আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব- ৩৩ লেখিকা- সালমা চৌধুরী

0
385

গল্প- আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে
পর্ব- ৩৩
লেখিকা- সালমা চৌধুরী

আবির মেঘের দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে শুধু মুচকি হাসল।

মেঘ আবিরের দিকে একবার দেখছে আবার জান্নাত আপুর দিকে। উত্তেজিত কন্ঠে পুনরায় শুধালো,

“সত্যিই কি জান্নাত আপুর বিয়ে?”

আবির স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দিল,
“হ্যাঁ”

মেঘ আনমনে বলল,
” হঠাৎ ”

আবির হাসিমুখে জবাব দিল,
“হঠাৎ না, বিয়ে অনেকদিন আগে থেকেই ঠিক ছিল।”

মেঘ আশ্চর্য নয়নে তাকিয়ে আছে। এতদিন জান্নাত আপুকে নিয়ে কতই না সন্দেহ করল। কত উল্টাপাল্টা কথা ভাবল। হাজার চেষ্টা করে এতমাস আবির ভাইয়ের প্রতি নিজের অপ্রকাশিত ভালোবাসা মনের ভেতর চাপা দিয়ে রেখেছিল শুধু জান্নাত আপুর জন্য।আবির ভাইয়ের সঙ্গে জান্নাত আপুকে জরিয়ে কত বা*জে চিন্তায় না করে এসেছে। এমনকি তাদের বিয়ে পর্যন্ত ভেবে নিয়েছিলো। অথচ কি হলো, জান্নাত আপুর বিয়ে হচ্ছে তাও অন্য কারো সঙ্গে। এই ঘটনা স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেয়া অষ্টাদশীর পক্ষে অসম্ভব। হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে মেঘের হঠাৎ মনে হলো পুরোনো সেই কথাটা,

আবির ভাইকে জিজ্ঞেস করেছিল,
“আপনি কি জান্নাত আপুকে ভালোবা..….”

তৎক্ষনাৎ আবিরের দেয়া থা*প্পড় টা মনে পরতেই মেঘ কিছুটা কেঁপে উঠল। মনে মনে ভাবছে,

“আবির ভাইয়ের সাথে যখন আপুর কিছু ছিলই না তাহলে এতদিন এটা ক্লিয়ার করে বলেন নি কেন আমায়? অবশ্য বলবেন ই বা কেন, ওনি কি আর আমার অনুভূতি বুঝেন?
থা*প্পড় না দিয়ে সেদিন এটাও তো বলতে পারতেন আপুর জীবনে কেউ আছে বা আপুর বিয়ে ঠিক! বড় আম্মু যখন আবির ভাইকে জান্নাত আপু র কথা বলেছিলেন তখন ও তো বলতে পারতেন। তাহলে তো আমি এত দুশ্চিন্তায় থাকতাম না। কিন্তু সেদিনও ওনি টু শব্দ করলেন না। শুধু শুধু চারটা মাস বৃথা গেল আমার। না মেডিকেলে চান্স পেলাম আর না আবির ভাইকে পেলাম।”

আবিরের দিকে একবার দেখল তারপর মন খারাপ করে মেঘ বলল,

“আপুর যে বিয়ে ঠিক এটা কি আপনি এতদিন বলেন নি কেন?”

আবির ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসল,তারপর গম্ভীর কন্ঠে বলল,

“বললে আর কোথাও চান্স পাইতিস না। এমনিতেই তো বেশিরভাগ সময় ভিনগ্রহে বসবাস করিস, বললে যে কি হতো আল্লাহ ভালো জানেন। ”

অকস্মাৎ কেউ একজন আবিরকে উদ্দেশ্য করে তপ্ত স্বরে বলে উঠল,
“এতক্ষণে আসার সময় হয়ছে তোর, কখন আসতে বলছিলাম তোকে? ”

আবির সেদিকে তাকিয়ে সহজ কন্ঠে বলল,
“তোর স্পেশাল গেস্টকে নিয়ে আসছি, একটু তো সময় লাগবেই!”

“স্পেশাল গেস্টের কথা বলেছিস বলে বেঁচে গেলি। সহসা মেঘের উদ্দেশ্যে বলল,

“ওয়েলকাম, ম্যাম।”

মেঘ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো, ভূত দেখার মত চমকে উঠে বলল,
“ভাইয়া আপনি! ”

রাকিব স্ব শব্দে হেসে উত্তর দিল,
“ইয়েস,ম্যাম”

আবির ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল,
“ওনারা কোথায়?”

রাকিব হাসিমুখে বলল,
” খেতে বসছেন, তোদের জন্য অপেক্ষা করতে চাইছিল কিন্তু আমিই জোর করে বসালাম। আমি ওখানেই ছিলাম, লিমন বলল তোরা আসছিস তাই আসলাম। চল, স্টেজে যায়”

আবির ভারী কন্ঠে বলল,
“আরে না! ওরা ছবি তুলছে, একটু সময় দেয়া দরকার। পরে যাব নে ”

মেঘের মাথায় কিছুই ঢুকছে না৷ হচ্ছে টা কি! সে আশেপাশে তাকাচ্ছে , একবার স্টেজে দেখছে আর একবার দুই বন্ধুর কথোপকথন শুনছে।

রাকিব আবিরের হাত ধরে উচ্চস্বরে বলল,
“কিসের পরে, আয় বলছি”

এই কথা শুনে স্টেজ থেকে জান্নাত ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। মেঘ আর আবিরকে দেখে হাসিমুখে ডাকল,
“মেঘ, এদিকে আসো।”

ভারী লেহেঙ্গা পরে হাঁটতে পারছে না তাই মেঘকে ডাকছে।
রাকিব টানছে। আবির যাচ্ছে না দেখে স্টেজ থেকে দুজন ই এবার ডাক শুরু করেছে,

জান্নাত বলে উঠলো,
“ভাইয়া আপনি আসবেন নাকি আমাকেই আসতে হবে? এই মেঘ আসো।”

আবির, মেঘ আর রাকিব তিনজনই স্টেজে উঠলো। মেঘ জান্নাত আপুর কাছে যেতেই আপু এগিয়ে এসে মেঘকে জরিয়ে ধরে বলল,

“কেমন আছো, আপু?”

মেঘ এখনও ঘোরের মধ্যেই আছে৷ হাসার চেষ্টা করছে কিন্তু হাসি আসছে না। জেনে বুঝে কত অবহেলা করেছে আপুকে। এটা ভেবেই মেঘের খারাপ লাগছে। আস্তে করে বলল,

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি কেমন আছেন?”

জান্নাত মিষ্টি করে হেসে উত্তর দিল,
“আলহামদুলিল্লাহ। তুমি একদিন আমার পছন্দের মানুষ সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলে না? ওনিই আমার সেই পছন্দের মানুষ, আলহামদুলিল্লাহ ওনার সঙ্গেই আমার বিয়ে হচ্ছে। ”

এদিকে আবির উঠতেই নতুন জামাই আবিরকে জরিয়ে ধরে বলল,

“এত ভাব কিসের তোর? সকাল থেকে কম করে হলেও ১০০ কল দিয়েছি। তোর আমার সাথে আসার কথা ছিল আর তুই এতক্ষণে আসলি। ”

আবির কিছু বলার আগেই রাকিব বলে উঠল,
তোমাদের আবেগ অনুভূতি পরে প্রকাশ করো। আগে আমি আমার স্পেশাল গেস্টের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। মেঘের দিকে তাকিয়ে রাকিব হেসে বলল,

“ম্যাম, এই হলো আমার একমাত্র বোন জান্নাতুল ফেরদৌস জান্নাত। আপনি তাকে খুব ভালো ভাবেই চিনেন। আর ওনি হলেন, আশরাফুল ইসলাম আসিফ । ”

মেঘের বিষ্ময় যেনো কমছেই না। রাকিব ভাইয়ের আপন বোন জান্নাত আপু? অথচ এতদিনে একটা বার কেউ বলেও নি। এ কোন দুনিয়ায় আছে সে!

আশরাফুল ইসলাম আসিফ মেঘের দিকে চেয়ে হালকা করে হেসে বলল,

“কেমন আছেন মিস মাহদিবা খান ?”

নিজের পুরো নাম শুনে মেঘ অবাক চোখে তাকিয়েছে আসিফের পানে আর ভাবছে,
“আমার নাম ওনি কিভাবে জানেন?”

আশরাফুল ইসলাম তখনও আবিরের কাঁধে হাত রেখেই দাঁড়িয়ে আছেন।

কয়েক মুহুর্ত পর মেঘ ধীর কন্ঠে বলল,

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। ধন্যবাদ আপু। ”

মেঘ ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো,
“কেন?”

আশরাফুল ইসলাম স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন,

“আপনি চান্স পেয়েছেন বিধায় আজ আমি বিয়ে করতে আসতে পারছি। আপনি চান্স না পেলে আমার আর বিয়ে করা হতো না। তাই ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপনার গিফট টা আমি পাঠিয়ে দিব।”

মেঘের মাথায় হাজারটা প্রশ্ন ঘুরঘুর করছে। হুট করে জান্নাত আপুর বিয়ে, আশরাফুল ইসলাম আসিফের বিয়ের সাথে মেঘের চান্স পাওয়ার সম্পর্ক, ঐ লোকের মেঘের পুরো নাম জানা, আবির ভাইয়ের প্রতি এমন আচরণ। মেঘ ভাবছে,

“ওনিও কি তাহলে আবির ভাইয়ের বন্ধু?”

আশরাফুল ইসলাম আসিফ অকস্মাৎ আবিরের পেটে গুতা দিয়ে বললেন,

“কিরে, বিয়ে কবে করছিস?”

আচমকা এমন প্রশ্নে আবির ভ্যাবাচেকা খেল। তারপর ভাব নিয়ে বলল,

“তোমার জন্য ই তো করতে পারছি না। ”

আসিফ হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠল,
“ফালতু কথা একদম বলবি না। আমার বিয়ে আঁটকে রেখে এখন আবার বলছিস আমার জন্য করতে পারছিস না। আজ তো বিয়ে করছি আমি। তাহলে তুই কাল কর বিয়ে, না হয় আজ ই কর।”

আবির মুখ গোমড়া করে আস্তে করে বলল,
“যদি পারতাম এখনই করে ফেলতাম। তুমি তো সবকিছু জানোই। ”

আসিফ হেসে প্রশ্ন করল,
“তাহলে আমার দোষ কেন দেস?”

আবির উত্তর দিল,
“তোমার তো সুখের দিন, প্রিয়জনকে বিয়ে করে ফেলতেছো। আমার কি হবে! তোমার উপর দোষ দিয়েও যদি মনটাকে সান্ত্বনা দিতে পারি!”

তারপর আসিফ কানে কানে আবিরকে কি যেনো বলল। আবির মেঘের দিকে একবার তাকালো। মেঘ নির্বোধের ন্যায় চেয়ে আছে। আশেপাশের ঘটনাগুলো অস্বাভাবিক লাগছে তবুও স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেয়ার চেষ্টা করছে।

রাকিব আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“তানভির কই রে, ফোন বন্ধ কেন ওর? তোরা দুই ভাই যা হইছস কি বলব!”

আবির ভ্রু কুঁচকে উত্তর দিল,
“তানভির মিটিং এ, শেষ করে আসবে বলছে। ”

জান্নাত হাসিমুখে বলল,
“আবির ভাইয়া চলেন ছবি তুলি!”

জান্নাত আর আসিফ জোড়াজুড়ি করে মেঘ আর আবিরকে মাঝখানে বসিয়ে ওরা পাশে বসছে। আবির ভাইয়ের পাশে বসে ছবি তুলছে এটা ভাবতেই অষ্টাদশীর দেহে অন্যরকম শিহরণ জাগছে। বউ এর আসনে বসে এক মুহুর্তের জন্য নিজেকে বউ ভেবে নিয়েছে। রাকিব গিয়ে বন্ধুদেরও ডেকে এনেছে। বন্ধুরা সবাই মিলে বেশকিছু ছবি তুলে, যে যার মতো কাজে চলে গেছে। আবির মেঘকে নিয়ে নিচে গিয়ে বসল। স্টেজে নবদম্পতি রা কাপল পিক আর ভিডিও করায় ব্য*স্ত।

মেঘের হাতে জুস দিয়ে আবির মেঘের পাশে বসল। মেঘ এক চুমুক জুস খেয়ে আবিরকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করল,

” জান্নাত আপু রাকিব ভাইয়ার বোন এটা এতদিন বলেন নি কেন? আপুর যে বিয়ে ঠিক এটা কেন বললেন না? আর আপুর হাসব্যান্ড কি আপনার বন্ধু?”

মেঘ একদমে প্রশ্ন গুলো করলো। আশেপাশে কেউ নেই। মেঘের মনে জমে থাকা প্রশ্ন গুলো বাঁধ ভেঙে বেড়িয়ে আসতে চাইছে। জান্নাত আপুর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, আবির ভাই কে নিজের করে পাবে এই খুশির থেকেও মাথায় ঘুরা প্রশ্নগুলো তাকে বেশি অস্বস্তিতে রেখেছে।

আবির শক্ত কন্ঠে বলা শুরু করল,
“রাকিবের বোন বলে জান্নাত কে বাসায় নিলে প্রতিটা মানুষ ধরে নিতো তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক আছে। যদিও কারো কারো মনে এমনিতেও অনেক সন্দেহ। শেষ পর্যন্ত আম্মু বিয়ের কথা বলেই ফেলল। আর যদি আমি তোকে পড়ানোর মাঝপথে বলতাম যে জান্নাতের বিয়ে ঠিক তাহলে তুই সেই কথা বাসার সবাইকে বলতে ২ মিনিট সময়ও নিতি না। আমি জান্নাতের ব্যাপারে কোনো কথা বাসায় জানাতে চাচ্ছিলাম না। জান্নাতের হাসব্যান্ড আমার বন্ধু নয় তবে কাছের কেউ।”

মেঘ পুনরায় প্রশ্ন করল,
“আমার চান্স পাওয়ার সাথে আপুর বিয়ের কি সম্পর্ক? ”

আবির সহজ কন্ঠে বলল,
“ঢাকা শহরে টিউটর পাওয়া কোনো সমস্যা নয়। তবে বেশিরভাগ টিউটর ই শুধু টাকার জন্য পড়ায়। এই ৩-৪ মাস সময় টা প্রতিটা স্টুডেন্ট এর জীবনে একবার ই আসে। আমার এমন একজনকে প্রয়োজন ছিল যে তোর পড়াশোনা টাকে গুরুত্ব দিবে, নিজের বোন ভেবে পড়াবে । জান্নাত রাকিবের বোন আর আমারও কাছের মানুষ, ও যতটুকু শ্রম তোর জন্য দিয়েছে ততটুকু বাহিরের কোনো টিউটর কখনই দিতো না। কিন্তু হঠাৎ ই ওর বিয়ের কথাবার্তা শুরু হয়ে গেছিল, বিয়ে হয়ে গেলে তোর প্রতি ওর গুরুত্ব কমে যেত, ওর পক্ষেও সবকিছু ম্যানেজ করা কষ্ট হয়ে যেতো৷ নতুন টিউটর আনলে তোর মানাতে সময় লাগতো তাই বাধ্য হয়ে জান্নাতের বিয়ে পিছিয়ে দিয়েছিলাম৷ এটায় বলছিল।”

বিস্ময়ে মেঘের ভ্রু জোড়া কপালে উঠে গেছে, বৃহৎ অক্ষিপট আবিরের চোখে-মুখে নিবন্ধ। তাকে চান্স পাওয়ানোর জন্য আবির ভাই জান্নাত আপুর বিয়ে আঁটকে রেখেছিল৷ এটা ভেবেই প্রজাপতির ন্যায় উড়তে ইচ্ছে হচ্ছে মেঘের। তবে মনে মনে নিজের উপর ক্ষু*দ্ধও হচ্ছে। এতগুলো দিন আজেবাজে কথা ভেবে নষ্ট করেছে। মেঘের বুকের ভেতর হৃদপিণ্ডের তীব্র ধুকপুক শুরু হয়ে গেছে। প্রেম -প্রেম অনুভূতিরা মস্তিষ্ক জোড়ে বিচরণ করছে।

মেঘ বিড়বিড় করে বলল,
“যেই মানুষটার অপ্রকাশিত সতর্কতায় এত তীব্র, সেই মানুষটার প্রকাশিত ভালোবাসা না জানি কত প্রখর !”

তখনই মেঘের চোখে পরলো একটা খয়েরী রঙের শাড়ি পরা মেয়ে তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। শাড়িতে মেয়েটাকে অনেক সুন্দর লাগছিলো৷ এই প্রথমবার কাউকে শাড়ি পরা দেখে মেঘেরও খুব ইচ্ছে করছে শাড়ি পড়তে৷মেয়েটা কাছাকাছি এসেই বলল,

“হাই কিউটি!”

মেঘ আগে থেকেই মেয়েটাকে দেখছিল, মেয়েটার কথা শুনে এবার আরিরও তাকিয়েছে। মেঘ সঙ্গে সঙ্গে আবিরের দিকে তাকালো, বুঝার চেষ্টা করলো মেয়েটা আবিরের পরিচিত কি না!

মেয়েটা পুনরায় বলল,
“কেমন আছ, কিউটি?”

বার বার কিউটি বলায় মেঘ কপাল কুঁচকালো। যদিও মেয়েটাকে সে চিনে না,যেহেতু নিজে থেকে কথা বলতে এসেছে তারমানে পরিচিত ই হবে তাই মেঘ উত্তর দিল,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন? ”

মেয়েটা মৃদু হেসে বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো৷ তোমাকে সামনাসামনি দেখার খুব ইচ্ছে ছিল৷ অবশেষে তোমার দেখা পেলাম৷ ”

মেঘ কিছু বলছে না চুপচাপ চেয়ে আছে। মেয়েটা পুনরায় বলল,
“জানো, মাঝে মাঝে তোমার প্রতি খুব হিংসে হয়।”

মেঘ বিস্ময় সমেত তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
“কেনো?”

মেয়েটার সোজাসাপটা উত্তর,
“একটা মানুষ কতটা ভাগ্যবতী হতে পারে, তা তোমার কথা না শুনলে জানতাম ই না৷ দোয়া করি সারাজীবন সুখে থাকো। ”

মেঘ জিজ্ঞাসু চোখে চেয়ে বলল,
“মানে?”

আবির মেঘের দিকে চেয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠল,
“থাক,আর মানে বুঝতে হবে না।”

মেয়েটার দিকে না তাকিয়েই বলল,
“আপনাকে খোঁজে না পেয়ে, হয়তোবা কেউ হয়রান হয়ে যাচ্ছে ৷ আপনি বরং ওনার কাছে যান।”

মেয়েটা আস্তে করে বলল,
“আর কতদিন ভাইয়া? ”

আবির গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিল,
“বহুদিন। ”

মেঘ নির্বাক চোখে তাকিয়ে আছে৷ এই বিয়ের অনুষ্ঠানে কি ঘটছে তার অর্ধেকের বেশিই মেঘের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। মেঘ আবিরকে প্রশ্ন করল,

“ওনি কে?”

“রিয়া, রাকিবের গার্লফ্রেন্ড ”

“কি? রাকিব ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড ?”

“এত অবাক হওয়ার কি আছে। গার্লফ্রেন্ড থাকতে পারে না?”

“পারে। কিন্তু ওনি আমায় কিভাবে চিনে?” মেঘ প্রশ্ন করল।

“রকির যেহেতু আমার বেস্ট ফ্রেন্ড , রাকিব যদি চিনে বা জানে তাহলে রিয়ার জানতে কতক্ষণ ?” গম্ভীর কন্ঠে আবির বললো।

মেঘ আর কথা বাড়ালো না। আজকে তার শক খাওয়ার ই দিন৷ একটু পর পর একটার পর একটা শক খাচ্ছে৷ হুটহাট একেকজন একেক কথা বলছে যাদের কাউকেই মেঘ চিনে না।

আচমকা আবির উঠে গিয়ে একজনকে সালাম দিল। মহিলা সালামের উত্তর দিয়ে আবিরের বাহুতে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,

“কখন আসছিস, তোদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম তারপর তোর বন্ধু জোর করে খেতে বসালো নিয়ে।”

আবির মৃদু হেসে উত্তর দিল,
“কিছুক্ষণ আগেই আসছি। ”

একটা ১৫ বছরের মেয়ে আর একটা ১৯ বছরের ছেলে ও ছিল ওনার পেছনে৷ মেয়েটা আচমকা বলে উঠল,

“ভাইয়া, ভাবি কোথায়?”

মেয়েটার দেখাদেখি ছেলেটাও বলল,
“তুমি না বলছিলা ভাবিকে নিয়ে আসবা, ভাবি কোথায়?”

আবির চোখ রাঙিয়ে ভারী কন্ঠে বলল,

“আর একবার যদি ভাবি বলে সম্বোধন করিস তাহলে তোদের খবর আছে। আপু বলবি। মনে থাকবে? ”

দুজনেই মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। মহিলা আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“দিবা আসে নি?”

আবির “হ্যাঁ” বলে পেছন ফিরে তাকিয়ে হাত দিয়ে মেঘকে ইশারা করলো। মেঘ উঠে ওনাদের কাছে যেতেই আবির বলল,

“এইযে তোমার মাহদিবা৷ ”

মহিলা সহসা মেঘকে জরিয়ে ধরে কা*ন্না করে দিয়েছেন। হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরায় মেঘ কিছুটা নড়ে উঠল। মেঘ পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে৷ আর মনে মনে ভাবছে,
“এই মহিলা কে? এই জীবনে ওনাকে দেখেছে বলে মনে পড়ছে না৷ ওনি জড়িয়ে ধরলেন কেন ? আর কান্না ই বা কেনো করছেন? ”

একটু পর মেঘকে ছেড়ে মহিলা কান্নারত কন্ঠে বললেন,

“মাশাআল্লাহ অনেক বড় হয়ে গেছিস৷ দোয়া করি আরও বড় হ৷ ”

মেয়েটা হাত বাড়িয়ে বলল,
“হাই আপু, আমি আইরিন। ”

মেঘ ও স্বাভাবিক হয়ে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে বলল,
“হ্যালো, আমি মেঘ৷ ”

ছেলেটা বলে উঠল,
“হ্যাঁ আমরা জানি। তুমি মাহদিবা খান মেঘ। বাই দ্য ওয়ে আমি আরিফুল ইসলাম আরিফ৷ ”

জামাই এর নামের সঙ্গে মিল আছে দেখে মেঘ ধরে নিল, ওনারা জান্নাত আপুর শাশুড়ী আর ননদ,দেবর হবেন। কিন্তু আবির ভাইয়ের সাথে কি সম্পর্ক, আর মেঘকেই বা কিভাবে চিনে তা বুঝতে পারছে না।

মহিলা পুনরায় প্রশ্ন করলেন,
“তানভির আসে নি?”

আবির বলল,
“না, আসবে কিছুক্ষণের মধ্যে। ”

মেঘ আবারও অবাক হলো। তানভির ভাইয়াকেও চিনেন। কিন্তু ওনারা কারা? মুখের উপর জিজ্ঞেস ও করতে পারছে না। তখনই মধ্যবয়স্ক একজন লোক আসছেন। আবির সালাম দিয়ে হ্যান্ডসেক করলো৷ মেঘকেও ঐ লোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।

তখনই রাকিব আর রাসেল ডাকতে আসছে। আবির ওনাদের বসিয়ে মেঘকে নিয়ে খেতে চলে গেছে। খেতে বসেও মেঘের মাথায় শুধু মহিলার কা*ন্না ঘুরছে৷ মেঘ না পেরে আবিরকে প্রশ্ন করেই ফেলল,

“আন্টি টা কে ছিল? আর ওনি আমায় দেখে কা*ন্না কেন করছিলেন?”

আবির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আজ তোকে সবই বলবো। প্রোগ্রাম টা শেষ করে বের হয়৷ ততটুকু সময় একটু ধৈর্য রাখ। প্লিজ।”

আবির মেঘ খাওয়া শেষ করে৷ মেঘ আগে চলে আসছে, আবির রাকিবের সঙ্গে কি যেন কথা বলছিল। তখনই তানভির আসছে। মেঘকে দেখেই প্রশ্ন করল,

“খেয়েছিস?”

মেঘ মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। তানভির পুনরায় বলল,

“এইযে তোর জান্নাত আপুর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে৷ এমন ভাবে তোকে বিয়ে দিয়ে দিলে কেমন হবে?”

এই কথা শুনেই মেঘের অক্ষিপট ভিজে আসছে। জান্নাত আপুর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে৷ রাকিব ভাইয়ার কতই না কষ্ট হচ্ছে। সারাজীবনের জন্য সবাইকে ছেড়ে চলে যাবে, আজকের পর থেকে তো ওনার বাড়িতেই ওনি মেহমান হয়ে আসবেন। মেঘকে বিয়ে দিলে এভাবে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে, এটা ভাবতেই কান্না পাচ্ছে মেঘের।

বোনের কান্না দেখে তানভির মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
” দূর পা*গলি, তোকে বিয়েই দিব না৷ আর দিলেও আমাদের বাড়িতেই রাখবো৷ চিন্তা করিস না৷ ”

তখনই আবির আসছে। তানভিরের দিকে তাকিয়ে রা*গী স্বরে প্রশ্ন করল,

“কি বলছিস ওরে? কাঁদছে কেনো?”

তানভির আস্তে করে বলল,
“এমনেই দুষ্টামি করছি ”

আবির রা*গে কটমট করছে। মেঘের চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি পরলে আবিরের পায়ের র*ক্ত মাথায় উঠে যায়। মেঘকে কাঁদতে দেখলে আবিরের হৃদয়ে আঘাত লাগে। এমনিতেই মেঘ আবেগি, হুটহাট কান্না করে। তারউপর কেউ ইচ্ছেকৃত কাঁদালে আবিরের খুব রা*গ হয়।

স্টেজ থেকে আরিফ ডাকছে। তানভির চলে গেছে। আবির মেঘকে নিয়ে একটু পরে গেছে। রাকিবের বাসার লোক, আসিফদের বাসার সকলে, আবির, মেঘ, তানভির সবাইকে নিয়ে ছবি তুলেছে৷ ছবি তুলা শেষে তানভির রয়ে গেছে। জান্নাতের বিয়ে উপলক্ষে আনা স্বর্ণের গলার হার টা আবির মেঘকে দিয়েই দিয়েছে। তারপর সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পরেছে।

আসার সময়ও সেই মহিলা মেঘকে জরিয়ে ধরে কান্না করেছেন। জোর করে দুহাজার টাকা দিয়ে, মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন।

প্রতি সপ্তাহে বন্ধুরা মিলে যেখানে আড্ডা দেয় আজ মেঘকে নিয়ে আবির সেই জায়গাতেই এসেছে। কিছুক্ষণ আগেই সন্ধ্যে নেমেছে। দুটা চেয়ার সাইডে রেখে মেঘকে বসিয়ে দোকান থেকে একটা আইসক্রিম এনে মেঘকে দিল।

মেঘ ধীর কন্ঠে বলল,

আমি আইসক্রিম খাবো না। আমাকে বলুন ওনি কে? আমাদের সাথে ওনার কি সম্পর্ক? আর ওনি বার বার কাঁদিছিলেন কেন?

আবির ভারী কন্ঠে বলল,
“বললাম তো সব বলবো।৷ আগে তুই আইসক্রিম টা খা।”

মেঘ আইসক্রিম খাচ্ছে ঠিকই কিন্তু তার পূর্ণ মনোযোগ আবির ভাইয়ের চোখে মুখে। মাথায় থাকা প্রশ্নের ভিড়ে আইসক্রিম টাও ঠিকমতো খেতে পারছে না৷ কিন্তু আবির ভাই সামনে বসে থাকাতে বাধ্য হয়ে খেতে হচ্ছে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here