অর্ধ_নক্ষত্র ।২৯। #লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

0
134

#অর্ধ_নক্ষত্র ।২৯।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

জাহরা ভ্রু কুঁচকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে ফাইজ এর মুখশ্রীর দিকে।ফাইজ এগিয়ে এলো বুকে দুই হাত গুঁজে থমথমে কণ্ঠে বলল,”এত ত্যাড়া কেন তুমি?গেলে কী হতো এমন ধরে খেয়ে ফেলতাম তোমায়?”

“আপনার দ্বারা বিশ্বাস নেই,যেকোনো কিছুই করতে পারেন।”

“করার ইচ্ছে থাকলে ডেকে কেনো নিজে থেকে এসেও করতে পারি।”,বলে বাঁকা হাঁসলো ফাইজ।

জাহরা দুই কদম পিছিয়ে গেলো গাড়ির দরজা খুলে বলল,”আমার কথা বলার সময় নেই আমি যাচ্ছি।”

ফাইজ হো হো করে হেঁসে উঠলো বলল,”আরেহ দাড়াও কই যাচ্ছ।ভয় পেলে নাকি?”

জাহরা গাড়ির দরজা সশব্দে লাগিয়ে দিল,বিরক্তি মাখা কন্ঠে উচু গলায় বলল,”প্রচুর বিরক্ত করেন দেখি আপনি!আপনাকে ভয় পাবো কেনো?জাহরা কাউকে ভয় পায় না।”

ফাইজ এগিয়ে গেলো জাহরার নিকট এসে দাড়িয়ে গেলো জাহরা গাড়ির সঙ্গে লেপ্টে দাড়িয়ে আছে।ফাইজ বলে,”সত্যি ভয় পাও না মিস জাহরা?”

জাহরা শুকনো ঢোক গিললো।মুখে যতই বলুক কিন্তু এখন ভয়ে তার হৃদপিণ্ড বেরিয়ে হাতে চলে আসার মত অবস্থা।জাহরা তার ভয় মুখশ্রীতে ফুটিয়ে তুললো না।
ফাইজ ছেড়ে দিলো জাহরা কে দূরে স্বরে এসে বলল,”ওহ হ্যাঁ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম রাক্ষসীরা কাউকে ভয় পায় না!”,বলে হাঁসলো ফাইজ।

জাহরা কোমড়ে দুই হাত রেখে ফুঁসে ওঠে বলে,”সমস্যা কী আপনার এমন জ্বালাচ্ছেন কেন?জুতোটা খুলে মুখের মধ্যে ছুড়ে মারবো একেবারে চেহারার মানচিত্র উগান্ডার মানচিত্রে বদলে যাবে।”

ফাইজ এর হাঁসি উবে গেল।বলল,”এ কার চেহারার মানচিত্র বদলে ফেলে তা পরে দেখা যাবে।আগে আসল কথা শুনো তোমাকে ডাকার উদ্দেশ্য হচ্ছে আরশমান ম্যাসেজ করেছিলো,সে এসেছে।এসেই নাকি মেহরা ভাবির কাছে গিয়েছিল এখন তাকে নিয়ে শপিং মলে গিয়েছে।আমাকে শপিং মলের এড্রেস পাঠালো,বলল আমি যদি হসপিটাল থাকি তাহলে যেনো তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাই।”

জাহরা পুরোটা শ্রবণ করার পর ছোট্ট করে বলল,”ওহ।”

“চলুন আমার সঙ্গে,আপনার ড্রাইভার চাচাকে বলুন চলে যেতে।”

জাহরা আর দ্বিরুক্তি করলো না।

.
শপিং মলের পার্কিং সাইডে এসে গাড়ি থামালো আরশমান।মেহরার দিকে চাইলো সে বলল,”মেহরা এমন চোখ মুখ কুঁচকে বসে আছেন কেনো?”

মেহরা ফিরে চাইলো আরশমান এর দিকে।মুখশ্রীর ভাব পরিবর্তন করে সন্দিহান কণ্ঠে বলল,”আমার খুব সন্দেহ হচ্ছে একটা বিষয়ে।”

“কোন বিষয়?”

“গাড়ি স্টার্ট দেয়ার পর থেকে আমি লক্ষ্য করছি,আমাদের গাড়ির পিছন পিছন একটি সাদা রঙের গাড়ি এই অব্দি এসেছে।আমাদের ফলো করছে না তো?”

আরশমান হাঁসলো বলল,”গাড়িতে ওঠার পর খেয়াল করলেন?তারা তো অনেক আগে থেকেই ফলো করছে আমাদের নয় বরং আপনাকে।”

“মানে?”

“আমি দশটার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ট্রেনে উঠি।তখনই আকাশ আমাকে ফোন করে বলে আসিফ এর লোকেরা আপনাকে ফলো করছে।খুবই চতুর বুদ্ধি তাদের।শোনা মাত্রই অপেক্ষা করছিলাম কখন ঢাকা এসে পৌঁছাবো আমি।যখন ট্রেন থামলো সোজা আপনার কাছে চলে এলাম।এসেও দেখলাম দুর থেকে আপনাকে পর্যবেক্ষণ করছে তারা।”,বলে থামলো হাঁসলো সে,পুনরায় বলল,”আপনাকে ছোঁয়ার সাধ্য নেই ওদের।কার প্রাণের দিকে নজর দিয়েছে ওরা,ধারণারও বাহিরে তাদের।”

মেহরা ভাবনায় পড়ে গেলো,তাকে কেউ ফলো করছে কিন্তু সে বুঝে উঠতে পারল না।কী করে? আরশমান গাড়ি থেকে বেরিয়ে মেহরার দিকের গাড়ির দরজা খুলে দিলো।মেহরার হাত ধরে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আনলো বলল,”এত ভাবার প্রয়োজন নেই আপনার।শুধু আজ বিয়ের শপিংয়ের দিকে মনোযোগ দিন।”

মেহরা হুট করেই হেঁসে ফেললো, আরশমান ঘুরে চাইলো দেখলো সেই হাঁসি।তার ঠোঁটের কোণেও হাঁসির রেখা ফুটে উঠলো।মেহরা হাঁসি থামিয়ে বলে,”আপনি এমন করে আমাকে ট্রিট করেন যেনো আমি কোনো বাচ্চা!”

আরশমান মেহরার হাত ছেড়ে বাহু ধরে নিজের নিকটে এনে হাঁটা ধরলো বলল,”আপনাকে যত্ন রাখা যদি আপনার কাছে মনে হয় আপনি কোনো বাচ্চা তাহলে সই।আমি তো আমার প্রাণকে নিজের সর্বস্ব দিয়ে যত্নে রাখবো।”

মেহরা মুগ্ধ হলো আরশমান এর কথায়।এমন কথা আগেও একজন বলতো তাকে তখনও মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকতো মেহরা।

.
এরই মাঝে একবার একা কবরস্থান গিয়েছিল মেহরা।সাফওয়ান এর কবরটির পাশে গিয়ে অনেক্ষন যাবৎ বসেছিল,মাটিতে হাত বুলিয়ে একা একাই মন খুলে কতই না কথা বলে যাচ্ছিলো মাটিতে শায়িত মানুষটির সঙ্গে।তার শেষ কথাটি ছিলো,”জানো সাফু, আরশমান না ঠিক তোমার মতো।তোমার মতই মুগ্ধ করে দেয়া কথা তার।আমি তো মুগ্ধ হয়ে যাই মাঝে মধ্যেই।তুমি আবার শুনে রাগ করো না কিন্তু।”,বলেই মেহরা হেঁসে দিয়েছিল।

.
শপিং মলের নিচের দিকের এক কোণায় মেহরা কে নিয়ে দাড়িয়ে রইলো আরশমান। কিয়ৎক্ষণ যেতেই ফাইজ জাহরা এলো।সঙ্গে পিছন পিছন প্রশান্ত জুনায়না’ও এলো।

ছয়জন একসঙ্গে হয়েই যেনো তাদের ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো এক অমায়িক হাঁসি।আরশমান প্রশান্ত ও জুনায়নাকে দুই বাহিরে জড়িয়ে ধরলো বলল,”কনগ্রেচুলেশন ইয়ার।সব শেষে বিয়ে টা হচ্ছে।”

ফাইজ এরই মধ্যে বলে ওঠে,”ইশ আমিও একটা ভোলা ভালা মাইয়া পেলে তোদের সঙ্গেই বিয়েটা সেরে ফেলতাম।”

সকলে এক সঙ্গে হেঁসে উঠলো।জুনায়না হাসতে হাসতে বলে,”তোর কপালে ভোলা আবার ভালা।”

জাহরা হেঁসে প্রতিউত্তর করলো বলল,”এই ফাজিল লোকের কপালে জল্লাদ বউ আছে।আমি সিওর প্রতিদিন সকাল বিকাল নিয়ম করে জুতার বাড়ি খাবে বউয়ের কাছে।”

ফাইজ মুখ কুঁচকে ফেললো,সকলে হো হো করে হেঁসে উঠল।

চলতে থাকলো এমন করেই ফাইজকে অপমান করা।সকলে শপিং শুরু করলো মজা ঠাট্টার মাঝেই।বন্ধুরা এক সঙ্গে থাকলেই বুঝি সকল মুহুর্ত এমন হাঁসিময় হয়ে ওঠে।তখন যদি থাকে মাথা ভর্তি চিন্তা তখনও চিন্তা পাশে রেখে হাসতে শেখায় বন্ধু নামক ব্যক্তিরা।

.
কয়েক ঘণ্টা লাগিয়ে শপিং শেষ করলো ছয়জন।
পুরো শপিং এর সময় জুড়ে জাহরা থেকেছে মেহরার
সঙ্গে তাই ফাইজ এর সঙ্গে ঝগড়া হয়নি তার।অপরদিকে আরশমান নিজ পছন্দ প্রাণের বিয়ের বেনারশী কেনা থেকে শুরু করে একেক রঙ্গা শাড়ি অর্নামেনস্টস।মেহরা গুণেও শেষ করতে পারছিল না আরশমান এতই পছন্দ করে একেক জিনিষ কিনছিল।

এইদিকে জুনায়না কিনলো না তার বিয়ের জন্য বেনারশী।সে চাইলো প্রশান্তর দেয়া ওই মেরুন রঙ্গা শাড়িটি পরবে বিয়ের দিন।প্রশান্ত বড্ডো জোর করলো জুনায়নাকে তবুও রাজি হলো না সে।

.
জুনায়না,প্রশান্ত গাড়িতে উঠে বসলে গাড়িটি নিয়ে জায়গাটি ত্যাগ করে প্রশান্ত।জুনায়না ব্যাগ থেকে ফোন বের করে,ফোনের স্ক্রিনে আঙ্গুল চালিয়ে ফোন করলো আসাদকে।ওপর পাশের থাকা আসাদ ফোন তুলতেই জুনায়না বলল,”আসাদ আসিফ এর যেই লোকেদের ধরা হয়েছে তাদেরকে মুখ খুলতেই হবে বুঝতে পারছ তুমি। ওদের বাকি লোকেরা আরশমান এর উপর আক্রমণ করেছিলো।আর আজকে মেহরার পিছু নিয়েছিল।ওরা যেকোনো সময় ওদের দুজনের কিছু করে দিতে পারে। কেস টা খুব মিস্টিরিয়াস,একজন দুইজন নয় বরং আসিফ এর সঙ্গে অনেক মানুষ জড়িত।”

“আরশমান ভাই এর উপর আক্রমণ হয়েছে উনি তো কোনো আইনি পদক্ষেপ নিলো না?”

“এইসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।শুধু আমাদের কাজ আসামিদের খুঁজে বের করা ও তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া।”,বলে ফোন রাখলো জুনায়না।সে বারকয়েক বড় বড় করে শ্বাস নিলো গা এলিয়ে দিলো।তার রাগ মাথায় চড়ে আছে,তার বন্ধু আরশমান যার গায়ে কেউ ফুলের টোকা দেয়ার সাহস করলে জুনায়না তাকে মাটিতে পুঁতে ফেলা মত অবস্থা করে ফেলে,আজ কিনা জানতে পারলো আরশমান এর উপর আক্রমণ হয়েছিল!

প্রশান্ত এক হাতে গাড়ি চালালো ওপর হাতে জুনায়নাকে টেনে নিজের বুকের মাঝে নিয়ে এলো মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।জুনায়না আবেশে প্রশান্তর কোমড় জড়িয়ে ধরলো বুকে মাথা গুঁজে রাখলো।

#চলবে।

রিচেক দেয়া হয়নি,ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে আশা করি ক্ষমার সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here