অর্ধ_নক্ষত্র ।২৭। #লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

0
161

#অর্ধ_নক্ষত্র ।২৭।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

চারটি অক্ষরে জোড়া “ভালোবাসা” নামক শব্দটি শ্রবণ হতেই যেনো সর্বাঙ্গে শিহরণ বয়ে গেলো,এক অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করলো,এত বছরের তৃষ্ণা যেনো মিটলো।জুনায়না প্রশান্ত’র বুকে মুখ গুজে বলল,”আমিও তোকে ভালোবাসি প্রশান্ত।মৃত্যুর আগ অব্দি এই জুনায়না শুধুই তোকে ভালোবেসে যাবে।তুই আগলে রাখ না আমায় তাহলে তো হারিয়ে যাবো না আমি।তোর হৃদয়ের একটি ছোট্ট স্থান জুড়ে জায়গা করে দে আমায়।”

প্রশান্তর বোধ হচ্ছে তার হৃদযন্ত্র স্বাভাবিক থেকে অস্বাভাবিক ভাবে কম্পিত হচ্ছে।চোখের কোণে জল এসে জমাট বেঁধেছে।সে নিজেই নিজের অবস্থায় হাসলো।জুনয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো প্রথম ওষ্ঠের ছোঁয়া একে দিলো জুনায়নার চুলের ভাঁজে।জুনায়নার হাতের ভাঁজ আরও দৃঢ় হলো।প্রশান্ত মোলায়েম কণ্ঠে বলল,”তোকে আমার সর্ব জুড়ে রাখবো জুনায়না। হৃদয়ের গভীর থেকে গভীরতর স্থানে এই জুনায়না ছাড়া কেউ নেই।শুধুই তুই।”

সুদূরে দাড়িয়ে মেহরা, ফাইজ ও ভিডিও কলে থাকা আরশমান দেখলো সব কিছু।এরই মাঝে ফাইজ আরশমানকে বারকয়েক ভিডিও কল দেয়ার পর আরশমান রিসিভ করে।তারও বড্ডো ইচ্ছে ছিলো সামনে থেকে এই দুই ভালোবাসার মিলন দেখার।

ফাইজ বলে ওঠে,”এত যে ঢং করে এরা!জুনায়না কসম টা আগেই দিয়ে দিলে পারতো।”

মেহরা হাঁসলো,তার দৃষ্টি গিয়ে আটকে গেলো ভিডিও কলে থাকা আরশমানের পানে।শুকিয়ে গিয়েছে লোকটা,উজ্জ্বল গৌড় বর্ণের মানুষটির মুখখানা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে এসেছে।ব্যস্ততার মাঝে কী সে নিজের যত্ন নিতেই ভুলে গিয়েছে?

ঐপাশ থেকে আরশমান উচ্চ কণ্ঠে বলল,”আরেহ বউ এমন আড় চোখে না চেয়ে ফাইজকে বলো ভাই ফোনটা দে আমি আমার জামাইর সঙ্গে একটু প্রেমালাপ করতে চাই।”

মেহরা লজ্জা পেলো রাগ হলো তার,বিড়বিড় করে কয়েক ধরনের গালিগালাজে ভরিয়ে দিলো আরশমানকে।ফাইজ হাঁসলো মেহরার হাতে ফোনটি ধরিয়ে দিয়ে বলল,”কেরি অন।”

আরশমান তার চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে ফেললো নিজের মেহরাকে দেখে।কেমন সাদার সঙ্গে লাল টুকটুকে শাড়ি পরেছে সে।মায়াবিনী লাগছে যে তাকে।আরশমানকে তার মায়ার জালে ফেলার জন্য তার এই মায়াবী মুখশ্রী খানাই যথেষ্ট।

আরশমান মোলায়েম স্বরে ডাকলো,”মেহরা।”

মেহরা নম্র কণ্ঠে বলল,”হম বলুন।”

“আপনাকে ছুঁয়ে দেয়ার অদম্য ইচ্ছে গুলো আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে কী করি বলুন তো?আমি যে আর অপেক্ষার প্রহর গুনতে চাইছি না।”

মেহরা বিরক্তি মাখা কন্ঠে বলল,”আপনার তো এইসব ইচ্ছে ছাড়া আর কোনো ইছেই জাগে না।চরিত্রে সমস্যা আছে আপনার।”

“এ আপনি যাই বলেন না কেনো আরশমান এর চরিত্র ফুলের মত পবিত্র।শুধু বউকে দেখলেই উল্টো পাল্টা ইচ্ছে জেগে ওঠে।”

“যাইহোক আগে বলুন তো আপনার এই অবস্থা কেনো?ঠিক করে খাওয়া দাওয়া করছেন না নাকি?”

আরশমান হাঁসলো, হ্যাঁ সে কাজের ব্যস্ততায় খাওয়া দাওয়া ঠিক মত করছে না।দরিদ্রদের জন্য জোগাড় করা ত্রাণ,নিজেই এই কাঠ ফাটা রোদের মধ্যে হেঁটে লোকেদের সঙ্গে সকল কিছু বিতরণে ব্যাস্ত ছিলো।তাই তো মুখটি কেমন ফ্যাকাশে হয়ে এসেছে। আরশমান বলল,”খাওয়া দাওয়া নয় বরং আমি তো আমার বউকে সামনে থেকে দেখতে না পেয়ে এমন হয়ে গিয়েছি।”

“সব আজে বাজে কথা আপনার।”

“এই শুনুন শাড়ির আচল টেনে মাথায় ঘোমটা দিনতো।আপনার এই রূপের ঝলক আমাকে বেঁকাবু করে দিচ্ছে।”

মেহরা ভ্রু কুঁচকে ফেললো বলল,”নিজেকে কাবু করা শিখুন এমপি সাহেব।নাহয় লাঠি পেটা করে নিজেকে কিভাবে কাবু করা যায় তা শিখিয়ে দিবো।”

আরশমান হাঁসলো।তার অস্থির হৃদয় আজ সস্তি পেয়েছে,নিজের প্রাণ মেহরার সঙ্গে কথা বলে। আরশমানের পিছন থেকে কয়েকজন ছেলে আরশমানকে ডাকলো,আরশমান তাদের হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দিলো সে আসছে।

আরশমান মেহরার দিকে চাইলো শান্ত কণ্ঠে বলল,”আসিফ এর লোকেরা আমার পিছু পিছু চট্টগ্রাম অব্দি চলে এসেছে।আমার ক্ষতি করার সর্বোচ্চ চেষ্টা ওরা করবে।ঐখানে আপনি একা আপনারও ক্ষতি করার চেষ্টা করবে।আমার লোকেরা আপনাকে প্রোটেক্ট করার জন্য রয়েছে ঐখানে।তবুও নিজে সাবধানে থাকবেন।নিজের খেয়াল রাখবেন।”

“আপনি জানা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম গেলেন কেনো?”

“দরিদ্র মানুষ যেইখানে এই আরশমান’ও সেইখানে।তাদের টানেই এইখানে এসেছি আমি।আর দলের কিছু কাজের জন্য।”

“কিন্তু।”

“আমার কিচ্ছু হবে না।আমার তো আপনাকে বিয়ে করা বাকি এখনও।একটা ফুটবল টিম বানানো বাকি।এত সহজে মরে গেলে কী হবে?”

“আপনি এত সহজে মরবেন না আমিও জানি।শয়তান সহজে মরে না।”

আরশমান হাঁসলো ছোট্ট করে ‘বিদায় প্রাণ’ বলে লাইন কেটে দিলো।

মেহরা চেয়ে থাকলো স্ক্রিনের দিকে,তার মস্তিষ্কে মুহূর্তের মধ্যে শত দুশ্চিন্তা বাসা বেঁধেছে।

.
মেহরা বাদে সকলে এসে গাড়িতে উঠে বসলো। জুনায়না জানালা ভেদ করে সুদূরে দাড়িয়ে একজন পুরুষের সঙ্গে কথা বলতে থাকা মেহরাকে দেখলো বলল,”আমাদের আরশমান এর বউ কিন্তু ঠিক আরশমান এর মতো।আরশমান এর মতই তার দাম্ভিক রূপ।আরশমান এর মতোই তার কাজের প্রতি ভালোবাসা।অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মনোবল।আরশমান জিতেছে ভাই।”

ফাইজ নিজের ঘাড়ে হাত রেখে আফসোসের সহিত বলল,”সব দোকলা হয়ে গেলি আমি একলা রয়ে রয়ে গেলাম।”

জুনায়না ফিরে চাইলো বলল,”সাপ বেজির মত ঝগড়া করলে এমন একলা হয়েই থাকতে হবে,দোকলা এই হওয়া হবে না।”

ফাইজ সিটে গা এলিয়ে দিলো বলল,”তুই যাকে মিন করছিস ওকে সাইডে রাখ ওই রাক্ষসীর সঙ্গে আমার কিছু হওয়া সম্ভব নয়।বিয়ের দুইদিন পর মসজিদের মাইকে শোনা যাবে ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।ফাইজ আজমির বউয়ের হাতে ক্যালানি খেয়ে ইন্তেকাল করিয়াছেন।”

প্রশান্ত, জুনায়না হো হো করে হেঁসে উঠলো।মেহরা গাড়ির সম্মুখে এসে এদের হাঁসির ঝংকার শুনে আগ্রহ দেখিয়ে বলল,”তোমরা এমন করে হাসছো যে?”

ফাইজ মেহরার দিকে ঘাড় কত করে বলে,”তেমন কিছু না ভাবি।এক রাক্ষসী আর এক ভোলাভালা পুরুষের বিয়ের ফলাফল কেমন হতে পারে তাই বলছিলাম।”

মেহরা গাড়িতে উঠে বসলো।বলল,”রাক্ষসী টা কী তোমার বউ আর ভোলাভালা পুরুষ টাকি তুমি?”

ফাইজ হাঁসলো বলল,”নাহ এই সম্পর্ক সম্ভব না,সম্ভব হইলে এই ইহকালের মায়া ত্যাগ করিতে হইবে এই ফাইজ আজমিরকে।

.
সকলে জুনায়নার বাড়ি ফিরলো।বসার ঘরে আরশমান এর মা সহ,ফাইজ এর মা-বাবা,আঞ্জুমান,আমজাদ সকলে বসে আছেন।সকলের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি। ফাইজ সকলকে ফোন করে চলে আসতে বলেছিলো।

জুনায়না,প্রশান্ত গিয়ে বসলো তাদের মাঝে।আমজাদ বলে উঠলো,”তাহলে এইবার আমাদের প্রশান্ত বাবা আর জুনায়না রানিকে নিয়েও ভাবতে হয়।”

আরশমান এর মা আমজাদকে থামিয়ে দিয়ে বলে,”ভাবতে হবে কী,আমি তো ভেবে ফেলেছি।আমাদের মেহরা আর আরশমান এর বিয়ের দিন ওদেরও বিয়ে হবে।এক সাথে দুই জুটির আট হাত এক করে দিতে হবে।”

সকলেই প্রফুল্ল মনে হাঁসলো আরশমান এর মায়ের সিদ্ধান্তে নিজেরাও সম্মতি জানালো।জুনায়না প্রশান্তর
দিকে চেয়ে চোখ মেরে কণ্ঠের রেশ ক্ষীণ রেখে বলে,”এইবার তো তুমি এই ইন্সপেক্টর জুনায়নার জেলে বন্দি হতে যাচ্ছ আসামি প্রশান্ত রেহমান।”

প্রশান্ত নিঃশব্দে হাঁসলো।

🍁

সময় নিজের গতিতে চলতে থাকলো,সে তো আর কারও জন্যই অপেক্ষা করে থাকে না।একটি একটি করে ব্যস্তময় দিন কেটে গেলো সকলের।বিয়ের তারিখ ঠিক হওয়ার পর থেকে প্রশান্ত ও জুনায়না ব্যাস্ত হয়ে পড়লো নিজেদের কাজে।জুনায়না আসিফ এর সঙ্গে জড়িত লোকেদের অনেক’কেই এরেস্ট করেছে।বাকিদের খোঁজে সে টিমের সঙ্গে বড়ই ব্যাস্ত।ঐদিকে প্রশান্ত নিজের নয়না ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে ব্যস্ত।

পরশু শুক্রবার।আর আরশমানের আসার খবর নেই।এই কয়েকদিনে একটিবারও ফোন দেয়নি আরশমান মেহরাকে।মেহরা নিজের কাজের মধ্যে থেকেও যেনো আরশমান কে নিয়ে তার দুশ্চিন্তা দূর করতে পারছে না।

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।মেহরা থানার পিছনের সড়কে দাড়িয়ে আছে।আজ সে রিকশা করেই বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here