#আশার_হাত_বাড়ায়|২৯|
#ইশরাত_জাহান
🦋
ঘুম থেকে উঠে শ্রেয়া দেখতে পেলো ওর কোলে ঘুমিয়ে আছে মিমি।সেই যে রাতে ঘুমিয়েছে এখন উঠলো।এটাকে সাধারণত অলস ঘুম বলা হয়।সময়ের থেকেও বেশি ঘুম শরীরের জন্য ক্ষতিকর আবার রাত জেগে থাকাটাও শরীরের জন্য ক্ষতিকর।এই দুইটাই শ্রেয়া করেছে।তাই এখন তার মাথা ধরেছে।কিন্তু মিমির মুখটা দেখতে এতটাই স্নিগ্ধ লাগছে যে এখান থেকে যেতেই ইচ্ছা করছে না।ঘুমন্ত মিমি এখন চুপ হয়ে আছে।জেগে থাকলেই লাফালাফি আনন্দ হইহুল্লোড় করতো।এগুলো এখন মিস করছে শ্রেয়া।চঞ্চল মিমিকে একটু বেশিই ভালোবেসেছে সে।মিমির মুখের দিকে তাকিয়ে আফসোস হয় শ্রেয়ার।একটা বাচ্চার জন্য মেয়েরা কতটা আগ্রহ দেখায় আর সেখানে কি না অহনা এই বাচ্চা মেয়েটার মুখ দেখে দুর্বল হলো না।বাকি সব কথা বাদ বাচ্চাটাকে যে সে জন্ম দিয়েছে এটা নিয়েও তো আলাদা অনুভুতি হওয়া উচিত ছিলো।শ্রেয়া যখন বিয়ে হয় তখন তাকে এক প্রতিবেশী বলেছিলো,”তাড়াতাড়ি বাচ্চা নিয়ে নেও।বাচ্চার মুখ দেখলে তোমার সময় এমনি কেটে যাবে।”
শ্রেয়া লজ্জা পেতো।আরেকদিন রনির এক আত্মীয় এসেছিলো।তাদের মন মানসিকতা ছিলো রনিদের থেকেও ভালো।রনির কাকাতো বোন।চার মাসের বাবু ছিলো তার কোলে।রনির ওই বোন বেড়াতে আসলেও তার বেশিরভাগ সময় কাটতো বাচ্চার পিছনে।শ্রেয়াই ঘরের সব কাজ করে দিতো।কিন্তু বাচ্চা কান্নার আওয়াজে বিরক্ত হতো রনির দুই বোন।একদিন তো ওরা বলেই দেয়,”তোমার বিরক্ত লাগে না আপু বাচ্চা সামলাতে?সারাদিন কান্না করে আর এতবার ফিডিং করাতে হয়।”
রনির সেই চাচাতো বোন স্মিত হেসে বলে,”বিরক্ত লাগবে কেনো পাগলী?এটা তো মায়ের এক অনুভূতি।ভালো লাগার অনুভূতি।”
“তুমি তো এমন ছিলে না।কত স্মার্ট ছিলে।মডার্ন হয়ে চলতে।দুলাভাই তো না করেনি।এখন বাচ্চা হওয়ার পর সব পাল্টে গেছে।”
“এমনটা তোদের সাথেও হবে দেখিস।আমার যখন সিজার হয় তখন আমার মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়।কখন আমি আমার সন্তানকে দেখবো।বাচ্চাটাকে কাছে পাওয়ার পর মনে হয় এটা তো আমার অস্তিত্ব।আর যখন আমি ওকে প্রথম ফিডিং করাই ওর প্রতিটি টানে আমি আমার মা হওয়ার অনুভূতি পেতাম।বুঝলাম আমি মা হয়েছি।আমার একমাত্র দুনিয়া আমার বাচ্চাটা।মা হওয়ার পর মেয়েদের আগের সব অনুভূতি পাল্টে যায়।”
মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনতো শ্রেয়া।তারপর ও নিজেও কল্পনা করে নিতো ওর একটা বাচ্চা হবে ও তাকে নিয়ে আনন্দ করবে।গুলুমুলু হাত পা নিয়ে রনির সাথে সুখের রাজ্যে পারি দিবে।একটা সুখী পরিবার হবে।কিন্তু তা আর হলো না।শ্রেয়ার এমন ভালোলাগা অনুভূতির মাঝেই রুমা বলে দিতো,”শোনো ভাবী।তুমি কিন্তু এত তাড়াতাড়ি বাবু নিবে না।আগে আমরা এই বাড়ি থেকে বিদায় হবো তারপর বাবু নিও।নাহলে তোমার বাবুর চিল্লাচিল্লিতে আমাদের শান্তি হারাম হয়ে যাবে।”
শ্রেয়ার মন নিমিষেই খারাপ হয়ে যেতো।কতশত পরিবার আছে বাবু হয় না বলে শশুরবাড়ি থেকে ঝামেলা করে আর এরা নিজেদের শান্তির জন্য বাচ্চা নিতে নিষেধ করে।যেখানে দিনরাত খেটে যেতো শ্রেয়া একা।কেউ কোনো সাহায্য করতো না।নির্জনে অনেক কান্না করেছে সে।এখন ভাবলেই মনে হয় সে তার জীবনটাতে নতুন করে পথচলার সুযোগ পেয়েছে।রনিকে ছেড়ে ভালোই করেছে।যে পবিত্র সম্পর্কের মর্যাদা না দিয়ে অপবিত্র সম্পর্কে জড়িত হয় তাকে নিয়ে থাকা যায় না।আর অহনার মত মেয়ে এই মিমিকে উপেক্ষা করে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িত ছিলো।মানা যায় যে পরিবেশে অহনা বড় হয়েছে সেই পরিবেশে এমন অনৈতিক কাজ ঘটে যায়।কিন্তু তাই বলে বাচ্চা হওয়ার পরেও কিভাবে?ভালো হওয়ার একটা সুযোগ বা ইচ্ছা থাকলেও বিয়ের পর আচ্ছা বিয়ের পর না হোক বাচ্চা হবার পর তো নিজেকে পাল্টে নেওয়া যেতো।হয়তো সেই ইচ্ছাশক্তি শক্তি হারিয়েছে।আর এসবের মাশুল গুনতে হচ্ছে বাচ্চা মিমির।চোখ থেকে পানি পড়তে থাকে শ্রেয়ার।চোখের পানি মুছে মিমির কপালে চুমু দেয়।তারপর মিমির মাথায় হাত বোলাতে থাকে।সকাল সাড়ে দশটা বেজে গেছে তাই ফারাজ এসেছিলো মিমিকে দেখতে।দরজায় নক করেই ঢুকবে সে।কিন্তু দরজা বন্ধ থাকলেও জানালা খোলা ছিলো।দরজার কাছে যাওয়ার আগে জানালা দিয়ে দেখছে মিমির প্রতি করা স্নেহ।নিজের আনমনে ফারাজ শ্রেয়ার জায়গায় অহনাকে কল্পনা করছে।তার দৃষ্টি পাল্টে যাচ্ছে।মনে হতে থাকে ওখানে মিমি আর অহনা।মা মেয়ের ভালোবাসার মুহূর্ত।কিন্তু ফারাজের এই মিথ্যা কল্পনাকে পাল্টে দিলো মিরাজ। ফারাজের থেকে একটু দূরে দাড়িয়েই বলে,”ভাই,মিস শ্রেয়া হয়তো এখনও ওঠেনি।অর্পা বললো ওরা এখনও গভীর ঘুমে।তোমাকে যেতে হবে না।”
মিরাজের কথায় বাস্তবে ফিরলো ফারাজ।অর্পাকে দেখেছিলো সকালে।তাই ভেবেছে শ্রেয়াও ঘুম থেকে উঠেছে।তাই মেয়েকে দেখতে চেয়েছিলো।যদিও ঘরের ভিতরে ঢোকার আগে দরজায় টোকা দিতো।মিরাজের কথা শুনে একবার মিরাজকে দেখে আবারও মিমির দিকে তাকালো।দেখলো এখন ওখানে শ্রেয়া।এক দীর্ঘশ্বাস নিলো ফারাজ।ভুলভাল অনুভূতি এখনও তার মনে বিরাজ করে।ভালোবাসার নারীকে ভুলে থাকা যায় না।অতীত পাল্টে জীবনে নতুন মোড় নেওয়া সম্ভব কিন্তু অতীত কখনও মন থেকে মুছে যায় না।ওখান থেকে নিজের রুমে ফিরে যায় ফারাজ।
আজ ভোরবেলা উঠে নিজে থেকেই নামাজ পড়েছে অহনা।তারপর কুরআন তিলাওয়াত করে।পাশেই হুইলচেয়ারে বসে মনোযোগ দিয়ে শুনছেন মিসেস নাজমা।অহনার মধুর কণ্ঠে এই তিলওয়াত শুনতে তার অনেক ভালো লাগছে।অহনা কিছু কিছু জায়গায় ভুল করে ফেলছে।স্বাভাবিক ব্যাপার এটা।প্রথম দিকে ভুল হবে।কিন্তু মনে প্রাণে চেষ্টা তো করতে হবে।অহনা এখন মনে প্রাণে চেষ্টা করে।আর ভুল হলে সেই জায়গায় মিসেস নাজমা সংশোধন করে দিচ্ছেন।এখন আর অহনা রাগ করে না এসব বিষয়ে।বরং এখন তার অভ্যাস হয়ে গেছে।এগুলো এখন ধীরে ধীরে ভালো লাগছে।মূল কথা হলো যখন পরিস্থিতি পাল্টে যায় তখন আশেপাশে সবকিছু ভালো না লাগলেও এক সময় এগুলোই ভালো লাগতে থাকবে।আর এখানে তো ইসলামিক নিয়মে সবকিছু চলতে থাকে।মিসেস নাজমা আগে মডার্ন ছিলেন।তবে এতটাও না যতটা অহনা।এই সুন্দর করে শাড়ি পরে সেজেগুজে বেড় হতেন এমন।নিবিড়ের বিয়ের পর যখন কবীর হয় তখন থেকেই ধীরে ধীরে বয়সের দিকে লক্ষ্য করলেন তিনি।স্বামীর সাথে হজ্ব করলেন।তারপর ইসলামিক পরিবেশ গড়ে তুললেন।অহনার কুরআন তিলাওয়াত শেষ করে ফিরে তাকালো মিসেস নাজমার দিকে।মিসেস নাজমা মনে মনে কিছু দোয়া পড়ে অহনার গায়ে ফু দিলেন।তারপর বলেন,”আল্লাহ তোমাকে সৎ পথে থাকার তৌফিক দিক।ঈমানের সাথে থেকেই যেনো তোমার মৃত্যু হয় মা।”
মৃদু হাসে অহনা।উঠে দাড়িয়ে জায়নামাজ ভাঁজ করে বলে,”আজকে কি খাবেন?”
“রুটি খাবো আমি।আর তুমি তোমার যেটা ভালো লাগে তাই বানাও।”
মিসেস নাজমা অহনাকে এখন আর বাধা দেন না কোনো কিছুতে।অহনা যা খেতে চায় তাই রান্না করতে বলে।অনেক কিছু রান্না শিখেছে অহনা এতদিনে।মিসেস নাজমা পাশে থেকে শিখিয়ে দিয়েছেন।এখন এইগুলো রান্না করছে অহনা। আর ভাবছে কতটা পরিবর্তন হয়েছে সে।আজ সকাল সকাল নিজে থেকে উঠে নামাজ আদায় করে কুরআন তিলাওয়াত করে তারপর রান্না করে খেয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছে।সময় তো তাও পার হচ্ছে নিজ গতিতে।কর্ম যেমনই হোক না কেনো সময় তার নিজ গতিতে পার হবে।এতক্ষণ জানালার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবছে অহনা।
কলেজের কাজ শেষ করে মাত্র বাইরে এসে দাড়ালো রিমলি আর শিহাব।বাইকে উঠে শিহাব এখন স্লো মোশানে বাইক চালাচ্ছে। রিমলি চুপ আছে।হঠাৎ চিল্লাতে চিল্লাতে রিমলি বলে,”বাইক থামান বাইক থামান।”
হকচকিয়ে গেলেও বাইক থামালো শিহাব।বলে,”কি হয়েছে?”
“ওই দেখুন নার্সারি।”
“হ্যাঁ তো কি হয়েছে?”
“আরে ওখানে সামনে স্ট্রবেরি গাছ দেখা যাচ্ছে।”
“নার্সারিতে তো এসব থাকবেই।”
“আমি কিনবো গাছ।আপনি কি বুঝতে পারছেন না আমি কেনো এত এক্সাইটেড?
“ওহ আচ্ছা ঠিক আছে। নামো তাহলে।”
রিমলি দৌড়ে চলে যায় নার্সারির দিকে।বাইকে রেখে যায় ফাইল।যেটাতে রিমলির পরিচয়পত্র আছে।শিহাব ওগুলো দেখে হাতে নিয়ে এগোতে যাবে ওমনি শিহাবের চোখ যায় বার্থডেটের দিকে।ওখানে আজকের তারিখ উল্লেখ আছে।মনে পড়ে যায় রিমলি কয়েক ঘণ্টা আগেই বলেছিলো পয়দা হওয়ার দিন সে পটল তুলবে।এর মানে আজ রিমলির জন্মদিন।সাল অনুযায়ী আজ রিমলি সতেরোতে পা দিয়েছে।মুচকি হেসে শিহাব বলে,”পিচ্ছি ভালোবাসা আমার।এর জন্য একজন আমাকে অপেক্ষা করতে।”
রিমলির ফাইল ও ছোট হ্যান্ড ব্যাগ নিয়ে নার্সারিতে গেলো শিহাব।চার পাঁচটা স্ট্রবেরি গাছ পছন্দ হয়েছে রিমলির।সব গুছিয়ে দেখলো সে ব্যাগ বাইকেই রেখে এসেছে।পাশে তাকাতে দেখে শিহাব এসেছে ব্যাগ নিয়ে।হাসি হাসি মুখে রিমলি ব্যাগ নিতে যাবে শিহাব টাকা পরিশোধ করে দেয়।চোখ ছোট ছোট করে রিমলি বলে,”আপনি কেনো টাকা দিলেন?এগুলো তো আমার গাছ।”
“তোমারই থাকবে।সমস্যা নেই।একই বাসায় যেহেতু আছি তোমার গাছের স্ট্রবেরি নাহয় আমাদের দিও।”
“আপনি তো স্ট্রবেরি খান না।আন্টি বলেছিলো।”
“প্রিয় ব্যাক্তিটি যখন স্ট্রবেরিতে ভরে থাকে তখন স্ট্রবেরি ভালো না লেগে পারে?”
“মানে?”
“কিছু না চলো তাহলে।”
স্ট্রবেরি গাছ ছোট থাকায় দুইটি পলিথিনে গাছগুলো নিয়ে বাইকের সামনে ঝুঁলিয়ে রাখলো।বাইক কিছুদূর যেয়ে আবার থেমে গেলো।রিমলি বলে ওঠে,”এখানে কেনো দাড়ালেন?”
“আম্মু বলেছিলো তোমাকে বাইরে নিয়ে কিছু খাওয়াতে।কাউকে নিয়ে বাইরে আসলে কিছু খাওয়াতে হয়।”
“আমি খাবো না।তাহলেই তো হলো।”
“খাবে কি না তোমার ব্যাপার।আমার দায়িত্ব আমি পালন করবো।”
“প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন বলে মনে হচ্ছে না আপনার?”
“একদমই না।উল্টোটা মনে হচ্ছে।বেশি কথা না বলে আসো।”
রিমলি বাইক থেকে নামলো।তারপর দেখলো পাশেই একটি ক্যাফে।ক্যাফেতে কফি আর আইস ক্রিম পাওয়া যায়।ক্যাফের ভিতরে ঢুকে শিহাব স্ট্রবেরি আইস ক্রিম অর্ডার দিলো।রিমলি বলেছিলো খাবো না কিন্তু যেই স্ট্রবেরি আইস ক্রিম দেখলো লোভ সামলাতে পারছে না।সেই খেয়েই নিলো।আইস ক্রিম খেতে খেতে রিমলির মুখের চারপাশে লেগে যায়।শিহাব দেখে বিড়বিড় করে বলে,”আমার স্ট্রবেরি।আমি স্ট্রবেরি খেতে পছন্দ না করলেও তুমি নামক স্ট্রবেরিকে আমি ভালোবেসেছি।”
গাড়ি নিয়ে শিহাবের বাসায় আসছিলেন জিনিয়া।বোনের সাথে দেখা করতে আসা।রাস্তায় গাড়ির জানালা দিয়ে শিহাব ও রিমলিকে দেখে নিলেন।রিমলিকে শিহাবের সাথে ভালো লাগছে না।রিমলি দেখতে মোটামুটি হলেও শিহাবের মত সুদর্শন না। শ্যাম বর্ণের রিমলিকে মানায় না শিহাবের সাথে।তার উপর রিমলির পোষাক তাদের মতে ক্ষেত।তাই শিহাবের পাশে রিমলিকে দেখে নারাজ হলেন।কিছু না বলে চলে গেলেন।
ফ্রেশ হয়ে এসে শ্রেয়া মিমিকে ডেকে ফ্রেশ করে দিলো।তারপর কাজা নামাজ আদায় করে নিলো।আজ ঘুমিয়ে থাকার কারণে ফজরের নামাজ পড়তে তার দেরি হলো।সবকিছু শেষ করে বাইরে বেড় হয়ে সকালের নাস্তা করে নিলো।মিমি আজ শ্রেয়ার হাতেই খাবার খেয়েছে।ফারাজ নাস্তা খাওয়া শেষ করে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে।বিকালেই সবাই সমুদ্র দেখতে যাবে।শ্রেয়া খাবার শেষ করে ফারাজের কাছে এসে বসে।এনি ও ইভা এসেছে সেখানে।চারজনে মিলে কাজ করছে আর বাকিরা তাদের মতো।অর্পা তো দূর থেকে ফারাজ আর শ্রেয়াকে দেখতে ব্যাস্ত।ফারাজ ল্যাপটপের কাজ দেখাতে থাকে সবাইকে আর শ্রেয়া ফাইল নিয়ে মিলাতে থাকে।অর্পাকে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিরাজ বলে,”বেশি তাকিয়ে থেকো না। আশার পরিমাণ দীর্ঘ হতে থাকবে।”
“আশার পরিমাণ দীর্ঘ হলে কি খারাপ কিছু হবে?”
“উহু।কিন্তু ভাই বা শ্রেয়া কি চায় এটাও তো। জানতে হবে।”
“আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি শ্রেয়া বড়ভাইকে ভালোবেসেছে।বড়ভাই হয়তো এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না।তবে এভাবে জীবনে একাকীত্ব থাকা তো সম্ভব না।দিন যত এগোতে থাকবে একাকীত্ব তত গ্রাস করবে।”
“আমি জানি বউ।কিন্তু শ্রেয়াকে যদি বাসার সবাই মেনে না নেয় তখন?বাবা যতই রাজি থাকুক।যার সাথে সংসার করবে সে যদি ভালো না বাসতে পারে তো এই সংসার কখনোই পরিপূর্ণ হয় না।তার উপর যদি স্বামী শাশুড়ি দুজনেই না ভালোবাসতে পারে।তাহলে তো এই সম্পর্কের কোনো মানেই নেই।”
আহত কণ্ঠে অর্পা বলে,”হ্যাঁ তাই।মা তো ওই সিনথিয়াকে বড়ভাইয়ের বউ করতে চায়।ওই সিনথিয়া আসলে তো কেউই সুখে থাকবে না।না পাবে মিমি একটা ভালো মা না পাবে বড়ভাই একটা ভালো বউ।ওই সিনথিয়া থাকবে মডার্ন।ওরা কি সাংসারিক হতে পারে?শ্রেয়া অন্তত আমাদের মিমিকে আগলে নিতে জানে।ভাইকে ভালোবাসতে পেরেছে।এখন দেখা যাক ভাগ্যে কি আছে।”
এতক্ষণ মিমি ট্যুরে আসা অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলা করছিলো।তাই অর্পাদের থেকে দূরে থাকে।কিন্তু অর্পার শেষ কথাটি মিমি শুনতে পায়।কারণ সে এখন অর্পার কাছে আসছিলো।অর্পার মুখে এমন কথা শুনে মিমি তাকালো শ্রেয়ার দিকে।নিজেও জানে না কি ভাবছে মিমি।কিন্তু সিনথিয়াকে পাপার সাথে বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবতে পারছে না।আনমনে বলে,”আন্টি আমার মা হতে পারবে?”
মিমির কথাটি শুনে অর্পা আর মিরাজ।পিছু ফিরে দেখলো মিমি বল হাতে দাড়িয়ে আছে।চোখ তার শ্রেয়া আর ফারাজের দিকে।অর্পা ঘাবড়ে যায়।দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে মিমিকে।মিমি আবারও বলে,”বলো না কাকীয়া।আন্টি কি ভালো মা হতে পারবে?”
“তুমি কি চাও তোমার আন্টি তোমার ভালো মা হোক?”
“ভালো মা হলে আমি আন্টিকে চাই।কিন্তু ভালো মা না হলে আমি চাই না।পাপাকে আমার থেকে আলাদা করবে না তো?”
“একদমই না।তোমার আন্টি এমন পঁচা না।অনেক ভালো সে।তোমাকে অনেক ভালোবাসে।”
“তাহলে আমিও আন্টিকে আমার মা বানাবো।”
হেসে দেয় অর্পা।মিরাজ এসে মিমিকে কোলে নিয়ে বলে,”ওসব নিয়ে পরে ভাবা যাবে।তুমি না খেলা করছিলে।এখানে এলে যে?”
“ওরা এখন বাইরে যাবে তাই আমি এখানে এসেছি।”
“চলো আমরা একসাথে খেলা করি।”
চলে গেলো অর্পা আর মিরাজ মিমির সাথে খেলা করতে।অন্যদিকে শ্রেয়া আর ফারাজ সহ বাকিরা কাজে ব্যাস্ত।এনি নিজেও এতক্ষণ শ্রেয়া আর ফারাজকে দেখতে থাকে।শ্রেয়া যদিও ফারাজকে পছন্দ করেছে কিন্তু ফারাজ কি ভাবে এটা দেখার বাকি।
চলবে…?