#অর্ধ_নক্ষত্র ।২১।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati
শব্দ তুলে দরজার বেল বেজে উঠলো।বেল বাজার শব্দটি কানে এসে ঝংকার তুলতেই,মেহরা গায়ে ওড়না জড়িয়ে বিছানা ছাড়লো।ধীর পায়ে ফ্লাট এর দরজার দিকে অগ্রসর হলো।দরজার সম্মুখে এসে নব ঘুড়িয়ে দরজা খুলতেই ওপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মাহিদকে দেখে মেহরা বিস্মিত হলো,থমকে গেলো,ধীর গতিতে দুই কদম সামনে ফেলে মৃদু স্বরে বিস্মিত কণ্ঠে বলে উঠলো,”বাবা!”
মাহিদ সঙ্গে সঙ্গে জড়িয়ে ধরে মেয়েকে।মেহরা সময় না নিয়ে ঠুকরে কেঁদে ওঠে আওড়ায়,”বাবা,তুমি আসবে আমাকে বললে না কেনো?জানো আমি তোমায় খুব মিস করছিলাম।”
মাহিদ মেয়ের চুলের ভাঁজে হাত বুলিয়ে দিলো বলল,”আরেহ মেয়ে কাদঁছে কেনো?”
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরশমান বুকে দুই হাত গুঁজে ভরাট কণ্ঠে বলে,”এই যে শুনুন এমন করে কাদছেন কেনো?আমি তো বেঁচে আছি।”
মেহরা ভড়কে গেলো ,আরশমানের কন্ঠ শ্রবণ মাত্রই তড়িৎ গতিতে বাবার বুক থেকে মাথা তুলে পাশে চাইলো মেহরা।বিস্মিত কণ্ঠে বলল,”আপনি! আর আজব আপনার জন্য কেনো কদবো আমি?”
“হম তাও কথা যাইহোক,আগে চোখের পানি মুছো মেয়ে।কান্না কাটি করে বাবা নয়তো জামাইর শার্ট ভেজাতে বড্ডো এক্সপার্ট হয়েছ।”
মেহরার চোখ রসগোল্লার মত আকার ধারণ করলো, দুইবার ভুল বশত আরশমান এর বুকে মাথা রেখে কেঁদেছিল, তাও তো আরশমান তাকে বুকে টেনে নিয়েছিল বলে।বিড়বিড় করলো,”খাম্বা তুই আমার মন ইজ্জত বাবার সামনে খেয়ে দিচ্ছিস!চুপ থাক।”
“কী বিড়বিড় করছেন?জোরে বলুন শুনতে পারছি না।”
মাহিদ উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠলো বলল,”তোরা দুইজন থাম।আমাকে কী ঘরে যেতে দিবি না?”
মেহরা আরশমান এর দিকে আড় চোখে চেয়ে বাবাকে বলে,”হম ভিতরে চলো।”
.
বসার ঘরে একাধিক পরিচিত মানুষের কণ্ঠস্বর শুনতেই জাহরা,মায়া বেরিয়ে আসে নিজেদের ঘর থেকে।দুজনেই মাহিদ কে দেখে বিস্মিত।জাহরা এসেই বাবাকে জড়িয়ে ধরে।মারিদ অদূরে কণ্ঠে আওড়ায়,”তো ডাক্তার কী খবর?”
জাহরা হাঁসলো বলল,”তুমি এসে পড়েছ তাই তোমার এই ডক্টর অনেক খুশি।”
মায়া জিজ্ঞেস করলেন,”তুমি এমন হুট করে চলে এলে যে?”
মাহিদ মৃদু হাসলো আরশমান এর দিকে চেয়ে বলল,”এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেরে ফেলতে চলে এলাম।”
মায়া পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন,”তোমার কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ যে আসার আগে একবার আমাকে ফোন করলে না।”
মাহিদ এড়িয়ে যায় মায়ার বলা কথাটি।বলে উঠে,”আমি আর আরশমান ফ্রেশ হয়ে আসি আমাদের জন্য খাবার রেডি করো।হবু শশুর,জামাই মিলে আজ জম্পেশ খাওয়া দাওয়া হবে।”
মেহরা তীক্ষ্ণ চোখে আরশমান কে দেখছে। আরশমান আড় চোখে দেখছে মেহরা কে।মেহরা আরশমান এর পাশে গিয়ে দাড়িয়ে ফিসফিস করে বলে,”আপনার বাড়িতে কী খাবারের অভাব পরসে যে সব রেখে এইখানে আসছেন?”
আরশমান মেহরার মত ফিসফিস করে বলে,”হম গো আমার বাড়িতে অন্যের অভাব ,একটু দয়া করে আমাকে তোমার বাড়িতে খেতে দাও বউ।”
মেহরা ভ্রু কুঁচকে ফেললো বিড়বিড় করে গালি বসিয়ে দিলো আরশমানকে।আরশমান হাঁসলো বলল,”এ তো গালি নয় মনে হয় বউ এর মুখ থেকে বেরিয়ে আসা ভালোবাসা মিশ্রিত কথা।”
মেহরা মুখ ভেংচে রান্না ঘরের দিকে চলে যায়। আরশমান মেহরার যাওয়ার পানে চেয়ে হাঁসে।
.
খাবার টেবিলে খাবার সাজিয়ে বসে আছে মেহরা,জাহরা,মায়া।তারা অপেক্ষা করছে আরশমান, মাহিদ এর।তাদের অপেক্ষার প্রহর আর গুনতে হলো না এসে পড়েছে দুজন।
আরশমান এসেই মেহরার পাশের চেয়ারটি টেনে বসে পড়লো।মেহরা অবাক হয়ে বলে,”এইখানে কেনো বসেছেন?”
আরশমান মুচকি হেঁসে বলে,”বউ এর সঙ্গে বসে খাবার খেলে সোয়াব হয়।”
আরশমান এর এহেন কথন শুনে হেঁসে উঠলো সকলে।
মেহরার লজ্জায় রাগে বোধ হচ্ছে এখনই ধরে আরশমান কে দুই এক ঘা বসিয়ে দিতে।নিজের রাগ দমিয়ে চুপচাপ বসে খাওয়া শুরু করলো মেহরা। আড় চোখে মেহরা কে দেখলো আরশমান।
মাহিদ হালকা কেশে বলল,”ইহম ইহম! আরশমান বাবা নিচের দিকেও একটু তাকাও,নাহয় তো ভুলে ভাত রেখে পাশে থাকা লবণের বাটি থেকে লবণ খেয়ে ফেলবে।”
আরশমান চাইলো মাহিদ এর দিকে ও দৃষ্টি সরিয়ে তার ডান হাতের অবস্থানের দিকে।লবণের বাটির কাছে নিজের হাতের অবস্থান দেখে মৃদু হাসলো সে।
.
খাওয়ার পর্ব শেষ হলে আরশমান তার শ্বশুরের সাথে চলে গেলো শশুর মশাইয়ের ঘরে।আরশমান,মাহিদ আজ একই ঘরে ঘুমাবে।তাদের পাশের ঘরটি মেহরার
ঘর।জাহরা ও মায়া এক সাথে জাহরার ঘরে ঘুমাবে।
মেহরা নিজের ঘরে এসে বিছানা করে নিলো। বিছনায় গা এলিয়ে দিতেই চোখে পড়লো বরাবর বারান্দার দরজা সে খোলাই রেখে এসেছে।তাই বিছানা ছেড়ে উঠে বারান্দার দিকে অগ্রসর হলো, দৃষ্টি গোচর হলো আকাশে থাকা সেই প্রশংসনীয় রূপের চাঁদের। মেহারার ঠোঁট প্রসারিত হলো দরজা পেরিয়ে বারান্দার ভিতরে চলে গেলো।রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ নয়নে দেখতে লাগলো চাঁদ কে।
আর মেহরার পাশের রুমের বারান্দায় দাড়িয়ে আরশমান মোহিত চোখে চেয়ে চেয়ে দেখলো মেহরা কে।সে মাহিদ এর সঙ্গে রুমে ঢুকতেই বাড়ির থেকে ফোন আসে এবং ফোন রিসিভ করে কথা বলতে বলতে বারান্দায় চলে আসে আরশমান।বর্তমানে কান থেকে ফোন নামিয়ে সে চেয়ে আছে মেহরার পানে।
চাঁদের ছটা এসে পড়ছে মেহরার মুখাবয়বে।চাঁদের আলোয় শ্যাম রঙ্গা মুখ খানা দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে আরশমান এর নিকট,বোধ হচ্ছে এখনই গিয়ে সেই মুখখানায় হাত ছুঁয়ে দি।অদম্য ইচ্ছে গুলোকে ধামাচাপা দিয়ে নির্নিমেষ,নিভৃতে আরশমান চেয়ে চেয়ে দেখলো তার প্রাণ কে।
“কী গো আরশমান কাকে দেখছো?”, আরশমান এর পাশে এসে মৃদু কণ্ঠে মাহিদ কথাটি বলতে আরশমান মেহরার দিকে চেয়ে থেকে হেঁসে বলে,”আপনার মেয়েকে দেখছি শ্বশুর আব্বা।”
“এমন করে চেয়ে থেকো না আমার মেয়ের নজর লেগে যাবে।”
“নজর লেগে গেলে ,নজর উঠিয়ে নেয়ার ব্যাবস্থা করবো।তবুও তাকে মুগ্ধ নয়নে দেখা বন্ধ করবনা।”
মাহিদ জোরে হেঁসে উঠলো।ওইপাশে দাড়িয়ে থাকা মেহরা শুনতে পেয়ে চাইলো।তাঁর বাবা ও আরশমানকে একসাথে তার দিকে চেয়ে হাসতে দেখে অবাক হলো।বলল,”কী হলো বাবা ঘুমাও নি?”
মাহিদ হাঁসি বজায় রেখে বলল,”আমার মেয়ের জামাই ঘুম রেখে আমার মেয়েকে দূর থেকে চেয়ে চেয়ে দেখছে।তা দেখতে পেয়ে এই ঘুম হলো না জামাইকে ডাকতে এলাম।আর নজর দিতে বারণ করলাম।”
মেহরার লজ্জায় গাল দুটো গরম হয়ে আসছে।সে বিড়বিড় করলো,”এই খাম্বার ঘরে খাম্বা কে যদি আমি না কেলিয়েছি তবে আমার নাম’ও মেহরা শেইখ নয়।”
🍁
ভোর হতেই আরশমান মাহিদকে ডেকে তুলে চলে যায়।জুনায়নার ফোন এসেছিল।আসিফ এর সঙ্গে জড়িত যারা যারা রয়েছে তাদের বিষয়ে জানা যায় নি এখনও।তাই তাদের নিয়ে এক নতুন করে ইনভেস্টিগেশন শুরু করতে চায় জুনায়না।আর সবসময়ের মত আরশমান যেনো গোপনে থেকে তাকে এই বিষয়ে সাহায্য করে তাই চায় সে।
জুনায়না আজ পুরো দিন জুড়ে ব্যস্ত থাকবে।থানার থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো সে,পকেট থেকে ফোন বের করে প্রশান্ত’র নম্বরে কল করলো।দুই এক বার রিং হওয়ার পর ওইপাশে থাকা প্রশান্ত ফোন রিসিভ করলো প্রথমেই বলল,”ফোন কেনো করেছিস?”
“তোর সাথে ডেটে যাবো তো তাই তোকে ফোন করেছি।আজব!এখন কী ফোন’ও করতে পারব না আমি?”
“নাহ,আমার হাতে এত শত সময় নেই কথা বলার।খুব ব্যস্ত আমি।”
“ঠিক আছে,থাক তুই ব্যাস্ত কাল তোর একটা মিটিং ক্যানসেল করিয়েছি আজ দেখ কী করি।”কথাটি বলে থামতেই জুনায়না,প্রশান্ত’র পাশে থেকে এক মেয়েলী কণ্ঠে শুনতে পেলো,”প্রশান্ত চলুন যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে।”
জুনায়না চেঁচিয়ে উঠে,”এই তোর পাশে কে রে?কোন শা’ক’চু’ন্নি’দের সাথে টাইম স্পেন্ড করছিস?প্রশান্ত আমি এলে ওই মেয়েকে টু’ক’রো টু’ক’রো করে রেখে দিবো বলে দিচ্ছি।”
“কেনো?আমার পাশে কোনো মেয়ে থাকলে তোর সমস্যা কোথায়?”
জুনায়না রাগান্বিত কণ্ঠে বলল,”জানি না আমি।কিন্তু শুনে রাখ তোর পাশে আমি অন্য কোনো মেয়েকে দেখতে পেলে ওই মেয়েকে খু’ন করে ফেলবো।”
“তোর বিয়ে হবে আসাদ সঙ্গে তো আমাকে নিয়ে এত ভাবছিস কেনো?আমাকে নিয়ে না ভেবে আসাদ কে নিয়ে ভাব সকালেই এক মেয়ের সঙ্গে ঢলাঢলি করতে দেখে এসেছি।”
জুনায়নার রাগে ফোন কেটে দিলো।গাড়িতে থাকা বাকি ইন্সপেক্টর’রা তাকিয়ে আছে জুনায়নার দিকে।জুনায়না আসাদ এর দিকে চেয়ে বলে,”এই তুই কী আর জায়গা পেলি না সব রেখে প্রশান্তর চোখের সামনে গিয়ে মেয়ে নিয়ে ঢলাঢলি করছিস!”
আসাদ এর দিকে সকলে এক সঙ্গে চাইলো আসাদ গলা খাকারি দিয়ে বলল,”ইয়ে মানে আসলে..”
“তোর আসলে মানে আমি করাচ্ছি।যতদিন না আমাদের এই বিয়ের নাটক শেষ হচ্ছে ততদিন তোর রমণীদের সাথে ঢলাঢলি করা বন্ধ।”
#চলবে।