অর্ধ_নক্ষত্র ।৩০। #লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati ( হলুদ স্পেশাল

0
132

#অর্ধ_নক্ষত্র ।৩০।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati
( হলুদ স্পেশাল 💛)

প্রশান্ত’র ছোঁয়ায় যেনো,আজ অন্য রকম অনুভুতি হচ্ছে জুনায়নার।তার সকল চিন্তা কিয়ৎক্ষণ এর জন্য মস্তিষ্ক থেকেই বেরিয়ে গেলো।প্রশান্ত এক হাতেই জুনায়নাকে আগলে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।প্রশান্ত’র গায়ের কড়া পারফিউম এর ঘ্রাণ যেনো বারংবার নাসিকারন্ধ্রে এসে হানা দিচ্ছে।জুনায়না আরও মুখ গুজলো প্রশান্তর বুকে।প্রশান্ত হেঁসে বলল,”কী হলো জুনায়না রানি বুকের ভিতর ঢুকে যাবে নাকি?”

জুনায়না হাঁসলো মাথা উচুঁ করে প্রশান্ত’র মুখ পানে চেয়ে বলল,”হম আমি তো এই বুকের ভিতর খানটাতেই থাকতে চাই।”

প্রশান্ত তার হাতের অবস্থান জুনায়নার মাথা থেকে সরিয়ে আনলো জুনায়নাকে নিজের বুকের মাঝে আগলে নিলো দৃঢ় ভাবে।চুলের ভাঁজে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো বলল,”তোকে তো এই খাঁনটাতেই রেখে এসেছি আমি।”

জুনায়না প্রশান্তর এহেন ওষ্ঠের স্পর্শে চোখ বুজে নিলো।মুচকি হাসলো।মস্তিষ্কে দুষ্টু বুদ্ধি হানা দিচ্ছে ,মুচকি হাঁসির রেখা মুছে গেলো মিটমিট করে হাসছে সে।বলল,”চুলের ভাঁজে চুমু না খেয়ে তুমি আমার ওষ্ঠেও খেতে পারো প্রশান্ত বাবু।”

প্রশান্ত গাড়ি জোরে ব্রেক কোষলো,সে আচমকা মাথায় হাত দিয়ে কাশতে শুরু করেছে।জুনায়না সরে আসলো প্রশান্ত’র এমন অবস্থা দেখে সে ঠোঁট টিপে হাঁসলো পানির বোতল এগিয়ে দিলো।

🍁

ভোরের আলো ফুটেছে,স্নিগ্ধ আকাশ।ভোরের শীতল বাতাসের সঙ্গে ঘরের মধ্যে যেনো ছুটে আসছে ফুলের সুবাস।পুরো খান বাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।ফুলের গন্ধে যেনো মো মো করছে চারিপাশ।

আরশমান গত কাল রাতে মেহরা ও জাহরা কে বাড়ি অব্দি পৌঁছে দিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরতে খুব দেরী করে।সবেই ঘুম থেকে উঠেছে,বর্তমানে আয়নার সম্মুখে বসে আছে সে।

আরশমান আয়নায় থাকা প্রতিচ্ছবিতে নিজেকে দেখে বিস্তর হাঁসলো।গৌড় বর্ণের উন্মুক্ত বুকের বাম পাশে ফুটে থাকা আঁচড়ের দাগে হাত বুলালো সে।বলল,”আপনি নিজের অজান্তেই সেইদিন আমার বুকে খুব স্পষ্ট ভাবে এই চিহ্ন এঁকে দিয়েছিলেন।আর প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে প্রতিচ্ছবিতে আমার উন্মুক্ত বুকে এই দাগ দেখে অজান্তেই হেঁসে ফেলি আমি।”

“এই আরশু তোকে বিড়াল আঁচড় কেটেছে নাকি?”,মেয়েলী কণ্ঠে বাক্যটি ভেসে এলো দরজার সম্মুখ থেকে।আরশমান আয়নায় দরজার সম্মুখে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটির প্রতিচ্ছবি দেখে নিলো,পাশ থেকে কালো রঙ্গা শার্টটি নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিলো ঘুরে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে হেঁসে অফসোস এর সঙ্গে বলল,”আর বলিস না আরু আপু সেই বিড়ালকে আমার বুকে ঠাঁই দিয়েছিলাম।কিন্তু বিড়ালটা আমার বুকেই আঁচড় কেটে চলে গিয়েছে।”

আরুই দরজার সম্মুখ থেকে অগ্রসর হলো আরশমানের সামনে এসে দাঁড়ালো ভ্রু নাচিয়ে বলল,”বিড়াল টা কী আমাদের বাড়ির হতে যাওয়া বউ মেহরা নাকি?”

আরশমান এক হাতে নিজের চুল গুলো পিছনের দিকে ঠেলে মুচকি হেঁসে বলে,”বিড়ালটা বড্ডো যেদি বুঝলে আপু।”

আরুই আরশমানের কাঁধে নিজের কাঁধ দিয়ে ঠোকাঠুকি খেয়ে বলে,”বিড়ালটার ব্যাপার তো বুঝলাম কিন্তু আমার নির্লজ্য ভাই দেখি মুচকি হাসে!খুব আশ্চর্যজনক ব্যাপার কিন্তু আরশু!”

আরশমান জানালা ভেদ করে আকাশের দিকে তাকালো।অতঃপর তার বোনের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলে,”আসল পয়েন্টে আসো,তুমি শ্বশুর বাড়ি থেকে এই ভোর বেলা আমাদের বাড়ি কী করছো?”

আরুই আরশমানের কান টেনে ধরলো।আরশমান মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো।আরুই আরশমান এর কান চেপে ধরে রেখে বলে,”আমি আমার বাপের বাড়িতে যখন মন চায় তখন আসবো তাতে তোর কী রে ইদুরের বাচ্চা?আজ তোর গায়ের হলুদ তুই আরও আমাকে বলবি আপু তুমি এত দেরি করে কেন এলে আরও কয়েকদিন আগে আসা উচিত ছিলো।বরং বলছিস এই সময়ে এইখানে কী করছি আমি।”

আরশমান রেগে গেলো বলল,”কান ছাড়ো আপু। আরশু বলো ঠিক আছে কিন্তু এইসব ইদুর টিদুরের বাচ্চা একদম বলবে না আমায়।নাহয় তোমায় তুলে নিয়ে তোমার জামাইর গদিতে বসিয়ে দিয়ে আসব।”

আরুই আরশমান এর কান ছেড়ে দেয়।মুখোশ্রীকে ছোট করে করুন কণ্ঠে বলে,”এইসব কী বলিস আরশু,বোনকে যমের কাছে দিয়ে আসতে তোর বুক একবারও কাপবে না?”

আরশমান ঘুরে ড্রেসিং-টেবিলের উপর থেকে ঘড়ি নিয়ে হাতে পরতে পরতে বলে,”কোন সিনেমার ডায়লগ রে এইটা?”

“শালবাবু আর বলো না তোমার বোন যে শত রকমের ইমোশনাল ডায়লগ জানে।সিনেমার ডায়লগ ও তার কাছে হার মানবে।আমি তো বলি তাকে কুমিরের কাছে ছেড়ে দিলেও সে সেথায়ও ইমোশনাল ডায়লগ মারবে আর কুমির ওর ইমোশনাল ডায়লগ শুনে নিজে থেকেই করুন কণ্ঠে বলবে এই মাইয়ারে আমার সামনে থেকে সরা ভাই।”

আরুই,আরশমান একসাথে ঘুরে তাকালো।আরুই বিড়বিড় করলো,”নিজে কুমিরের থেকে কম নাকি!শালা কুমিরের বাচ্চা।”

আরশমান হেঁসে এগিয়ে যায় দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকা আরুই’র স্বামী ইমানের দিকে।আরশমান নম্র স্বরে বলে,”কেমন আছেন ইমান ভাই?”

ইমান তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলে,”ভালো নেই ভাই, তোমার বোন অন্তঃসত্বা হওয়ার পর থেকে আমায় জ্বালিয়ে মারছে।তার এত শত আব্দার!দুই সপ্তাহ ধরে আমাকে বলছে যেনো বাপের বাড়ি দিয়ে যাই তাকে, তার এক মাত্র ভাইয়ের বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে।আমার তো কাজের কত চাপ বুঝোই তো।আজ রাত তিনটার দিকে আমাকে ঘুম থেকে তুলে বসিয়ে রেখেছিল,তাকে ওই সময়েই যদি বাপের বাড়ি না নিয়ে আসি সে আমাকে ছেড়ে বনবাসে চলে যাবে এমন সব কথা তার।”

আরশমান হো হো করে হেঁসে উঠলো ঘাড় কাত করে নিজের বোনকে দেখে নিলো।আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সে পেটের আকার দেখলেই যে কেউ ধারণা করতে পারবে।তার সাথে তার টমেটোর মত লঘু লাল রঙ্গা গাল সব মিলিয়ে উজ্জ্বল গৌড় বর্ণের গুল্লুমুল্লু সুন্দরী নারী,ইমানের ভীতু বউ।

আরশমান ইমানের কাঁধে হাত রেখে বলে,”আমার বোনকে এমন করে সামলানোর জন্য তোমাকে আ্যওয়ার্ড দিতে ইচ্ছে করে ইমান।”,বলে থামলো পুনরায় বলল,”তোমরা বসো রেস্ট করো আমি একটু আসছি,গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে আমার।”

“ব্যাস্ত এমপি সাহেব আপনি,গায়ে হলুদের দিনও আপনার কাজ।”,হেঁসে কথাটি বলল ইমান।

আরশমান হেঁসে বেড়িয়ে গেলো।

.
সূর্য তার আলো ধরণীতে ছড়িয়ে দিচ্ছে,সময় যত যাচ্ছে সর্ব বাড়িময় মানুষের হইহুল্লোড় এর শব্দ আরও বৃদ্ধি পেতে লাগছে।আজ খান বাড়িতেই হবে আরশমান,মেহরা ও প্রশান্ত,জুনায়নার একসঙ্গে গায়ে হলুদ।বাড়ির চারিপাশে পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যাবস্থা করেছে আরশমান ও জুনায়না।

বাড়ির সামনের দিকে খালি জায়গায় রংবেরঙের কাপড়ে পেনডেল করা হয়েছে,বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।জায়গাটি জুড়ে হরেক রকমের রঙের ছোঁয়া। নাচ গানের ব্যবস্থাও হয়েছে।মেহরার পরিবারের সকলে চলে এসেছে।প্রশান্ত,জুনায়না তাদের কিয়ৎক্ষণ পূর্বেই এসেছে।

ফাইজ সবে এসেছে তার পরিবার সহ।সদর দ্বার পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই তার দৃষ্টি আটকে গেলো লাল রঙের চিকন পাড়ে হলুদ রঙ্গা শাড়ি পরিহিতা জাহরার পানে।এত নারীর মাঝে দাড়িয়ে থাকা জাহরার পানেই তার নির্নিমেষ দৃষ্টি।জাহরার বড় বড় চঞ্চল নেত্রখানায় নজর গিয়ে দৃঢ় ভাবে স্থির হলো তার।ওই কাজল কালো নেত্রখানায় ডুবে যাওয়ার মত ইচ্ছে জাগলো ফাইজ এর মনের এক গহীন কোণে।ফাইজ এমন করে কিভাবে আটকে গেলো জাহরার পানে?নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো সে।চেয়েও দৃষ্টি সরিয়ে ফেলতে পারলো না।অন্যমনস্ক হয়ে বলল,”তোমার ঐ রূপে আমার মরণ নিশ্চিত।”

জাহরা সকলের সঙ্গে কথনের মাঝে দৃষ্টি ঘুড়িয়ে যখন দরজার পানে চাইলো তখন সে চমকালো ফাইজকে দেখে।ফাইজ এর সঙ্গে চোখাচোখি হলো তার। অন্যমনস্কতা কাটলো ফাইজ এর।সে শুকনো ঢোক গিলল সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি সরিয়ে অন্য দিকে চাইলো।

জাহরা ভ্রু কুঁচকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো বিড়বিড় করলো,”এই লোকের আবার কী হলো?আমার দিকে এমন করে চেয়েছিল কেনো?আবার আমাকে জ্বালানোর প্ল্যান করছে না তো?এমন প্ল্যান করলে,ওকে আজ এমন ক্যালানি কেলাবো না সারাজীবন মনে থাকবে।”

পাশ থেকে আরুই জাহরাকে বিড়বিড় করতে দেখে বলে,”আরেহ মেহরার জাহরা কী বিড়বিড় করছো?”

জাহরা আরুই’র কথা শুনে হাঁসলো বলল,”একজন কে
আদর করার প্ল্যান করছিলাম।”

আরুই মুচকি হেসে বলে,”ওহ তাই বুঝি কে সে?”

“আছে একজন ফাজিল।”

.
বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে যেথায়,সেথায় এসে বসে পড়েছে সকলে।প্রশান্ত বসেছে,তার পাশেই বসে আছে জুনায়না।প্রশান্তর পরনে শুভ্র রঙ্গা পাঞ্জাবি,হাতের দিকের ফোল্ড করার স্থানটুকু হলুদ রঙ্গা।জুনায়নার পরনে হলুদ রঙের পাড়ে শুভ্র রঙ্গা শাড়ি।সকলের মাঝে নেই শুধু মাত্র মেহরা ও আরশমান।আরশমান সকালে বেরিয়েছিল এখনও বাড়ি ফেরেনি,আর মেহরা এখনও তৈরি হচ্ছে।

মেহরা নিজের শাড়ি আচল টেনে ঠিক করে নিজেকে একবার দেখে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছিল,তখনই বসার ঘর পেরিয়ে নিজের শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে সিঁড়ির দিকে অগ্রসর হচ্ছিলো আরশমান।যখন তার দৃষ্টিতে আটকে গেলো মেহরা,চোখাচোখি হলো তাদের।আরশমান ঠোঁট প্রসারিত করে হাঁসলো মুগ্ধ
নয়নে চেয়ে রইলো মেহরার পানে যতক্ষণ না মেহরা নেমে এলো।

“স্নিগ্ধতায় ছায়া তুমি,মুগ্ধ হয়ে দেখছি আমি।”, কথাটি বিড়বিড় করে বলল আরশমান।

মেহরা আরশমান এর পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলো আরশমান আচল টেনে ধরলো মেহরার।দুই এক কদম পা বাড়ালো,মেহরার নিকট এসে দাড়িয়ে মিষ্টি করে হেঁসে বলল,”আজ এই শুভ্রতায় ছায়া মেহরাকে আমার কারও সম্মুখেই যেতে দিতে ইচ্ছে করছে না যে।মন চাইছে সকলের আড়ালে রেখে দেই আপনাকে।”

মেহরা নিজের শাড়ির আঁচল আরশমান এর হাত থেকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য হাত বাড়ালো মৃদু কন্ঠে বলল,”এইসব গাঁজাখুরি কথা না বলে শাড়ির অচল ছাড়ুন মানুষ কী বলবে?”,

“বউ আমার,আমি তাকে আদর করে দু একটা কথা বলবো এতে মানুষ যা ইছে তাই বলুক আমার কিছুই যায় আসে না।”

মেহরা আরশমান এর হাতের অবস্থা দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো।আরশমান এর হাতের আঙ্গুল গুলো ছিলে সাদা মাংস স্পষ্ট হয়ে দেখা যাচ্ছে।

মেহরা বিস্মিত কণ্ঠে বলে ওঠে,”কী হয়েছে আপনার হাতে?এমন অবস্থা কেনো?”

আরশমান চাইলো নিজের হাতের দিকে,ছেড়ে দিলো মেহরার আচল হেঁসে বলল,”তেমন কিছুই না।আচ্ছা আপনি যান,আমি তৈরি হয়ে আসছি।”,বলে দ্রুত পায়ে হেঁটে উপরে চলে গেলো আরশমান।মেহরা বুঝতে পারল লোকটি কথা ঘুরিয়েছে।

.
মেহরা এসে বসেছে সকলের সঙ্গে।আরশমান এলেই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান পর্ব আরম্ভ হবে।মেহরা,জুনায়না দুজনের শাড়ি একই রঙের।প্রশান্ত ও আরশমান এর পাঞ্জাবির রঙ একই।

আরশমান এলো কিয়ৎক্ষণ পর,তার ঠোঁটের কোণে স্বভাব সুলভ সেই হাঁসি।এসেই মেহরার গা ঘেঁষে বসলো সে।আমজাদ বলে উঠলো,”কী বাবা তোমার আজকের দিনেও বাইরে যাওয়া লাগে?কাকে কেলিয়ে এলে বাবা?”

আরশমান এর মা এসে আমজাদ এর পাঞ্জাবি টেনে দাঁতে দাঁত পিষে বলে,”আমার ছেলে কাকে কেলাতে যাবে?তুমি যদি আজও ছেলের পিছনে লেগে থাকো আমি এখন তোমায় কেলাবো।”

আমজাদ বিষম খেলো,কথা ঘুড়িয়ে অন্য কথায় গেলো সকলের উদ্যেশে বলল,”গায়ে হলুদের পর্ব তাহলে শুরু করা যাক।”

আরশমান এর মা বাবা এক সঙ্গে চারজনকে গায়ে হলুদ ছুঁয়ে দিলো।আরশমান এর মা বাবা প্রশান্তর কাছে গিয়ে প্রশান্তকে একসঙ্গে জড়িয়ে ধরলো বলল,”বাবা আমাদের তো তুই সবসময় তোর বাবা মায়ের মতই ভেবে এসেছিস,আমরা কিন্তু তোর বাবা মায়ের সকল দায়িত্ব গুলো পালন করবো তুই কিছু মনে করবি না তো?”

প্রশান্ত দুজনকে জড়িয়ে ধরলো বলল,”নাহ মনে করব না।কিন্তু তোমরা আজ আমার থেকে অনুষ্ঠানের জন্য এক পয়সা অব্দি নিলে না এইটা ঠিক করলে না।”

দুজন হাঁসলো বলল,”বাবা মা থাকতে ছেলে কেনো টাকা খরচ করবে।তুই রাখ তোর ওই টাকা।”

.
এরপর একেকজন এসে চারজনকে হলুদ ছুঁয়ে দিতে লাগলো,তারই মধ্যে একজন মহিলা মেহরার সম্মুখে এসে মেহরাকে হলুদ ছুঁয়ে দিয়ে বলে,”আরশমান এই কী তোর বউ হবে,ওইদিন দেখলাম কবরস্থানের বাইরে
অন্য এক ছেলের লাশের মুখের কাছে গিয়ে ছি ছি ছি বলতে পারবো না আর।”

মেহরা অবাক হলো মহিলার কথায়।আরশমান হাঁসলো মেহরাকে এক হাতে আগলে নিলো মহিলা কে উত্তর দিলো,”হম এই আমার বউ হবে।আর ওইদিন কবরস্থানের বাইরে আমার বউ কী করেছে না করেছে তা সবই আমি দেখেছি তাই আপনার বলার প্রয়োজন নেই।আপনি বরং নিজের স্বামীর দিকে নজর দিন।সে তো প্রতিদিনই একেক নারীর সঙ্গ ছাড়া চলতেই পারে না।”বলে থামলো আরশমান,পুনরায় বলল,”খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে,খেয়ে দেয়ে বাড়ি যান।বাড়ি গিয়ে দেখুন স্বামী আবার ঘরে অন্য রমণীকে নিয়ে এলো কিনা।”

মহিলা উত্তর পেলো না রাগে গজগজ করতে করতে স্টেজ থেকে নেমে গেলো।দূর থেকে দাড়িয়ে এহেন দৃশ্য দেখলো ফাইজ।হঠাৎ সে অনুভব করলো তার গালে কেউ হাত ছুঁয়ে দিয়েছে পাশ ফিরে চাইলো,অবাক হলো সে।জাহরা হাতের মুঠ ভর্তি হলুদ নিয়ে ফাইজ এর গালে লাগিয়ে দিয়েছে।মিটমিট করে হাসছে সে।হাসতে হাসতে বলে,”আপনার গাল টাই খালি ছিল,এখন আপনাকে পুরোই ভূতদের সর্দার লাগছে।”

ফাইজ ভ্রু কুঁচকে ফেললো,নিজের গালে লেগে থাকা হলুদ হাত দিয়ে মুছে নিয়ে নিলো,দুই হাত বাড়িয়ে জাহরার পুরো মুখে হলুদ মাখিয়ে দিলো হেঁসে ফেলল।জাহরা চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো।ফাইজ হাসতে হাসতে সরে আসল বলল,”এখন তোমাকে লাগছে পেত্নীদের মহারানি।”

জাহরা গাল ফুলিয়ে কোমড়ে দুই হাত রেখে বলে,”তবে রে!”,বলেই দৌড় লাগায় ফাইজকে।

.
ফাইজ সর্ব জায়গা জুড়ে দৌড় খাওয়ালো জাহরাকে,এখন আর দৌড়াতে না পেরে ফাইজ থেমে গেলো।জাহরা শাড়ি ধরেই দৌড়ে আসছিল ফাইজ এর সামনে এসে ঠিক করে সামলে থামতে না পেরে ফাইজ এর উপর হুড়মুড়িয়ে পড়ে যায়।ফাইজ চোখ বড় বড় করে ফেলে জাহরাকে পেচিয়ে দুই হাতে ধরে ফেলে।দুইজন দুইজনার দিকে চেয়ে আছে,দুইজনার হৃদযন্ত্র স্বাভাবিক থেকেও অধিক দ্রুত স্পন্দিত হচ্ছে।খোলা স্থানে এক ধমকা হাওয়া বয়ে গেলো,জাহরার শাড়ির আঁচল এসে উড়ে দুজনের মুখের উপর পড়ল। দৃশ্যটি দুর থেকে একজন কেম্যারা ম্যান তার ক্যামেরায় বন্দী করে নিলো।

ফাইজ দ্রুত ছেড়ে দিলো জাহরা কে।জাহরা ঠিক হয়ে দাঁড়ালো।জাহরা আমতা আমতা করে বলে,”ইয়ে মানে আমি যাই নাচ গানের পর্ব আরম্ভ হবে।”,বলে দৌড় লাগলো।

ফাইজ জাহরার এহেন প্রস্থান দেখলো হাঁসলো,উচ্চ কণ্ঠে বলল,”জাহরা এমন করে দৌড়াবেন না,আবার পড়ে গেলে এই ফাইজ আসবে না আপনাকে ধরতে।”

জাহরা শুনতে পেলো,সে লজ্জা পেলো খুব।

.
নাচ গানের পর্ব আরম্ভ হয়েছে।ইমান আরুই কে নিয়ে দূরে দাড়িয়ে নাচ গান দেখছিল,আরুই হুট করেই বলে ওঠে,”ইমান শুনুন আমিও নাচবো।চলুন না নাচি।”

ইমান ধমকে উঠলো বলল,”একদম না।”

আরুই ঠোঁট উল্টে অদূরে সাজলো।ইমান হাঁসলো আরুইকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলল,”আমি সর্বক্ষণ তোমার কথায় এমনিতেই অনেক নাচি তাই এখন নাচার মত এনার্জি নেই আরু শোনা।আর তুমি এই অবস্থায় কী করে নাচবে বলো তো?”

আরুই ঠোঁট উল্টে চেয়ে থাকলো ইমানের দিকে।ইমান অন্য দিকে চেয়ে থাকল বলল,”আমার দিকে এমন করে চেয়ে থাকলেও কিচ্ছুটি হবে না।”

.
জুনায়না,প্রশান্তর সঙ্গে একটি সুন্দর কাপোল ডান্স করলো।নাচ শেষে প্রশান্ত কোলে তুলে নিলো জুনায়নাকে।জুনায়না খুশিতে হুশ হারিয়ে প্রশান্তর গেলে চুমু খেয়ে বসলো।উপস্থিত সকলে হেঁসে উঠলো।

ফাইজ হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরে বলে,”বইন তুই আমাদের প্রশান্ত বাবুর মান ইজ্জত সবার সামনে খেয়ে দিলি শেষ মেষ।”

প্রশান্ত মুচকি হাঁসলো।জুনায়না প্রশান্ত’র মুখ পানে চেয়ে বলল,”আমি তো সকল মুহুর্তেই ভালবাসব তোকে।যে যাই ভাবুক না কেনো।”

মুহুর্ত গুলো বসে বসে দেখলো মেহরা।আরশমান ফিসফিস করে বলল,”কী গো ইন্সপেক্টর রানি আপনি করবেন না কাপল ডান্স?”

মেহরা চাইলো আরশমান এর দিকে নম্র কণ্ঠে বলল,”নাহ।”

আরশমান প্রতিউত্তর করলো,”কিন্তু আমি তো করবো।”,বলে উঠে দাড়ালো মেহরা কে পাঁজা কলে তুলে নিলো।সকলে হেঁসে উচ্চ কণ্ঠে, “ওয় হয় আরশমান ভাই!” বলে উঠলো।মেহরা লজ্জা পেলো মুখ লুকিয়ে ফেললো আরশমান এর বুকে মৃদু কণ্ঠে বলল,”প্লিজ নামান আমাকে।”

আরশমান হাসলো বলল,”উফ আপনার সেই লজ্জা মাখা মুখশ্রী খানা।”

আরশমান মেহরাকে নিয়ে গেলো নাচের স্থানে,সঙ্গে সঙ্গে পাশ থেকে কয়েকজন গোলাপ ফুলে পাপড়ি ছুড়তে শুরু করলো, আরশমান নামিয়ে দিলো মেহরাকে।মেহরা লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে।

জাহরা উচ্চ কণ্ঠে হেঁসে বলে ওঠে,”কাম অন মেহরা।লজ্জা পেতে নেই বোন।”

ফাইজ জাহরার পাশ থেকে বলে,”তুমি মনে হয় লজ্জা শরম বিহীন!তুমি এত লজ্জাবতী আর আরেকজনকে বলছো লজ্জা পেতে নেই?”

জাহরা আড় চোখে চাইলো।

সুন্দর থেকে সুন্দর মুহুর্ত গড়ে তুললো আরশমান।মেহরাকে নিয়ে কৃত্রিম গোলাপের পাপড়ির বৃষ্টিতে কাপল ডান্স করলো সে।

.
হাসি ঠাট্টার মাঝেই নাচ গান শেষ হলো খেতে বসলো সকলে। ফাইজ দিন দুনিয়ার নাম ভুলে এতক্ষনে কয়েক প্লেট বিরিয়ানি খেয়ে ফেলেছে।জাহরা চোখ বড় বড় করে চেয়ে চেয়ে দেখছে ,বিস্মিত কণ্ঠে বলে,”এইটা কয় নম্বর প্লেট?”

ফাইজ খেতে খেতে বলে,”মনে হয় পাঁচ নম্বর।”,বলে থেমে গেলো ভ্রু কুঁচকে চাইলো জাহরার দিকে ভরাট কণ্ঠে বলল,”এই মাইয়া তুমি আমার খাবারে নজর দিচ্ছ নাকি।আমার খাবারে একদম নজর দিবানা।যাও ভাগো ভাগো এইখান থেকে।”

জাহরা বিড়বিড় করে,”দারা রাক্ষস তোকে খাওয়াচ্ছি আমি।”,বলে টেবিলে থাকা বিরিয়ানির বড় বাটি নিয়ে দৌড় লাগায় জাহরা।

ফাইজ থম মেরে চেয়ে থাকে।হঠাৎ উচ্চ কণ্ঠে কেঁদে ওঠে বলে,”মা তোমার ছেলের বিরিনারীর বাটি নিয়ে রাক্ষসী দৌড় লাগিয়েছে।কিছু করো মা।”

ফাইজ এর মা কিছুটা দূরেই দাড়িয়ে ছিলো।সে ছেলের কান্ড দেখে উল্টো দিকে হাটা ধরে বিড়বিড় করে,”দামড়া ছেলে আমার মন ইজ্জত শেষ করে দিলো।”

টেবিলে বসে থাকা সকলে হো হো করে হেঁসে উঠেছে। জুনায়না বলে,”ঠিকই আছে আর কত খাবি।বেশি খাইস না ভাই পড়ে ভুঁড়ি বের হবে তোর।পড়ে তোকে বিয়ে দিতে গেলে মেয়েরা বলবে এই ভুঁড়ি ওয়ালা পোলা বিয়ে করা যাবে না তোকে মুখে উপর রিজেক্ট করে দিবে।আর এই দৃশ্য আমরা বেঁচে থাকতে কী করে দেখি”

“তোদের দেখা লাগবে না,আমার ভুঁড়ি আমার প্রবেলম। পৃথিবীতে মাইয়ার কমতি পরসে?যে মাইয়ার আমার ভুঁড়ি ওয়ালা পেট পছন্দ হবে আমি তাকে নাচতে নাচতে বিয়ে করে ফেলবো।”

.
“দলের আসল মানুষ গুলোকেই জেলে ঢুকিয়েছে ওই আরশমান।আর সঙ্গে ওই পুলিশ মাইয়াটা আছে না।ওদের ছাড়া যাইবো না কিন্তু।”,রকিং চেয়ারে বসে দুলতে দুলতে চোখ বুজে কথাটি বলল মধ্যবয়সী লোকটি।

#চলবে।

আজ বড় করে লিখেছি, আশা করি আপনারও গঠন মূলক মন্তব্য করবেন।❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here