#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_২৮
__________________
টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে অরিত্রা। দৃষ্টি তার বহুদুর, মনে মনে ভেবেই যাচ্ছে চিঠির মালিকের কথা। ভেবেও যখন কোন কুল কিনারা পাচ্ছে না তখন ই উঠে দাড়ালো। সবটা সময়ের উপর ই ছেড়ে দিলো যা হবে দেখা যাবে।
হাঁটতে হাঁটতে লাইব্রেরি র দরজার কাছে আসতেই আবারো স্ব শব্দে ফোন টা বেজে উঠলো ব্যাগের ভেতর থেকে। অরিত্রা বেশ বিরক্ত হলো, এতো ফোন কেন আসতে হবে! অনিচ্ছা সত্যেও ফোন বের করলো ব্যাগ থেকে, মোবাইল স্ক্রিনে “বড়ো মা ” লিখা দেখতে পেয়ে খানিকটা অবাক হলো, হঠাৎ বড়ো মা ফোন করার কোন কারণ সে পেলো না। তাহলে কি মেহেরের কিছু হলো!
” আসসালামু আলাইকুম বড়ো মা ”
অপর পাশ থেকে তৃষা বেগম সালামের উত্তর দিয়ে বলল,
” ওয়ালাইকুম সালাম অরি মা। কোথায় তুমি?”
” বড়ো মা আমি তো ভার্সিটি। কেনো! কোন দরকার ছিলো বড়ো মা? ”
” আসলে আজ মিনুকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে। মেধা টা কাল মাত্র গেলো হোস্টেলে আজ আসতে পারবে না, বাড়িতে কোন মেয়েও নেই মেহের ছাড়া। তাই বলছিলাম কি, তুমি যদি মা একটু আসতে তাহলে খুব ভালো হতো ”
অরিত্রা মুচকি হেসে বলল, ” এমা ছি ছি এভাবে বলেন না বড়ো মা। আমি আসছি এখুনি ”
” ঠিক আছে মা, সাবধানে এসো ”
বলেই তৃষা বেগম ফোন রেখে দিলেন। অরিত্রা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চলল মজুমদার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
_____________
মিনু সকল কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরেছে মাত্র আধ ঘন্টা হবে। ফ্রেস হয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে ই তার মা চাচিদের আয়োজন নজরে এলো তার। বুঝলো না কিসের আয়োজন! মন মেজাজ এমনি ভালো না আসার সময় আরহাবের সাথে দেখা হয় নি তার, সেই সকালে ওই ঘটনার পর মুখোমুখি হয় নি দুজন। আর আসার পর থেকে মুনতাসিমের ও পাত্তা নেই। লোকটা সারাদিন যে কোথায় কোথায় যায় আল্লাহ ভালো জানে। অফিসের কাজ শেষ করে রাজনীতি আর রাজনৈতিক কাজ শেষ করে অফিস। পারে কি করে লোকটা? ক্লান্ত লাগে না! অদ্ভুত!
সোফায় বসে কথা গুলো চিন্তা করতে করতে পাশে কারো উপস্থিতি টের পেলো সে। ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে মুনারা আক্তার তার পাশেই বসেছে।
মাকে পাশে বসতে দেখে সোজা হয়ে বসলো মিনু। মুনারা আক্তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে গলা পরিষ্কার করে বলল,
” সব কাজ ঠিক ভাবে শেষ হয়েছে তো? ”
মিনু ভ্রু কুঁচকে তাকালো মায়ের দিকে, উকালতি পড়ার জন্য কম বকা শুনতে হয় নি তাকে। সবার অমতে গিয়ে ল’নিয়ে পড়েছে সে। মা’য়ের কথা হচ্ছে মেয়েকে ডক্টর নয়তো ইন্জিনিয়ারিং এ পড়াবে কিসের উকালতি! যার নাই গতি সে করে উকালতি!
মিনুর ছোট বেলা থেকে ই ইচ্ছে ছিলো উকালতি করবে আর সে তার ইচ্ছে কেই প্রাধান্য দিয়েছে। ক ‘ দিন পর ই সে হাই কোর্টে উকালতি করার সুযোগ পাবে।
” হুম শেষ ”
মুনারা আক্তার আরেকটু চেপে বসলেন মেয়ের দিকে, হাতে হাত রেখে বলল,
” শোন মা, বয়স তো আর থেমে থাকে না তাই না! পঁচিশ চলছে, বিয়ে ঠা তো করতে হবে তাই না? ”
মিনু ভ্রু কুঁচকে তাকালো মায়ের দিকে, ” ঝেড়ে কাশো তো, কি বলতে চাও?”
” ওই বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আনোয়ার পাশা কে চিনিস না? ”
” হুমম চিনি, তো?”
” ওনার এক মাত্র ছেলে ইন্জিনিয়ার, বিশাল বড় লোক, উনারা আজ আসবে তোকে দেখতে ”
মিনু চমকে উঠলো, তৎক্ষনাৎ দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলল,
” হুয়াট? কি বলছো কি? আমাকে দেখতে আসবে আর আমিই জানি না? ”
” আসলে আমিই কাউকে জানাতে নিষেধ করছি, তোকে বললে তুই বাড়ি ফিরতি? ফিরতি না তাই তোকে বলি নি ”
” আমি বিয়ে করব না ”
” আরে দেখতে আসলেই কি বিয়ে হয়ে যায় নাকি? ”
মিনু নাকচ করে বলল, ” বললাম তো বিয়ে করব না আর না ওদের সামনে যাব! ”
মুনারা আক্তার কিছু বলার আগেই পিছনে থেকে মুনতাসিম গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো, ” কেন সামনে যাবি না? বিয়ের বয়স হয় নি তোর? আগের দিনের মানুষের তো ১৬ পেরুনোর আগেই বিয়ে দিয়ে দিতো সে হিসেবে তুই তো বুড়ি হয়ে গেছিস। মা চাচিদের জিজ্ঞেস কর ওনাদের বিয়ে কত বছর বয়সে হয়ে ছিলো! এখনো নাটক করিস বিয়ে নিয়ে! ছোট মা যা বলছে তাই করবি। এটাই আমার লাস্ট এন্ড ফাইনাল কথা. কথার নড়চড় যেনো না হয় ”
বলেই গটগট পায়ে সিড়ি উপরে উঠে গেলো। মিনু ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মুনতাসিমের দিকে। নির্দয় পুরুষ! একটু ভালোবাসলে কি এমন ক্ষতি হতো তার!
মিনু মায়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে নিজের রুমের দিকে রওয়ানা দিলো, যেতে যেতে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল, ” জিনিস পত্র রুমে পাঠিয়ে দাও ”
মুনারা আক্তার হাসলেন, বাড়ির সব কটা ছেলেমেয়ে আর কারো কথা না শুনোক মুনতাসিমের কথা মানেই তাদের শেষ কথা!
প্রায় আধঘন্টা পর দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে নড়েচড়ে উঠে মিনু, উত্তর দিলো,
” দরজা খোলা ভেতরে আসো ”
দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো অরিত্রা হাতে তার বেবি পিংক কালারের শাড়ি আর অর্নামেন্টস। জিনিস পত্র গুলো বিছানায় রেখে মিনুর পাশে বসলো অরিত্রা, মিনু মুখ গোমড়া করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
অরিত্রা মিনুর হাতে হাত রেখে বলল,
” মন খারাপ আপু?”
” নাহ”
মিনুর উত্তর শুনে হাসলো অরিত্রা।
” বিয়েতে মত নেই? ”
মিনু কোন উত্তর দিলো না। অরিত্রা হেসে বলল, ” আমার একটা বেস্ট ফ্রেন্ড আছে নাম প্রাপ্তি। মেয়েটার মাথার সব গুলা তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন ”
মিনু কপাল কুঁচকে তাকালো অরিত্রার দিকে। অরিত্রা হেসে বলল, ” কয়েকদিন আগে ওকে পাত্র পক্ষ দেখতে এসেছিলো আর ওর বিয়েতে মত ছিলো না আর কি কান্ড টাই না করলো, প্রথমে তার উদ্ভট সাজ তারপর উদ্ভট কান্ড। আসো তোমাকে সাজাতে সাজাতে ওর কান্ড গুলো বলি! ”
মিনু ও রাজি হয়ে গেলো অরিত্রা মিনুকে শাড়ি পরিয়ে সাজাতে সাজাতে প্রাপ্তির কাহিনী পুরোটা বলল, একটা দাড়ি কমা ও মিস নাই। এমন কি সায়র কে জালানোর মুহুর্ত গুলো ও বাদ গেলো না। মিনু মন খারাপের মধ্যে ও হেসে গড়াগড়ি খাবার দশা। অরিত্রার ও মিনুকে হাসাতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
” তোমার ওই এলিয়েন ফ্রেন্ড কে দেখার শখ হচ্ছে অরি ”
” তোমার ভাইয়ের বউ হলে দেইখো কেমন তার ছিড়া! আমার তো মনে হয় না সায়র ভাইকে এতো সহজে ছাড়বে, তবে সায়র ভাইয়া মানসিক রোগী হয়ে পাবনা ভর্তি হলে অন্য ব্যাপার! ”
” আমিও চাই এমন একটা ভাই বউ, যে পুরো বাড়ি টা মাতিয়ে রাখবে ”
অরিত্রা চুপ থেকে বলল, ” মিনু আপু?”
” হুম বলো”
” কাউকে ভালোবাসো? ”
মিনু চমকে তাকালো অরিত্রার দিকে। মেয়েটা কি মন পড়তে পারে না কি?
মিনু ঠোঁট এলিয়ে হেসে বলল, ” বুঝলে মেয়ে! পৃথিবীতে সবচেয়ে কষ্টের জিনিস টা কি জানো? এক তরফা ভালোবাসা। সবচেয়ে জঘন্য! শান্তি তে বাচতেও দেয় না, মরতেও দেয় না, অসহ্য যন্ত্রণা। সবার ভাগ্যে ভালোবাসা জুটে না মেয়ে ”
অরিত্রা কি বলবে বুঝতে পারলো না, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মিনুর দিকে। এতো সুন্দর মিষ্টি হাসির আড়ালে ঠিক কতটা যন্ত্রনা লুকিয়ে রেখেছে মেয়েটা সেটাই বুঝতে চেষ্টা করছে সে। পিংক কালারের শাড়ি তে মেয়েটাকে সর্গের কোন হুর লাগছে অথচ মেয়েটাও ভালোবাসার মানুষ কে না পেয়ে অসহায়! হায়রে নিয়তি!
” সবার জীবনে ই ভালোবাসা আসে আপু, দমকা হাওয়ায় ভেসে দমকা প্রেমের গল্প হয়ে আসে ”
মিনু মুচকি হেসে মাথা নোয়ালো, কিছু একটা চিন্তা করে বলল,
” হুমম, হয়তো আসবে। হয়তো বা এসেছে! অতীতের পিছুটান রাখতে নেই মেয়ে! ”
চলবে…
[ আজকের পর্বটা কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু আর ছোট্ট রিভিউ দিয়ে যাবেন]