#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_২১
__________________
” আমার জানে জিগার পরানের দোস্ত! ভালো আছিস? ”
” কেন? খারাপ থাকার কথা ছিলো নাকি? ” মুনতাসিমের গম্ভীর কন্ঠে থতমত খেয়ে যায় ইফতেখার।
” না সেটা কখন বললাম। তা আজ তুই হঠাৎ অফিসে আসলি! ব্যাপার কি? ”
” নিষেধ আছে নাকি? ”
” না না, নিষেধ থাকবে কেনো?
” তো?”
” কি করছিস তুই? ”
” তার আগে বল! কানা হলি কবে? ”
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো ইফতেখার। আমতা আমতা করে বলল, ” কানা হবো কেনো?”
মুনতাসিম ফাইলের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই বলল, ” দেখছিস কাজ করছি তাও আজাইরা প্যাচাল পারছিস। কাজ নেই তোর? টই টই করে যে ঘুরে বেড়াস তোর উকালতি কি আমি করে দেবো? ”
ইফতেখার দাতঁ কেলিয়ে হেসে বলল, ” কথা মন্দ বলিস নি দোস্ত। তুই যদি আমার কাজ টা করে দেস তাহলে তো আমি তোর বোনকে আরেকটু বেশি সময় দিতে পারতাম। ওকে নিয়ে এদিকে সেদিকে ঘুরতে যেতে পারতাম। হাহ্ জিন্দেগী ইজ জিংগা লা লা! ”
মুনতাসিম চোয়াল শক্ত করে চোখ তুলে তাকালো ইফতেখারের দিকে, ” অসভ্য বাদর কোথাকার! মেধা আমার ছোট বোন ভুলে যাস তুই? ”
ইফতেখার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে মুনতাসিমের পিছনে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে আহ্লাদের স্বরে বলল, ” অরিত্রা ও কিন্তু আমার ছোট বোন”
মুনতাসিম ইফতেখারের হাত দুটো ঠাস করে সড়িয়ে দিয়ে দুর দুর করতে করতে বলল, ” এই সর সর। মেয়ে মানুষের মতো এমন শরীরের সাথে ঘষাঘষি করিস কেনো? আমাকে কি তোর ঐ রকম মনে হয় নাকি? ঘষেটি বেগমের মেইল ভার্সন কোথাকার ! ”
ইফতেখার দুরে সরে ঠোঁট চেপে হাসলো, মুনতাসিম কপাল কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে বলল, ” আর কি বললি? অরিত্রা তোর ছোট বোন! তাতে আমার কি! অরিত্রা তোর ছোট বোন ই হোক কিংবা খালাম্মা ই হোক তাতে আমার কিছু যায় আসে না। মুনতাসিম মাহমুদের এতো খারাপ সময় ও আসে নি যে ওই ফাজিল, ঝগড়াটে মেয়েকে পছন্দ করবো! হাহ্ ”
ইফতেখার কপাল কুঁচকে মুনতাসিমের দিকে তাকিয়ে বলল, ” আমি কখন বললাম অরিত্রাকে তুই পছন্দ করিস? আমি তো জাস্ট বললাম অরিত্রা আমার ছোট বোন! আসলে কি বলতো, চোরের মন তো পুলিশ পুলিশ করবেই। যার মনে যেইটা ফাল দিয়ে উঠে হেইডা! ”
বলেই ইফতেখার মুখ দিয়ে শিশ বাজাতে বাজাতে কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। মুনতাসিম হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। সত্যি ই তো আজ একটু বেশিই বলে ফেলেছে। নিশ্চয়ই ইফতেখার কিছু না কিছু সন্দেহ করছে! ওফফ কি যে করা যায়!
_______________
সদর দরজায় ক্রলিং বেলের শব্দে রান্না ঘর থেকে শেহজাদের উদ্দেশ্যে হাক ছাড়েন নাহিদা বেগম, ” এই শেহজাদ দেখ তো কে আসছে? দরজা টা খোল তো! ”
ছেলেদের কোন প্রকার সাড়া শব্দ না পেয়ে বিরক্তি তে নাক মুখ কুঁচকালো সে। ততক্ষণে শেহজাদ দরজা খুলে দিলো। দরজার বাইরে অরিত্রার সাথে অপরিচিত একজন মেয়েকে দেখে কপাল কুঁচকে তাকালো শেহজাদ৷ বাসায় অপরিচিত মানুষ শেহজাদের পছন্দ না। তানহা হাসি হাসি মুখ নিয়ে শেহজাদের দিকে তাকিয়ে বলল, ” কেমন আছো ভাইয়া? ”
শেহজাদ না চাইতেও গম্ভীর কন্ঠে ছোট করে বলল, ” ভালো ”
তানহা অরিত্রার দিকে তাকতেই অরিত্রা ইশারায় বলল ও এমনই। কারো সাথে কথা বলতে চায় না।
তানহা মুচকি হেসে আশেপাশে তাকিয়ে বলল, ” আন্টি কই? যাকে দেখতে আসলাম তার ই তো দেখা নেই! ”
অরিত্রা তানহাকে সোফায় বসিয়ে রান্না ঘরের দিকে গেলো, অরিত্রা এগুতেই নাহিদা বেগম আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বলল, ” কে এলো রে শেহজাদ ” কথাটা বলেই নাহিদা বেগম সোফার রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।
নাহিদা বেগমের কন্ঠ শুনতে পেয়ে তানহা দাঁড়িয়ে পিছনে তাকাতেই চমকে উঠলো সে। হতভম্বের ন্যায় তাকিয়ে রইলো নাহিদা বেগমের দিকে।
নাহিদা বেগম অ্যাস কালারের শাড়ি পরিহিত মাথায় আধা পাকা চুল ঘামে ভিজে কপালে লেপ্টে আছে। তবুও যেন স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছে। বয়স হয়েছে তবুও যেন রুপের একটুও ঘাটতি হয় নি।
নাহিদা বেগম এক পলক তানহার দিকে তাকিয়ে অরিত্রার দিকে তাকাতেই অরিত্রা মুচকি হেসে বলল, ” আরে ও তানহা। তুমিই না ওকে দেখতে চেয়েছিলে। ”
নাহিদা বেগম চিনতে পেরে মুচকি হেসে এগিয়ে গেলো তানহার দিকে। তানহার মাথায় হাত দিয়ে আদর করে বলল, ” কেমন আছো মা? ”
তানহার চোখ দুটো ছলছল করছে যেন চোখের পানি এখুনি গড়িয়ে পড়বে। হুট করেই তানহা নাহিদা বেগম কে জড়িয়ে ধরে হুরহুর করে কেঁদে বলল, ” মিস ইউ ফুপি মা ”
নাহিদা থমকে গেলো সাথে অরিত্রা ও। নাহিদা বেগম কিছু একটা আচঁ করতে পেরে মুচকি হেসে বলল, ” আমাকে কি তোমার ফুপির মতো দেখতে মা? ”
তানহা নাক টানতে টানতে নাহিদা বেগম কে ছেড়ে বলল, ” তুমিই তো আমার ফুপি। আমার নাহিদা ফুপি আমার একমাত্র ফুপি আর আমার বাবার এক মাত্র বোন, তুমি জানো ফুপি! বাবা তোমাকে কত খুঁজেছে? তোমার শশুর বাড়ি চিনে না বলে যেতেও পারে নি। প্রতি রাতে বাবা তোমার কথা ভেবে কত কষ্ট পায় তুমি জানো? কোথায় ছিলে তুমি? কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে? ”
নাহিদা বেগম বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নাহিদা বেগম যখন বাড়ি ছাড়ে তখন তো তার ভাইয়ের বিয়েই হয় নি। তানহার জন্ম বহুদূর! তবুও মেয়েটা কেমন এক দেখাতেই চিনে ফেলল। তার থেমে থেমে কান্না দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটা খুব ভালোবাসে তাকে! কি অদ্ভুত তাই না! যেই মেয়ে তাকে কখনো বাস্তবে দেখে নি তার আদর পায় নি, এই পর্যন্ত ফুপি মা বলে ডাকার সুযোগ পায় নি সেই মেয়ে কেমন ফুপি ভক্ত দেখে নাহিদা বেগম অবাক হলেন বেশ।
” আম্মু তোর ফুপি? আপন ফুপি? ”
অরিত্রার প্রশ্নে তানহা মাথা নাড়িয়ে সায় জানায়। নাহিদা বেগম মুচকি হেসে তানহার মাথায় চুমু খেয়ে বলল, ” ভাইজান কেমন আছে মা? ”
তানহা মুখ গোমড়া করে বলল, ” আব্বু অনেক টা অসুস্থ ছিলো। এব্রোড থেকে ডাক্তার দেখিয়ে এখন কিছু টা সুস্থ। ”
” আচ্ছা তুমি বসো আমি খাবারের ব্যবস্থা করি ”
বলেই নাহিদা বেগম চোখ মুছতে মুছতে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। তানহা অরিত্রার দিকে তাকিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বলল, ” বলছিলাম না গত জনমে মনে হয় আমরা জমজ বোন ছিলাম তাই হয়তো আমাদের এতে মিল! দেখছিস এই জনমেও তুই আমার বোন। ”
অরিত্রা এতোক্ষণ ঘোরের মধ্যে ছিলো তানহা কথায় হুস ফিরে তার। সেও মুচকি হেসে তানহাকে জড়িয়ে ধরে।
তানহা সোফায় বসে কাউকে মেসেজ করে সোজা হয়ে বসলো। অরিত্রার সাথে এটা সেটা নিয়ে গল্প শুরু করলো।
_________________
” এই যে মিস ফকিন্নি! ”
রাস্তায় এক মনে হাঁটতে হাঁটতেই পিছনে থেকে পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে পিছনে তাকালো মিনু। বিরক্তি তে কপাল কুঁচকে এলো তার। ততক্ষণে আরহাব তার সাথে এসে পাশাপাশি হাটা শুরু করেছে। মিনুর পা জোড়া থামিয়ে বলল,
” কি সমস্যা মিস্টার কানা? আপনি আমার সাথে সাথে হাঁটছেন কেন? রাস্তায় কি আর জায়গা নেই? ”
” জায়গা আছে কিন্তু আপনি ছাড়া কোন ফকির মিসকিন নাই! ”
মিনু দাঁতে দাঁত চাপলো। ছেলেটা এমন খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কথা বলে! রাগে সারা শরীর জ্বলে উঠে তার।
” আমার পিছনে পড়ে আছেন কেন হে? কাজ নাই আপনার? যত্তসব! ”
আরহাব দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল, ” আপাতত বেকার মানুষ আমি। তাই ভাবলাম ফকির মিসকিনদের একটু সাহায্য করে আসি! আপনি কি বলেন! কাজটা ভালো না? মিস ফকিন্নি! ”
মিনু হাটতে হাটতে আরহাবের থেকে সামনে এগিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ” ভালো হবে না কেন? খুউউব ভালো কাজ। আপনার এই ভালো কাজের জন্য ই তো নোবেল কমিটি আপনাকে খুঁজছে। ”
কথাটা বলেই মিনু পিছনে তাকিয়ে দেখে আরহাব নেই। পাশ থেকে বিকট আওয়াজে চমকে রাস্তার অপর পাশে তাকিয়ে দেখে আরহাব একটা তিন চার বছরের বাচ্চা কে আঁকড়ে ধরে মাটিতে পড়ে আছে, মাথা ফে’টে র*ক্তে ভেসে যাচ্ছে, হাত পা ছিলে সেখান থেকে ও রক্ত ঝড়ছে। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে সে বাচ্চা টাকে কোলে নিয়ে হাসছে আর ক্ষনে ক্ষনে গালে চুমু দিচ্ছে মিনু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আরহাবের হাস্যোজ্জ্বল মুখখানা তে।
পাশেই একটা ট্রাক থেমেছে। মিনু বুঝতে পারলো এই ট্রাকটার কারণেই এই দশা। ততক্ষণে ভীড় জমে গেছে ওখানটায়। মিনু এগিয়ে গেলো সে দিকে। বাচ্চা টার মা বাচ্চা টাকে কোলে তুলে সারা মুখে চুমু খাচ্ছে আরহাব সেদিকে ই তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।
” আপনার মাথা তো ফেটে গেছে চলেন হসপিটালে যেতে হবে! ”
মিনুর কথায় ঘাড় ঘুরিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো আরহাব। ” আপনি যান নি এখনো? ”
মিনু বিরক্ত হলো, ” আপনি উঠুন, হসপিটাল যাবো ”
আরহাব উঠতে গিয়ে নাক মুখ কুচকে আবার বসে পড়লো মানে সে উঠতে পারছে না। মিনু এগিয়ে গিয়ে আরহাবের বাম হাত নিজের কাঁধে তুলতেই বাচ্চা টার বাবা হয়তো! তিনি এসে ডান হাত টা নিজের কাঁধে তুলে আরহাবকে দাঁড়াতে সাহায্য করলো।
” আপনাকে কি বলে যে কৃতজ্ঞতা জানাবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আপনি না থাকলে আজ আমার ছেলেটা মারাই যেত। কখন যে ও রাস্তায় দৌড় দিয়েছে খেয়াল করতে পারি নি। ”
আরহাব লোকটার দিকে কিছু ক্ষন তাকিয়ে বলল, ” জন্ম দিলেই মা বাবা হওয়া যায় না ভাই সন্তানকে আগলে আগলে রাখতে হয়। সবাই তার সন্তান কে আগলে রাখতে পারে না। আশা করি আপনারা ওমন মা বাবা হবেন না। সবার ভাগ্য তো আমার মতো না! ”
মিনু আরহাবকে নিয়ে সিএনজি তে উঠে পড়লো আর আরহাব পিছনে ঘুরে সেই মা ছেলের ভালোবাসা দেখতে ব্যস্ত। যতক্ষণ না তাদের দৃষ্টি গোচর হয়!
চলবে….
[ আজকের পর্ব কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু ]