#অর্ধ_নক্ষত্র ।২০।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati
বেরিয়েই ছেড়ে দিলো জুনায়নার বাহু।বলে উঠলো,”সমস্যা কী তোর?”
“আমার সমস্যা টা তো তুই প্রশান্ত।তুই জানিস না আমার মুখের ওপর কেউ নাহ্ করে দিলে আমি কত টা বিরক্ত হই।”
“আমি না করে দিয়েছি তাতে তোর এত সমস্যা তো হওয়ার কথা নয় জুনায়না।কোথায় আরশমান, ফাইজ মুখের ওপর না করলে তো তুই বিরক্ত হয়ে যাস না,তাহলে আমি না করলে এত বিরক্ততা কেনো?”
জুনায়না প্রতিউত্তর করলো না প্রশান্তকে তীক্ষ্ণ চোখে আপাদমস্তক দেখে নিলো অতঃপর হুট করেই প্রশান্তর হাতের ভাঁজে নিজের হাত আবদ্ধ করে নিলো হেঁসে বলল,”তুই তো স্পেশাল হ্যান্ডসাম!”
“দুইদিন পর তোর বিয়ে অন্য এক পুরুষের সঙ্গে আর আজ তুই এক পরপুরুষকে স্পেশাল হ্যান্ডসাম বলছিস বাহ্!”
“স্পেশাল হ্যান্ডসাম বলেছি জাস্ট তোর মান ইজ্জত নিয়ে টানাটানি তো আর করিনি?কিন্তু তুই চাইলে এখনি টপাটাপ কয়েকটা হামি খেতে পারি।”,বলেই হেঁসে ফেললো জুনায়না আর এইদিকে ওদের কথন শুনে তীব্র’র এখন শ্রবণ শক্তি হারিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
প্রশান্ত ধমকে বলে ওঠে,”জাস্ট শাট আপ।তোকে কিছু বলি না বলে,এই মানে না যে যাই ইচ্ছে তাই বলবি।”
জুনায়না ঠোঁটের কোণে হাসি বজায় রেখে প্রশান্তর হাত টেনে হাঁটা ধরলো পিছন না ফিরে উচ্চ কন্ঠে তীব্র কে উদ্দেশ্য করে বলল,”তীব্র নিয়ে যাচ্ছি তোমার বস কে।মিটিং ক্যান্সেল।”
তীব্র প্রতিউত্তরে বলল,”ওকে,জুনায়না আমার বসের খেয়াল রাখবেন।”
“তোমার বস’কে আজ এত আদর,যত্ন,খেয়াল করবো যা সে কখনোই ভুলতে পারবে না।”,বলে লিফটে উঠে পড়ল সঙ্গে প্রশান্ত কে টেনে ভিতরে নিয়ে নিলো।
প্রশান্তর কপালে কয়েকটি দৃঢ় ভাঁজ।জুনায়না প্রশান্ত’র
মুখ পানে চেয়ে কোমল কন্ঠে বলে,”কী হয়েছে প্রশান্ত তোর?”
প্রশান্ত জুনায়নার দিকে না চেয়ে ভরাট কন্ঠে উত্তর করলো,”কিছুই না।কী হবে আমার?”
জুনায়না বিড়বিড় করলো,”ভিতর ভিতর মরে যাবি তাও বলবি না ভালবাসি!”
.
নয়না ইন্ডাস্ট্রি থেকে বেরিয়ে পার্কিং লটে এসে জুনায়না বলে ওঠে,”গাড়ির চাবি দে।”
“গাড়ির চাবি দিয়ে তুই কী করবি?”
“আজ আমি গাড়ি চালাবো।”
প্রশান্ত অবাক হলো বলল,”তুই গাড়ি চালাবি!”
“অবাক হওয়ার কিছুই নেই এই ইন্সপেক্টর জুনায়না লাইবা সব পারে।”
প্রশান্ত দ্বিরুক্তি করতে চাইলো,জুনায়না প্রশান্ত কে দ্বিরুক্তি করার সময় না দিয়েই প্রশান্তর পকেটে হাত ঢুকিয়ে চাবি নিয়ে নেয় বলে,”একটা কথা বলবি তো এমন মার মারবো না,সারাজীবন চিহ্ন থেকে যাবে। চুপচাপ গাড়িতে উঠে বস।”
প্রশান্ত অবাক নয়নে দেখলো জুনায়নাকে।জুনায়না তো সে একটু আঘাত পেলেই পাগল হয়ে যায় সে কিনা তাকে মা রা র কথা বলছে।গাড়িতে উঠে বসলো প্রশান্ত বলল,”কোথায় যাচ্ছি আমরা এইটা অন্তত বল?”
জুনায়না হাসলো,গাড়ি স্টার্ট দিয়ে স্টিয়ারিং ঘুড়িয়ে পার্কিং লট থেকে বেরিয়ে বড় সড়কে চলে এলো।বলল,”আমার বিয়ের শাড়ি কিনতে যাচ্ছি।তোর মনে আছে তুই একবার বলেছিলি জুনায়না আমি কিন্তু তোর বিয়ের শাড়ি সিলেক্ট করে দিবো?”
প্রশান্ত সিটে গা এলিয়ে দিলো,আখিযুগল বন্ধ করে ফেললো।সারাদিন নিজেকে কাজে ব্যাস্ত রেখেছে,এই অশান্ত মনকে শান্ত করেছে এখন কিনা পুনরায় জুনায়না তাকে অস্থির করে তুলছে।বোধ হচ্ছে বুকের মাঝে জ্বলতে থাকা আঘাত গুলোয় কেউ বিষাক্ত পদার্থ ঢেলে তা আরও জ্বালিয়ে তুলছে।
জুনায়না চাইলো প্রশান্তর মুখ পানে বিড়বিড় করলো,”তোর কষ্ট হচ্ছে প্রশান্ত।কেনো কষ্ট চেপে রেখেছিস বলছিস না কেনো?”
প্রশান্ত আখিজুগল খুললো না।জুনায়না কিয়ৎক্ষণ পরপর চেয়ে চেয়ে দেখলো প্রশান্তর শুকিয়ে যাওয়া মুখ’খানা।তার ইচ্ছা করছে এখনই জাপটে জড়িয়ে ধরতে প্রশান্তকে।নিজেকে দমিয়ে রাখলো জুনায়না।
.
শপিং মলের সম্মুখে এসে থামলো গাড়ি।গাড়ি পার্ক করে জুনায়না ধীর কণ্ঠে ডাকলো প্রশান্তকে।প্রশান্ত চোখ মেলে চাইলো বলল,”সরি আসলে চোখ লেগে এসেছিল।”
জুনায়না প্রশান্তর চুলের ভাঁজে হাত ডুবিয়ে দিলো,মাথায় হাত বুলিয়ে হেঁসে বলল,”আমারও তোকে ডাকতে ইচ্ছে করছিলো না।কিন্তু বিয়ের শাড়ি তুই চুজ করে না দিলে আমি কী পরবো বিয়ের দিন?”
প্রশান্ত শক্ত হলো,গাড়ি থেকে বেরিয়ে শক্ত কণ্ঠে বলল,”এত কথা বলতে হবে না বেরিয়ে আয়।”
.
পুরো শপিং মল জুড়ে একেক দোকানে ঘুরতে শুরু করলো দুজন।প্রশান্তর হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে জুনায়না।প্রশান্ত চেয়েও হাত ছাড়িয়ে নিতে পারছে না।
হঠাৎ প্রশান্ত’র দৃষ্টিগোচর হলো এক মেরুন রঙ্গা শাড়ি।
শাড়িটির পাড়ে গাঢ় মেরুন রঙের পাথরের কাজ।প্রশান্ত দাড়িয়ে গেলো,শাড়িটির দিকে চেয়ে থেকে জুনায়নার পরনে শাড়িটি কেমন লাগবে তা মুহূর্তের মধ্যে তার কল্পনার ছবিতে দেখে নিলো।বিড়বিড় করে আওড়ালো,”অপরুপা!”
জুনায়না ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,”এই বিড়বিড় করে কী বলছিস?”
প্রশান্ত ত্রস্ত হলো,মেরুন রঙ্গা শাড়িটি সাজিয়ে রাখা দোকানের দিকে অগ্রসর হলো।জুনায়না এখনও বুঝে উঠতে পারলো না।প্রশান্ত দোকানের সম্মুখে এসে দোকানের ভিতর একজন যুবককে দেখতে পেয়ে মেরুন রঙ্গা শাড়িটির দিকে ইশারা করে বলল,”শাড়িটি দেখান তো ভাইয়া।”
যুবকটি শাড়িটি নামিয়ে খুলে দেখালো।জুনায়না অবাক হয়ে দেখছে শাড়িটি।যুবকটি বলে উঠলো,”ভাইয়া ভাবীকে কিন্তু এই শাড়িতে খুব মানবে।”
জুনায়না মুচকি হেসে বলে,”থ্যাংক ইউ ডিয়ার।”
প্রশান্ত আড় চোখে চায়।যুবকটি হেঁসে ওঠে।
প্রশান্ত শাড়িটি হাতে নিয়ে প্রাইস দেখে নিলো।জুনায়না উকি ঝুঁকি দিয়ে প্রাইস দেখে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,”প্রশান্ত আর কোনো শাড়ি পাস নাই ভাই!দাম দেখসস?এই শাড়ি আমার পক্ষে কিনা সম্ভব না।গরীব মানুষ আমি।এইটা কিনলে রাস্তায় বসতে হবে আমার।”
প্রশান্ত হাঁসলো শাড়িটির আচল জুনায়নার কাঁধে রেখে বলল,”এইটাই কিনা হবে।এইটায় তোকে বউ সাজে খুব সুন্দর লাগবে।”
জুনায়না মুখ ছোট করে বলে,”কিন্তু প্রশান্ত।অন্য একটা চুজ কর কম দামের মধ্যে।আমার সামর্থের মধ্যে এই শাড়ি কেনো যাবে না।”
প্রশান্ত শাড়িটির আচল জুনায়নার কাঁধ থেকে সরিয়ে নিলো।যুবকটি হাতে শাড়িটি ধরিয়ে দিয়ে বলল,”প্যাক করে দিন।”,বলে থেমে গেলো অতঃপর জুনায়নার দিকে চেয়ে বলল,”আমি আছি কেনো?আমি কিনে দিচ্ছি।আমার কিনে দেয়া শাড়িটা নাহয় বিয়েতে পরবি।”
জুনায়না মুচকি হাসলো মনে মনে আওড়ালো,”আমি তো তোর দেয়া শাড়ি পরবো,শুধু মাত্র তোরই বউ সাজার জন্য।”
যুবকটি শাড়িটি প্যাক করে দিলে, প্রশান্ত টাকা দিয়ে ব্যাগটি নিয়ে জুনায়নার হাতে ধরিয়ে দেয় বলে,”আর কোনো কিছু লাগবে?”
জুনায়না মিষ্টি করে হাসলো বলল,”নাহ।”
“তাহলে চল বাড়ি যাওয়া যাক।”
.
আজ রাত বারোটার দিকে মেহরার বাবা মাহিদ শেইখ
এর ফ্লাইট ল্যান্ড করবে বাংলদেশ বিমানবন্দরে।নিজের হবু শ্বশুর কে বিমানবন্দর থেকে নিয়ে আসার জন্য বেরিয়ে পড়েছে আরশমান।সে তো বড্ডো খুশি শশুর এসেছে বিয়ে টা এর মানে এই সপ্তাহের মধ্যেই হবে।
বিমানবন্দরের বাইরে পার্কিং সাইডে এসে গাড়ি থামলে মাস্ক পড়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে আরশমান।তার দৃষ্টি শুধু তার শশুর কেই খুঁজে বেড়াচ্ছে। আরশমান দেখলো মাহিদ শেইখকে অমায়িক হাঁসলো সে এগিয়ে গেলো নম্র স্বরে সালাম দিয়ে বলল,”বাবা কেমন আছেন?”
মেহরার বাবা এক হাতে আরশমান কে জড়িয়ে ধরলো বলল,”আলহামদুলিল্লাহ বাবা ভালোই।তুমি যেই থ্রেট দিয়ে আমাকে আনলে আমার কিন্তু মনে থাকবে।”
আরশমান হেঁসে উঠলো বলল,”আপনার মেয়েকে আর আপনার বাড়িতে রাখতে চাইছি না আমি।তাইতো এত থ্রেট।”
আরশমান এর কথন শুনে মাহিদ হো হো করে হেঁসে উঠলো।আরশমানকে ছেড়ে দিয়ে বলল,”আমার মেয়ে তো জানেই না আমি এসে পড়েছি।এইবারও ওকে সারপ্রাইজ দেয়া যাবে।চলো আজ আমাদের বাড়িতে।”
#চলবে।