দমকা_প্রেমের_গল্প #Ayrah_Rahman #পর্ব_১৮

0
169

#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_১৮
__________________

” আসসালামু আলাইকুম আন্টি কেমন আছেন আপনি? ”

সকাল সকালই তানহাকে মজুমদার বাড়ি তে দেখে অবাকই হলেন তৃষা বেগম এমন নয় যে তানহা কখনোই আসে না। তানহা রাত – দিন, সকাল- বিকাল সবসময় ই যখন ইচ্ছে হয় তখন ই মজুমদার বাড়িতে আসে। বেশ কয়েক মাস যাবত আসে না কারণ টা আপাতত তিনি জানপন না। তাই বেশ ভাবনায় পড়ে ছিলো সে। নিজেকে সামলে মুচকি হেসে বলল, ” ওয়ালাইকুম সালাম, আমি ভালো আছি, তুমি কেমন আছো মা? ”

তানহাও অমায়িক হেসে তৃষা বেগম কে জড়িয়ে ধরে বলল, ” এই তো আন্টি আমি ভালো আছি তোমাকে দেখে আরোও ভালো হয়ে গেছি ”

তৃষা বেগম হাসলো, তানহাকে তার বেশ ভালো লাগে অনেক বেশি মিশুক স্বভাবের মেয়েটা। এতো বড়োলোক বাবার মেয়ে হয়েও অহংকার বিন্দু মাত্র ও নেই। এমন কি খাবার মাটিতে পড়ে গেলেও তা তুলে খেতেও তার কোন দ্বিধা নেই। তানহা প্রথম বার এই বাড়ি তে এসেছিলো মেহেরাব মজুমদারের হাত ধরে।

রাস্তায় মেহেরাব মজুমদারের গাড়ি এক্সিডেন্টে হওয়ায় বেশ অনেক জায়গায় ব্যথা পেয়েছিলেন তিনি সেদিন তানহা ই মেহেরাব মজুমদারকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিল সেই সাথে শুরু হয় মজুমদার বাড়িতে তানহার আনাগোনা। মেয়েটা অল্প সময়ের মধ্যে ই সকল কে আপন করে নিয়েছে হয়ে উঠেছে মজুমদার বাড়ির সদস্য। মেহেরাব তন্ময়ের সাথে তানহার প্রনয়ের সম্পর্কের কথা কম বেশি সবারই জানা। কথা ছিলো তন্ময়ের এমবিবিএস শেষ হলে হসপিটালে জয়েন করে ঘটা করে বিয়ের ব্যবস্থা হবে তাদের।

” তানহা? ”

পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে চট করে সামনে তাকালো তানহা। তানহার পিছনে থাকা তন্ময় ও ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো সেদিকে। সামনে অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষ কে দেখতে পেয়ে অবাক হলো তানহা। তানহা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল, ” অরি তুই এখানে? ”

অরিত্রা কেবলই সিড়ি বেয়ে নিচে নামছিলো। তানহাকে দেখে অর্ধেক এসেই থেমে গেলো সে।

” অরিত্রা তুমি এখানে? আর তানহা তুমি ওকে চেনো? ”

তানহা মাথা নাড়িয়ে বলল, ” হ্যা চিনবো না কেন? ও তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড অরিত্রা মাহাবুব ”

তন্ময় অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আনমনেই বিড়বিড় করে বলল, ” মাহাবুব! ”

অরিত্রা নেমে এলো নিচে , আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে, অরিত্রা খানিকটা ইতস্তত করে বলল, ” আমি মেহের কে পড়াই ”

তানহা হুট করে এসে অরিত্রাকে জরিয়ে ধরে বলল, ” তোকে কতদিন পর দেখলাম অরি! তুই এতো চিকনা হলি কিভাবে? খাস না কিছু? ”

এই পরিস্থিতিতে ঠিক এমন কথা আশা করে নি অরিত্রা। দাঁত কিড়মিড় করে বলল, ” বেফাস কথা বললে একদম মেরে হাড় ভেঙে দিবো তানু ”

তন্ময় অরিত্রার দিকে এগিয়ে এলো, ” অরিত্রা আমাকে চিনতে পেরেছো তো? ওই যে ওই দিন হসপিটালে দেখা হলো। আমার কিন্তু আরেকটা পরিচয় আছে আমি কিন্তু এই বাড়ির মেঝো ছেলে মেহেরাব মজুমদারের ছেলে আমি। ”

অরিত্রা অবাক হয়ে বলল, ” মেহেরাব মজুমদার? আপনাদের সার নেইম কি মজুমদার? ”

” হুম ”

” কি অদ্ভুত! ”

তন্ময় ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলল, ” কিসের অদ্ভুত? ”

” না মানে আমার বাবার নামের শেষেও মজুমদার আছে। সার নেইম আর কি! ”

তন্ময় কিছু বলার আগেই অরুনা বেগম এগিয়ে এলেন, অরিত্রার মাথায় হাত রেখে বলল, ” পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ আছে, একজনের সার নেইমের সাথে আরেকজনের সার নেইম মিলতেই পারে বোকা মেয়ে! ”

অরিত্রা জোড় পূর্বক হেসে বলল, ” জ্বি বুঝতে পেরেছি।

বলেই তৃষা বেগমের সামনে গিয়ে বলল, ” বড়ো মা আমি যাই, আজ আর জোর করোনা, আমি খাবো না ইচ্ছে নেই।

তানহার দিকে তাকিয়ে বলল, তুই আয় আমি যাচ্ছি ”

তানহা মাথা দুলিয়ে সায় জানালো৷ অরিত্রা চলে গেলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। অরিত্রা যেতেই তন্ময় তার মায়ের দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে বলল, ” আমি যা আন্দাজ করছি সেটাই কি ঠিক মা? ”

তৃষা বেগম টেবিলে খাবার সাজাতে সাজাতে বলল, ” হুমম অরিত্রা তোর ছোট চাচার বড় মেয়ে। তোর চাচাতো বোন ”

তানহা অবাক হয়ে বলল, ” অরি তোমার বোন তন্ময়? ”

তন্ময় খুশি হয়ে বলল, ” আমি প্রথমেই আন্দাজ করছিলাম, অরির সাথে মজুমদার বাড়ির কোন না কোন যোগ সূত্র আছেই। চাচার চেহারার সাথে কত মিল ওর। খোঁজ পেলে কি করে ওদের? ”

বলেই তন্ময় পানির গ্লাস হাতে নিয়ে মুখে নিতেই তৃষা বেগম নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে বলল,

” মুনতাসিম নিয়ে এসেছে! ”

তন্ময়ের কাশি উঠে গেলো তৃষা বেগমের কথা শুনে। মানে লাইক সিরিয়াসলি! মুনতাসিম ভাই একটা মেয়েকে নিয়ে এসেছে! হোক সে চাচাতো বোন তবুও।

” ভাইয়া? ”

” হুম, ওই খুঁজে বের করেছে ”

তন্ময় আর কোন কথা বলল না, যেখানে মুনতাসুম সয়ং এই বিষয়ে হেন্ডেল করছে সেখানে তার যে কোন দরকার হবে না সেটা সে ভালো করে ই জানে।

______________

মুনতাসিম আর সায়র সকালের খাবার খেয়েই বের হয়েছে অরিত্রা দের বাড়ি থেকে আপাতত তারা গাড়ি তে বসে আছে। মুনতাসিম গাড়ি চালাচ্ছে আর তার পাশে সায়র চুপচাপ বসে কিছু একটা চিন্তা করছে। মুনতাসিম বার কয়েক আড়চোখে তাকালো সায়রের দিকে কিন্তু ছেলের কোন নড়চড় না দেখে গলা পরিষ্কার করে বলল,

” কোথায় যাবি? ভার্সিটি? ”

সায়র ছোট করে উত্তর দিলো, ” হুম ”

মুনতাসিম কথা বাড়ালো না। এমনিতেই সে যেচে কথা বলতে পারে না। ভার্সিটির সামনে গাড়ি পার্ক করতেই সায়র মুনতাসিম কে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো। মুনতাসিম মিনিট দুয়েক বসে থেকে নিজেও মাস্ক পড়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ি লক করে ভেতরে ঢুকে সোজা লাইব্রেরি তে। এতোদিনে কাজের চাপে লাইব্রেরি তে আসা হয় না তার।

লাইব্রেরি তে হাঁটতে হাঁটতে শেষ মাথার সেই বুক শেলফের কাছে গিয়ে দাড়ালো। হাত বাড়িয়ে অতি পরিচিত সেই বইটা হাতে নিলো। শেষ পৃষ্ঠা উল্টিয়ে৷ সাদা রঙের কাগজ দেখেই আনমনে হাসির রেখা দেখা গেলো তার অধরে।

কাগজ টা হাতে নিয়েই বইটা টেবিলে রেখে দিলো। আলতো হতাে ভাজ খুলল সেই কাগজের। প্রথমেই গোটা গোটা অক্ষরে নিজের সম্বোধন দেখতে পেয়ে আবারো হাসলো সে।

_________

ওগো শ্যামপুরুষ,

অতো কঠিন কথা বুঝিনা বাপু। অপরিচিত মানুষদের প্রতি আলাদা আকর্ষন থাকে জানতাম। আকর্ষন খুব বাজে একটা মানসিক রোগ তার চেয়ে ভয়াবহ হলো প্রেমে পড়া। আর প্রেমে পড়ার থেকে জঘন্যতম রোগ হলো মায়ায় জড়িয়ে যাওয়া। আমি কিন্তু প্রেমে পড়ি নি পড়েছি আপনার হাতের চিঠির মায়ায়। পড়েছি আপনার বাচন ভঙ্গির মায়ায়। জড়িয়েছি আপনার তুখড় অনুভূতির মায়ায়। প্রেমে পড়লে একটু চেষ্টা করলেই ফিরে আসা যায় কিন্তু আমি আটকেছি মায়ায়। খেতে গেলেও আপনার অনুভূতি মিশ্রিত কথা গুলো মনে করে খেতে পারি না, আর না ঘুমাতে পারি। কি একটা যন্ত্রণা বলুন তো দেখি। এই মরনঘ্যাতি রোগ থেকে পরিত্রানের উপায় কি বলে দেন না আমায় শ্যাম সুন্দর পুরুষ?
নয়তো অবেলার অভাবে কখন না আবার আমার প্রান পাখি উড়ে যায়। উপায় কি?

ইতি আপনার অপরিচিত
কৃষ্ণ বতী
______________

মুনতাসিম পড়লো খুব মনোযোগ দিয়ে। মুচকি হেসে কাগজ টা ভাজ করে বুক পকেটে রেখে আনমনে ই বিড়বিড় করে বলল, ” তুমি প্রেমে পড়ো নি, মায়ায় জড়িয়েছো খুব বাজে ভাবে আমার কৃষ্ণ বতী, তোমায় যে আমি চিনি, তুমি যে আমার পরিচিত, ভীষণ কাছের কেউ, আমার কৃষ্ণবতী ”

পকেটে হাত দিয়ে কালো রঙের কাগজ বের করে সাদা রঙের কালিতে খসখস করে কিছু লিখে আবারো ভাজ করে রেখে দিলো ঠিক আগের মতো, আগের জায়গায়। তারপর বেরিয়ে এলো লাইব্রেরি থেকে। মুখে লেগে আছে এক ছটাক হাসির রেখা।

চলবে…

[ কেমন লাগলো আজকের পর্ব? সবাই গঠন গত মন্তব্য করবেন প্লিজ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here