#আশার_হাত_বাড়ায়|২৭|
#ইশরাত_জাহান
🦋
শ্রেয়ার বাসার সামনে এসে দাড়ালো ফারাজ।তবে শ্রেয়ার বর্তমান বাসায় না আগের টিনের বাসাটা।শ্রেয়া এটা দেখে নিজের মাথায় নিজেই একটা চাপড় দিলো।তারপর বলে,”সরি স্যার।বলতে ভুলে গেছিলাম।আমাদের আজ বাসা পাল্টিয়েছে।এখানে থাকি না।”
“অ্যাড্রেস বলুন নিয়ে যাচ্ছি।”
“আপনার খালাদের বাসায় এসেছি।”
ফারাজ তাকালো শ্রেয়ার দিকে।শ্রেয়া অপ্রস্তুত হয়ে বলে,”আমি জানতাম না ওই বাসাটা ভাড়া নেওয়া হবে বা ওনারা আপনাদের আত্মীয়।কথার ছলে জেনে যাই।অর্পাও এখনও কিছু জানে না।”
“ওকে।”
বলেই গাড়ি ঘোরালো ফারাজ।মিসেস জুঁইয়ের বাসার কথা বলা হয়েছে এটা বুঝলো মিমি।খুশি হয়ে বলে,”আমাদের এত্ত কাছে থাকো তুমি?তুমি জানো ওই বাসার দুই বাসা পিছনে আমাদের বাসা।”
বলতে না বলতেই ফারাজ গাড়ি নিয়ে আসলো শ্রেয়ার বর্তমান বাসায়।গাড়ি থেকে নেমে মিমিকে আদর করলো শ্রেয়া।তারপর ফারাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”আসি।”
শ্রেয়া হাটা দিলো বাড়ির উদ্দেশ্যে।ফারাজ গাড়ি চালানো শুরু করবে ওমনি মিমি বলে,পাপা দাড়াও।”
ফারাজ থেমে যায়।মিমি গাড়ি থেকে নেমে দৌড় দেয় শ্রেয়ার কাছে।দৌড়াতে দৌড়াতে বলে,”আন্টি।”
শ্রেয়া মিমির ডাক শুনে ঘুরে তাকালো।মিমি এসে শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে।তারপর শ্রেয়াকে নিচু হতে হাত দিয়ে ইশারা করে।শ্রেয়া নিচু হতেই শ্রেয়ার দুইগালে চুমু দিয়ে মিমি বলে,”তুমি অনেক ভালো।আর এটা বিদায় কিস ছিলো।”
শ্রেয়া নিজেও মিমির দুইগালে চুমু দেয়।তারপর হেসে দিয়ে বলে,”আমিও তাহলে তোমাকে বিদায় কিস জানালাম।”
“আসি তাহলে।বাই বাই।”
“বাই।”
মিমি আবারও দৌড়ে গাড়ির দিকে যেতে থাকে।মিমি যাকে খুব বেশি ভালোবেসে ফেলে তাকে এভাবেই বিদায় জানায়।ফারাজ গাড়ির ভিতর থেকে দেখছিলো।গাড়িতে উঠে হাত নাড়ালো মিমি।শ্রেয়া নিজেও হাত নাড়িয়ে বিদায় জানায়।ফারাজ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায়।শ্রেয়া নিজেই বাসার মধ্যে ঢুকে গেলো।নিজের ব্যালকনি থেকে সবকিছু দেখছে জুঁই।খারাপ লাগেনি বিষয়টি।কিন্তু শ্রেয়া আর ফারাজ নিয়ে বেশিদূর ভাবতেও পারছে না।জিনিয়া এই সম্পর্ক মেনে নিবে না।
ঘরের মধ্যে এসে মাকে দেখে নিলো শ্রেয়া।তারপর গোসল করতে গেলো।গোসল করে এসে দেখে রিমলি কোনো ঘরেই নেই।এদিক ওদিক খোঁজ নিয়ে চলে গেলো ব্যালকনিতে। রিমলি ঘুমিয়ে আছে।তাও যেনতেন অবস্থায়। রিমলিকে আস্তে আস্তে ডাক দিলো।চোখ মেলতেই রিমলি দেখলো সে ব্যালকনিতে ঘুমিয়ে গেছে।শ্রেয়া বলে,”এখানে ঘুমিয়েছিস কেনো?”
“আরে আপু বলো না।ভালো লাগছিলো না।তাই ব্যালকনিতে এসে বসেছিলাম।কখন যে ঘুমিয়ে গেছি বুঝতেই পারিনি।”
“আয় ভিতরে।”
বলেই দুইবোন ঘুমোতে চলে যায়।লাইট বন্ধ করে ড্রিমলাইট জ্বালিয়ে রাখা আছে।বিছানায় এক প্রান্তে শ্রেয়া আর আরেক প্রান্তে রিমলি।রিমলি ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু শ্রেয়া ঘুমায়নি।তার চোখের সামনে ফারাজের মুখটা ভেসে আসছে।আর কানে ফারাজের কণ্ঠ।মিমির করা দুষ্টুমি।এই সবকিছু ভাবতে ভাবতে রাত কাটালো শ্রেয়া।ঘুম আর তার হয়নি।
সকাল বেলা আজকে শ্রেয়ার অফিস নেই।বিকালে ফ্লাইট থাকার কারণে এখন অফিসে যাওয়া লাগবে না।ঘরের কিছু কাজ করছে শ্রেয়া।এর মধ্যেই রিমলি ঘরে আসলো।হাতে একটি বাটি।শ্রেয়া প্রশ্ন করে,”কি এনেছিস?”
“একটু চাল আর ডাল বাটা।আসো তোমার মুখে দিয়ে দেই।”
“ওগুলো মেখে কি হবে?এখন ওসবের সময় নেই।”
শ্রেয়ার হাত ধরে টেনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে রিমলি বলে,”আরে আপু বসতো।একটু রূপচর্চার প্রয়োজন আছে।”
শ্রেয়াকে কিছু বলতে না দিয়ে রিমলি রূপচর্চা শুরু করে দিলো।সৃষ্টি বেগম কিছু রান্না করে টিফিন বাটিতে করে দিলেন।শ্রেয়ার ঘরে এসে বলেন,”পথে ঘাটে খুদা লাগলে খাবি।”
রিমলি হো হো করে হেসে দিয়ে বলে,”প্লেনে ওরা নাস্তা দেয় আম্মু।তুমি শুধু শুধু নাস্তা বানালে।”
“তোকে কে বলেছে নাস্তা দেয়?তুই উঠেছিস কখনও প্লেনে?”
“উফ আম্মু তুমিও না।এই ফোনের যুগে এসে কোথাও যাওয়া লাগে?এমনি এমনি জানতে পেরেছি।”
“দিক খাবার প্লেনে।শোন শ্রেয়া,তুই এই খাবার খাবি।বাইরের খাবার কেমন না কেমন হয়।”
শ্রেয়া কিছু বলতে পারছে না।মুখের প্যাকটি শুকিয়ে গেছে।এখন গাল টানটান হয়ে আছে।রিমলি হেসে দিয়ে বলে,”শুধু প্লেনের জন্য কেনো?পুরো কক্স বাজারে থাকার জন্য সাত দিনের খাবার দেও।যদিও ওরা শিওর না।তিন দিনেও চলে আসতে পারে।তবে খাবার বেচে যাবে।”
“বেশি কথা বলিস তুই।”
রিমলিকে আরো কিছু বলতে যাবে শ্রেয়া হাত দিয়ে ইশারা করে থামতে।সৃষ্টি বেগমের হাত থেকে খাবার নিয়ে ইশারা করে চুপ করতে বলে রিমলিকে।সৃষ্টি বেগমকে বুঝিয়ে দিলো ও খাবার নিয়ে যাবে।তারপর আবার ফ্যানের নিচে বসে শ্রেয়া।সৃষ্টি বেগম আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বলেন,”শোন না মা।আমাদের প্রতিবেশী খালিদ ছিলো না?ওর মা বলছিলো চট্টগ্রামে নাকি ভালো ভালো শুটকি পাওয়া যায়।আসার সময় নিয়ে আসবি তো।শুটকি মাছের ঝাল ঝাল ভর্তা কতদিন খাই না।একটু লইট্যা আর ছুরি শুটকি নিয়ে আসবি।শ্রেয়া ভাবছে শুঁটকির যে গন্ধ আসার সময় আনবে কিভাবে।মাথা ভনভন শুরু করেছে।কিন্তু জিহ্বায় পানিও চলে এসেছে।ইতিমধ্যে মাথায় এলো অর্পার কথা।অর্পা থাকতে আর চিন্তা নেই।ব্যাবস্থা হয়ে যাবে।শ্রেয়া এখন চুপ আছে।মুখে ফেসপ্যাক থাকার কারণে হ্যাঁ টুকু বলা সম্ভব না।গালে টান পরবে যে। রিমলি আবারও হেসে দেয়।হাসতে হাসতে বলে,”কাল রাতে অসুস্থ ছিলে তাই এখন মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে গেছে।তাই না আম্মু?”
চোখ রাঙিয়ে সৃষ্টি বেগম বলেন,”মেরে পিঠের চামড়া তুলে দিবো।বেশী কথা শিখেছিস।”
“তুমি নিজেই ভেবে দেখো তুমি কি বলেছো?আপু প্লেনে করে বড়বড় লোকদের সাথে যাওয়া আসা করবে আর তুমি কি না শুটকি নিয়ে আসতে বলছো!”
সৃষ্টি বেগম মনটা খারাপ করে রাখলেন।মাথায় ছিলো না যাদের সাথে যাচ্ছে তাদের একটা আলাদা পরিবেশ আছে।এরা তো আর সৃষ্টি বেগমের মতো পরিবেশের না।যে সাংসারিক কিছু পেলে কিনে নিয়ে আসবে।মায়ের মুখ নিভে আসা দেখে শ্রেয়া এবার তাড়াতাড়ি করে মুখ ধুয়ে আসলো।রিমলিকে বকা দিয়ে মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,”ওহহো আম্মু।চিন্তা করোনা তো।ব্যাবস্থা একটা হয়ে যাবে। আর শুটকি মাছ আনলে তুমি যা রান্না করবে তার অর্ধেক তো তোমার ছোট মেয়ের পেটেই চলে যায়।সে আবার পরিবেশ দেখে।”
চলতে থাকে শ্রেয়া আর রিমলির খুনশুটি।সৃষ্টি বেগম এখন নিজের চোখটা জুড়িয়ে দেখছেন।এই দৃশ্য স্বামী বেঁচে থাকতে অনেক দেখেছিলেন।আজ আবারও দেখছেন।না দেখে না বুঝে হুট করে ভালো ব্যবহার আর টাকা পয়সা আছে এমন দেখে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন।ভালো ভালো কথা বলে যা চেয়েছিলেন সৃষ্টি বেগম ওদের তাই তাই দিয়ে দিলেন।সহজ সরল সৃষ্টি বেগম ছোট থেকে যেভাবে সবাইকে চলতে দেখেছেন।ভেবেছিলেন এটাই মেয়েদের সুখ।
দুপুরের দিকে এনি আর অর্পা এসেছে।সাথে এসেছে মিমিও।ফারাজ আর মিরাজ একসাথে এয়ারপোর্টে যাবে।এনি কিছু প্যাকেট শ্রেয়ার হাতে দিয়ে বলে,”বিয়েতে আমরা সবাই সেম ড্রেস পরব।তোমার জন্যেও এনেছি।গুছিয়ে নেও।”
শ্রেয়া ব্যাগ গুছিয়ে নিলো।সৃষ্টি বেগম সবাইকে কেক দিলো।যেটা সকাল সকাল শ্রেয়া আর রিমলি মিলে বানিয়েছিলো।এনি কেক খেয়ে বলে,”কে বানিয়েছে এই কেক?একদম রেস্টুরেন্টের মতো।”
শ্রেয়া বিছানায় বসেছিলো।শ্রেয়ার কাধে হাত দিয়ে রিমলি বলে,”আমার আপু বানিয়েছে।”
অবাকের সাথে এনি বলে,”এভাবে পারফেক্ট কেক কিভাবে সম্ভব?আমরা হুবহু সব জিনিসপত্র এনেও তো পারি না।”
“আমাদের যশোরে কুকিং কোর্স হতো।সপ্তাহে দুইদিন করে।আপুর খুব ভালো লাগে রেস্টুরেন্টের খাবার বাসায় রান্না করতে।খুব ইচ্ছা ছিলো যশোর ফুড হাউজ খোলার।তাই আব্বু আমাকে আর আপুকে কোর্স করাতো।চাইনিজ আইটেম শিখতাম আমরা।সবকিছু শিখেছিলাম।আব্বু ছোট দেখে একটা ওভেন কিনে দেয়।আমরা কত আনন্দের সাথে বিকালের নাস্তা বানাতাম।প্র্যাকটিস করতাম পারফেক্ট কেক বানানোর।পেরেও যাই আমরা।কিন্তু আব্বু মারা যাওয়ার পর সব পাল্টে গেলো।আমাদের বিলাসিতা কমতে থাকলো।সুসময়ে সব থাকে।দুঃসময়ে সব হারিয়ে যায়।ওভেনটাও এক সময় নষ্ট হয়ে গেলো।আমরা সব শিখে রেখেও কোনো কাজে আসলো না।আজ হঠাৎ একটু খেতে ইচ্ছে করলো।অভিজ্ঞতা থাকায় জুঁই আন্টি বললেন ওনার ওভেনে বানাতে।”
কথাগুলো বলতে বলতেই রিমলির মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে এলো।রুমে সবাই ছিলো।মিসেস জুঁই নিজেও সেখানে ছিলেন।বোনের নাতি তো নিজেরও নাতি।মিমিকে দেখতে এসেছেন।রিমলির থেকে এসব শুনে তিনি বলেন,”তোমাদের বাবা তোমাদের অনেক কিছুই শিখিয়েছেন তাই না?”
মাথা নাড়িয়ে রিমলি বলে,”বাবা আমাদের অনেক কিছু করতেই সাহস দিতো।আমরা দুই বোন যা চাইতাম বাবা সাথে সাথে এনে দিতো।মা বারণ করলেও শুনত না।বাবা ছিলো আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড।”
দীর্ঘশ্বাস নিলো রিমলি।শ্রেয়ার থেকে রিমলি একটু বেশী তার বাবাকে মনে করে।কারণ রিমলি যেমন উড়নচণ্ডী ওদের বাবা ওদের সেভাবে গড়ে তুলতে চাইতো।শ্রেয়া হয়েছে মায়ের মত।ভীতু লাজুক এমন ধরনের।কেউ কিছু বললে মাথা নত করে শুনত শ্রেয়া।আর রিমলি মুখের উপর জবাব দিয়ে দিতো।ফারাজ কল করেছে।ওরা বেড় হচ্ছে এয়রাপোর্টের দিকে।এনি এবার তাড়া দিয়ে বলে,”চলো চলো ফারাজ কল দিয়েছে।এবার যেতে হবে।”
মা আর বোনকে বিদায় দিয়ে গাড়িতে উঠলো শ্রেয়া।সৃষ্টি বেগম কান্না করে দিলেন।এটা সবসময় হয়।শ্রেয়া বিয়ের পর যে কয়বার যশোরে এসে আবার ঢাকায় আসতো তখনও এমন কান্না করতেন সৃষ্টি বেগম।মেয়ে দূরে গেলেই বুকের ভিতর শূন্যতা অনুভব করে। রিমলি জড়িয়ে ধরে সৃষ্টি বেগমকে।সৃষ্টি বেগম ছোট মেয়েকে দেখে আলতো হেসে ঘরে চলে যান।
এয়ারপোর্টে এসে দাড়ালো শ্রেয়া।এতদিন সে এয়ারপোর্ট গেট অব্দি ঘুরতে পারতো।যশোরের এয়ারপোর্টের আশেপাশে ঘোড়ার জায়গা আছে।ওখানে দাঁড়িয়ে প্লেন দেখা যেতো।কিন্তু আজকে সে প্লেনে উঠতে পারবে।এটা ভেবে মনটা খুশিতে ভরে গেলো।মিমি অনেকবারই প্লেনে উঠেছে।কিন্তু তারপরও মিমি প্লেন দেখলে আনন্দে লাফিয়ে ওঠে।আজও তাই করছে।ফারাজ ও মিরাজ এসে দাড়ালো ওদের সামনে।আজকে ফারাজ শার্ট কোর্ট পরে নেই।শুধু একটি শার্ট আর জিন্স পরে আছে।এই গরমে কোর্ট পরতে ইচ্ছে করলো না তার।শ্রেয়া আজ ভিন্ন লুকে দেখছে ফারাজকে।একদম সাধারণ মানুষের মত লাগছে।কিছুক্ষণ ফারাজকে দেখে চোখ সরিয়ে নিলো।মিমির হাতটা ধরে চলে গেলো এয়ারপোর্টের ভিতরে।সকল নিয়ম কানুন পালন করে প্লেনে নিজস্ব সিটে বসেছে সবাই।শ্রেয়া বসার পর ওর পাশে মিমি বসেছে।তার পাশেই ফারাজ।না চাইতেও শ্রেয়ার মুখে শীতল হাসির রেখা দেখা দিলো।কিন্তু কেনো শ্রেয়া এখনও বুঝে উঠতে পারছে না।শুরুতে হয়তো শ্রেয়া অনুভব করলেও বুঝতে পারবে না।মিমির সাথে কথা বলতে থাকে।ঠিক তখনই একটি মেয়ে(বিমানবালা) হাত ইশারা করে সবকিছু বুঝিয়ে দেয়।অন্যদিকে মাইকে আরো একটি মেয়ের কণ্ঠ ভেসে আসছে।সবাই সিটবেল্ট বাঁধতে থাকে।এটা দেখে শ্রেয়াও বাঁধতে চায়।কিন্তু যে মেয়েটি ইশারা করে দেখিয়ে দেয় সে এত দ্রুত বুঝিয়ে দেয় যে শ্রেয়া তাল মিলিয়ে কিছুই করতে পারেনি।এখনও হাতে বেল্ট নিয়ে বসে আছে।মিমির বেল্ট ফারাজ লাগিয়ে দিয়েছে।শ্রেয়া এখনও বেল্ট হাতে নিয়ে বসে আছে।পারছে না বেল্ট লাগাতে।ওদিকে বেল্ট লাগানোর পর পরই প্লেন নড়ে ওঠে।এখনই আকাশে উড়াল দিবে।প্লেনের এভাবে উপরে ওঠার সাথে সাথেই ভয়তে কেপে ওঠে শ্রেয়া।একেতো এই প্রথম তার প্লেন জার্নি।আবার বেল্ট এখনও খোলা।কাপতে কাপতে না চাইতেও শ্রেয়া পাশে থাকা মিমিকে জড়িয়ে ধরতে চায়।কিন্তু মিমি ছোট হওয়ায় মিমির নাগাল পায় না।চোখ বন্ধ করা শ্রেয়ার মাথায় নেই মিমি পাশে বসে থাকলেও সে তার থেকে অনেকটাই নিচে।বেখেয়ালে শ্রেয়ার হাত আবারও যায় ফারাজের গলার দিকে।খামচে ধরে আবারও।চোখ বন্ধ করে বিপদের দোয়া পড়ছে।বসে থাকা মিমি মাথা উচু করে দেখছে শ্রেয়াকে।শ্রেয়ার ভীতু মুখ দেখে সে কিছুই বলতে পারছে না।এদিকে ফারাজ তার গলার ব্যাথায় তাকিয়ে আছে শ্রেয়ার দিকে।অর্পা হা করে মিরাজের দিকে তাকালো।মিরাজ তো এবার বলেই ফেলে,”এই তোমার বান্ধবী কি আমার ভাইয়ের গলাটাই বোঝে।ভয় পেলেই কেনো ভাইয়ের গলা খামচে ধরতে হবে?”
অর্পা ক্ষিপ্ত নয়নে মিরাজকে বলে,”আমি যখন প্লেনে উঠেছিলাম তখনকার কথা ভুলে গেছো?”
“একদম মনে আছে।তুমি তো প্লেনে ওঠার সময় আমার কোলে পরে গেছিলে।আর আমি হিরোদের মত তোমাকে কোলে নিয়ে নেই।”
“তোমার বড়ভাইয়ের সামনে কি শুরু করেছিলে।ছিঃ!”
“এই একদম ছিঃ করবে না।আমি আমার বউকে টুকুস করে চুমু দিয়েছিলাম।তাতে কার বাপের কি?”
“নির্লজ্জ কোথাকার।”
“বউয়ের সাথে নির্লজ্জ না হলে স্বামীর পরিচয় থাকে না।লজ্জাবতী হবে তো বউয়েরা।স্বামী সেই লজ্জা নিবারণ করে নিবে।”
অর্পা কথাগুলো শুনেও না শোনার মতো করে আছে।প্লেন এখন আকাশে উড়ছে।সবকিছু স্বাভাবিক।মিমি এখনও শ্রেয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে।শ্রেয়া চোখ বন্ধ করে দোয়া পড়ছে।পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখে ফারাজ হালকা কেশে বলে,”এভরিথিং ইজ ফাইন মিস শ্রেয়া।চোখ খুলতে পারেন।”
ফারাজ বলতে পারছে না তার গলার কথা।শ্রেয়া ধীরে ধীরে চোখ খুলে ফারাজের দিকে তাকালো।ফারাজও তাকিয়ে আছে শ্রেয়ার দিকে।কিন্তু দুজনের তাকিয়ে থাকার ধরন এক না।একেকজন একেক অনুভূতিতে আছে।শ্রেয়া আছে ফারাজের উপর মোহিত দৃষ্টিতে আর ফারাজ আছে পরিস্থিতির থেকে মুক্তি পাওয়ার দৃষ্টিতে।ফারাজকে কিছুক্ষণ দেখার পর যখন দেখলো আবারও ফারাজের গলার দিকটা খামচে আছে শ্রেয়া হাত সরিয়ে নেয়।লজ্জা পেয়ে পাশে তাকালো।সবাই এখন সিটবেল্ট খুলেছে।এখন আর কোনো রিস্ক নেই।ফারাজ উঠে ওয়াশরুমে গেলো।গলার দিকটা দেখে বলে,”মেয়ে না ডায়নি?বড় বড় নখ দিয়ে পরপর দুইদিন খামচে দেয়।”
“মানবতার খাতিরে কিছু বলতে পারছো না তাই না ভাই?”
পিছন থেকে মিরাজ বলে।ফারাজ পাত্তা দিলো না কথাটা।এই মিরাজ সবসময় মজা নিতে থাকে।কাউকে ছাড়ে না।
চলবে…?