দমকা_প্রেমের_গল্প #Ayrah_Rahman #পর্ব_১৯ __________________

0
117

#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_১৯
__________________

মুনতাসিম বারান্দা দিয়ে হাটতে হাটতে অরিত্রাদের ক্লাসের সামনে এসে থমকে দাড়ালো। মুখে কালো মাস্ক আর চোখে সানগ্লাসের দরুন বোঝার উপায় নেই উনি ছাত্র নেতা মুনতাসিম মাহমুদ।

মুনতাসিম ভ্রু কুঁচকে জানালা দিয়ে পুরো ক্লাস পর্যবেক্ষন করলো কিন্তু অরিত্রা কোথায়? পুনরায় খুঁজতেই সেকেন্ড সারির একদম কর্নারে বেঞ্চে মাথা হেলিয়ে ঘুমে ঢুলছে অরিত্রা। আপাতত অফ ক্লাস থাকায় ক্লাসে টিচার নেই কিছু স্টুডেন্ট বাইরে আর বেশির ভাগ ই ভেতরেই বসে কথা বলছে। মুনতাসিম ভ্রু বাঁকিয়ে তর্জনি দিয়ে ভ্রু চুলকে গ্লাস খুলে ক্লাসে ঢুকলো। মুনতাসিম কে দেখার সাথে সাথে ই ক্লাসের সবার মুখের কথা অটোমেটিক বন্ধ হয়ে গেলো। অবাক দৃষ্টিতে তাকালো মুনতাসিমের দিকে। মুনতাসিম মুখে বাঁকা হাসি দিয়ে এগিয়ে গেলো অরিত্রার টেবিলের দিকে কিন্তু অরিত্রার কি আর সেই দিকে খেয়াল আছে! সে তো ব্যস্ত ঘুমুতে।

মুনতাসিম অরিত্রার সামনে গিয়ে টেবিলে একটা থাবা দিয়ে বলল, ” এটা কি ঘুমানোর জায়গা? রাতে কি জামাইর সাথে চুরি করতে যান মিস অরিত্রা ? ”

হঠাৎ এমন শব্দ হওয়ায় ধরফরিয়ে উঠে দাড়ালো অরিত্রা। তবে ঘুম পুরোপুরি কাটে নি তার। ঘুমু ঘুমু চোখে মুনতাসিমের চোখে চোখ পড়তেই বুকের ভেতরে চিন চিন ব্যাথা অনুভব হলো মুনতাসিমের। হার্ট টা জোরছে বিট করছে যেন বুক চিঁড়ে বেরিয়ে আসতে চায়। মেয়েটা এতো কিউট কেন! অরিত্রার চুল গুলো এলোমেলো আর চোখ ফোলা ফোলা হয়ে আছে। টেনে চোখ খোলার চেষ্টা করছে সে। মুনতাসিম বুঝতে পারে না এতো কোলাহলের মাঝেও মেয়েটা এত গভীর ঘুম কিভাবে ঘুমালো! মুনতাসিম মাস্কের আড়ালে মুচকি হাসে। গোছানো অরিত্রা থেকে অগোছালো মেয়েটাই বেশি সুন্দর। পরক্ষণেই নিজের মন কে শান্ত করতে বুকের বা পাশে হাত রেখে বিড়বিড় করে বলল, ” শান্ত হো ভাই! কাম ডাউন! কাম ডাউন! এতো তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসলে তো আমার কৃষ্ণ বতীর সাথে সংসার করার সাধ আর পূরন হবে না! প্লিজ ভাই শান্ত হো! ”

পরক্ষণেই নিজের কথা শুনে নিজেই অবাক। সে কবে থেকে আবার সায়রের মতে কথা বলা শুরু করলো! দাঁত কিড়মিড় করে আবারো বিড়বিড় করে বলল, ” সব ওই বদের হাড্ডি আমার মায়ের পেটের জোকার টার জন্য। নিজে তো রসাতলে যাবেই সাথে আমার মতো ভালো মানুষ কেও নিয়ে যাবে! অসভ্য বাদর ছেলে! ”

বিড়বিড় করে কথা গুলো বলে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো অরিত্রার দিকে। মেয়েটা পিটপিট করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

” এই যে মিস! আমি কি বললাম শুনতে পান নি? ”

অরিত্রা আমতাআমতা করে কিছু বলতে নিবে, ” আবব না মানে স্যার, আমি ঘুমাচ্ছিলাম না। একটু ক্লান্ত লাগছিলো ”

মুনতাসিম গলা পরিষ্কার করে বলল, ” এটা কি রেস্ট করার জায়গা? ”

অরিত্রা চমকে তাকালো মুনতাসিমের দিকে। এতোক্ষণ গলার স্বর টা খেয়াল না করলেও এখন স্পষ্ট এবং পরিচিত ঠেকলো তার কাছে। অরিত্রা চোখ দুটো ছোট ছোট করে ধীরে ধীরে বলল, ” সভাপতি সাহেব? ”

মুনতাসিম থতমত খেয়ে গেলো। একেতো গলার স্বর চেঞ্জ করে কথা বলল সে তার উপর মাস্ক পড়া তাহলে এই মেয়ে চিনলো কিভাবে?

মুনতাসিম আমতা আমতা করে বলল, ” এটা ঘুমানোর জায়গা নয়, বসে পড়াশোনা করেন ”

বলেই চটজলদি শব্দ যুক্ত কদমে স্থান ত্যাগ করলো। অরিত্রা ভ্রু বাঁকিয়ে তাকিয়ে রইলো মুনতাসিমের দিকে সে তো শত ভাগ নিশ্চিত এটা মুনতাসিম।

” উনি কে অরিত্রা? তোমার বয়ফ্রেন্ড? ”

অরিত্রা তৎক্ষনাৎ পাশে বসা মেয়ের দিকে তাকালো, মুখ বেকিয়ে বলল, ” অরিত্রার এতোটাও খারাপ সময় আসে নি যে এমন অটিস্টিক কে বয়ফ্রেন্ড বানাবে! ”

ধপ করে বসে পড়লো সিটে। আজ এমনিতেই প্রাপ্তি আসে নি তার উপর তানহা নাটক বাজ ও আসবে বলে আসে নি। নিজেকে এখন এতিম এতিম ফিল হচ্ছে অরিত্রার।

মুনতাসিম গাড়ির কাছে এসেও ফিরে তাকালো পিছনে। মুচকি হেসে গাড়িতে উঠে চালানো শুরু করলো।

__________

” ও কি এসেছিলো? ”

মেহেরাব মজুমদারের কথায় কপাল কুঁচকে তার দিকে তাকালো তৃষা বেগম। এই “ও ” বলতে কি বোঝাতে চাচ্ছে সেটাই তো বুঝতে পারছে না।

” ও কে? ”

মেহেরাব মজুমদার এদিক সেদিক তাকিয়ে আমতাআমতা করে বলল, ” অ..অরিত্রা ”

তৃষা বেগম বিছানা গোছাতে গোছাতে বলল,

” ও কি ভাষা? নিজের মেয়ে বলতে কি লজ্জা পান? মেয়ে বলতে পারেন না? এতোদিন তো দুরেই ছিলো আপনাদের দায়িত্ব ও ছিল না এতোদিনে যখন পেয়েছেন আর কিছু না হোক মেয়ে বলে তো সম্বোধন করতে পারেন! জাত তো আর চলে যাবে না ”

তৃষা বেগমের ত্যাড়া বাকা কথায় বিরক্তিতে কপাল কুঁচকালো মেহেরাব মজুমদার। তার বউটা সবসময় বোঝে এক লাইন বেশি আর বলে তিন লাইন বেশি।

কিন্তু আপাতত ঘরের শান্তি বজায় রাখা টা একান্ত জরুরি নয়তো তার কপালে মজুমদার বাড়ির খাবার জুটবে না। যেখানে বাড়ির সবাই তাকে বাঘের মতো ভয় পায়, সিংহের মতো মেনে চলে সেখান তার আপন বউই তাকে দু আনার পাত্তা দেই না। কি কপাল!

” আমি ওটা বলতে চাই নি! ”

তৃষা বেগম তেতে উঠে বিছানা ঝাড়ু তুলে মেহেরাব মজুমদারের মুখের সামনে ধরে ঝাঁজালো গলায় বলল,
” কি বলতে চান নি? আপনারা ভাইয়েরা কি নাটক পেয়েছেন? আমার মেয়েটা কত কষ্ট করছে সেদিকে খেয়াল আছে আপনার? সাত দিন! এই সাত দিনের ভেতরে আমার ছেলে মেয়েদের আমি আমার বাড়িতে এই মজুমদার বাড়িতে দেখতে চাই! নয়তো আপনার খবর আছে! ”

মেহেরাব মজুমদার দমে গেলেন, তিনি নিজেও চান অরিত্রা রা মজুমদার বাড়িতে আসুক। বাড়ির ছেলে মেয়ে বাড়ি তে ফিরে আসুক কিন্তু ওই যে ইগো! ইগোর জন্য মুখ ফুটে বলতে পারছে না।

তৃষা বেগমের রাগ তখন সপ্তম আসমানে। মেহেরাব মজুমদার তৃষা বেগমের হাতে থাকা ঝাড়ু টান দিয়ে নিজের হাতে নিয়ে জোড় পূর্বক হেসে বলল, ” রাগলে না তোমাকে আরোও বেশি সুন্দর লাগে। আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী নারী তুমি। ”

তৃষা বেগম থতমত খেয়ে গেলো সাথে বেশ লজ্জা ও পেলো। আর রাগ! সেটা তো কর্পূরের মতো হাওয়া হয়ে গেলো। মেহেরাব মজুমদার তৃষা বেগমের মুখভঙ্গি পরিবর্তন হতে দেখে মুচকি হাসলো, ঔষধ কাজ করেছে।

তৃষা বেগম আমতাআমতা করে এদিক সেদিক তাকিয়ে বলল, ” বুড়ো বয়সে ভীমরতিতে পেয়েছে, দিনে দুপুরে যত্তসব আধিক্যেতা ”

বলেই রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। তৃষা বেগমের প্রস্থান দেখে মেহেরাব মজুমদার আবারো হাসলো। বউটা তার সেই আগের মতোই লাজুক। এখনো একটু কিছু বললেই লজ্জায় নুইয়ে পড়ে।

বউরা ঠিক এমন ই স্বামীর একটু প্রশংসা আর ভালোবাসা তাদের রাগ, অভিমান সব কিছু ভুলিয়ে দিতে সক্ষম। অথচ স্বামীরা তা বোঝে কই!

_________________

“কিরে অরি ওদিকে কোথায় যাস? ”

পিছনে থেকে পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে পিছনে ফিরে তাকালো অরিত্রা। তানহা দাঁড়িয়ে আছে। অরিত্রাকে থামতে দেখে তানহা এগিয়ে গেলো তার দিকে।

” কোথায় ছিলি তুই? ”

” ক্লাস করি নি, ফাকিঁ দিয়েছি! ” কি স্বাভাবিক কন্ঠ তানহার!

অরিত্রা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল, ” ভালো কাজ করেছিস! খুব পুণ্যের কাজ করেছিস। তোকে তো চুরি করে এনে নোবেল দেওয়ার দরকার। নোবেল কমিটি তোকেই খুঁজছে যা গিয়ে দেখা করে আয় ”

অরিত্রার ঠেস মারা কথা শুনে তানহা হাসলো।

” আহা এতো রেগে যাচ্ছিস কেন? আজই লাস্ট আর মিস করব না। আর শোন তোদের বাসায় যাবো আজ”

” হে সেটাই! এই পর্যন্ত হাজার বার বলেছিস তুই এই কথা। আম্মু ও তোকে দেখবে বলেছিলো কিন্তু তুই তো যাস ই না”

” কনফার্ম আজ যাবো, চল এখুনি যাবো ”

অরিত্রা লাইব্রেরির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল, ” আমি লাইব্রেরি তে যাবো কাজ শেষ করে বাসায়। যেতে চাইলে চুপচাপ চল ”

তানহা আর কথা বাড়ালো না। লাইব্রেরি তে গিয়ে তানহাকে বসতে বলে অরিত্রা অধীর আগ্রহে এগিয়ে গেলো সেই পরিচিত শেলফের সামনে। হাত বাড়িয়ে বইটা নিয়ে তার ভেতর থেকে সেই কাঙ্খিত কালো রঙের চিঠিটা বের করলো। বুকের ভিতর ঢিপঢিপ করছে। ধীর গতিতে কাগজের প্রতিটা ভাজ খুলল অরিত্রা।

___________

কৃষ্ণবতী..
এই ব্রহ্মাণ্ডের সহস্র কোটি নক্ষত্র,সহস্র কোটি তারকারাজি,সহস্র কোটি ছায়াপথ সাথে সহস্র কোটি গ্রহপুঞ্জো সব পেরিয়ে একটাই তুমি,এত কোটি মানুষ এর ভিড়ে তোমার মায়ায় আটকা পড়ে গেছি।
সময়ের স্রোতে ভেসে এসেও তোমার কাছে এসে থমকে গেছে আমার সময়।
সুচেতনা তুমি এক দূরতর দ্বীপ।
আমার বিকেলের নক্ষত্রের কাছে।
আমি আমার বিকেল টা পার করে দিতে চাই তোমার হাতে হাত রেখে।
তোমার চঞ্চলতা দেখতে চাই চুপটি করে বসে,সাথে তোমার হাসি।

জানো তোমার হাসিটা ঠিক কতটা সুন্দর।
তোমার মাঝে আলাদা এক প্রাণ আছে,সেটা অনুভব করতে চাই।
একটা বার ভালোবেসে দেখতে পারো আমায়।তাহলে বুঝবে কেনো আমি ভালোবাসি এই ভালোবাসা কে। আমার মনে হয় এটাই তোমার কাঙ্খিত পরিত্রাণের উপায়।

তোমার অপরিচিত
শ্যামসুন্দর পুরুষ…
________________

চলবে…

[ আজকের পর্বটা কেমন হলো জানাবে পিলিজ!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here