#অর্ধ_নক্ষত্র ।২৮।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati
মেহরা উচ্চ কণ্ঠে ‘ মামা ‘ বলে রিকশা চালককে ডাকলো,হঠাৎ নিজের কাধে কারও হাতের স্পর্শ অনুভব করলো।সঙ্গে সঙ্গে কণ্ঠের রেশ ক্ষীণ হয়ে এলো তার,তড়িৎ গতিতে পিছন ফিরে চাইলো।তার চোখ মুখে অত্যাধিক বিস্ময়ের ছায়া।
মেহরার সামনে দাড়ানো আরশমান বিস্তর হাঁসলো,
মেহরার বাহু টেনে নিজের ঘনিষ্ঠে নিয়ে এলো ফিসফিস করে বলল,”এইজে ইন্সপেক্টর কেমন আছেন আপনি?আপনার শান্তির জীবনে আবার এই অশান্তির আগমন ঘটলো যে।”
মেহরার ঠোঁটের কোণে ক্ষীণ হাঁসির রেখা ফুটে উঠলো তা আরশমানের দৃষ্টিগোচর হলো না।মেহরার ইছে করছে যেনো এখনই লোকটিকে জড়িয়ে ধরি।এমন ইচ্ছে জেগে ওঠার কারণ সে জানে না তবে এখন এই অদম্য ইচ্ছেটা বড্ডো পূরণ করতে ইচ্ছে করছে।মেহরা নিজেকে সংযত করলো আরশমান এর বুকের দিকে শার্ট খামচে ধরে চেয়ে রইলো আরশমান এর মুখ পানে। আরশমান ঠোঁট প্রসারিত করে হাঁসলো মেহরার মুখশ্রীর দিকে ক্ষীণ এগিয়ে এলো একই কণ্ঠে শুধালো,”মিস করছিলেন আমায়।আমি কিন্তু বড্ডো মিস করেছি আপনাকে।আজ প্রাণ কে এতটা কাছে পেয়ে আমি আমার প্রাণশক্তি ফিরে পেয়েছি মেহরা।”
মেহরার সর্বাঙ্গে শিহরণ বয়ে গেলো তার হুশ ফিরলো,দ্রুত আরশমানকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিলো। আরশমান কয়েক কদম পিছিয়ে গেলো হাঁসলো বলল,”কী হয়েছে আপনার?”
মেহরা আপাদমস্তক দেখে নিলো আরশমানকে।আগের মত মুখের উজ্জ্বল রং ফিরে পেয়েছে সে,ফ্যাকাশে মুখখানা ঠিক হয়ে গিয়েছে।শুধু কপালের এক কোণায় নতুন এক কেটে যাওয়ার দাগ স্পষ্ট।মেহরা তা দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো বলল,”আপনার কপালে ঐটা কিসের দাগ?আগে তো ছিল না এই দাগ”
আরশমান এগিয়ে এলো হেঁসে বলল,”বাহ্ প্রাণ!আপনি দেখছি আমার মুখোশ্রীতে কোন দাগ ছিলো কী ছিলো না সব জানেন।”
“আপনি এতদিন যাবৎ ফোন , কনটেক্ট নাম্বার অফ করে কোথায় ছিলেন?আপনার বাবা মা আপনার জন্য কতটা চিন্তিত আপনি কী আদও জানেন?”
আরশমান নিজ হাত বাড়িয়ে দিলো,হাতের ভাঁজে মেহরার হাত সন্তর্পনে আবদ্ধ করে নিলো হাঁটা ধরলো।মেহরা আরশমান এর হাতের টানে আরশমান এর সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটা ধরে,বলে,”আমি কী বললাম তার উত্তর না দিয়ে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়?”
আরশমান নিজের কালো রঙ্গা গাড়িটির সামনে এসে গাড়ির দরজা খুলে মেহরাকে চোখের ইশারা করে বলে,”গাড়িতে উঠে বসুন।”
মেহরা চোখ মুখ কুঁচকে তিক্ত কণ্ঠে বলে,”সমস্যা কী আপনার?আমি যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর না দিয়ে এইখানে এনে গাড়িতে উঠতে বলছেন?আমি আপনার কোনো কথা শুনতে বাধ্য নই।উঠবো না আপনার গাড়িতে।”
আরশমান নিঃশব্দে হাঁসলো মেহরার হাত ছেড়ে মেহরাকে পাঁজা কোলে তুলে নিলো।মেহরা ভড়কে গেলো,আচমকা এহেন কান্ড হওয়ায় মেহরা আরশমান এর শার্টের করলার চেপে ধরলো খিচে নেত্রপল্লব বুজে ফেললো।
“আমার প্রাণ এর এই ভীতু মুখখানা’ও বড্ডো সুন্দর।”
মেহরা চোখ খুলে চাইলো,কোনো কথা আওড়াবে তার পূর্বেই আরশমান মেহরাকে গাড়িতে উঠিয়ে বসিয়ে দিলো।গাড়ির দরজা লাগিয়ে দিয়ে বলল,”এক পা অব্দি বের করবেন না।নাহয় এই আরশমান কী কী করতে পারে সব আজকে দেখিয়ে দিবো।”
মেহরা তার মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে, সত্যি পুনরায় তার জীবনে অশান্তির আগমন ঘটেছে বটে। আরশমান এসে ড্রাইভিং সিটে বসলো গাড়ি স্টার্ট দিলো মেহরার দিকে চেয়ে দেখলো কেমন মুখ ফুলিয়ে বসে আছে মেহরা।
আরশমান স্টিয়ারিং ঘুড়িয়ে জায়গাটি ছাড়লো,সে হাসছে।মেহরা আড় চোখে চাইলো।আরশমান এক হাতে স্টিয়ারিং ধরে আরেক হাতে মেহরার হাত নিজের হাতের ভাঁজে নিয়ে নিলো বলল,”এমন করে গাল ফুলিয়ে রাখবেন না,নাহয় আমি নিজেকে সংযত করে রাখতে পারব না। গালে কয়েকটা কামড়ের দাগ বসে যাবে।”
মেহরার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।তার মুখ চুপসে গিয়েছে।আরশমান হাঁসলো পুনরায় বলল,”আমার কাজ অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল মেহরা।আমি আরো দুইদিন আগেই এসে পড়তে পারতাম।কিন্তু আসিফ এর লোকেরা শেষ মেষ আক্রমণ করলো আমার উপরে।তাদের ব্যাপার টা মাটি চাপা দিতে দিতে দুই দিন ব্যয় হলো আরকি।আমি আবার আবর্জনা মাটির বিচে চেপে দিতেই পছন্দ করি।”
মেহরা বিস্মিত চোখে চেয়ে রইলো,একজন পুলিশ এর সম্মুখে কিভাবে নিজের কর্মের কথা স্বীকার করছে।মেহরা বলে,”বুঝলাম তারা ভুল করেছে এই বলে আপনি মেরে তাদের মাটি চাপা দিয়ে দিবেন।দেশে কী আইন নেই?”
“রাখুন আপনার আইন।এত আইন এই আরশমান মানে না।আমাকে এসে মেরে ফেলবে আর আমি ওদের কোলে নিয়ে আদর করবো?মারার মতোই কাজ করেছে চু’মু খাওয়ার মত তো কোনো কাজ করেনি।নাহয় কয়েকটা চু’মু দিয়ে দেয়া যেতো। ”
“অ’স’ভ্য লোক।”
“আমি জানি আমি সভ্য বলতে হবে না।”
“আমি কখন বললাম আপনি সভ্য?”
“এইযে সবেই বললেন।যাইহোক আমার ইন্সপেক্টর রানির এনার্জি আছে তো?আমি কিন্তু এখন তাকে নিয়ে শপিং করতে যাচ্ছি।”
মেহরা অবাকের চরম শীর্ষে পৌঁছে গেলো বলল,”এখন শপিং?”
আরশমান মৃদু হাঁসলো মেহরার হাত ছেড়ে দিয়ে গাড়ির পিছনের দিকে হাত দিয়ে দুটো ব্যাগ হাতে নিয়ে মেহরার হাতে ধরিয়ে দিলো বলল,”ব্যাগের ভিতরে খাবার আছে খেয়ে নিন।”
মেহরা দ্বিরুক্তি করলো বলল,”খাবো না আমি।”
আরশমান ধমকে উঠলো বলল,”নিজের অবস্থা দেখেছেন, ডাইট করছেন বুঝি?এমন শুকিয়েছেন কী করে।এখন অব্দি কিচ্ছু বলিনি মানে যে কিছু বলবো না তা কিন্তু নয়।”
মেহরা উল্টো ধমকে উঠলো,”আমাকে ধমক দিচ্ছেন কেনো?”
আরশমান হাঁসলো,তার প্রাণ যে তার ধমকে কখনোই ভয় পাবে না।
“আপনি নিজ হাতে না খেলে আমি এখন গাড়ি থামিয়ে আপনাকে জোর করে খাওয়াবো।আর জোর করে খাওয়ালে,শেষে একটা সুন্দর কিস’ও করবো।আমি আবার কথার খেলাপ করি না।,”বলে মেহরার দিকে চেয়ে চোখ মারলো আরশমান।
মেহরা বিরক্তিতে ‘ চ ‘ শব্দটি করে উঠলো।খাবারের বক্সের দিকে চেয়ে রইলো অতঃপর হাত স্যানিটাইজ করে খাবারের বক্সে এর ঢাকনা খুলে খাওয়া আরম্ভ করলো।আরশমান বার বার চেয়ে চেয়ে দেখলো মেহরাকে।এক হাতে পকেট থেকে ফোন বের করে এক হাতেই আঙুল চালালো ফোনের স্ক্রিনে।মেহরা আড় চোখে চেয়ে দেখলো।মেহরার বোধ হলো আরশমান ম্যাসেজ করলো কাউকে।
.
হাসপাতাল থেকে ফাইজ বেরিয়ে এখন নিজের গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে।অপেক্ষা করছে জাহরার। তাঁদের সম্পর্কটা যেনো সাপ বেজির মতোই রয়ে গেলো।একজন আরেকজনের পিছন না লাগল কারোরই ভালো লাগে না।এই কয়েকদিনে ধূসরকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল দুজন।
ফাইজ ত্রস্ত হলো।জাহরা হাসপাতালের প্রবেশ দ্বার দিয়ে বেরিয়ে আসছে।হাতে ফাইল তার বার বার চোখের সামনে চলে আসা চুল গুলো পিছনে ঠেলে দিচ্ছে।ফাইজ নির্নিমেষ চেয়ে চেয়ে দেখলো জাহরাকে।মাঝে মধ্যেই ফাইজ জাহরার মধ্যে ডুবে যায়,এমন করেই চেয়ে থাকে সে।যখন বুঝে ওঠে তখন নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করা শুরু করে কেনো সে এমন করে চেয়ে থাকে জাহরার পানে।
জাহরা নিজের গাড়িতে গিয়ে উঠে বসতে নিবে তখনই ফাইজ উচ্চ কণ্ঠে ডাকলো জাহরাকে।জাহরা চমকিত নয়নে চাইলো ফাইজ এর দিকে।ফাইজ একই কণ্ঠে বলল,”এইখানে আসো মেয়ে কথা আছে।”
জাহরা কোমড়ে দুই হাত গুজে বলে,”নিজের কথা তো নিজে এসে বলে যান।আমাকে ডাকছেন কেনো?”
“তোমার আসতে প্রবলেম কোথায়?”
“আপনার আসতে প্রবলেম কোথায়?”
“রাক্ষসী ঘাড় ত্যাড়া একটা!”,বিড়বিড় করে বলল ফাইজ।
#চলবে।