অর্ধ_নক্ষত্র ।২৫। #লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

0
125

#অর্ধ_নক্ষত্র ।২৫।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

গায়ের হলুদের পর্ব চলতে থাকলো।আঞ্জুমান বারকয়েক এসে ছেলে মেয়েদের সঙ্গে হাঁসি ঠাট্টায় যোগ দিয়ে গিয়েছিলেন।এখন সে রান্না ঘরে তার রান্না নিয়ে ব্যস্ত।এরই মধ্যে নাচ গান শুরু হলো।প্রশান্ত’কে ফাইজ এতক্ষন যাবৎ আটকে রেখেছে।জুনায়না,আসাদ এক সঙ্গে নাচছে তা দেখে প্রশান্ত রেগে গেলো।জুনায়না’র হাত আসাদের হাতে এহেন দৃশ্য যেনো সহ্য হচ্ছে না প্রশান্তর।প্রশান্ত উঠে দাড়ালো ফাইজ এর দিকে কটমট চাহনিতে চেয়ে বলে,”এইবার আমাকে একদম আটকাবি না ফাইজ।”

ফাইজ প্রশান্তর চাহনি দেখেই বুঝে ওঠে প্রশান্তর অবস্থা তাই হেঁসে বলে,”প্রশান্ত বাবু আর ইউ ওকে?”

জুনায়না আড় চোখে চেয়ে দেখলো প্রশান্তর মুখশ্রী সে মিটমিট করে হাঁসলো বিড়বিড় করলো,”তুমি জ্বলবে তবুও বলবে না ভালোবাসি।”

প্রশান্ত ফাইজকে প্রতিউত্তর না করে বেরিয়ে যায়। ফাইজ হেঁসে ওঠে বলে,”প্রশান্ত বাবুকে অনেক নাচিয়েছো সে তো গেলো,এইবার নাহয় তোমরা তোমাদের নাচ থামাও।”

সকলে হাঁসলো।মেহরা বলে উঠলো,”নাচিয়ে তো লাভ হলো না দেখছি,আজও সে বলল না জুনায়নাকে ভালোবাসি।”

“ওকে বলতেই হবে।”,কথাটি বলে জুনায়না নিজের ঘরের দিকে দৌড়ে যায়।ঘরে এসে বারান্দার দরজা খুলে ভিতরে চলে যায়,নিমগ্ন চেয়ে প্রশান্তকে খুঁজে।জুনায়নার বারান্দা থেকে তাদের বাড়ির সম্মুখে থাকা সড়কটি দৃষ্টিগোচর হয়।

প্রশান্ত সদর দরজা পেরিয়ে গাড়ির সম্মুখে আসতেই সে দৃষ্টিগোচর হয় জুনায়না’র।জুনায়না উচ্চ কণ্ঠে প্রশান্তকে ডাকে।প্রশান্ত শুনতে পায় মাথা উঁচু করে চায় জুনায়নার বারান্দার পানে।

“চলে যাচ্ছিস কেনো প্রশান্ত?”

প্রশান্ত উচ্চ কণ্ঠে প্রতিউত্তর করলো”ঐখানে থাকা আর সম্ভব না।”

“কেনো কী হয়েছে টা কী? উপরে আয়।কারণ বল আমায়।”

“অনেক কারণ রয়েছে,চলে যাচ্ছি আমি।কাল”বাকিটা বলা হলো না প্রশান্ত মাথা নিচু করে ফেললো দ্রুত গাড়িতে উঠে পড়ল।প্রশান্ত’র অখিযুগল লাল বর্ণ ধারণ করেছে হাত কাপছে।কম্পিত হাতে গাড়ি স্টার্ট দিলো।প্রশান্ত’র বোধ হচ্ছে নিজের মনের ভিতর থাকা লুকাইয়িত সকল অনুভূতিগুলো নাড়া দিয়ে উঠছে বার বার চাইছে জুনায়নাকে বলে দিতে ভালোবাসি তোকে। আর পারছি না তোকে অন্য করো হয়ে যেতে দেখতে।

জুনায়না বুঝতে পারল না চেয়ে চেয়ে দেখলো প্রশান্ত’র
প্রস্থান।

.
মেহরা ফাইজ কে বলে জুনায়নার বাড়ির ছাদে চলে এসেছে।বাবার সঙ্গে কথা বলছে সে।ঐপাশ থেকে মাহিদ লাইন কেটে দিলে মেহরা কল লিস্ট চেক করলো,কল লিস্ট এর দ্বিতীয় নম্বরে থাকা আরশমান এর নম্বরটি দেখে চমকে উঠলো সে। আরশমান তাকে ফোন করেছিল?সে তো বলেছিলো এত ব্যস্ততার মাঝে ফোন করতে পারবে না সে।

মেহরা কল ব্যাক করলো।কানের কাছে ফোন চেপে ধরলো চোখে মুখে এক ভিন্ন ধরনের অস্থিরতা।ফোন ধরলো না আরশমান।মেহরা কান থেকে ফোন সরিয়ে এনে আরও কয়েকবার চেষ্টা করলো আরশমানকে ফোন করার।

মেহরার অস্থিরতা কমছেই না।মেহরা এদিক ওদিক পায়চারি করতে শুরু করলো,বিড়বিড় করলো,”পাশে থাকলেও বড্ডো জ্বালান আমায়,আজ আপনার দূরে থাকাও যেনো বড্ডো জ্বালাচ্ছে আমায়।”

হঠাৎ মেহরার মস্তিষ্কে হানা দিলো আরশমানের বলা সেই কথা,কোনো প্রয়োজন পড়লে আকাশকে জানাবেন।হ্যাঁ মেহরা বুঝতে পেরেছে,দ্রুত কললিস্ট থেকে আকাশ এর নম্বর বের করে ফোন করলো ,দুই এক বার রিং হতেই আকাশ রিসিভ করলো সালাম দিয়ে বলল,”জি ভাবি বলেন।কিছু প্রয়োজন আপনার?”

মেহরা ব্যাস্ত কণ্ঠে বলে,”আরশমান ঠিক আছে তো আকাশ?আমাকে ফোন করেছিলো আমি রিসিভ করতে পারিনি।কিন্তু আমি এখন ফোন করলাম সে ফোন ধরছে না।”

আকাশ নিঃশব্দে হাঁসলো,যেই মেয়ে আরশমান নাম বললেই বিরক্ত বোধ করতো সে কিনা আরশমানকে নিয়ে অস্থির।আকাশ বলল,”ভাবি তেমন কিছু নয় হয়তো ভাই ব্যাস্ত আছে এখন।কিছুক্ষন আগে ভাই কিছুটা ব্যস্ততা থেকে রেহাই পাওয়া মাত্রই আপনাকে ফোন করেছিল,তার কিছুক্ষন পর আমাকে ফোন করেছিল।ফোন করে জিজ্ঞেস করেছে আমি আপনাকে জুনায়না আপুর বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি কিনা।”

মেহরা আরও জানতে চাইলো আরশমান কী বলেছিলো,”তারপর তারপর।”

আকাশ হাঁসলো বলল,”বলেছি ফাইজ ভাই আপনাদের সাথেই আছে।আর নিজের খেয়াল রাখবেন ভাবি। আরশমান ভাই আপনাকে বলেছে নিজের খেয়াল রাখতে।”

মেহরা ক্ষীণ লজ্জা পেলো,ছোট্ট করে ‘ হম ‘ বলে ফোন কান থেকে সরিয়ে আনলো।ঐপাশ থেকে আকাশ লাইন কেটে দিয়েছে।

মেহরা নিজের মাথায় নিজেই মৃদু থাপ্পর দিয়ে বলে উঠলো,”কী হয়েছে কী তোর মেহরা?তুই আরশমান কে নিয়ে এত্ত কেন ভাবছিস।”

.
নিজেই নিজের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ছাদ থেকে নেমে এলো মেহরা।ফ্লাটের ভিতর এসেই তার চোখ চড়ক গাছ,জাহরা ফাইজ মারামারি করছে।

ফাইজ জাহরার কাছ থেকে বিরিয়ানির পেল্ট টেনে নিয়ে বলে,”এই মেয়ে এইটা আমার।তুমি কেনো নিচ্ছ।”

“আরেহ এইটা আমার মাত্রই আন্টি এইটা আমাকে দিলো।আর তুই কত খাবি ভাই দুই প্লেট তো খেয়ে শেষ করলি তো আমার টা নিয়ে টানাটানি করছিস কেনো?”

ফাইজ টেনে নিয়েই নিলো প্লেট টি।বলল,”আমার যত ইচ্ছে তত খাবো তাতে তোমার কী?আর এইটা আমার।”

মেহরা মাথায় হাত দিয়ে বলে,”হয় সর্বনাশ এরা কিভাবে ঝগড়া করে!”

জাহরা রেগে গিয়ে বলে,”তোর প্রতি তো এমনিতেই রাগ আমার,তার উপর আমার খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি করছিস ফা’জি’ল এর বাচ্চা।”,বলে ফাইজ এর হাতে কামড় বসিয়ে দেয় জাহরা।ফাইজ ‘ আহ আমার কোনো বাচ্চা নেই!’ বলে চেঁচিয়ে ওঠে।পুনরায় বলে,”তোর তো খালি আমার হাতের মাংসের দিকে নজর।বিরিয়ানি তো দিচ্ছি না আমি তোকে।”

মেহরা দৌড়ে এলো জাহরাকে টেনে সরিয়ে ফেললো ফাইজ থেকে।মেহরা অবাক কণ্ঠে বলে,”তোরা দুইজন এমন সাপ আর বেজির মত মারামারি কেন করছিস?”

জাহরা,ফাইজ একসঙ্গে মেহরার দিকে চেয়ে বলে,”কে সাপ কে বেজি?”

মেহরা ভড়কে যায় দুজনের চাহনি দেখে আমরা আমতা করে বলে,”কেউ না কেউ না আমি আসলে যাই আমার খাবার টা নিয়ে আসি ক্ষুধা পেয়েছে।তোরা দুজন মারামারি চালিয়ে যা।”বলে মেহরা দ্রুত উঠে চলে যায়।

.
ফাইজ জাহরার থেকে খাবারের পেল্ট নিয়ে জাহরার বিরিয়ানি খেয়ে এখন আয়েশে সোফায় বসে আছে।জাহরা মুখ ফুলিয়ে আরেক জায়গায় গিয়ে বসে আছে।ফাইজ হেঁসে বলে,”ওগো সুন্দরী শুনছো?”

জাহরা ফিরে চায়।ফাইজ হাত নাড়িয়ে বলে,”আরেহ নাহ তোমাকে নাহ তুমি কী সুন্দরী নাকি?”

জাহরা ভ্রু কুঁচকে ফেলে বলে,”কোন দিক দিয়ে আমি সুন্দরী না?”

ফাইজ জাহরাকে আপাদমস্তক দেখে বলে,”কোনো দিক দিয়েই নাহ।আস্ত একটা সরিষার বাগান লাগছে তোমাকে জাহরা খাতুন।”শেষ টুকু যেনো সুর টেনে বলল ফাইজ।

জাহরা পাশ থেকে সোফার বালিশ নিয়ে ফাইজ এর মুখের উপর ছুঁড়ে মেরে বলে,”তোর কপালে দেখিস এমন সরিষার বাগানের মতোই অসুন্দর বউ জুটবে।অ’ভি’শাপ দিয়ে দিলাম।”

ফাইজ হেঁসে বলে,”শ’কু’নে’র অভিশাপে গরু মরে না।”

“আমিও জানি তুই একটা গরু।”,বলেই শাড়ি সামলে বাইরে চলে যায় জাহরা।ফাইজ হেঁসে পিছন পিছন যায়।বাড়ির নিচে চলে আসে দুজন এসে দেখে গাড়ির সামনে মেহরা দাড়িয়ে।ফাইজ এগিয়ে এসে অবাক কণ্ঠে বলে,”ভাবি নিচে এসে পড়লেন আমাকে বলবেন না?”

“তোমরা খাওয়া দাওয়া করছো,তাই তাড়া দিলাম না।একাই এইখানে এসে শীতল বাতাস উপভোগ করছিলাম।”

“তাহলে চলেন ভাবি বাড়ি অব্দি পৌঁছে দেই।”

মেহরা নম্র হেঁসে গাড়িতে উঠে বসলো।জাহরা এগিয়ে এসে উঠতে গেলে শাড়ি পেচিয়ে পড়ে যেতে নেয় ফাইজ এক হাতে জাহরার বাহু শক্ত করে ধরে তাকে ঠিক হয়ে দাঁড়াতে সাহায্য করে বলে,”যা পরে চলাফেরা করতে পারো না তা পরো কেনো স্টুপিড।এখন পড়ে গিয়ে হাত পা তো ছিলতে।”

জাহরা ফাইজ এর থেকে নিজের বাহু ছাড়িয়ে বলে,”পড়ে গেলে যেতাম ধরলেন কেনো আমাকে?”

“ভালো মানুষের দিন নাই এখন।পড়া থেকে বাঁচালাম ধন্যবাদ দিবে তা না।আচ্ছা তুমি চাইলে আমি এখন তোমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারি।দিবো?”

জাহরা দ্রুত গাড়িতে উঠে বসে।ফাইজ হাত বাড়িয়ে পড়ে থাকা জাহরার আঁচল উঠিয়ে জাহরার কোলে দিয়ে বলে,”নিজেকে সামলাতে পারো না আবার শাড়ি পড়েছো!মহিলা মানুষকে ভালো কিছু বললেও খারাপ ভাবে নিবে।”

মেহরা চেয়ে চেয়ে দেখলো দুজনের কান্ড।ফাইজ কেমন করে জাহরার কেয়ার করছে।শাড়ি সামলে দিচ্ছে,জাহরা কে সামলে নিচ্ছে।ভালোই লাগলো তার।কিন্তু তাদের মাঝে এই সাপ বেজির মত সম্পর্ক টা মেহরার ভালো লাগলো না।বোধ হলো এরা একজন আরেকজনকে পারে না মেরে আধ মরা বানিয়ে ফেলে।

.
রাত বেড়েছে প্রশান্ত তার সকল কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।কাল জুনায়নাকে বিয়ের সাজে অন্য করো সঙ্গে দেখা তার পক্ষে সম্ভব নয়।তাই সে আগেই লন্ডন যাওয়ার জন্য টিকেট কেটেছে।কাল বিকালের দিকেই তার ফ্লাইট।চলে যাবে সে জুনায়না থেকে দূরে।ভালো থাকুক
জুনায়না।

প্রশান্ত এত কিছু গুছিয়ে নেয়ার মাঝে ,বিছানার এক পাশে চেয়ে তার সামনে পড়ে থাকা জুনায়না ও তার ছবির ফ্রেমটি দেখে থমকে গেলো সে।বিছানার উপর থেকে তুলে নিলো ফ্রেমটি।ছবিটির উপর হাত বুলিয়ে বলল,”আমার জীবনে আমার প্রিয় মানুষ গুলো থাকতে পারে না জুনায়না রানি।কোনো না কোনো ঘটনাক্রমে তারা আমাকে ছেড়ে না আসার দেশে চলে যায়।আমি চাই না তোর সঙ্গে এমন হোক,ভালো থাক তুই।তোকে পাওয়া আসা নাহয় আমার মনের এক গহীন কোণে থেকে যাক।কিছু না পেয়েও দুর থেকে ভালোবাসা যায় আমি নাহয় অমনি তোকে ভালবাসব।”

প্রিয় মানুষ গুলোকে এক না বোঝার বয়সে হারিয়ে প্রশান্ত এখন মস্তিষ্কে ঘটনাটি এমন ভাবে গেঁথে নিয়েছে যে সকল দোষ তার।হয়তো জুনায়না’ও তার জন্যই হারিয়ে যেতে পারে না আসার দেশে।

#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here