#অর্ধ_নক্ষত্র ।১৫।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati
মেহরা আরশমান থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বলে উঠলো,”আজব এক সপ্তাহ’র মধ্যে বিয়ে হবে মানে”
আরশমান আর বলতে দিলো না মেহরাকে, তাকে থামিয়ে নিজেই বলল,”হ্যাঁ শশুর বাবার টিকেট রেডি পরশু চলে আসবে। আর সে আসলেই আমাদের বিয়ের তোড়জোড় শুরু হবে।”
মেহরার ভিতরে তুলুম ঝড়ের প্রকোপ চলছে।সবশেষে দিনটি চলে এলো।সে তো এইদিনটি শুধুই সাফওয়ান এর সঙ্গে নিজেকে কল্পনা করে এসেছে এখন কিনা সাফওয়ান এর স্থানে আরশমান।দম বন্ধ হয়ে আসে মেহরার।আরশমান মেহরার চোখ-মুখের দিকে চেয়ে বুঝে যায় মেহরার মনের অবস্থা।আরশমান পাশ থেকে পানির গ্লাস নিয়ে মেহরার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,”এই দিনটি একদিন না একদিন এসেই পড়তো।মেহরা আপনি আমাকে না চাইলেও,আমি তো আপনাকে বড্ডো চাই।ঘুম থেকে উঠেই এই মেহরার মায়াবী মুখখানা,হঠাৎ করে লাজে ঢাকা সেই মুখখানা,আমার উপর রেগে তার রক্তিম মুখখানা নিজের খুব কাছে রেখেই দেখতে চাই।আমার ঘর জুড়ে মেহরার অস্তিত্ব চাই।খান বাড়ি ময় গায়ে শাড়ি জড়িয়ে আমার প্রাণ ঘুরে বেড়াবে আমি মুগ্ধ নয়নে তাকে দেখতে চাই।”
মেহরা তড়িৎ গতিতে আরশমানের দিকে চায়,আরশমানের শার্টের করলার টেনে তাকে মুখোমুখি এনে বলে উঠে,”কী বলছেন এইসব আপনি নিজেও জানেন?কার থেকে এইসব শুনে এসে আমাকে বলছেন?”
আরশমান বিস্মিত কণ্ঠে বলে,”নিজের মনের কথা ব্যক্ত করেছি,কেনো কারো থেকে শুনে এসে বলবো,অন্য কারো মুখ দিয়ে বের হওয়া কথা আমি কেনো আমার প্রাণ কে বলবো!”
মেহরা চেঁচিয়ে বলল,”করেছেন,এইসব আমাকে এর আগেও একজন বলেছিলো।কোথায় সে দেখলো না তো নিজের মায়াবিনী কে।ছেড়ে চলে গেলো।কেনো নিজেকে ওই ন’র’পি’চা’শ’দে’র থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারল না,আমার জীবন টা এমন নরক বানিয়ে গেলো কেনো?আমাকে আর নেক্সট টাইম এইসব বলবেন না আরশমান।আমার একদম সহ্য হয় না এইসব কথা।পুরুষ নারীকে বলেই গেলো ভালোবাসি তারপর কী করলো ওই নারীকে নরকের আগুনে পুড়িয়ে ছেড়ে চলে গেলো।”,বলে ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দিলো আরশমানকে।
আরশমান বুঝতে পারলো তার মতো হয়তো সাফওয়ান’ও এইভাবেই তার মনের কথা ব্যক্ত করেছিল মেহরার নিকট।আচ্ছা তার সঙ্গে সাফওয়ান এর ব্যক্ত কথা,স্বভাব এত মিলে যায় কেনো?সাফওয়ান এর ভুত তার ঘাড়ে চেপেছে নাকি।
এইসব ভাবনা থেকে বেরিয়ে আরশমান নিজেই নিজের মাথায় মৃদু ধাপ্পর দিয়ে বিড়বিড় করলো,”আরেহ ভুত কোথা থেকে আসবে আবার!”
আরশমান হাত বাড়িয়ে মেহরাকে আগলে নিলো নিজের বুকের মাঝে।মেহরা ছোটাছুটি করছে।আরশমান ছাড়লো না,আরশমান অনুভব করলো মেয়েটার গায়ে পুনরায় জ্বর এর আগমন ঘটছে।বুঝে উঠলো এর কারণেই হয়তো সাফওয়ান কে নিয়ে এমন কথন আওড়াচ্ছে সে।
আরশমান মেহরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো বলল,”রেগে যাবেন না মেহরা।এই আরশমান এর এত বড় সাহস হয়ে যায়নি যে তার প্রাণকে সে কষ্ট দিবে।আমি কখনোই আপনাকে এক ছিটেফোঁটা কষ্ট দিব না মেহরা,নরকের আগুনে পুরা তো দূরের কথা।”
মেহরা ফোঁপাচ্ছে যেকোনো সময় কেঁদে ফেলবে।এই শক্ত ব্যক্তিত্বের মেয়েটা কেনো বারবার ভালোবাসা নামক কথন গুলো মনে পড়লে ভেঙে পড়ে।কেনো দুমড়ে মুচড়ে যায়।
আরশমান সেন্টার টেবিলের উপর থেকে এক হাতে ওষুধ নিয়ে মেহরার মুখের সামনে ধরে বলে,”ওষুধ খেতে হবে হা করুন।”
“এইভাবে আমাকে ধরে রাখলে আমি খাবো কী করে ছাড়ুন আমাকে।কেনো বার বার আমাকে এইভাবে আগলে নেন।আমি এখনও পরনারী।আমাকে ছোঁবেন না।পাপ হবে আপনার।”
আরশমান হাঁসলো বলল,”এই নারী আমার মন জুড়ে আছে।আমার প্রাণশক্তি সে, তাকে আগলে তো আমিই নিবো।আর রইলো পরনারী,আপনি তো প্রথম থেকেই আমার পর কখন হলেন।”
“ছাড়ুন আমাকে।”
আরশমান হো হো করে হেঁসে উঠল।মেহরা কে ছেড়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে দিলো।অতঃপর মায়া কে বারকয়েক ডাকলো ‘মা’ বলে।মায়া শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে ঘরে এলো।বলল,”জি বাবা বলো।”
“মা আমার যেতে হবে এখন।”,বলে থেমে মেহরার দিকে চেয়ে বলে,”আর মা ওর জ্বর আবার আসছে,ওকে ঔষধ খাইয়ে দিয়েছি।হুট করেই কেমন উল্টো পাল্টা কথা বলছে।”
মেহরা তেঁতে ওঠে বলে,”এই উল্টো পাল্টা বলছি মানে? আমি কি পা গ ল নাকি যে উল্টো পাল্টা বলবো?”
আরশমান দাড়িয়ে যায় বলে,”মা এইবার এই মেয়ে কে আপনি শামলান।এই তো যেমন করে তেঁতে ওঠে মনে হয় আস্ত খেয়ে ফেলবে আমায়।”
মেহরা উঠে দাড়ায় আরশমান এর করলার টেনে বলে,”আস্ত খাবো না আস্ত গেড়ে রেখে দিবো।”
মায়া দ্রুত মেহরাকে আরশমান এর থেকে ছাড়িয়ে পাশে এনে বলে,”এই মেয়ে কী করছিস?”
“উফ ভালো লাগছে না মা ছাড়ো।”
আরশমান এর ফোন বেজে ওঠে।ফোন রিসিভ করে কানের কাছে নিতেই ঐপাশ থেকে ভেসে আসে অনর্গল কিছু কথা।সম্পূর্ণ কথা শোনা শেষে আরশমান গম্ভীর কণ্ঠে বলে,”বলেছি তো আমি আসছি।আমি না আসা অব্দি তোরা ওকে চা নাস্তার ব্যাবস্থা খাওয়া।”
ঐপাশ থেকে ভেসে এলো,”ভাই চা নাস্তা খাইয়েছি তো।”
আরশমান বিরক্ত হয়ে বলে,”তাহলে ওকে বিরিয়ানি আর রোস্ট খাওয়ানোর ব্যবস্থা কর।”,বলে ফোন টা কানের কাছ থেকে সরিয়ে আনলো,আরশমান মেহরার দিকে চাইলো হেঁসে বলল,”বউ এখন একদম আমাকে আটকাবে না।আমার এখন যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে।”
মেহরা আসে পাশে তাকিয়ে কিছু খোঁজার চেষ্টা করলো ,বিছানার পাশে থাকা ফুলের টবে চোখ আটকে জেতে তার দিকে এগিয়ে যায়,দুই হাতে তা উঠিয়ে আরশমান এর দিকে ধরে বলে,”তোকে আটকেছে কে?এইবার তোর মাথা ফাটিয়ে তোকে একেবারে মেরে ফেলবো আরশমাইন্না।”
আরশমান একটু একটু করে পিছিয়ে গেলো দরজার সম্মুখে এসে বলল,”আমি মরলে তুমি বিধবা হবে প্রাণ,রেখে দাও ঐটা।”,বলে এক ভো দৌড়ে ফ্লাটের দরজা খুলে দ্রুত লিফটে উঠে পড়ে।
মেহরা টবটি বিছানার এক পাশে রেখে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে বলে,”আপদ গেসে।মা শুননা আমার মাথা অনেক যন্ত্রণা করছে একটু চুলে হাত বুলিয়ে দাও না।”
মায়া হাঁসলো এগিয়ে গেলো।মেয়ের মাথা নিজের কোলে নিয়ে চুলের ভাঁজে হাত ডুবিয়ে দিলো।
.
জাহরা নিজের কেবিনে বসে আছে।আসার পর মুহূর্ত থেকে ফাইজ এর সাথে তার একবারও দেখা হয়নি।
“ফাইজ এর ঝাড়ু।”,মিষ্টি কণ্ঠে কথাটি শ্রবনেন্দ্রিয়ে পৌঁছাতে জাহরা দরজার পানে চাইলো।ধূসর দাড়িয়ে আছে পরনে তার আকাশী রঙ্গা একটি হাসপাতালের পোশাক।জাহরা উঠে ধূসরের দিকে অগ্রসর হয়।হঠাৎ ধূসরের পিছনে এক মহিলা এসে ধূসর কে নিজের কোলে নিয়ে বলে,”কোথায় তোমার ফাইজ এর ঝাড়ু।”
ধূসর হাতের ইশারায় জাহরা কে দেখালো। ধূসরের ইশারা অনুসরণ করে তিনি চাইলেন জাহরার দিকে সঙ্গে সঙ্গে তার ঠোঁটের কোণে হাঁসির রেখা ফুটে উঠল ।অগ্রসর হলো জাহরার দিকে,সম্মুখে এসে দাড়িয়ে বলল,”আমি ফাইজ এর মা।তুমি তাহলে আমার ফাইজ এর জাহরা।”
জাহরার গাল দুটো গরম হয়ে এলো,কী বলছে এইসব ফাইজ এর মা।
ধূসর হেঁসে বলল,”হম মামনি এই হচ্ছে ফাইজ এর ঝাড়ু।আর ধুসরের আপা।”
ফাইজ এর মা বিস্তর হাঁসলো।পুনরায় বলল,”কেমন আছো জাহরা?আর শুনলাম তুমি নাকি আমার ফাইজ এর জাহরা ছাড়াও আরশমান এর শালীকা।”
জাহরা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল।তার মুখ দিয়ে কথা বেরিয়ে আসছে না।ফাইজ এর মা জাহরার এক হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিলো নিজেও একটি চেয়ার টেনে মুখোমুখি বসলো। ধূসর কে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বলল,”আচ্ছা জাহরা মা তোমার আর ফাইজ এর মধ্যে কিছু চলছে? চললে আমাকে বলে ফেলো মা,আমি তোমায় দ্রুত আমার বাড়ির বউ করে নিয়ে যেতে চাই।আমার ছেলেটা না বড্ডো পাগলা আমার কথা শুনতেই চায় না।বিয়ের কথা বললেই এড়িয়ে যায়। ও তোমার কথাও আমার কাছে লুকিয়েছে।”
“কিসব বলছো মা।”, দরজার সম্মুখে দাড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে থমথমে গলায় কথাটি বলল ফাইজ।
ফাইজ এর মা ছেলের মত ভ্রু কুচকালো বলল,”ঠিকই তো বললাম এই হাসপাতালে আসার পর কয়েকজনের মুখে শুনেছি ডক্টর ফাইজ এর সঙ্গে ডক্টর জাহরার কোনো না কোনো সম্পর্ক রয়েছে।শুনার পর ভালোই লাগলো,খারাপ লাগেনি আমার।শেষমেশ আমার ছেলে কোনো মেয়েকে কপাল করে পেয়েছে।আর আমি বারণ করলাম না আমি তো বরং বললাম জাহরা যেনো দ্রুত আমার বাড়ির বউ হয়ে আসে।”
ফাইজ কণ্ঠে বিরক্তির রেশ টেনে বলল,”মা তেমন কিছুই নেই জাহরা আর আমার মাঝে।তুমি এইসব বাদ দাও উঠে আসো।চাচা গাড়ি থামিয়ে রেখেছে বাড়ি যাও।”,বলে থেমে গেলো জাহরার দিকে চেয়ে বলল,”আমার মায়ের হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি জাহরা।”
জাহরা কী বলবে সে নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না।ফাইজ এর মা জাহরার দিকে চেয়ে বলল,”আমার কথায় কষ্ট পেয়েছ জাহরা মা?”
জাহরা মাথা নাড়িয়ে নাহ বলল।ফাইজ বলে উঠলো,”এই তুমি কিছু মনে করনি আমার মায়ের কথা?তুমি কি আমার বউ হতে রাজি হয়ে গেলে নাকি?”
জাহরা বলে উঠলো,”একদম নাহ।”
ফাইজ এর মা বলল,”তাহলে তুমি আমার কথায় কষ্ট পেয়েছ বুঝেছি আমি।”
জাহরা ফ্যালফ্যাল করে চাইলো ফাইজ এ মায়ের দিকে বলল,”প্লিজ আন্টি আমার অবস্থা জিলাপির প্যাঁচের মত করবেন না,আমি সত্যি একটুও কষ্ট পাইনি।”
ফাইজ এর মা খুশিতে দাড়িয়ে পড়লো জাহরার থুতনিতে হাত রেখে বলল,”তাহলে তুমিই আমার ছেলের বউ হতে যাচ্ছ।”
ফাইজ,জাহরা এক সঙ্গে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,”জীবনেও না।”
ফাইজ এর মা বলল,”আমি তো রাজি এই জীবনেই তোদের বিয়ে দিবো।”,বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে পড়ল।ফাইজ তার মার পিছন পিছন ছুটলো।
জাহরা থম মেরে দাড়িয়ে রইলো।ধূসর এগিয়ে এসে জাহরার হাত টেনে বলল,”মামনি খুব সিরিয়াস মুডে আছে ফাইজ এর ঝাড়ু।”
#চলবে।
আস করি ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সকলে।