প্রেমে পড়া বারন # পার্ট- ৪ # Taslima Munni#

0
179

# প্রেমে পড়া বারন
# পার্ট- ৪
# Taslima Munni#

রেহান কি হিয়াকে পছন্দ করে?
আব্বু আম্মুকে জিজ্ঞেস করলেন।
– এমন তো কিছু মনে হয়না।তবে রেণু আপা হিয়াকে খুব পছন্দ করেন। উনি চেয়েছিলেন রেহান হিয়াকে বিয়ে করুক।কিন্তু এই ছেলের যা মতিগতি!
– কই,আপা তো আমাকে কখনো কিছু বলেনি।
– বলার মতো কিছু থাকলে তো বলবে! রেহান বিয়ে করতেই রাজি না।এখন যদি হিয়ার সাথে বিয়ের কথা হয় আর রেহান রাজি না হয়, তখন কি একটা বিশ্রী অবস্থা হবে। আপা হিয়াকে নিজের মেয়ে থেকে কম দেখেনা কোনো দিন।হিয়াকে এমন একটা বিশ্রী পরিস্থিতিতে ফেলতে চান না।
– হুমম। এটাও ঠিক।
আব্বু গম্ভীর ভাবে বললেন।
– তবে…
আম্মুর তবে শুনে আব্বু বললেন – তবে কি?
– রেহানের মনে কি আছে জানি না,তবে তোমার মেয়ের মনে কি আছে জানি।
– হিয়ার মনে কি আছে??? হিয়া কি…?
– হিয়া রেহানকে পছন্দ করে।
– তাই নাকি? তোমাকে বলেছে কিছু?
– ধুর, আমাকে বলবে??!! মায়ের চোখ ফাঁকি দেয়া এতো সহজ না।রেণু আপাও জানেন।
– বাহ, তুমি ও জানো, আপাও জানে।শুধু আমি জানি না!!
– আরে সব সময় সব কিছু জানতে হয় না।সময়ে জানলেই চলবে তোমার।
– হা,আমি তো গাধার খাটুনি খেটে মরি! এসব জেনে কি হবে!!
– বাজে বকো না তো।আপা এবার খুব ক্ষেপে আছেন রেহানের উপর।
– সেটাই তো স্বাভাবিক। একটার পর একটা বিয়ের সম্বন্ধ ভেঙে দিচ্ছে। কি যে চায় আল্লাহ ই ভালো জানেন।
– রেহান যা-ই চাক। হিয়া বড় হয়েছে। সামনে অনার্স ফাইনাল দিবে।এবার কিন্তু আমাদের ভাবা উচিত। ভালো ছেলের খোঁজ করো।
– হুম। ঠিক বলেছো।লাইট অফ করে দাও তো।ঘুম পাচ্ছে।
আমি সরে আসলাম। আরিফের রুমে আর যাইনি।সোজা নিজের রুমে চলে আসি।

যে যা-ই ভাবুক, রেহান ভাইয়ের মনে আমি নেই!! এটাই সত্যি। আমার খারাপ লাগলেও এটা সত্যি। আমার কষ্ট লাগলেও এটাই সত্যি।উনার মনে এখনো অন্যকেউ আছে!!

বিকেলবেলা বাগানে গেলাম। খরগোশ দুটোর সাথে সময় কাটাতে বেশ ভালো লাগে আমার। দোলনায় হালকা দোল খাচ্ছি আর খরগোশ দুটোর লুকোচুরি দেখছি।
বাগানের অন্যপাশে দেখলাম রেহান ভাই ফোনে কথা বলছেন।ব্লু কালার টিশার্টে উনাকে খুব বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে।
এই লোকটাকে দেখে উনার বয়স অনুমান করা অসম্ভব!
ভার্সিটির মেয়েদের ক্রাশ!!
ক্রাশ হবে না কেন? উনার মতো ব্যক্তিত্ব, কথা বলার স্টাইল, অমায়িক হাসি! যেকোনো মেয়ের মন ছুঁয়ে যাবার মতো। আমাকে দেখতে পেয়ে, ফোন রাখতে রাখতে আমার দিকে আসছেন।
– কিরে, কি করছিস?
বসে পড়লেন আমার পাশে।
– কিছু না। বসে আছি।
– তোর খরগোশ দুটো কেমন আছে?
– ভালো আছে।
– বাহ! আরও সুন্দর হয়ে গেছে এই কদিনে।
– হুম।
– মন খারাপ?
– নাতো।
– তো এভাবে কথা বলছিস কেন?
– কিভাবে বলছি?
– রাগ আমার উপর?
– নাতো।রাগ হবে কেন?
– তাহলে আগের মতো কথা বলছিস না কেন? কেমন করে যেন কথা বলছিস!আগের মতো বাসায় আসিসও না।
– আমি তো ঠিক করেই কথা বলছি।যেভাবে বলা উচিত। বলেছিলাম না জ্বালাতন করবো। তাই করছিনা।
– তাই বলে এভাবে?
– হুম।
– বেশি পাকামো করতে হবে না। আগের মতোই চলবেন। আপনার এই অদ্ভুত ব্যবহার সবার চোখে বাজবে। বুঝছিস?
– বুঝেছি।
– গুড।

হঠাৎ দেখি আমাদের বেলকনিতে আম্মু আর ফুপি কথা বলছেন। দুএকবার আমাদের দিকে তাকাচ্ছেনও।।
গতকাল রাতের কথা মনে পড়ে গেল।
কি ভাবছেন উনারা ভাবতেই…
তাই নরমাল ব্যবহার করার চেষ্টা করলাম।কিন্তু ভেতর একটা অস্বস্তি হচ্ছে আম্মু আর ফুপিকে একসাথে দেখার পর।
উঠে যে চলে যাবো, সেটাও অশোভন দেখায়।
আমাকে উদ্ধার করে দিয়ে আরিফ আর দিয়া হাজির।
যাক বাবা।এবার পরিবেশ টা ঠিকঠাক লাগবে।
চারজনে সন্ধ্যা পর্যন্ত আড্ডা চললো।

ওইদিন রেহান ভাইয়ের কথা গুলো শোনার পরে, তারপর আব্বু আম্মুর আলোচনা শুনে আমি যতই স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছি পারছিনা।
এর মধ্যে পরীক্ষার দরজায় কড়া নাড়ছে। এই সুযোগ, এক অজুহাতে নিজের রুমেই বেশি সময় কাটাচ্ছি। পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ধীরে ধীরে আমিও স্বাভাবিক হয়ে গেলাম।
দেখতে দেখতে আমার পরীক্ষা শেষ।।
একদম ফ্রি হয়ে বাসায় সময় কাটাচ্ছি।
এর মধ্যে ছোট মামা হাজির। ছোট মামা -মামানি দেশের বাইরে থাকেন। তিন মাসের জানা দেশে ছুটি কাটাতে এসেছেন। সাথে উনাদের পাঁচ বছরের ছেলে নুহাশ।
এখানে কয়েকদিন উনাদের সাথে খুব হইচই করে, নুহাশকে নিয়ে সময় কেটে গেলো।উনারা বাড়িতে ফিরে যাবার আগে আমাকে উনাদের সাথে নেয়ার জন্য বায়না ধরলো।
যাবার আগের দিন সন্ধ্যায় সবাই যখন এক সাথে বসলো তখন ছোট মামা বললেন
– আপা, হিয়া আমাদের সাথে যাবে।
– তোরা এতো দিন পরে এসেছিস, কত যায়গায় ঘুরাঘুরি করবে হিয়া গিয়ে কি করবে?
মামানি বললেন – ওর তো পরীক্ষা শেষ। শুধু শুধু বসে আছে বাসায়। আমাদের সাথে গেলে ঘুরাঘুরি করবে। হিয়ার সময় কাটবে, আমাদের ও অনেক ভালো লাগবে।
মামানি আমাকে একটু বেশিই আদর করেন। তাই উনিই বায়না ধরেছেন।
– আমি কিছু জানি না। ওর আব্বুকে বলো।
– দুলাভাই, হিয়া কিন্তু যাচ্ছে আমাদের সাথে।
ফুপি বললো – যাক না।সারাদিন তো বাসায় ই বসে থাকে। ঘুরে আসলে ভালো লাগবে।

ফুপির সাথে মামনি যোগ করলেন- হা।এখনই তো বেড়ানোর সময়। কদিন পরে বিয়ে হয়ে গেলে তো হিয়াকে পাবো না।
আমি সোফার হাতলের এককোনায় বসে আছি।রেহান ভাই মুচকি মুচকি হাসছে মামির কথা শুনে।
আব্বু বললো – আচ্ছা ঠিক আছে। কিছুদিন ঘুরে আসুক।
ছোট মামনির সাথে আমার খুব ভাব।উনার সাথে যাবো এতে আমিও খুব খুশি।অনেক দিন পর নানুবাড়ি যাবো।

এদিকে আরিফ আর দিয়া গাল ফুলিয়ে আছে। ওরাও যেতে চাইছে।কিন্তু আব্বু না করার আগেই রেহান সাহেব উনাদের নিষেধ করে দিয়েছেন। কারণ উনাদের পরীক্ষার পরই যাবার অনুমতি দেয়া হবে।
আর পরীক্ষা এখনো ২/৩ মাস বাকি।এতেই দুজন ফুলে আছে। ওদের মন খারাপ দেখে আমারও খারাপ লাগছে। কিন্তু কিছু করার নেই।কারণ রেহান ভাই না করার পরে আর কেউ অনুমতি দিবে না।

নানুবাড়িতে দিনগুলো খুব আনন্দে কাটালাম সবার সাথে। প্রায় ২০/২৫ দিন থাকার পরে আব্বুর জরুরি তলবে বাসায় ফিরলাম।
এসে দিকে এলাহি কান্ড!!
বাগান থেকে শুরু করে পুরো বাড়ির চিত্র যেন বদলে গেছে। সব পরিপাটি করে সাজানো হচ্ছে।
বিষয় টা বুঝতে পারছি না।বাসায় ফেরার পর সবাই খুশি হলো। কিন্তু কেউ কিছু বললো না।
– দিয়া? বিষয় টা কিরে?
– কোন বিষয়?
– বাসার চেহারা বদলে গেছে! কিছু একটার গন্ধ পাচ্ছি।
– আছে, আছে। সিক্রেট। বলা যাবে না।
– বলা যাবে না মানে? কি হয়েছে বল!
– আহা, ধীরে বাবু ধীরে। এতোদিন পরে এসে সাথে সাথেই জেনে যাবে?
কথাগুলো শুনে পিছনে ফিরে দেখি মাহি আপু!
– মাহি আপুওওও….
দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।
– তুমি কবে আসছো?
– তোকে বলবো ক্যান? খোঁজ নিয়েছিস এই কদিন? নানু বাড়ি গিয়ে একদম সবাইকে ভুলে গেছিস।
– ইসসরে! আমার মোবাইল টা পানিতে পড়ে ৮/১০ দিন যাবত নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন মোবাইল নেয়ার জন্য আবার শহরে আসতে হবে, মামা আসতে নাই,মোবাইল ও নিই নাই।তারপর উনি নতুন একটা গিফট করলেন!
– তোমার তো সব দিকেই লাভ!
দিয়া মুখ মোড়া দিয়ে বললো। রেহান ভাই,ফুপিও আসলো।
– আপু বলো না,কি হইছে?
মাহি আপু শুধু হাসে কিছু বলে না।আম্মুকে
জিজ্ঞেস করলাম- আম্মু তুমি তো বলো!
মাহি আপু আম্মুকে ইশারায় চুপ করিয়ে দিলো।
– আমি কি বলবো? আমি কিছু জানি না। তোর বাবাকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর!
ধুর! কেউ কিছু বলছেনা।
মাহি আপু বললো- যা ফ্রেশ হয়ে, রেস্ট নে।সন্ধ্যায় আমাদের সাথে বের হবি।
– কোথায় যাবো?
ফুপি বললে – ওমা, সব শপিং করতে হবে না?আজকে জুয়েলারিগুলো নিয়ে নিবো।
– কিসের শপিং? আর কিসের জুয়েলারি? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
আম্মু আর ফুপি অন্যরুমে চলে গেছেন ইতোমধ্যে।
আরিফ রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো- বিয়ের।
– বিয়ের? কার বিয়ে?!!
দিয়া আর মাহি আপু হাসছে।
মাহি আপু কানে কানে বললো – তোকে মামা বাড়ি থেকে বিদায় করার ব্যবস্থা করেছে।
আমি আকাশ থেকে পড়লাম!
– কিহ!!
মানে কি? বলা নেই কওয়া নেই! হুট করে বিয়ে বললেই বিয়ে হয়ে যাবে? মগের মুল্লুক নাকি?
রাগে গড়গড় করতে করতে রুমে এসে, হাতের মোবাইল ছুড়ে বিছানায় ফেললাম।
দিয়া, মাহি আপু পিছনে পিছনে আসলো।
– হিয়া তুই আগে শাওয়ার নে।তারপর বলছি সব।মাথা ঠান্ডা কর।
মাহি আপু জোর করে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলো।
অনেকটা সময় নিয়ে শাওয়ার নিলাম।
আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। চোখের পানি থামছেই না।শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখি মাহি আপু আর দিয়া এখনো আছে। মাথায় টাওয়াল জড়িয়ে বেডের এক কোনায় বসে পড়লাম। আমার চোখ লাল দেখে দিয়া চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করে
– আপু তুই কান্না করছিস?!!
আমি চুপচাপ বসে আছি।
– দেখ হিয়া, আমরা এতো কিছু জানি না।
দায়িত্ব নিয়ে বিয়ে ঠিক করার কাজটা ভাইয়া করেছে।
– কিহ? রেহান ভাই!!
– হুমম।ভাইয়ার পছন্দ কি খারাপ হতে পারে, বল?
চল দিয়া।আমরা গেলাম, তুই রেস্ট নে।
মাহি আপু, দিয়া চলে গেছে। রাগে,দুঃখে…
তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নিয়ে,রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here