দমকা_প্রেমের_গল্প #Ayrah_Rahman #পর্ব_২২

0
122

#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_২২
__________________

বড় ভাইয়ের গলা জড়িয়ে বসে আছে নাহিদা বেগম। আনোয়ার পাশা অরিত্রাদের বাসায় এসেছে প্রায় ঘন্টা দুয়েক হবে সেই থেকে ভাইয়ের গলা জড়িয়ে বসে আছে নাহিদা বেগম আর আনেয়ার পাশা ছোট আদরের বোনকে পেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । আর থেকে থেকে ভেসে আসছে ফুঁপানোর শব্দ। তার সামনেই গালে হাত দিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে অরিত্রা। তার পাশেই বসা তানহা। শেহজাদ সোফার এক কোনায় বসে রুবিস্কিউব মেলানোর চেষ্টায় আছে যেন এসব আবেগ ঘন মুহুর্তে তার কোন ইন্টারেস্ট ই নেই। শেহরান গোল গোল চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে যেন সে কিছু ই বুঝতে পারছে না।

মিনিট দুয়েক পরেই নাহিদা বেগম নাক টানতে টানতে সোজা হয়ে বসলো। অরিত্রার দিকে তাকিয়ে বলল, ” অরি মা যা তো একটু পানি নিয়ে আয়, গলা টা শুকিয়ে আসছে ”

অরিত্রা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে উঠে দাড়ালো। ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে গেলো ডাইনিং টেবিলের দিকে, এক গ্লাস পানি ভর্তি করে নাহিদা বেগমের হাতে দিতেই তিনি এক শ্বাসে পুরোটা খেয়ে খালি গ্লাস ফিরিয়ে দিলেন অরিত্রা কে।

আনোয়ার পাশা অরিত্রার দিকে তাকালেন, বুঝতে পারলেন অরিত্রা তার ই ভাগ্নি। ইশারায় কাছে ডাকলেন অরিত্রাকে, অরিত্রাও মামার ইশারায় এগিয়ে গেলো তার দিকে। আনোয়ার পাশা হাত ধরে পাশে বসিয়ে এক হাতে জড়িয়ে ধরলেন অরিত্রাকে।

” কেমন আছেন আম্মা? ”

অরিত্রা কিছু ক্ষন চুপ থেকে ধীর কন্ঠে বলল, ” জি আলহামদুলিল্লাহ, আপনি কেমন আছেন মামা? ”

” এতোদিন ভালো ছিলাম না, তবে এখন আপনাদের দেখা পেয়ে ভালো আছি ”

” কোন ক্লাসে পড়ছো?”

” তানহার সাথে ই ”

আনোয়ার পাশা শেহরান আর শেহজাদ কে ডাকলেন, ” আমার দুই ভাগ্নে কে বলো আমার কাছে আসতে ”

অরিত্রা ইশারা করতেই শেহরান আনোয়ার পাশার কাছে এসে দাড়ালো। শেষে শেহজাদ ও রুবিস্কিউব রেখে মামার সামনে এলো।

আনোয়ার পাশা অরিত্রা কে ছেড়ে দুই ভাগ্নে কে আঁকড়ে ধরলো।

অরিত্রা কিছু বলল না, এখনো সে ঘোরের মধ্যেই আছে। আনোয়ার পাশাকে ছেড়ে সে উঠে দাড়ালো। কেনো যেনো তার ভালো লাগছে না। একা থাকতে পারলে শান্তি লাগতে। যেই ভাবা সেই কাজ। ধীর পায়ে হেঁটে ড্রয়িং রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। আপাতত একা থাকা দরকার!

_____________

“আপনি আমার কোন কথায়ই কি শুনবেন না মিস্টার? ”

” বললাম তো আমার ওসব লাগবে না, আপনি কেনো বুঝতে পারছেন না? ”

” একজন ডাক্তার হয়ে এসব বাচ্চাদের মতো আচরণ মোটেও মানায় না আপনাকে। খুবই জঘন্য লাগে! ”

বলেই নাক ছিটকালো মিনু। আরহাব চোখ ঘুরিয়ে কেবিনের দিকে তাকালো, আপাতত সে আর মিনু ছাড়া কেবিনে কেউ নেই। এই যে মেয়েটা কে বলছে, একটু পরিষ্কার পানি দিয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করলেই ঠিক হয়ে যাবে তবুও মেয়েটা শুনতে নাড়াজ। ড্রেসিং তাকে করতেই হবে। মাথায় দুয়েকটা সেলাই ও লাগতে পারে বলে তার ধারণা।

তখনি দরজা খুলে প্রবেশ করে সাদা রঙের পোশাক পরিহিত একজন নার্স। হাতে ড্রেসিং সরঞ্জাম। আরহাব কপাল কুঁচকে এক বার মিনুর দিকে আরেকবার নার্সের দিকে তাকালো। নার্সটা এগিয়ে এসে আরহাবের সামনে বসতেই বেচারা নাক মুখ কুঁচকালো সে। মিনুর দিকে তাকাতেই মিনু চোখ রাঙাতেই আরহাব চুপ করে বসলো। নার্স তার কাজ শুরু করলো, প্রথমে ওয়াস করে জায়গাটা পরিষ্কার করে ঔষধ লাগিয়ে দিলো। কিছু জায়গা ব্যান্ডেজ করে আর মাথায় একটা সেলাই লাগলো। মিনু ল’ য়ের স্টুডেন্ট হলেও এসব কাটা ছেড়াতে তেমন কোনো ভয় কাজ করে না। অথচ এই বান্দা ডাক্তার হয়েও ঔষধ লাগাতে তার যত নাটক!

” এতোক্ষণ লাগে নাকি? হয় নাই আপনার? ”

নার্সটা বিরক্ত হলো, একেতো মুচড়া মুচড়ি করছে, তার উপর হয়েছে না হয়েছে না বলে মাথা খাচ্ছে।

” হলে তো আপনাকে ছেড়ে ই দিবে। চুপচাপ বসেন তো ”

নার্স তার কাজ শেষ করলো, হসপিটালের ই একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ কে দেখিয়ে কিছু ঔষধ ও নিয়ে নিয়েছে যদিও আরহাব বলেছিলো সে জানে কি ঔষধ খেতে হবে! পরে সে নিয়ে নিবে তবুও মিনু জোর করে ই কিনে দিয়েছে! এই ছেলের বিশ্বাস নেই। যা ব্যাথা পেয়েছে রাতে ঠিক জ্বর আসবে।

মিনু আর আরহাব হসপিটাল থেকে বের হলো। বেচারার হাতে পায়ে মুখে ব্যান্ডেজ। মুখ ফুলিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছে পুরো জোকারের মতোই লাগছে। মিনু এক পলক আরহাবের দিকে তাকিয়ে পুনরায় চোখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসলো। মিনুর হাসি দেখে আরহাব মুখ ফুলিয়ে বলে উঠলো,

” এই একদম হাসবেন না। কি একটা অবস্থা করেছে আমার! এই জন্য ই ব্যান্ডেজ করতে চাইছিলাম না এখন ঘুরো এসব নিয়ে! ”

” ডাক্তার হয়েও এসব বলছেন, তাহলে রোগীরা কি বলবে? আপনি জানেন না বাইরে ময়লায় থাকলে এগুলো ইনফেকশন হবে! আপনাকে নিয়ে তো দৌড়তে হবে আপনার ফ্যামিলির মানুষদের। ”

আরহাব মিনুর কথা শুনে দুর্বোধ্য হাসলো। বিড়বিড় করে আনমনে বলল, ” আর ফ্যামিলি! বেঁচে আছি এই ঢেড়! ”

মিনু বুঝতে পারলো না আরহাব কি বলল তবে প্রশ্ন ও করলো না। হোটেলের উদ্দেশ্যে রিকসা নিলো।

___________

” এই মেয়ে! এই মেয়ে শুনছো? ”

প্রাপ্তি পাশ ফিরে তাকালো সায়রের দিকে। আপাতত দুজন ই একটা ব্রিজের রেলিং ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে, প্রাপ্তি এতক্ষণ ব্রিজের নিচে কি আছে তা দেখার জন্য উঁকি ঝুকি দিচ্ছিলো সায়রের ডাক শুনে কপাল কুঁচকে এলো তার। প্রাপ্তি খানিকটা এগিয়ে গিয়ে সায়রের সামনে দাঁড়িয়ে সায়রের দুপাশে হাত রেখে খানিকটা ঝুঁকে গেলো তার দিকে। যদিও সায়র বেশ লম্বা তার থেকে। সায়র আতঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রাপ্তির দিকে, প্রাপ্তিকে কে দেখলে তার একটা কথায় মাথায় আসে ” সুন্দরী মেয়েরা ডেঞ্জারাস হয়! ”

” লিসেন মাই হবু জামাই, আমার নাম “এই মেয়ে” না, ওকে? বুঝতে পেরেছেন আপনি? আমার একটা সুন্দর নাম আছে, প্রাপ্তি। প্রাপ্তি যদি বেশি কঠিন মনে হয় তাহলে জান, বউ, কলিজা যা ইচ্ছে ডাকবেন তবুও যদি এই মেয়ে ডাকেন আপনার একদিন কি আমার! মাইন্ড ইট! ”

বলেই সরে আসলো সামনে থেকে। সায়র এখনো বোকার মতো তাকিয়ে আছে। মেয়েটার আদৌও কি মাথার তার ঠিক ঠাক সংযোগে আছে নাকি সব কটা ভুল ভাল সংযোগে স্থাপিত!

” শুনো মেয়ে তুমি কিন্তু ভুলে যাচ্ছো আমি তোমার সিনিয়র। বড় হই আমি তোমার! ”

” আবার মেয়ে? ”

” প্রাপ্তি”

” তো আমি কি করবো?” প্রাপ্তির এমন গা ছাড়া প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেলো সায়র। আমতাআমতা করে বলল, ” তো তোমার উচিত আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলা ”

” অসম্মান কখন করলাম? ” প্রাপ্তির করা প্রশ্নে চুপ করে যায় সায়র। মেয়েটা তকে অসম্মান করে নি তবে সম্মান ও দেয় না।

” তুমি আমাকে শাসাচ্ছো কেন? সাহস বেশি হয়ে গেছে? ”

” কবে কম ছিলো?”

” বেশি কথা বলো মেয়ে তুমি। ”

” কবে কম বলতাম? ”

” ওফফ তুমি আমাকে এখানে কেন আনলে? ”

” আপনি আসলেন কেন? আপনি কি কচি খুকি? যে জোর করে নিয়ে আসছি? আপনি নিজেই আসছেন ”

সায়র চুপ করে যায়। এই মেয়ের সাথে তর্কে সে কখনোই পারবে না তা তার বোঝা শেষ তাই কথা না বাড়িয়ে সামনের দিকে তাকালো। শেষ বিকেলের রোদ পড়ার সময় টা বেশ সুন্দর। তার উপর যদি থাকে থোকা থোকা মেঘ জমা আকাশ তাহলে তো অসম্ভব সুন্দর পরিবেশ!

প্রাপ্তি মুচকি হেসে সায়রের আরেকটু কাছে গিয়ে দাড়ালো। এই বেটাকে রাগাতে তার সেই লাগে। সায়রের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,

“শেষ বিকালের বিষন্ন মেঘ জমা আকাশের মতোই সুন্দর আপনি ! ”

সায়র অবাক দৃষ্টিতে তাকালো মেয়েটার দিকে। মেয়েটার কথা বলার ধরন চমৎকার ঠিক প্রেমে পড়ার মতো। মেয়েটার কথা শুনতে ভালো লাগে, কন্ঠ টা যেন মায়ায় ঘেরা। তাহলে সে কি মায়ায় পড়ে গেছে নাকি প্রেমে পড়েছে.?

চলবে…

[ আজকের পর্বটা কেমন লাগলো জানাবেন কিন্তু ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here