অর্ধ_নক্ষত্র ।২৩। #লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

0
131

#অর্ধ_নক্ষত্র ।২৩।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

মেহরা ঘুম ঘুম চোখে বলে,”ওল’দা বেস্ট ঝগড়া চালিয়ে যাও আমি যাই।”,বলে মেহরা ঘরে চলে যায়।

মাহিদ পায়ের থেকে চপ্পল খুলে আরশমান এর দিকে ঢিল মেরে বলে,”এই ছেলে যাচ্ছিস না কেনো!”

আরশমান চোখ বড় বড় করে ফেলে।দ্রুত সরে যায়, চপ্পলটি তার গায়ে না লেগে এক পাশে পড়ে যায়। আরশমান উচ্চ কণ্ঠে বলে,”শশুর আব্বা জুতা ছুঁড়ে মারছেন কেনো?জুতা ছুড়ে না মেরে পাশের ঘর থেকে আপনার মেয়েকে আমার কাছে ছুঁড়ে মারুন ক্যাচ করে ফেলবো।”

“তুই ওইদিকেই দারা আমি আসছি।”

“শশুর আব্বা সাথে করে এক প্লেট বিরিয়ানি নিয়ে আসবেন রাতের খাবার এখনও খাইনি আমি।”

“তোর জন্য ব’ন্দু’ক নিয়ে আসছি এমন খাওয়া খাওয়াবো না।”

আরশমান বিস্মিত কণ্ঠে বলল,”আব্বা আপনি ঐখানেই থাকেন আমি যাই,এত তাড়াতাড়ি মরার শখ নেই আমার।ডেঞ্জারাস শশুর।”,বলেই এক ভো দৌড়ে পালিয়ে যায় আরশমান।

মাহিদ বড় বড় শ্বাস নিয়ে বলে,”আমার জামাই এই এলাকার এমপি থাকা সত্ত্বেও এইসব কুলাঙ্গার পোলাপান এলাকায় থাকে কী করে!আশ্চর্য ব্যাপার!”

🍁
আজ সকালের ট্রেনে চট্টগ্রাম যাচ্ছে আরশমান।তার যাওয়ার বিষয়ে শুধুই তার বন্ধুমহল ও তার বাবা,মা জানে।সামনের শুক্রবারের পূর্বেই চলে আসার চেষ্টা করবে সে।এই কয়েকদিনে সামনে থেকে সে তার মেহরাকে দেখতে পারবে না তাই তো গত কাল এতো রাতে মেহরার ঘুম ভাঙিয়ে তাকে দেখতে চাওয়া।বাড়িতে বাবা মা কে বলে এসেছে সে,এসেই তার বউয়ের বিয়ের শপিং করে দিবে।কেউ যেনো নিজে থেকে তার বউয়ের শপিং না করে,তাহলে সে তুরকালাম কান্ড করে বসবে।

আমজাদ খান সে তো নিজের বউয়ের পাশে বসে ছেলেকে নিয়ে একেক কথন আওড়াচ্ছেন। আরশমানের মা বিরক্ত হয়ে বলে উঠেন,”আমার ছেলেকে নিয়ে এত্ত সমস্যা কীসের তোমার?”

“সমস্যা তো এইটা না সমস্যা হচ্ছে তোমার ছেলে সবার সামনে রাগী,দাম্ভিক কিন্তু মেহরা বউমার কথা বললেই কেমন ভদ্র!কী করে এমন হয়ে যায় বলো তো?”

“আমার ছেলে ভদ্র হলেও তোমার সমস্যা?”

“নাহ বলছিলাম কী ছেলের যদি মাথায় সমস্যা থেকে থাকে তাই যাচাই করছিলাম।কারণ বাবা হই আমি ডক্টর এর কাছে তো আমাকেই নিয়ে যেতে হবে।”

আরশমান এর মা চরম বিরক্ত হয়ে আমজাদ এর সম্মুখ থেকে উঠে দূরে গিয়ে বসে পড়লেন।বললেন,”তোমার সামনে থাকলে ইচ্ছে করে এই বুড়ো বয়সেও তোমাকে বেলুন দিয়ে পিটা করি।শুধু শুধু আমার ভদ্র ছেলের পিছনে লেগে থাকে, বুইড়া লোক।”

.
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিজের ফোনটি হাতে নিতেই মেহরা অবাক হলো।কল লিস্ট চেক করলো,বিশ বার কল দিয়েছিল আরশমান,একুশ নম্বর কলটি সে রিসিভ করে আরশমান এর সঙ্গে কথাও বলেছিলো পনেরো মিনিট পঁয়তাল্লিশ সেকেন্ড এর মত। মেহরা রাতের ঘটনা ভুলে গিয়েছিল,সবে তার মস্তিষ্কে হানা দিলো রাতের সকল ঘটনা।

সকাল পাঁচ টা বাজার পূর্বেই আরশমান মেসেজ দিয়েছিল মেহরা কে।মেহরা মেসেজটি পড়তে শুরু করলো,”আমার প্রাণ,আমার মেহরা ঘুম হয়েছে আপনার?যাইহোক আপনার জন্য খুশির খবর আমি কয়েকদিনের জন্য চট্টগ্রাম যাচ্ছি।এই কয়েকদিন এই আরশমানের মুখ দেখা লাগবে না আপনার।সামনের সপ্তাহে শুক্রবারের পূর্বেই চলে আসবো।আর কাল আপনাকে ঐভাবে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য আমি দুঃখিত কিন্তু কী করবো আপনাকে দেখার বড্ডো ইচ্ছে করছিল আমার।এই কয়েকদিন আমি খুব ব্যস্ত থাকবো মনে হয়না আপনাকে একটা কল অব্দি করতে পারবো।আকাশ রয়েছে ঐখানে,আপনার কোনো কিছুর প্রয়োজন পড়লে আকাশকে বলবেন।আজ জুনায়নার নকল গায়ের হলুদ,আকাশ আপনাকে নিতে আসবে ওর সঙ্গে চলে যাবেন। নিজের খেয়াল রাখবেন প্রাণ।এসে যেনো আমি আমার প্রাণকে যেমন রেখে গিয়েছি তেমনি পাই।ভালোবাসি।”

মেহরা ফোনটি পাশে রেখে দিয়ে নেত্রপল্লব বুজে ফেললো।দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লো,বলল,”আপনি নেই আমার তো শান্তি পাওয়ার কথা কিন্তু এমন অস্থির লাগছে কেনো?”

মেহরা বুঝতে পারল না মনের অজানা অনুভূতিগুলোকে।

.
জুনায়না চলে এসেছে নয়না ইন্ডাস্ট্রিতে।প্রশান্ত’র কেবিনে গিয়ে সে পেলো না প্রশান্তকে।কেবিন থেকে বেরিয়েই মুখোমুখি হলো তীব্র’র সঙ্গে।তীব্রকে পরখ করে নিয়ে থমথমে কণ্ঠে বলে উঠলো,”ঐটা কই?”

তীব্র বুঝতে পারলো না বলল,”ঐটা আবার কোনটা?”

“ঐটা ঐযে আপনার প্রশান্ত স্যার।কোথায় সে?”

“স্যার তো ক্লাইন্ড এর সঙ্গে ছাদে রয়েছে।”

জুনায়না ভ্রু কুঁচকে ফেললো বলল,”ছাদে কী করছে? তাও আবার ক্লাইন্ড এর সঙ্গে?হাওয়া খাচ্ছে?”

তীব্র কাচুমাচু হয়ে বলে,”আমারও মনে হচ্ছে স্যার ম্যাম এর সঙ্গে হাওয়া খাচ্ছে।”

জুনায়না অবাক হলো।বিড়বিড় করলো,”সব রেখে মেয়েদের সাথে হাওয়া খাচ্ছে!”

জুনায়না আর দাড়িয়ে থাকলো না লিফটের দিকে অগ্রসর হলো।লিফটে উঠে বাটন চাপলো।এক হাতে আরেক হাত কচলাচ্ছে সে,তার এক মুহুর্ত অপেক্ষা করার ইচ্ছে হচ্ছে না।লিফট এসে ছাদের ফ্লোরে পৌঁছালে দ্রুত বেরিয়ে ছাদের দিকে অগ্রসর হয়।হঠাৎ জুনায়না থমকে দাঁড়ায় অল্প-স্বল্প দুরেই প্রশান্ত দাড়িয়ে,তার পাশে একটি মেয়ে যে প্রশান্ত’র হাত ধরে দাড়িয়ে আছে।

জুনায়না ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো দুজনের সম্মুখে এসে ভরাট কণ্ঠে বলল,”এইসব কী হচ্ছে।”

মেয়েটি প্রশান্ত’র হাত ছেড়ে দিলো জুনায়নাকে পরখ করে অমায়িক হেঁসে বলল,”ওহ জুনায়না!”

প্রশান্ত রেলিংয়ের সাথে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে আছে,সে তীক্ষ্ণ নজরে দেখলো জুনায়নার মুখশ্রী।জুনায়না মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলো,”আমি আপনাকে চিনি না।আপনি আমাকে চিনলেন কী করে?”

মেয়েটি নিজে থেকেই জুনায়না’র হাত ধরলো বলল,”প্রশান্ত যেমন বলেছে তুমি ঠিক তেমন।তোমার এই ফর্সা গড়ন,কাঁধ অব্দি ছোট চুল,ইন্সপেক্টরের পোশাক এইগুলোই তো বুঝিয়ে দিচ্ছে তুমি জুনায়না।আর বিশেষ করে তোমার ইউনিফর্ম এ থাকা তোমার নাম।”

জুনায়না মেয়েটির হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো প্রশান্ত’র দিকে চেয়ে বলল,”এই মেয়ে কে যে তোর হাত ধরার সাহস করে?”

প্রশান্ত আকাশের দিকে চেয়ে বলল,”আমার ক্লাইন্ড,ওর নাম নিহা।আমার হাত ধরেছে তাতে তোর কী সমস্যা হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না।”

জুনায়না দুই এক কদম এগিয়ে প্রশান্ত’র শার্টের করলার টেনে ধরলো বলল,”আমার অনেক সমস্যা।তুই কেন বুঝতে পারিস না কোনো মেয়ে তোকে টাচ করুক চাই না আমি।”

“না চাওয়ার কারণ কি?”

জুনায়না ছেড়ে দিলো প্রশান্ত’কে নিজেকে সামলে হেঁসে বলল,”কারণ তুই শুধু মাত্রই আমার।যাইহোক আজ রাতে বাড়িতে আসবি আমার আর আসাদ এর ছোট করে গায়ের হলুদ করা হবে।ফাইজ থাকবে,মেহরা,জাহরা ও আসবে।আর তুইও থাকবি।তোকে ছাড়া তো আমি হলুদ গায়েই লাগাবো না।”

প্রশান্ত চাপা নিশ্বাস ত্যাগ করলো।বলল,”আজ ছেড়েদে।আমার নিহার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে।”

জুনায়না প্রশান্তর হাত নিজের হাতের ভাঁজে নিয়ে নিলো নিমগ্ন চেয়ে মোলায়েম স্বরে বলল,”প্লিজ প্রশান্ত।একদিন নিজের কাজ মেনেচ করে নে না।”

জুনায়নার এই কণ্ঠের সুর প্রশান্তকে না বলাতে পারবে না।সময় নিয়ে প্রশান্ত বলল,”ঠিক আছে।”

জুনায়না লাফিয়ে উঠলো,আচমকা জড়িয়ে ধরলো প্রশান্তকে গালে অধর ছুঁয়ে দিয়ে বলল,”লাভ ইউ প্রশান্ত বাবু।”

প্রশান্ত থমকে গেলো।জুনায়না প্রশান্ত কে ছেড়ে খুশিতে লাফাতে লাফাতে ছাদ ত্যাগ করলো।নিহা গলা ফাটিয়ে হেসেই চলেছে।হাঁসির ইতি টেনে বলে,”প্রশান্ত সিন টা ভিডিও করে রাখা উচিত ছিলো ওর জামাই কে দেখাতে পারতি।”

প্রশান্ত মৃদু হাঁসলো বলল,”ওকে যদি বলা হয় ওর হাজবেন্ডের সামনে আমাকে এমন করে একটা কিস দিতে আমার মনে হয় ও খুশি খুশি মনে এসে তা দিয়ে যাবে।” , প্রশান্ত’র এহেন কথন শুনে নিহা পুনরায় হাঁসলো।

.
নিজ নিজ কাজে সকলেই ব্যাস্ত।ব্যাস্ত শহর,কাজের মাঝেই সময় চলে যায় নিজ ধারায়।সূর্য পশ্চিম দিগন্তে যাওয়া আরম্ভ করেছে।ফাইজ হাসপতালে গিয়েছিল ধূসরকে একবার দেখে নিয়ে নিজের সিডিউল অনুযায়ী পেশেন্ট দেখা শেষ করে বাড়ি ফিরে আসে।জাহরার সঙ্গে দেখা হয় না তার।সে নিজেই আজ চাইছে যেনো জাহরার সঙ্গে দেখা না হোক তার। নাহয় গত কল প্রেঙ্ক কল দিয়ে যা করলো তাতে জাহরা ফাইজকে সামনে পেলে আস্ত ছাড়বে না।

ফাইজ হলুদ রঙ্গা এক পাঞ্জাবি পরে তৈরি হয়ে নিলো,বিছানার থেকে ফোন নিয়ে কয়েকবার আরশমান কে ফোন করলো।আরশমান ফোন তুললো না।ফাইজ বিরক্ত হলো,এই আরশমান যতবার চট্টগ্রাম গিয়েছে ততবার কোনো না কোনো ঘটনা ঘটিয়ে এসেছে।এইসব নিয়েই চিন্তিত ফাইজ।

আকাশকে ফোন করলো,কয়েকবার রিং হতেই আকাশ ফোন তুললো বলল,”জি আসসালামু আলাইকুম ফাইজ ভাই।”

“আরশমান ফোন কেনো ধরছে না আকাশ?”

“ভাইয়ের সাথে কিছুক্ষন আগেও আমার কথা হয়েছে।ভাই হয়তো ব্যাস্ত তাই আপনার ফোন ধরতে পারছে না।”

“ঠিক আছে।তুমি কী মেহরা ভাবিকে নিতে যাচ্ছ?”

“জি ভাই।”

“তুমি থাকো,তোমার যাওয়ার প্রয়োজন নেই।আমি এখন বের হচ্ছি আমি মেহরা ভাবি কে নিয়ে চলে যাব।”

আকাশ সম্মতি জানালো।ফাইজ ফোন কেটে বেরিয়ে পড়লো।

.
বিশ থেকে পঁচিশ মিনিট এর মধ্যে ফাইজ চলে এলো শেইখ ভিলার সামনে।গাড়ি থামিয়ে ফোন করলো মেহরাকে।মেহরা ফোন রিসিভ করে সালাম দিলো প্রথমে অতঃপর বলল,”কেমন আছেন ফাইজ?”

“জি আলহামদুলিল্লাহ ভাবি।ভাবি আপনাকে নেয়ার জন্য আকাশ আসার কথা ছিলো,আকাশ কে আমি বারণ করে দিয়েছি।আমি আপনার বাড়ির নিচেই আছি চলে আসুন।”

“ওহ।একটু অপেক্ষা করো জাহরা’র তৈরি হওয়া বাকি।পাঁচ মিনিট হ্যাঁ?”

ফাইজ এর কলিজা হাতে চলে আসার উপক্রম।সে জানতো না যে জাহরা যাবে।জানলে আর এই কুমিরকে নিজে থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তো ভুলেও আসত না।ফাইজ মৃদু কণ্ঠে বলে,”আসুন ভাবি আসুন।ধীরে শুশতেই আসুন।”

#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here