#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_৩০
__________________
” আপনারা নাহিদা কেও চেনেন? ”
হতভম্ব আনোয়ার পাশার কথা শুনে দুই হাত কপালে ঠেকিয়ে বসলো তানহা। সব পরিচিত, সব আত্মীয় কেনো মজুমদার বাড়িতেই হতে হবে! আজব! নিজে একজনের সাথে প্রেম করে সে মজুমদার বাড়ির। ফুপুর শশুর বাড়ি মজুমদার বাড়ি। আবার ভাইয়ের জন্য মেয়ের খোঁজ ও মজুমদার বাড়িই! কেনো সব ঘুরেফিরে মজুমদার বাড়িতে এসে আটকায়? হুয়াই?
প্রলয় সোফার এক কোনায় বসে ফোন ঘাটছে আর মাঝে মাঝে সবাই কে লক্ষ্য করছে।
তৃষা বেগম নাহিদা কে ছেড়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে আঁচল দিয়ে চোখ মুছলো, অরুনা বেগম ও পাশে দাড়ালো।
” ভাইজান আপনি উত্তেজিত হবেন না সব কথা আপনাকে বুঝিয়ে বলব, আগে আপনি কিছু নাস্তা করে নেন ” কথাটা টা বলেই আনোয়ার পাশার দিকে এগিয়ে এলেন তৃষা বেগম। টেবিল থেকে শরবত টা নিয়ে এগিয়ে দিলেন আনোয়ার পাশার দিকে, উনিও বিনাবাক্যে তা নিয়ে খেলেন।
” কেমন আছেন মিস্টার পাশা? ”
সদর দরজার থেকে কারো কন্ঠ শুনতে পেয়ে সেদিকে তাকালো সবাই, ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করলো মজুমদার বাড়ির তিন কর্তা। মেহেরাব মজুমদার কথাটা বলেই এগিয়ে এলেন আনোয়ার পাশার দিকে। একে একে তিনজন ই হ্যান্ড শেক করে সোফায় বসালো।
” তা কেমন আছেন ভাই সাহেব?”
আনোয়ার পাশা মুচকি হেসে বলল, ” আলহামদুলিল্লাহ, তা আপনারা কেমন আছেন? ”
মেহেরাব মজুমদার হাসি দিয়ে বলল, ” আলহামদুলিল্লাহ ”
মাহফুজ মজুমদার প্রলয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
” কেমন আছো বাবা? ”
প্রলয় মোবাইল ছেড়ে সোজা হয়ে বসলো, ” জি আঙ্কেল ভালো ”
” তা ভাই সাহেব আর কেউ আসে নি? ” কথাটা বলেই আশেপাশে তাকাতেই সোফায় বসে থাকা তানহাকে নজরে এলো মাহমুদ মজুমদারের।
” আরে তানহা মা? তুমি?”
” ও আমার মেয়ে। প্রলয়ের ছোট ” আনোয়ার পাশার কথা শুনে মেহেরাব মজুমদার অবাক হয়ে বলল, ” তানহা আপনার মেয়ে?”
আনোয়ার পাশা মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো ”
মেহেরাব মজুমদার হাসি দিয়ে বলল, ” ভারী লক্ষি মেয়ে আপনার ভাই সাহেব ”
আনোয়ার পাশা মুচকি হেসে নাহিদা বেগমের দিকে তাকালো যিনি তৃষা বেগম আর অরুনা বেগমের পাশেই নিজেকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছে।
“আর ও আমার ছোট বোন নাহিদা”
নাহিদা নাম শুনে মজুমদার বাড়ির তিন কর্তা তৎক্ষনাৎ আনোয়ার পাশার দৃষ্টি বরাবর তাকালো। মাহফুজ মজুমদার আৎকে উঠে দাড়িয়ে বলল, ” ভাবি! আপনি! ”
” ভাবি? ” আনোয়ার পাশা ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলল, ” নাহিদা আপনার ভাবি হয়? আমি তো কিছু ই বুঝতে পারছি না ”
নাহিদা বেগম চুপচাপ দাড়িয়ে আছে, মুখে নেই তার কোন কথা।
” নাহিদা আমার ছোট ভাইয়ের বউ ভাই সাহেব”
” কি বলছেন কি?” আনোয়ার পাশার অবাক কন্ঠ!
” জি ভাই সাহেব, আমার ভাই মাহাবুব মজুমদারের বউ নাহিদা। বাবাকে না জানিয়ে বিয়ে করার কারণে বাবা বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেছিলো ওদের। মাহাবুব ও জন্মগত জেদি, বাবা যখন একবার বলেছে বের হয়ে যেতে সেও বউ নিয়ে সেদিন ই বেরিয়ে গিয়েছিল আর যোগাযোগ হয় নি আমাদের। অনেক খুঁজেছি পায় নি ওদের। কেটে গিয়েছিল বছর দশ কি এগারো। এতো বছরেও ভাইদের কথা মনে হয় নি তার তাই আমরাও খোঁজা বন্ধ করে দেই, অভিমান হয় তার উপর। তাই আর খুঁজি নি ওদের। ওরাও কখনো দাড় গোড়ায় এসে দাড়ায় নি। তার বছর দুই পরেই বাবা মারা যান, স্বামী হারিয়ে, পুত্র হারিয়ে মা ও শোকে বাবা মারা যাওয়ার ছয় মাসের মাথায় মাও চলে যায়। আরোও বেশি অভিমান জন্মায় মাহবুবের প্রতি। বাবা মা মারা গেছে অথচ শেষ দেখাও দেখতে এলো না! ”
” ভাইজান আপনার ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়, তিনি আসবে কি সে তো তখন দুনিয়াতেই ছিল না। ” কথাটা বলেই হুরহুর করে কেঁদে উঠলেন নাহিদা বেগম। আজ স্বামীর কথা বড্ড মনে পড়ছে তার। খুব বেশি ই ভালোবাসতো দুজন দুজনকে। তাই তো খোদা একজন কে কেড়ে ই নিলো, প্রতিজ্ঞা করেছিলো একসঙ্গে বুড়ো হবে কিন্তু তা আর হলো কই! চলে গেলো তো!
মেহেরাব মজুমদার চুপ করে গেলেন। আসলে দোষ টা কার? মাহাবুব মজুমদারের নাকি তাদের বাবার আর নাকি তাদের? মাহাবুব মজুমদার বাবার অমতে না জানিয়ে বিয়ে করে ভুল করেছে তার উপর বাবার কাছে ক্ষমা চাইতেও নাড়াজ ছিলো সে। দোষ টা তার? নাকি তাদের বাবা ছেলের প্রতি এতোটা কঠোর হয়ে ভুল করেছেন? কিন্তু ছেলের জীবনে এতো বড়ো সিদ্ধান্ত নিজে নিজে নিলে কোন পিতার রাগ না হবে, এখন রাগ করলেই কি বেরিয়ে যেতে হবে? দোষ টা কি তার বাবার? নাকি সেদিন তাদের না আটকে দোষ টা সে নিজে করেছে? উত্তর টা ধোঁয়াশা।
নিরবতার মাঝে ইতি টেনে মাহমুদ মজুমদার বলে উঠলো, ” ভাই সাহেব আপনার কি মনে হচ্ছে আ’মি তা জানি না তবে আমার যুক্তিতে একজন প্রেমিক হিসেবে মাহাবুবের কাজ টা হান্ড্রেট পার্সেন্ট রাইট হলেও একজন ছেলে হয়ে কাজ টা তার ভুল, অমন হুট করে ছেলের বিয়ে কোন বাবার কাছে ই তা সুখকর হতে পারে না। তার জন্য বাবার এমন রাগ দেখানো আমি খারাপ বলতে পারছি না। আর রাগের মাথার প্রতিটা পিতামাতাই তার সন্তানকে অনেক কিছু ই বলে তাই বলে বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে যাওয়া টা ও মাহাবুব ঠিক করে নি। আর ভাইদের কথা হলে আমরা জানি ঐ দিন ওদের না আঁটকে আমরা অপরাধী তাই বলে পুরনো ভুলের জন্য এখন মাশুল গুনতে হলে আমরা বড়ো রাই গুনবো আশা করি তার প্রভাব যেন পরবর্তী প্রজন্মে না পড়ে। আমি কি বলছি আপনি নিশ্চয়ই তা বুঝতে পারছেন ভাই সাহেব? ”
আনোয়ার পাশা মাথা নিচু করে কিছু একটা ভেবে বলল, ” আমি ব্যবসায়ী মানুষ, লাভ লোকসানের হিসেব টা বেশ ভালো ই বুঝি তবে সাংসারিক ব্যাপারে আমার ধারণা নিতান্তই নগন্য। তবে একজন বাবা হিসেবে আমি কখনোই চাইব না আমার ছেলে বা মেয়ে আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করুক, তাতে আপনার বাবার রাগ করা টা যুক্তি যুক্ত। আমার বোন যে নির্দোষ তা কিন্তু না সেও তার বাবার কথার অবাধ্য হয়েছে কিন্তু কি করব বলেন শত অপরাধ করলেও সে আমার আদরের বোন তাকে ছাড়া নিজেকে অপূর্ণ লাগে। হারিয়ে যাবার পর পাগলের মতো খুঁজেছি পাই নি, ছোট বেলা থেকে যে বোন কে বুকে আগলে বড়ো করেছি তাকে কিভাবে এতো তাড়াতাড়ি সামান্য একটা কারণে ভুলে যাবো! ভালোবাসা কি এতোই ঠুকনো!
অতীতের সূত্র ধরে শত্রুতা করলে দিন শেষে আমরা আমরায়! ক্ষতি আমাদের ই। আমি মানুষ টাই লোকসান থেকে লাভের হিসেব টা আগে দেখি তাই অতীত অতীত হয়ে ই থাক। অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হয় কিন্তু অতীত ধরে বসে থাকলে হয় না। ”
এতোক্ষণে মেহেরাব মজুমদার মুখ খুললেন, ” ভাই সাহেব কথাটা মন্দ বলেন নি, দোষ সবারই আছে কারোর টা কম আর কারোর টা বেশি। এক পাক্ষিক বিচার করলে তো হয় না।প্রতিটা মানুষই তার নিজের কাছে নির্ভুল, আর এ জন্যেই মানুষ ভুল করে, কারন ভুলকে নির্ভুল ভেবেই মানুষ সবচেয়ে বড় ভুল করে থাকে। যেমন আমরা করেছি।
মেহেরাব মজুমদার থামলেন, তৃষা বেগম বলে উঠলো,
” সব তো মিটমাট হলোই এখন ঘরের সন্তান ঘরে ফিরাই মঙ্গল, আমরা আমাদের পরিবারের মানুষ কে আর আলাদা থাকতে দিব না। এতোদিন কষ্ট করেছে এখন থেকে আর না ” তুই কি বলিস মেঝো?
অরুনা বেগম ও তৃষা বেগমের কথায় সায় জানিয়ে বলল, ” আমিও এটাই চাই ভাবি ”
নাহিদা বেগম স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ভাইয়ের দিকে। এখন সেই তার অভিভাবক। আজ সে যা বলবে তাই হবে।
আনোয়ার পাশা কিছু বলতে মুখ খুলতেই পেছনে থেকে কেউ বলে উঠলো, ” আমি এই বাড়িতে থাকব না বড় মা! আমাকে ক্ষমা করবেন আপনারা ”
সকলে পিছনে তাকাতেই দেখতে পেলো অরিত্রা সিড়ির উপর দাঁড়িয়ে আছে সকলের দৃষ্টি লক্ষ্য করে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো সে চোখ মুখ তখনও স্বাভাবিক তার।
চলবে….
[ কেমন লাগলো জানাবেন কিন্তু আর গঠন গত মন্তব্য করবেন ]