ে।এই টেবিলের সামনে বসে ছিল এতক্ষণ মা বোন।তাহলে গেলো কোথায়?শ্রেয়া আসে পাশে চোখ বোলালো।পেলো না কাউকে।ফোন বের করে কল দিতে যাবে দেখলো রিমলির ম্যাসেজ।শ্রেয়া ঘাবড়ে যায়।সাথে সাথে কল দেয়। রিমলি রিসিভ করে না।শ্রেয়া ম্যাসেজ করে,”আম্মুকে নিয়ে কোথায় আছিস?আম্মুর অবস্থা কেমন একটু জানা বোন।”
সৃষ্টি বেগমকে নিয়ে ব্যাস্ত রিমলি।শ্বাসকষ্ট হলে তার বুকে ব্যাথা বারে।এখন আরো বেশি জোরে হাঁপাচ্ছে।রিমলি তো কান্না করা অবস্থা।বলে,”একটু তাড়াতাড়ি চালান গাড়ি। মায়ের কষ্ট বাড়ছে।মায়ের হার্টের সমস্যা আছে।শ্বাসকষ্ট অতিরিক্ত বাড়লে ক্ষতি হবে।প্লীজ তাড়াতাড়ি করুন।”
বলেই সৃষ্টি বেগমের হাত মালিশ করছে রিমলি।শিহাব গাড়ি যতটা সম্ভব দ্রুত চালাচ্ছে।বেশি জোরে হলে সৃষ্টি বেগমের জন্য ক্ষতি।রিমলি এখন এটা বোঝার মত অবস্থায় নেই।কোনমতে ফার্মেসীর সামনে এসে দৌড়ে ইনহেলার কিনে আনলো শিহাব। ইনহেলার হাতে নিয়ে সৃষ্টি বেগমের মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে চাপ দিলো।সৃষ্টি বেগম ইনহেলার নিয়ে এবার একটু শান্ত হলেন।তবে তার শরীর এখন দুর্বল আছে।চোখ মেলে তাকালেন তিনি।রিমলি এবার শান্তি পেলো।শিহাব একটি পানির বোতল এগিয়ে দিলো। রিমলি পানি খেয়ে নিজেও এবার স্থির হয়ে সৃষ্টি বেগমকে বলে,”কবে একটু নিজের জন্য ভাববে মা?এই মেয়ের এই গড়া লাগবে ওই মেয়ের ওই এই করা লাগবে।এসব করতে করতে নিজের দিকে খেয়াল রাখো না।আমি বারবার ইনহেলার চেক করে তোমার ব্যাগে রাখি।শেষে এসে একটু খেয়াল করে রাখতে পারোনি ইনহেলার কোথায়?মেয়ের কোথায় কি লাগে এগুলো বোঝো নিজের কোথায় কি লাগে বোঝো না?”
দুর্বল কণ্ঠে সৃষ্টি বেগম বলেন,”বয়স বেড়েছে আমার মা।বোধ বুদ্ধি হয়তো আস্তে আস্তে লোপ পেতে থাকবে।ভুলে যাচ্ছি সবকিছু।তোদের বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই তো আমি সমস্ত অঘটন ঘটিয়েছি।না পারলাম বড় মেয়েকে ভালো সংসারে দিতে।আর না পারলাম ছোট মেয়েটার দায়িত্ব নিতে।ব্যার্থ মা আমি।”
রিমলি কষ্ট পেলো এমন কথাতে।সৃষ্টি বেগম ভুল করেছে এটা রিমলি স্বীকার করে।কিন্তু কোন প্রেক্ষিতে সে এই ভুল পথে গেছে এটাও রিমলি বোঝে।মাথার উপর পুরুষ মানুষের ছায়া সরে গেলে কোনো মেয়েই নিজেকে স্থির রাখতে পারে না।স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি মানসিকভাবে দুর্বল।এখন দুই মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে করতে আরো অসুস্থ।শিহাবের দিকে তাকালো রিমলি।শিহাব হালকা হেসে আবার চলে গেলো ড্রাইভিং সিটে।রিমলি এবার ফোন বের করলো।তার ফোনে কল এসেছে এটা সে বুঝতে পেরেছিলো।তাই এখন শ্রেয়াকে লিখে দিলো,”আম্মু ঠিক আছে আপু।তুমি তোমার মত করে আসো।”
শ্রেয়া এখনও চিন্তায় আছে।বারবার ফোনটা হাতে নিয়ে চেক করছে।ওরা কোথায় এখন এটা না জেনেও কিছু করতে পারছে না শ্রেয়া।বাসায় যাবে সেই উপায় নেই।কারণ কাজ শেষে ফারাজ আর এনির সাথে পার্সোনাল মিটিং আছে।ভাবতে ভাবতে শ্রেয়ার ফোনে ম্যাসেজ এসেছে।ম্যাসেজটি পড়ে শান্তি পেলো শ্রেয়া।ঠিক তখনই এনি এসে বলে,”তোমার মা আর বোন বাসায় গেছে।ওনার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিলো তাই।”
মনে মনে শ্রেয়া বলে,”আগে বললে কি হতো?মাকে খুঁজতে খুঁজতে আমার জান যায় যায় অবস্থা।আপনি এখন বলছেন।”
কিন্তু মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,”হ্যা শুনেছি।বোন বলেছে মাত্র।আম্মু এখন সুস্থ আছে।চিন্তার কিছু নেই।”
চলবে…?