দমকা_প্রেমের_গল্প #Ayrah_Rahman #পর্ব_২০

0
114

#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_২০
__________________

” কিরে অরি তোর হাতে কালো রঙের ওটা কি রে? কাগজ মনে হচ্ছে!”

দুর থেকেই তানহা কথাটা বলেই অরিত্রার দিকে এগিয়ে আসতে নিলে অরিত্রা সংগোপনে চিঠিটা ভাজ করে ব্যাগে ভরে নিলো, ব্যাগ থেকে অপর আটেকটা কাগজ নিয়ে বইয়ের ভাঁজে রেখে, বইটা রেখে দিলো তাকের উপর। ততক্ষণে তানহা ও অরিত্রার কাছে এসে দাড়ালো।

” কি ছিল ওটা? ”

” বইয়ের ছেঁড়া পৃষ্ঠা ” কাঁপা গলায় বলল অরিত্রা। মিথ্যা সে কোন কালেই বলতে পারে না গলা কাঁপে। কিন্তু সে এটাও চায় না তার এই আবেগ প্রবন জিনিস সম্পর্কে কেউ জানুক। এটা নিজস্ব, একবারেই নিজের।

তানহা ভ্রু কুঁচকে তাকালো, অরিত্রার কথা তার ঠিক পছন্দ হলো না তবে কোন কথাও বলল না। তানহা বরাবর ই ম্যাচিউর মেয়ে। কেউ কোন কিছু বলতে না চাইলে সে এক বিন্দু ও জোর করে না কিন্তু প্রাপ্তিটা তার ঠিক উল্টো যতক্ষণ না বলবে ততক্ষণ কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতেই থাকবে।

“তুই না বললি বাসায় যাবি! চল ”

তানহা আর অরিত্রা লাইব্রেরি থেকে বের হয়ে হাটতে লাগলো।

” এই অরিত্রা! ”

পিছনে থেকে পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে পিছনে ঘুরে তাকালো অরিত্রা আর তানহা। তানহা খানিকটা অবাক হয়ে বলল, ” আরে সায়র ভাইয়া? কেমন আছেন? ”

তানহাকে দেখে সায়র নিজেও অবাক। মুচকি হেসে বলল, ” তানহা কেমন আছো তুমি? এব্রোড থেকে কবে ফিরলে? জানালে না যে! বাড়িতে ও যাও নি! ”

তানহা হাসি মুখ করে বলল, ” আমি ভালো আছি। এব্রোড থেকে গত দুই দিন আগেই ফিরেছি। আসলে কাউকেই জানাইনি। হুট করে ই দেশে ফেরা তার মূল কারণ হলো বাবার গার্মেন্টস উদ্ভোদন আর ব্যবসার টুকটাক কাজ, মিটিং অনেক গুলো জমে গেছে, ভাইয়া তো নিজের প্রফেসন নিয়েই ব্যস্ত তাই সবটা বাবাকেই সামাল দিতে হয়। আর জানোই তো বাবার শারীরিক কন্ডিশন ও তেমন ভালো ছিলো না তবে এখন আগের থেকে বেটার আছে। আর আজ সকালেই তন্ময় ভাইয়ার সাথে তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম। তুমি আর মুনতাসিম ভাইয়া মনে হয় বাসায় ছিলে না ”

সায়র আলতো হেসে অরিত্রার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল, ” হে আমার চাচির বাসায় গিয়েছিলাম। ”

তানহা ও মুচকি হেসে অরিত্রার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল, ” ওহ আচ্ছা। তা কেমন আদর করলো তোমাদের চাচি? ”

” আমাদের চাচি অলওয়েজ বেস্ট! ”

তানহা হাসলো সাথে সায়র ও। মাঝখানে অরিত্রাই বোকার মতো দাড়িয়ে একবার তানহার দিকে আরেকবার সায়রের দিকে তাকাচ্ছে।

সায়র আশেপাশে তাকিয়ে বলল, ” তা অরিত্রা তোমার ওই ঘাড়ত্যাড়া বান্ধবী আসে নি? ”

অরিত্রা ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলল, “কে? প্রাপ্তি? ”

সায়র এদিক সেদিক তাকিয়ে বলল, ” হুমম ”

” কেন ভাইয়া মিস করছেন বুঝি?”

” আবব না। দেখছি না যে ওই জন্য ই বললাম! তেমন কিছু না!”

বলেই সায়র সামনের দিকে চলে গেলো। অরিত্রা সেদিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। সায়রের মনে কি চলছে তার আংশিক হয়তো অরিত্রা টের পাচ্ছে।

” কি রে চল। দেরি হয়ে যাচ্ছে তো ”

অরিত্রা হাটতে হাটতে বলল, ” হুম চল ”

______________

” কেমন আছো জানপাখি? ”

” যেমন দেখছো ” স্বাভাবিক উত্তর মেধার।

ইফতেখার মুচকি হেসে বলল, ” এই শাড়িটা তো বেশ সুন্দর ”

” কেনো অন্য গুলা কি বিশ্রি ছিলো? ”

ইফতেখার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। আমতাআমতা করে বলল, ” না তোমার সবগুলো শাড়িই সুন্দর। তবে এটা একটু বেশিই সুন্দর। কোথ থেকে নিয়েছো জান? ”

” কুড়িয়ে পেয়েছি। রাস্তার ধারে পড়ে ছিলো তাই তুলে এনেছি! ”

ইফতেখার থতমত খেয়ে ধীর কন্ঠে বলল, ” কিনে এনেছো? ”

” না। ভিক্ষা করে এনেছি ”

ইফতেখার হার মানলো। মেধাকে একটু খুশি করার জন্য বলল, ” তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে জান! ”

” কেন অন্য দিন কি পেত্নীর মতো লাগে? ”

” না না সেটা বলি নি তো। ” ইফতেখার মেধার গা ঘেঁষে বলল, ” কি হয়েছে জান? এমন করছো কেন? ”

মেধা গাল ফুলিয়ে বলল, ” কিছু না। এমনিই ”

” এমনি কেউ এমন করে? কি হয়েছে বলো না! ”

মেধা ইফতেখারের দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে ইফতেখারের কাধে দু বাহু রেখে চোখে চোখ রেখে বলল, ” নারীরা তার প্রিয় মানুষটার প্রশ্নে উল্টো পাল্টা উত্তর দিতে আনন্দ পায়। যাকে যতটুকু কাছের
করে ভাবে, তার সঙ্গে ঠিক ততটুকু ই উল্টো পাল্টা
করে থাকে। এই উল্টো পাল্টা করার মধ্যে একটা শক্তিশালী ভালোবাসা নিহিত থাকে সবসময়। জানেন আপনি? ”

ইফতেখার চোখ দুটো ছোট ছোট করে মেধার নাকে টোকা দিয়ে বলল, ” ওরে ফাজিল মেয়ে! জামাইয়ের সাথে মশকরা! শশুর মশাইয়ের কাছে বিচার দিব না কি! ”

মেধা দাঁত কেলিয়ে হেসে বেঞ্চের উপর দু পা উঠিয়ে হাঁটুতে চিবুক ঠেকিয়ে বলল, ” বুকের পাটা থাকলে মেহেরাব মজুমদারের সামনে গিয়ে দাড়াও না!”

ইফতেখার ভ্রু উচিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ” আমি কি তোমার বড় আব্বু কে ভয় পাই নাকি? আজব! ”

মেধা হাসে। হাত বাড়িয়ে বলল, ” আমার পাওনা? ”

ইফতেখার বুক পকেট থেকে ফুল গুলো বের করে মেধার হাতে দিয়ে কপালে একটা চুমু একে দেয়। দিন যাচ্ছে সে কেমন যেন মেয়েটার মায়ায় আরোও বেশি করে আটকে যাচ্ছে। এর থেকে তার নিজের নিস্তার নেই, একদম ই নেই! ”

____________

” আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ আমার পরানের ছাইয়া অরফে হবু জামাই! ”

সায়র কেবলই ভার্সিটি থেকে বের হয়েছে। তৎক্ষনাৎ তার মনে হলো সে তো সকালে মুনতাসিমের সাথে এসেছে আপাতত ভার্সিটিতে তার কোন গাড়ি নেই। তাই উপায় না পেয়ে রিকসায় চেপে বসলো। হুট করে কোথ থেকে প্রাপ্তি এসে দুম করে বসে পড়লো তার পাশ ঘেঁষে। হঠাৎ এমন হওয়াতে সে প্রায় পড়ে যেতেই প্রাপ্তি তার বাহু চেপে ধরে। সায়র ঠিক হয়ে বসে প্রাপ্তির দিকে তাকাতেই প্রাপ্তি লম্বা একটা সালাম দিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসলো।

সায়র ভ্রু বাঁকিয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে বলল, ” তুমি এখানে? ”

” সালামের উত্তর করা ওয়াজিব! ”

” ওয়ালাইকুম সালাম ”

প্রাপ্তি রিকসা ওয়ালাকে তাড়া দিয়ে বলল, ” মামা ধানমন্ডি লেকের দিকে যান তো ”

বলেই সায়রের দিকে তাকালো, ” তো কে থাকবে? আমি আপনার হবু বউ। এখন ই তে সময় ঘুরার। বিয়ের পর তো সময় পাবেন না ”

সায়র বোকার মতো তাকিয়ে বলল, ” কেনো? ”

প্রাপ্তি ঠোঁট কামড়ে হেঁসে ফিসফিস করে বলল, ” গোসল করতে করতেই আপনার সব সময় খতম হয়ে যাবে ”

কথা টা কর্নোগোচর হতেই সায়রের কাশি উঠে গেলো। প্রাপ্তি সায়রের পিঠে আলতো চাপড় দিতে দিতে বলল, ” সাট সাট সাট! খালি ময়দানে বিষম খেলে হয়! ”

সায়র কোন ভাবে নিজেকে শান্ত করে সামনের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল, ” অসভ্য, নির্লজ্জ মেয়ে”

কথা গুলো আস্তে আস্তে বললেও প্রাপ্তির কানে ঠিক ই পৌঁছেছে। সে সায়রের দিকে ইনোসেন্ট ফেস করে বলল, ” বাই এনি চান্স আপনি কি নেগেটিভ ভাবে নিয়েছেন? আমি কিন্তু গরমের কথা বলেছি। যা গরম পড়েছে না! সারাদিন পানির মধ্যে বসে থাকলেও গরম করবে আর সাথে যদি আমার মতো মেয়ে থাকে তাহলে তো গরম এমনিতেই বেড়ে যাবে তাই না জামাই? ”

সায়র প্রাপ্তির দিকে তাকাতেই প্রাপ্তি চোখ মেরে সামনের দিকে তাকিয়ে হাসলো।

সায়র এক দৃষ্টিতে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে রইলো, মেয়েটা মাত্রা অতিরিক্ত বাঁচাল স্বভাবের। বাঁচাল তো সে নিজেও কিন্তু এই মেয়েটার সামনে যেন কোন কথায় তার পেট থেকে বের হয় না। কি একটা অবস্থা! মেয়েটা এমনিতেও ভীষণ সুন্দরী, ঘন কালো কেশের মধ্যে ফর্সা মুখটা যেন অন্ধকারের মধ্যে এক ছটাক আলো। কপালের মাঝ বরাবর একটা গাঢ় কালো তিল যা টিপের মতোই।

” এতো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে গেলে প্রেমে পড়ে যাবেন তো মশাই! ”

সামনের দিকে তাকিয়েই কথাটা বলে উঠলো প্রাপ্তি। সায়র ভ্রু কুঁচকে সামনের দিকে তাকালো, ” পাগলের সুখ মনে মনে! ”

” হ্যা হ্যা। আবার দেইখেন সেই পাগলই আপনি আমার প্রেমে পড়ে হোন। বলা তো যায় না! ”

বলেই সে ঠোঁট কামড়ে হাসলো।

চলবে…

[ বলেন তো দেখি কাদের জুটিটা আপনাদের বেশি ভালো লাগে? (মুনতাসিম- অরিত্রা), (মেধা- ইফতেখার), (প্রাপ্তি-সায়র), (মিনু- আরহাব) নাকি (তন্ময়- তানহা) ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here