অর্ধ_নক্ষত্র ।২৪। #লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

0
124

#অর্ধ_নক্ষত্র ।২৪।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

হলুদ রঙ্গা শাড়ি পরিহিতা মেহরা ও জাহরা বেরিয়ে এসেছে শেইখ ভিলা থেকে।ফাইজ গাড়িতে বসেই দুই রমণীকে দেখলো।বলে উঠলো,”মাশাল্লাহ!বোধ হচ্ছে আকাশ থেকে পরি ল্যান্ড করেছে।”

মেহরা গাড়ির সম্মুখে এসে নম্র হেঁসে বলে,”এত অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত ফাইজ।”

“ইটস ওকে ভাবি।আপনারা পিছনের সিটে গিয়ে বসুন।”, মেহরার দিকে চেয়ে কথাটি বলে গাড়ি স্টার্ট দেয় ফাইজ। জাহরার দিকে চেয়ে দেখে না সে।জাহরা কটমট চোখে চেয়ে আছে ফাইজ এর পানে।

গাড়িতে উঠে পড়ে দুজন।ফাইজ নিশ্চুপ রয়ে গাড়ি চালিয়ে জায়গাটি ত্যাগ করে।

.
আধ ঘণ্টার মধ্যে জুনায়না’র বাড়ির সম্মুখে এসে গাড়ি থামলো।মেহরা শাড়ি সামাল দিতে দিতে গাড়ি থেকে বেরিয়ে বাড়ির ভিতর চলে গেলো।জাহরা বাড়িয়ে এগোতেই তার শাড়ির আঁচলে টান পড়লো,পিছন ফিরে চাইলো ফাইজ বোকা বোকা চোখে চেয়ে আছে।জাহরার শাড়ির আচল গাড়ির দরজায় লেগে আছে। ফাইজ অন্য দিকে চেয়ে মৃদু কণ্ঠে বলে,”আমার আবার কারো আঁচল টেনে ধরার শখ নেই বাবা!”

জাহরা এগিয়ে গেলো শাড়ির অচল ছাড়িয়ে বলল,”আমার শাড়ির অচল কেউ ধরার সাহস করলে। না তার হাত কেটে টুকরো টুকরো করে রেখে দিতাম।”

“রা ক্ষ সী মহিলা’রা আবার সব পারে।”,বলে বড় বড় পায়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো ফাইজ।

জাহরা চেঁচিয়ে বলে,”তুই রা ক্ষ স।ফা জি ল একটা।”
বলে ফাইজ এর পিছন ছুটলো জাহরা।জাহরার বলা কথাটি ফাইজ শুনতে পেলো সে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে হেঁসে বলল,”রা ক্ষ সী র জামাই রা ক্ষ স হবে স্বাভাবিক বেপার নয় কী?”

জাহরা ভ্রু কুঁচকে ফেললো,সে বুঝেঁ উঠতে পারেনি।
মেহরা ফ্লাটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে ফাইজ ও জাহরার জন্য।দুজন সিঁড়ি বিয়ে উপরে উঠতেই মেহরা প্রবেশ করলো ফ্লাটে অবাক হলো সে,নকল গায়ে হলুদে এত সুন্দর করে বসার ঘর ফুলে সজ্জিত করা হয়েছে!সকল কিছুই করেছে আরশমান।ফাইজ ভিতরে এসে দৃষ্টি ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে খুঁজলো প্রশান্তকে।প্রশান্ত নেই!জুনায়না সোফায় বসে আছে গায়ে তার হলুদ ও লাল রঙের মধ্যে এক শাড়ি।ঠোঁটের কোণে ক্ষীণ হাঁসির রেখা তার।

জাহরা ভিতরে এলে,মেহরা জাহরাকে নিয়ে এগিয়ে যায়।দুজন জুনায়নার পাশে বসে বলে,”কংগ্রেচুলেশন নকল বিয়ের জন্য।”

জুনায়ান হেঁসে উঠল।হাঁসির রেখা ক্ষীণ করে বলল,”যার জন্য এত কিছু সে তো এখনও আসলো না।”

মেহরা এক হাতে জুনায়ানাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আসবে আসবে জুনায়ানা রানি তোমার প্রশান্ত বাবু অবশ্যই আসবে।”

ফাইজ পাশে এসে দাড়িয়ে বুকে দুই হাত গুঁজে বলে,”না আসলে সমস্যা নেই শা’লাকে গিয়ে তুলে আনবো।”

জুনায়ানা ভ্রু কুঁচকে বলে,”প্রশান্ত’র তো বোন নেই ওকে শা’লা কেন বলছিস হা’রা’মী?”

ফাইজ জাহরার দিকে চেয়ে বলে,”প্রশান্ত কে বলবো একটা পাতানো বোন বানিয়ে ফেলতে তারপর থেকে ওকে শালা বলবো।”

“শালা ডাকার জন্যই কী তোর আমার পাতানো বোনের দরকার নাকি অন্য কিছু?”,দরজার সম্মুখে দাঁড়িয়ে হাঁসি মুখে কথাটি বলল প্রশান্ত।ফাইজ শুনতে পেলো ফিরে চাইলো হেঁসে বলল,”শুধু শালা ডাকার জন্য কেনো?আমি তো বিয়েই করে ফেলবো তাকে।”

প্রশান্ত এগিয়ে এলো ফাইজ এর সম্মুখে এসে দাড়িয়ে বলল,”তোর কাছে বোন বিয়ে দিলে আমার বোন দুই দিনে পাগল হয়ে যাবে।”

“সমস্যা নেই আমি অনেক কেয়ারিং পারসন,আমি তাকে আদর করে পাগলা গারদে রেখে আসবো।”

প্রশান্ত হাঁসলো বলল,”ফা’জি’ল একটা।”,বলে থেকে গেলো জুনায়ানার দিকে ফিরে চাইলো।জুনায়ানা আগে থেকেই তার দিকে চেয়ে আছে ড্যাব ড্যাব করে।প্রশান্ত তার হাতে থাকা ব্যাগ জুনায়ানার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,”এইনে এইটা তোর জন্য।আমার পক্ষ থেকে ছোট্ট একটা গিফট।”

জুনায়ানা হেঁসে বলে,”ভালোই তো।আমার জন্য নিয়ে এলো আসাদ এর জন্য আনলি না।”

“আসাদ এর জন্য গিফ্ট পছন্দ হয়নি আমার তাই আনিনি।”

“কেনো শালাবাবু?আমার জন্য গিফ্ট পছন্দ হলো না কেনো?”,প্রশান্তর পিছনে দাঁড়িয়ে আসাদ কথাটি বলতেই প্রশান্ত ফিরে চায় হেঁসে বলে,”আমার তো তোমাকেই পছন্দ না তার উপর তোমার জন্য গিফ্ট কী করে পছন্দ হয়?”

“আমি জানতে চাই আমাকে আপনার কেনো পছন্দ নয়?”

“এখনই হবু বউ রেখে অন্য রমণীদের সাথে দেখা যায় তোমাকে।”

আসাদ এর সঙ্গে সঙ্গে কাশি উঠে গেলো।প্রশান্ত ক্ষীণ হাঁসলো।আসাদ কাশি থামিয়ে বলে,”আমি তো এক রমণিতেই আসক্ত প্রশান্ত বাবু।”

এহেন কথা শুনে জুনায়ানা বিড়বিড় করে,”সারাদিনে জামা কাপড়ের মত জীবন থেকে একশো মেয়ে বদলায় সে কিনা বলছে এক নারীতে আসক্ত।কেউ রংবেরঙের বি’ষ খা আমি মোর যাই।”

জুনায়ানার পাশ থেকে মেহরা,জাহরা উঠে দাড়ায় বলে,”আসাদ ভাইয়া বসুন।”

আসাদ হেঁসে প্রশান্তকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যায়,জুনায়ানার পাশে বসে পড়ে।জুনায়ানা ফিসফিস করে বলে,”এক হাত দূরে বস বেদ্দপ।”

আসাদ সঙ্গে সঙ্গে দুজনের মধ্যে দুরত্ব সৃষ্টি করে ফেলে।প্রশান্ত জুনায়ানার দিকে চেয়ে বলে,”জুনায়ানা আমার গায়ে হলুদে আসার কথা ছিল এসেছি।এখন আমি বরং যাই।আমার বড্ডো তাড়া রয়েছে।”

ফাইজ এগিয়ে গেলো প্রশান্তর হাত টেনে,প্রশান্তকে এনে জুনায়নার আরেক পাশে বসিয়ে দিলো বলল,”তুই বন্ধু হয়ে হলুদ না লাগিয়েই চলে যাবি?আর এমনিতে তো অনুষ্ঠান শুরু হয়নি।”

প্রশান্ত আড় চোখে চাইলো জুনায়নার দিকে।জুনায়না তার দিকেই চেয়ে আছে হাতে হলুদের বাটি,চোখে ইশারা করে বলল,”নে তুই প্রথমে হলুদ লাগিয়ে শুরু কর।আমাদের বয়সে সবচেয়ে বড় তুই।”

“বেশি না এক বছরের বড় আমি।তাতে আমাকে দিয়েই শুরু হবে এইটা আবার কেমন কথা?”

ফাইজ প্রশান্তর কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বলে,”হলুদ লাগা বেশি কথা না বলে।তুই তো শান্ত প্রশান্ত ছিলি এখন এত অশান্ত কী করে হলি?”

প্রশান্ত ধাক্কা খেয়ে বাটি থেকে হালকা ছোঁয়ায় হলুদ নিলো,তার হাত কাপছে। জুনায়না ঠোঁট টিপে হাঁসলো বলল,”তাড়াতাড়ি কর প্রশান্ত।”

প্রশান্ত জুনায়নার মুখ পানে চেয়ে থেকে কাঁপাকাঁপা হাতে গালে হলুদ ছুঁয়ে দেয়। জুনায়ানা হাত শক্ত করে নিজের গালে চেপে ধরে বলে,”তুই ঠিক আছিস তো?হাত কাপছে কেনো।”

প্রশান্ত’র কন্ঠ ক্ষীণ কাপলো বলল,”নাহ তেমন কিছুনা।”

জুনায়না মুচকি হাসলো বাটি থেকে হলুদ নিয়ে প্রশান্ত’র দুই গালে ছুঁয়ে দিলো বলল,”আমিও ছুঁয়ে দিলাম তোকে হলুদ।”

প্রশান্ত অবাক হলো বলল,”কী করলি?”

ফাইজ পিছন থেকে প্রশান্তকে পুনরায় ধাক্কা দিয়ে বলে,”হলুদ’ই তো লাগিয়েছে।কী আর করেছে।”

প্রশান্ত বিরক্ত হলো ফাইজ এর দিকে আড় চোখে চেয়ে বলল,”এমন করে কাঁধে বারবার ধাক্কা দিচ্ছিস কেনো?”

নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে থাকা জাহরা বলে ওঠে,”এই লোকের কাজ’ই তো মানুষকে বিরক্ত করা।সারাদিন বিরক্ত করে ফা জি ল একটা।”

প্রশান্ত পূর্ণদৃষ্টিতে চাইলো ফাইজ এর দিকে বলল,”তুই আমার বোনের মত মেয়েটাকে বিরক্ত করেছিস ফাজিল থুক্কু ফাইজ?”

ফাইজ দায়সারা ভাব নিয়ে বলে,”করেছি তো কিছু করবে?উল্টো আমি তোর বোনকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে তোকে আমার অফিসিয়াল শা’লা বানিয়ে ফেলবো।”

মেহরা হো হো করে হেঁসে উঠলো।হাসতে হাসতে বলল,”ফাইজ তোমার কলিজা বড় আছে বলতে হবে।আমার সামনে দাড়িয়ে আমার বোনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছো।”

“ভাবি যেই কলিজায় আপনার বোনের মত রা ক্ষ সী আছে সেই কলিজা বড় হতেই হয়।”

জাহরা মেহরার দিকে গাল ফুলিয়ে চেয়ে বলে,”তুই হাসছিস?কিছু বলছিস না?”আমাকে অপমান করছে তো।”

.
চট্টগ্রাম এর পাহাড়ি এলাকা যেনো নজর কাড়া এক পরিবেশ।গাছের এক পাশে দাঁড়িয়ে শীতল বাতাস উপভোগ করছে আরশমান।নিজের এত শত ব্যস্ততার মাঝেও চেষ্টা করলো,ফোন করলো মেহরাকে।মেহরা তুললো না ফোন, আরশমান বুঝতে পারলো সে হয়তো এই সময়ে জুনায়নার বাড়িতে রয়েছে।দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আরশমান আকাশ পানে চাইলো, হঠাৎ মেহরার মুখশ্রীর অস্পষ্ট ছায়া ভেসে উঠলো আকাশ পানে। আরশমান হাঁসলো বলল,”এই প্রকৃতির মতোই স্নিগ্ধ তুমি,নিষ্পাপ তুমি,এক মায়াবিনী তুমি,তুমিই আমার সেই প্রাণশক্তি।”

#চলবে।

গতকাল গল্প দিতে না পারার জন্য আমি দুঃখিত।কিছু ব্যক্তিগত কারণে গল্প দিতে পারিনি।আজও আমার ব্লাড প্রেসার লো হয়ে আছে।তাও লিখার চেষ্টা করেছি।ভেবেছিলাম আজ বোনাস পর্ব দিবো,আমি রাতে দেয়ার চেষ্টা করবো,তবুও বোনাস পর্বের অপেক্ষা করবেন না।ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে আশা করি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here