দমকা_প্রেমের_গল্প #Ayrah_Rahman #পর্ব_২৩

0
132

#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_২৩
__________________
চাঁদ বিহীন আকাশটাও দেখতে তখনই ভালো লাগে যখন আকাশে মেঘেদের ছুটোছুটি খেলা দেখা যায়। আকাশে চাঁদ নেই হয়তো তারা রা মেঘেদের আড়ালে গোপন বৈঠকে বসেছে তাই দেখা যাচ্ছে না। শুধু কালো হওয়া আকাশ টায় নজরে আসছে মিনুর। হঠাৎ করেই মুনতাসিমের কথা মনে আসছে তার। সারাদিনই ডাক্তারের সাথে থেকে মুনতাসিমের কথা মনে আসে নি তার কিন্তু হঠাৎ করেই আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে পড়লো তার ভালোবাসার মানুষ টার কথা। আকাশের দিকে তাকিয়েই দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। কেনো যে একটুও ভালোবাসলো না মুনতাসিম ভাই!

আকাশ থেকে নজর সরিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো মিনু। সে দাঁড়িয়ে আছে বারান্দার শেষ কর্নারে আর তার সামনের বারান্দার অপর পাশে ডিভানের মতোই দেখতে একটা বসার জায়গায় বসে এক ধ্যানে তার দিকে ই তাকিয়ে আছে আরহাব। যেন কিছু দেখছে। মিনু এগিয়ে গেলো সেদিকে,

” কেমন লাগছে এখন? জ্বর টর আছে? ”
আরহাব কোন কথায় বলছে না। যেন সে শুনতেই পারলো না। মিনু এক পলক তাকালো আরহাবের দিকে। তার মতি গতি সুবিধা জনক লাগলো তার মিনুর কাছে। মিনু রেলিং ধরে দোয়া দরুদ পড়ে লাফ দিলো আরহাবের বারান্দায় তবুও যেন আরহাবের কোন হেলদোল নেই। সে একই দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিনুর দিকে।

মিনু আরহাবের কাছে যেতেই আরহাব বলে উঠলো, ” এতো কষ্ট করে একজন ফালতু মানুষের কাছে না এলেও পারতেন মিনু ”

মিনু চমকে উঠলো। সে ভেবে ছিল আরহাব হয়তো তাকিয়ে তাকিয়ে ঘুমিয়েছে কিন্তু না ব্যাটা তো পুরো সজাগ। আরহাব সামনে থাকা আরেকটা ডিভান টান দিয়ে মিনুকে ইশারা করলো বসতে। মিনু কিছু একটা ভেবে আরহাবের কপালে হাত দিয়ে চমকে উঠলো।

” আপনার শরীরে তো ভীষণ জ্বর। এই জ্বর নিয়ে এমন বাতাসে বসে আছেন শীত করছে না? আজব মানুষ আপনি! ”

আরহাব হাসলো। হাসতে হাসতে বলল, ” ব্যাঙের আবার সর্দি জ্বর! ও সব কিছু না ”

মিনু বিরক্ত হলো। কড়া কথা শোনাতে গিয়ে থেমে গেলো, ফোস করে একটা শ্বাস ছেড়ে উঠে বিছানা থেকে একটা কম্বল এনে আরহাব কে দিয়ে বলল, ” এটা শরীরে জড়িয়ে নেন, শীত করবে না ”

আরহাব কিছু বলল না, কম্বলটা শরীরে জড়িয়ে ধরে বসে রইলো। মিনু কিছু একটা ভেবে বলল, ” আপনি তো ডাক্তার তার মানে ফাস্ট এইড বক্সের সরঞ্জাম আপনার সাথে থাকার কথা। থার্মোমিটার কোথায়?

আরহাব মিনুর দিকে তাকিয়ে হাসলো, ” এতো ব্যস্ত হবেন না মিনু। এতো সহজে আমি মরব না। আপনি বসেন তো ”

মিনু ধমক দিয়ে বলল, ” আপনি চুপ থাকুন। সব কিছু তেই বাড়াবাড়ি! ”

আরহাব আবারো হাসলো, কিছু ক্ষন চুপ থেকে বলতে শুরু করলো, ” পৃথিবীতে সবচেয়ে অসহায় কে জানেন? ”

মিনু চুপ থেকে বলল, ” কে?”

” যাদের মা বাবা নেই, বিশেষ করে যার মা নেই, কিন্তু তার চেয়ে অসহায় কে জানেন? ”

” কে?”

” যার মা বাবা থেকেও নেই। যার পরিবার থেকেও নেই। আর সেই রকমই অসহায় আমি নিজে। যার মা থেকেও নেই, বাবা থেকে ও নেই। কখনো ফোন দিয়ে খোঁজ নেয় না আদৌও বেচে আছি নাকি মারা গেছি ”

মিনু অবাক চোখে তাকিয়ে বলল, ” মানে? ”

আরহাব মুচকি হেসে বলল, ” আপনি তো লাকি পার্সন। আপনার ফ্যামিলি আছে। আমার না সেটা নেই। একদমই নেই। আগে ছিলো যখন আমি ভীষণ ছোট ছিলাম। আমার মা একজন চাকরি জীবি। মা একজন ব্যাংকার আর বাবা ব্যবসায়িক। বাবা ব্যবসার খাতিরে বছরের বেশির ভাগ সময় ই দেশের বাহিরে থাকে আর মা সারাদিন অফিস। আমাদের টাকার কোন অভাব নেই অভাব আছে শুধু ভালোবাসার, স্যাক্রিফাইসের। আমি বড় হলাম কাজের মাসির কাছে। সে কখনো দিনে একবার খাওয়াতো কখনো নিজে খেয়েই বসে থাকতো। আর ভীষণ মারতো আমায়। কিন্তু তাকেই আমার আপন মনে হতো কেন জানেন? ওই যে জন্মের পর থেকে তো তার কাছেই মানুষ। এভাবে ই দিন গড়ালো, বড় হলাম। কাজের মাসির পরিবর্তে আমার বড় হবার মাধ্যম হলো হোস্টেল। ক্লাস সেভেনে হোস্টেলে এসেছি আজ পর্যন্ত সেই বাড়ি মুখি আমি হইনি। পেরেন্টস মিটিংয়ে আমার মা বাবা কখনোই আসে নি। তাদের তো সময় ই নেই। এতো দিনে হয়তো মরেই যেতাম ডিপ্রেশনে যদি না খোদা আমার জীবনে একজন বেস্ট ফ্রেন্ড রুপে একজন ফেরেস্তা না পাঠাতেন। আপাতত ডাক্তারী পড়ছি ভালো ই আছি।

মিনু চুপ থেকে আরহাবের সকল কথা শুনলো, বলার মতো কিংবা শান্তনা দেওয়ার মতো কিছু ই পেলো না। কি দিয়ে শান্তনা দিবে? একজন সন্তানের জীবনে পরিবার যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ যার নেই সেই বোঝে।

মিনু দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো, আরহাবের কপালে হাত রেখে ভেতরে গিয়ে লাইট অন করে আরহাবের ব্যাগ খুঁজলো। ড্রেসিং টেবিলের সাথে তা পেয়েও গেলো।

মিনু আরহাবের ব্যাগ খুঁজে নাপা ট্যাপলেট আর থার্মোমিটার পেয়েও গেলো। বাঙালিরা আর যায় হোক আর কোন ঔষধের নাম জানুক কিংবা না জানুক নাপার নাম জানে না এমন কেউ নেই।

মিনু পানির বোতল নিয়ে লাইট অফ করে এগিয়ে গেলো আরহাবের দিকে। থার্মোমিটার ঝাকিয়ে আরহাবের সামনে ধরে বলল, ” নিন তো এবার হা করুন ”

আরহাব স্বাভাবিক দৃষ্টিতে মিনুর দিকে তাকালো, মেয়েটা এতো চিন্তা করছে কেন তার জন্য?
” আপনি এতো কিছু করছেন কেন আমার জন্য? আপনি তো আমার কেউ ই হোন না। কখনো তো দেখিও নি। কালই না প্রথম আলাপ আমাদের!

” বন্ধু হবার জন্য হাজার বছরের দরকার হয় না এক মূহুর্তই যথেষ্ট। এবার হা করুন ”

আরহাব কিছু বলল না, ভদ্র ছেলের মতো হা করলে মিনু থার্মোমিটার ঢুকিয়ে দিলো তার মুখে। থার্মোমিটার বের করে তো মিনুর চক্ষু কপালে। এতো জ্বর নিয়েও বান্দা কেমন স্বাভাবিক! মিনু এই জায়গায় থাকলে তো নির্ঘাত মারা পড়তো। আরহাবের জ্বরের পরিমান ১০৫° এর কাছাকাছি। এতো জ্বর?

মিনু চট জলদি আরহাবের দিকে পানির বোতল দিয়ে ঔষধ হাতে ধরিয়ে দিলো, আরহাব ও বিনা বাক্যে খেলো। আরহাবের মাথা ঝিমঝিম করতেই আরহাব উঠে দাঁড়ালো, মিনুকে উদ্দেশ্য করে বলল, ” আপনি চলে যান মিনু। আমি ঘুমাবো। ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে। ”

বলেই বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। মিনু হাবার মতো দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে আসার জন্য পা বাড়াতে গিয়েও থেমে গেলো। সোজা বাথরুম থেকে মগে করে পানি এনে নিজের রুমাল দিয়েই আরহাবের কপালে জল পট্টি দিতে লাগলো।
____________________

” মেহের! ”

” জ্বি আপু! ”

” আজকে তোমাদের বাড়ি এমন ফাঁকা ফাঁকা কেনো? কেউ নেই? ”

মেহের অরিত্রার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, ” না আপু। সবাই এক জায়গায় গেছে বিকেলে চলে আসবে। বাড়ি তে শুধু আমি আর আম্মু ”

অরিত্রা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো, ” ওহ! সবাই গেছে? ”

” হ্যা সবাই ” মেহেরের কথা গুলো শুনে অরিত্রা কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসলো। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে দাড়াতে বলল, ” তোমাকে যেই অংক গুলো দিলাম সে গুলো ভালো করে করে আমি একটু বাড়ি টা ঘুরে আসছি ”

মেহের মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো। অরিত্রা ব্যাগ রেখে দরজার বাহিরে গেলো, দোতলার বারান্দা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একেবারে কর্নারের রুমে গিয়ে পা জোড়া থামালে সে। ভ্রু কুঁচকে তাকালো দরজার দিকে। এই বাড়ি তে একটা জিনিস খুব ভালো যে প্রতিটা দরজায় যার রুম তার নাম লিখা থাকে। এই যে এই মুহুর্তে অরিত্রা দাঁড়িয়ে আছে মুনতাসিম মাহমুদের রুমের সামনে। যেখানে বড়ো বড়ো অক্ষরে লেখা আছে ” জন সাধারণের প্রবেশ নিষেধ “। হাহ্ ঢং! নিজে যেনো জন সাধারণ না! হাতির বাচ্চা কোথাকার। দরজার নাব ধরে ঘুরানোর সাথে সাথে ই দরজা খুলে গেলো। শয়তানি হাসি দিয়ে ভেতরে উঁকি ঝুকি দিতেই কাউকেই দেখতে পেলো না। নিশ্চিত হয়ে ধীরে ধীরে ভেতরে ঢুকলো সে।

বিশাল রুমটার এক পাশে ওই বদমাশ খচ্চর বেডার নানা ঢংয়ের ছবি টানানো। অরিত্রা সব গুলো ছবি খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে মুখ ভেঁচকি দিলো। কলম দিয়ে দুয়েক টা ছবিতে চিত্রাঙ্কন করতেও ভুলল না। ড্রসিং টেবিলের সামনে গিয়ে তেল দেখে মুচকি হেসে কিছু টা তেল ফ্লোরে ফেলে দিলো পুনরায় বোতল টা আগের জায়গায় রেখে শয়তানি করার মতো আর কিছু পেলো না তাই হাতে থাকা কাজল দিয়েই আয়নায়র চার পাশে আঁকিবুঁকি করলো এবার কিসে নিজের প্রতির প্রকাশ করবে সেটায় ভাবছে। বিছানায় বসতে যাবে হঠাৎ করেই ওয়াসরুমের দরজা খোলার আওয়াজে চমকে উঠলো অরিত্রা। মুনতাসিম কে চুল মুছতে মুছতে বের হতে দেখে পারে না মাটি ফাক করে মাটির ভিতরে ঢুকে যায়৷ মুনতাসিম অরিত্রার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।

অরিত্রা মুনতাসিমের দিকে তাকিয়ে সব গুলো দাঁত বের করে হাসলো, মনে মনে একটায় কথা আউড়ালো, ” এখন তোর কি হবে অরু? ”

চলবে….

[ আজকের পর্ব কেমন লাগলো জানাবেন প্লিজ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here