দমকা_প্রেমের_গল্প #Ayrah_Rahman #পর্ব_২৯

0
119

#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_২৯
__________________

” আসতে পারি?”

দরজার বাইরে অতি পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে বই থেকে চোখ তুলে সামনে তাকালো প্রলয় পাশা। হাতে মোটা বই আর চোখে চশমা আটিয়ে ধবধবে ফর্সা শরীরে কালো রঙের শার্টে ঠিক যেন হ্যারি পটার। হাত থেকে বই বিছানায় রেখে এক লাফে উঠে দাড়ালো প্রলয়। প্রায় বিশ বছর পর চোখের সামনে নিজের ভালোবাসার দ্বিতীয় নারীকে দেখতে পেয়ে চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো তার। ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো নাহিদা বেগমের দিকে, নাহিদা বেগম ও এগিয়ে এলো আদরের ভাইপোর দিকে। খুব বেশি ভালোবাসতো ছেলেটাকে। ছোট বেলা থেকে ই ছেলেটা বেশ একগুঁয়ে আর জেদি এখানো হয়তো একই রকম রয়ে গেছে। আর তাকে খুব ভালোবাসতো।

আচমকা নাহিদা বেগম কে জাপ্টে ধরলো প্রলয়, হঠাৎ এমন হওয়ায় বেশ খানিকটা পিছিয়ে গেলেন তিনি। পরক্ষণেই মুচকি হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আদুরে স্বরে বলল, ” আমার আব্বাটা কেমন আছে?”

প্রলয় নাহিদা বেগমের কাঁধে মুখ গুঁজে ধীর কন্ঠে বলল, ” ভালো না! ”

নাহিদা বেগম মুচকি হেসে বলল, ” আমার আব্বাটা কি আমাকে খুব বেশি মিস করেছে?’

প্রলয় ও বাচ্চাদের মতো স্বর টেনে বলল, ” খুউউউব ”

নাহিদা বেগম ঠোঁট এলিয়ে হাসলো প্রলয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে চুমু খেলো বার কয়েক। আচমকা প্রলয় নাহিদা বেগম কে ডেকে বলল, ” ফুপি মা?”

” বলেন আব্বা হুজুর! ”

” তুমি কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে? তোমাকে কত খুঁজছি তুমি জানো? এক মা তো কবেই চলে গিয়েছে আরেক মা থেকেও ছিলো না। আমার কি দোষ ছিলো বলো? আমি তো এতিম হয়ে গেলাম! আমার মা তো স্বার্থপর! আমাকে পালবে বলে ফাঁকি দিয়ে চলেই গেলো কিন্তু তুমি কেন স্বার্থপর হলে ফুপি মা? তোমাদের সম্পর্কের বেড়াজালে আমিই তো ভিকটিম হলাম, মা হারা হলাম, এতিম হলাম। দোষ কি আমার ছিলো ফুপি মা?”

নাহিদা বেগম থমকে গেলেন, ঠোঁট চেপে কান্না আঁটকে প্রলয়কে আরোও শক্ত করে জরিয়ে ধরলেন, ছেলেটা কত অনায়াসে নিজের ভেতরকার অভিযোগ গুলো একে একে ব্যক্ত করছে। তার করা এতো গুলো প্রশ্ন৷ অথচ আশ্চর্য জনক হলেও একটা প্রশ্নের উত্তর ও নাহিদা বেগমের কাছে নেই। কি বলবে তাকে? কি বলে সান্ত্বনা দেবে এই ছেলেকে? ফিরিয়ে দিতে পারবে তার ছেলেবেলা? পারবে না। সম্ভব না! আসলেই কি সে স্বার্থপর! আজ নিজেকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করালো নাহিদা বেগম। ছেলেটার কাছে সে দোষী, চরম দোষী। মা মরা ছেলেটার কথা একবার ও চিন্তা করলো না সে। যেই ছেলে ছোট বেলা থেকে ই মা বলে তাকেই জানতো সে কি না নিজের সুখের জন্য অবুঝ শিশুকে এতিম করে চলে গেলো? আসলেই সে নির্দয়, স্বার্থপরের মতো কাজ করেছে।

” আ’ম সরি আব্বা, আ’ম রিয়েলি সরি! আমি অপরাধী জানি, আমাকে ক্ষমা করে দে না আব্বা।”

প্রলয় নাহিদা বেগমের কাঁধে মুখ গুঁজেই মাথা নাড়িয়ে বলল, ” না ”

” শাস্তি দিবি আমায় আব্বা? ”

” হু”

” কি শাস্তি দিবি বল! ”

প্রলয় সোজা হয়ে দাঁড়ালো, নাহিদা বেগমের মুখ আজলে তুলে বলল, ” তোমার শাস্তি তুমি আজ থেকে আমার মা হয়ে আমার সাথে ই থাকবে বুঝলে?”

নাহিদা বেগম আমতাআমতা করে বলল, ” না তা কি করে হয়! তা ছাড়া অরিত্রা কখনোই রাজি হবে না”

প্রলয় ভ্রু কুঁচকে বলল, ” অরিত্রা কে?”

নাহিদা বেগম মুচকি হেসে বলল, ” আমার বড়ো মেয়ে ”
” তোমার মেয়ে ও আছে? ”

” শুধু মেয়ে না আমার দু দুটো ছেলেও আছে”

প্রলয় মুচকি হেসে বলল, ” গ্রেট! তোমার মেয়েকে আমি দেখে নিবো, কিভাবে রাজি না হয়ে থাকে আ’মিও দেখবো, আর তুমি এখানেই থাকবে এটা ফাইনাল। আর তোমার দুই ছোকরা কোথায় তারা? ”

” বাহিরে। তুই বরং রেডি হয়ে চল, মেয়ের বাসায় যেতে হবে তো ”

” আমি তো রেডি হয়ে তোমার জন্য ই অপেক্ষা করছিলাম। চলো বাহিরে! ‘

প্রলয় আগে বের হলো তারপর নাহিদা বেগম পিছনে পিছনে। নিচে নেমে শেহজাদ আর শেহরানের সাথে কুশল বিনিময় হলো প্রলয়ের৷ বেশ কথাও হলো৷ পরক্ষণেই আনোয়ার পাশা, নাহিদা বেগম, শেহজাদ, শেহরান, তানহা আর প্রলয় গাড়ি তে বসলো মেয়ের বাড়ি যাবার উদ্দেশ্যে।

______________

” আর ইউ সিউর বাবা এটা মেয়ের বাড়ি? ”

তানহার কন্ঠ শুনতে পেয়ে ভিউ মিরর দিয়ে পিছনে তাকালেন আনোয়ার পাশা। মোবাইলের সাথে ঠিকানা টা আবার মিলিয়ে বলল, ” হুম এটাই তো মনে হচ্ছে ”

” মেয়ের নাম কি জানো বাবা? ”

” মেয়ের নাম তো জানি না মেয়ের বাবার নাম জানি ”

আনোয়ার পাশার কথার মাঝেই প্রলয় বিরক্তিকর কন্ঠে বলে উঠলো,

” ওফফ তানু এতো কথা বলিস কেন? ভেতরে গেলেই তো বোঝা যাবে। চল গাড়ি থেকে নাম ”

কথাটা বলে প্রলয় নাহিদা বেগমের দিকে তাকালো, নাহিদা বেগম তখন এক দৃষ্টিতে বাড়ির নেইম প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে, ” মজুমদার ভিলা “। তিনি একবার বাড়ির দিকে তাকাচ্ছেন আরেকবার নেইম প্লেট। কোথাও যেন আশ ফাস লাগছে তার। যদিও তিনি এই বাড়ি তে কখনোই আসে নি আর মজুমদার বাড়ি নামে ও ঢাকা শহরে কম বাড়ি থাকার কথা না তবুও সার নেইম একই হওয়ার হয়তো এমন অস্বস্তি। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে মনে মনে বলল, ” সার নেইম একই হলে তো আর সব এক হয় না, ওনারা তো থাকেন গ্রামে আর এটা তো শহর, এখানে ওনারা থাকার কথা না, আর থাকবেও না ” নিজেকে নিজে বুঝিয়ে গাড়ি থেকে নামলেন।

একে একে প্রত্যেকে নামলো গাড়ি থেকে। তানহা নাচতে নাচতে গিয়ে ক্রলিং বেল বাজালো আর ওদিকে প্রলয় আর নাহিদা বেগম গাড়ি থেকে মিষ্টির বক্স নামাতে ব্যাস্ত।

অরুনা বেগম এসে দরজা খুলতেই তানহা কে দেখে বেশ অবাক হলেন তিনি, তার জানা মতে এই সময় তো পাত্র পক্ষ আসার কথা এখানে তানহা!..

” কেমন আছেন মেঝো মা? ”

অরুনা বেগম মুচকি হেসে বলল, ” এই তো ভালো মা, তুমি হঠাৎ? ”

” আপনি আমার মেয়েকে চেনেন? ”

পিছনে থেকে আনোয়ার পাশার কথা শুনে তানহার পিছনে খেয়াল করলো অরুনা বেগম। আনোয়ার পাশা কে দেখে অরুনা বেগম মুচকি হেসে বলল,

” আরে আসুন আসুন ভাইজান। বাহিরে দাঁড়িয়ে আছেন যে ”

আনোয়ার পাশা অমায়িক হেসে ভিতরে ঢুকলো তার পিছনে পিছনে ঢুকলো তানহা, শেহজাদ আর শেহরান। সোফায় বসে কথা বলতে লাগলো তারা। একে একে ড্রয়িং রুমে খাবার এনে জড়ো করলো তিন জা। সাথে কথা বলতে লাগলো আনোয়ার পাশার সাথে।

” আমার মেয়েকে কিভাবে চেনেন আপা?”

” সে অনেক লম্বা কাহিনি। ” কথাটা বলেই তৃষা বেগম মুচকি হাসলো। তার মধ্যে দিয়েই তানহা বলে উঠলো, ” বাবা এটা তন্ময়ের বাসা, উনি তন্ময়ের মা( তৃষা বেগম কে উদ্দেশ্য করে) , উনি তন্ময়ের মেঝো মা আর উনি ছোট মা আর একজন চাচিমা আছে ”

” আপা মিষ্টি গুলো কোথায় রাখবো? ”

পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে তড়িৎ গতিতে পিছনে ফিরলো তৃষা বেগম সাথে অরুনা বেগম ও। নাহিদা বেগমের কথা যেন গলায় ই আটকে গেলো, মাথা চক্কর দিয়ে পড়ে যেতে নিলে পিছনে থেকে তাকে আঁকড়ে ধরলো প্রলয়। সেও বুঝতে পারছে না হলো টা কি?

” নাহিদা! ”

তৃষা বেগম দৌড়ে এসে জাপ্টে ধরলো নাহিদা বেগম কে। হাত থেকে মিষ্টির বক্স গুলো খসে পড়লে মেঝেতে। পরক্ষণেই নাহিদা বলে এগিয়ে এলো অরুনা বেগম। চোখে তার বিন্দু বিন্দু জল যা থেকে কয়েক ফোঁটা গড়িয়ে পড়লো মেঝেতে। তিনিও এসে জাপ্টে ধরলো দুই জা কে। অন্যান্য জা দের মতো তাদের মধ্যে কখনো কোন বিদ্বেষ কিংবা হিংসা থাকে না। একজনের সাফল্য আরেকজন অনায়াসে বাহবা দিতে এক বিন্দু কার্পন্য করেন না। তিন জায়ের মধ্যে কখনো কোন বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি দুর থাক বেশতি কথাও হতো না, প্রত্যেকের কথার সমান গুরুত্ব থাকে সবসময়। সবাই এক পক্ষে থাকলেও তারা জায়েরা সবসময় এক পক্ষে, একে অপর কে ছাড়া কখনো কোন জিনিস ও কিনে নি। ঠিক এতোটায় মিল তাদের মধ্যে। এই বন্ধনে যেন নজর না লাগে কারো..

চলবে…

[ কেমন লাগলো আজকের পর্ব? আজকে পারিবারিক কিছু দেওয়ার চেষ্টা করলাম, হ্যাপি রিডিং ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here