#অর্ধ_নক্ষত্র ।৩৪।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati
আরশমান মেহরাকে ছেড়ে দিয়ে বিরক্তি মাখা কন্ঠে বলে,”দিলে তো রোমান্টিক মুডের তেরোটা বাজিয়ে।”
আরুই মিটমিট করে হাঁসলো ধীর পায়ে ঘরে প্রবেশ করলো।বলল,”আরেহ ভাই রাত ভোরে রোম্যান্টিক টাইম স্পেন্ড করেছিস,এইবার বউটাকে ছাড়।”
“আচ্ছা আপু ইমান ভাই কোথায়?এই সকাল সকাল তো ইমান ভাই তোকে ছাড়ে না।কোথায় ইমান ভাই?”
দরজার সম্মুখ থেকে ঘুম জড়ানো গলায় ভেসে আসে,”আরুই কোথায় তুমি?কত বার বলেছি যতক্ষণ না আমার ঘুম হচ্ছে তুমি আমাকে ছেড়ে উঠবে না।”
আরুই বিষম খেলো দরজার পানে চেয়ে দেখলো ইমান ঘুম ঘুম চোখে চেয়ে আছে তার দিকে। আরশমান খিলখিল করে হেঁসে বলে,”যাও আপু যাও তোমার জামাইর কাছে যাও।”
আরুই বিড়বিড় করে,”কুমিরের বাচ্চা আমার মান সম্মান নিয়ে সব জায়গায় টানাটানি করে!”,বলে আরুই এগিয়ে গেলো ইমান এর দিকে।ইমান আগলে নিলো আরুইকে।আরুইকে নিয়ে নিজেদের ঘরের দিকে হাঁটা ধরলো,তার ঘুম জড়ানো কণ্ঠেই বলল,”একা একা এত বেশি হাঁটাহাঁটি করো না গো আরুই সোনা।যদি পড়ে যাও তখন কী হবে বলো তো?”
..
মেহরা থম মেরে দাড়িয়ে রইলো, কী হলো এইটা? আরশমান তোয়ালে হাতে নিয়ে মেহরার উদ্দেশ্যে বলে,”এইযে পুলিশ বউ একটু অপেক্ষা করুন আমার জন্য।আমি তৈরি হয়ে আসছি।”
মেহরা ঘাড় ফিরিয়ে আরশমান এর দিকে চাইলো।তার কন্ঠ দিয়ে কোনো কথাই যেনো বের হচ্ছে না।আরশমান চলে গেলো ওয়াশরুমে।মেহরা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে ফ্লোরের এক কোণায় রাখা তার ব্যাগের দিকে এগিয়ে গেলো,হাঁটু ভাঁজ করে গোল হয়ে বসে পড়ল ফ্লোরে।ব্যাগ থেকে নিজের জামা কাপড় গুলো এক এক করে বের করলো।অতঃপর আরশমানের আলমারির দিকে নজর দিলো জামা কাপড় গুলো নিয়ে অগ্রসর হলো আলমারির দিকে।আলমারির দরজা খুলতেই মেহরা অবাক হলো,আলমারির এক পাশ পুরোই ফাঁকা।ফাঁকা জায়গাটিতে শুধু মাত্র কয়েকটি গয়নার বক্স।মেহরা গয়নার বক্স গুলো সরিয়ে,এক এক করে রেখে দিলো নিজের জামা কাপড়।হঠাৎ তার চোখে পড়ল,জামা কাপড়ের ভাঁজে থাকা ছবির ফ্রেম।মেহরা ছবির ফ্রেমটি ভাঁজের থেকে বের করে নিলো চাপা নিঃশ্বাস ছাড়লো সে।তাকিয়ে থাকলো ফ্রেমটির দিকে।
..
আরশমান বেরিয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে চুলের পানি তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে নজর দিল আলমারির সামনে স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকা মেহরার পানে,সে খেয়াল করলো মেহরার হাতের ছবির ফ্রেমটি।আরশমান অগ্রসর হলো মেহরার দিকে।মেহরার সম্মুখে এসে দাড়িয়ে বলল,”কী দেখছেন মেহরা?”
মেহরা ত্রস্ত হলো ছবির ফ্রেমটি উল্টে জামা কাপড়ের ভাঁজে রেখে দিলো ফিরে চাইলো আরশমান এর দিকে, বলল,”তেমন কিছু না,নিজের জামা কাপড় গুলো আপনার আলমারিতে গুছিয়ে রাখছিলাম আরকি।এই পাশটা ফাঁকা ছিলো তাই রেখেছি।আপনার কয়েকটা গয়নার বক্স ছিলো তা সরিয়ে আপনার শার্ট যেই শাড়িতে রাখা সেইখানে রেখেছি।”
আরশমান চেয়ে রইলো মেহরার অস্থির মুখখানায়।হেঁসে ফেললো সে।বলল,”আমি দেখেছি ফ্রেমটা,এমন অস্থির কেন হয়ে যান মেহরা?”,বলে আরশমান কাপড়ের ভাঁজ থেকে ফ্রেমটি নিলো।ফ্রেমটিতে মেহরা ও সাফওয়ান এর ভার্সিটি জীবনের একটি ছবি,দুজন দুজনার হাত ধরে একে অপরের দিকে চেয়ে আছে।
আরশমান দেখলো ছবিটি।মেহরা আমতা আমতা করে বলে,”আমার আর সাফু এই মানে সাফওয়ান এর ছবি।”
আরশমান এক হাতে ফ্রেমটি ধরে ওপর হাতে মেহরার কোমড় জড়িয়ে ধরলো নিজের নিকট নিয়ে মেহরাকে।মেহরার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো।মেহরা হাসফাঁস করে বলে,”ছাড়ুন আরশমান।”
আরশমান মেহরার এই কথনটি এড়িয়ে বলে,”ছবিটি কিন্তু সুন্দর মেহরা।দেখুন আপনাকে কী রূপসী লাগছে এই ছবিটিতে।”,বলে আরশমান চাইলো মেহরার মুখ পানে।মেহরা শুকনো ঢোক গিললো,সে তো আরও আগেই চেয়ে আছে আরশমান এর পানে।আরশমান ক্ষীণ হেঁসে বলে,”আমি সাফওয়ান এর সঙ্গে আপনাকে আগে দেখলে রেগে যেতাম ঠিকই কিন্তু যখন জেনেছি সে কত টা ভালোবেসেছে আপনাকে তারপর থেকে না রাগ হয় না ওর প্রতি।”
মেহরা ছোট্ট করে বলল,”ওহ।”
“কিন্তু মেহরা বাবার কথায় আমাকে বিয়ে করেছেন ঠিকই।এখন কী আপনি সাফওয়ান কে আকড়ে ধরে রাখবেন?আমাকে একটিবার সুযোগ করে দিবেন না আপনার হওয়ার?”
মেহরার কণ্ঠে সকল কথা যেনো আটকে আসলো।তার জীবনটাই যেনো এলোমেলো হয়ে গিয়েছে।কী করবে সে?সে নিজেও হয়তো জানে না।কী বলবে সে?মেহরা থেমে থেমে বলল,”আমার জীবন টা কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো আরশমান।গুছিয়ে আসতে পারছি না আমি।”
আরশমান ফ্রেমটি রেখে দিলো কাপড়ের ভাঁজে।এইবার দুই হাতে নিজের বক্ষের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো মেহরা কে।জড়িয়ে নিলো তার প্রাণ কে।আরশমান অধর ছোঁয়ালো মেহরার চুলের ভাঁজে বলল,”আপনি আমাকে সুযোগ দিন মেহরা,আপনার এই অগোছালো জীবন গুছিয়ে নিয়ে আসব আমি।ওয়াদা করছি আপনাকে।আর রইলো সাফওয়ান,আগেও বলেছি ভুলতে হবে না তাকে।এখনও বলছি রেখে দিন তার স্মৃতি গুলো মনের এক গহীন কোণে শুধু বাকিটা জুড়ে জায়গা দিয়ে দিন আমায়।”,বলে থামলো আরশমান।পুনরায় বলল,”সুযোগ দিবেন না মেহরা?”
মেহরা মাথা তুললো সে এতক্ষন নিজের মাথা আবেশে রেখে দিয়েছিল আরশমান এর বক্ষের বা দিকে।মেহরা ক্ষীণ কণ্ঠে বলে,”আমি কী বলবো বুঝতে পারছি না আরশমান।”
আরশমান হাঁসলো বলল,”কিচ্ছু বলতে হবে না বুঝে গিয়েছি আমি।”,বলে ছেড়ে দিলো মেহরাকে।হাত বাড়িয়ে মেহরার শার্টের করলার ঠিক করে দিলো আরশমান।
..
জানালা ভেদ করে সূর্যের আলোর ছটা এসে পড়ছে জুনায়নার মুখখানায়।শান্তিতে ঘুমোচ্ছে সে।জুনায়নার মুখখানায় চেয়ে আছে প্রশান্ত।প্রশান্তর পরনে ফর্মাল ড্রেসাপ।সে অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে।প্রশান্ত এইবার উঠলো,জুনায়নার নিকট গিয়ে বসলো,ডাকলো জুনায়নারকে ক্ষীণ কণ্ঠে।জুনায়না টিপটিপ করে চোখ খুললো অমায়িক হাঁসলো দুই হাতে জড়িয়ে ধরলো প্রশান্তর গলা বলল,”শুভ সকাল জান।”
“শুভ সকাল বউ।”
“একটা গুডমর্নিং কিসি দাও প্রশান্ত বাবু।”
প্রশান্ত হাঁসলো,জুনায়নার কপালে অধর ছুঁয়ে দিয়ে সরে এসে বলল,”দ্রুত তৈরি হ জুনায়না।দেরী হয়ে গিয়েছে কিন্তু।”
জুনায়না বিছানা ছাড়লো বলল,”ওয়েট মাই জান।এখনই রেডি হচ্ছি।আগে গোসল করে আসি।অপেক্ষা করো।”
জুনায়না দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো,সে সাথে কিছুই নিলো না।প্রশান্ত হাঁসলো উচ্চ কণ্ঠে বলল,”জুনায়না তোর সব কিছুই ভিতরেই আছে।দেখে নিস।আমি রেখে এসেছি।”
জুনায়নার হাঁসির শব্দ ভেসে এলো ও ভেসে এলো,”লাভ ইউ প্রশান্ত বাবু।”
..
গাড়ি চলছে নিজ গন্তব্যের দিকে।কয়েকটি গলি পেরিয়ে এসেছে আকাশ।পিছনের সিটে বসে আছে মেহরা আরশমান।মেহরা চেয়ে চেয়ে দেখছে আশপাশ। সে গিয়েছিল থানায়,তাকে নতুন কিছু কেস ফাইল হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।মেহরা ফাইল গুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করে পরবর্তী কিছু সময় পর থানা থেকে বেরিয়ে আসে।
মেহরা এখন আরশনান এর সঙ্গে যাচ্ছে অন্য কোথাও।যেই গলি দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে ,গলিতে দুই শাড়িতে শুধুই তিন থেকে চার তলার মত একেকটি পূরতন ভবন।
একটি পুরোনো বাড়ির সম্মুখে এসে গাড়ি থামলো।মেহরা আরশমান নামলো গাড়ি থেকে ততক্ষণে আরশমান এর গাড়ির পিছনে এসে থামলো প্রশান্তর গাড়ি।জুনায়না নেমে এলো গাড়ি থেকে। প্রশান্তর গাড়ি নিয়ে এসেছে সে।জুনায়না হেঁসে বলল,”হেই কাপোলস।”
মেহরা হাঁসলো বলল,”নো কাপোলস,এখন অ্যাকশান টাইম জুনায়না।”
জুনায়না হাঁসলো বলল,”এত চাপ নিস না তোর জামাই আবার আমাদের থেকেও ভালো অ্যাকশান পারে মেহরা।”
আরশমান পকেট থেকে মাস্ক বের করে পড়ে নিয়েছে।মেহরা ঘাড় ঘুরিয়ে চাইলো আরশমান এর দিকে।আরশমান চোখ মারল মেহরাকে।মেহরা তার নজর দ্রুত সরিয়ে নিলো।আরশমান পকেট থেকে আরও দুইটি মাস্ক বের করে এগিয়ে দিলো মেহরা,জুনায়নার দিকে।
.
বাড়িটির ভিতরে প্রবেশ করলো তিনজন।ম’দে’র গন্ধে গা গুলিয়ে আসছে তিনজনেরই।জুনায়না হালকা কেশে বলে,”হারামী গুলো এইসব খায় কী করে?”
আরশমান হেঁসে বলে,”তুই একবার ট্রাই করে দেখিস কেনো খায়।খেলেই কারণ খুঁজে পাবি।”
জুনায়না দাঁতে দাঁত পিষে বলে,”শা’লা আমি কেনো খেতে যাবো?শুন এক বোতল কিনে এনে তোকে খাইয়ে এক্সপেরিমেন্ট করবো।তারপর তুই খেয়ে বলবি কেমন খেতে আর কেনো খায় এরা এইসব”
মেহরা হাঁটা থামিয়ে দিলো কোমড়ে দুই হাত রেখে পিছন ফিরে বলল,”দুইজন কী ফিসফিস শুরু করেছ বলো তো?”
আরশমান,জুনায়না এক সঙ্গে বলে,”কুচ নাই ম্যাম ,একটু আলোচনা আরকি।আপ আগে জাইয়ে হাম পিছে পিছে আতে হে।”
মেহরা বিরক্ত হলো ফিরে আবার হাঁটা ধরলো সামনের দিকে।এইবার দুজনেই চুপচাপ পিছন পিছন গেলো মেহরার।তিনজন এক সঙ্গে দুই তলায় কোণায় থাকা রুমটিতে প্রবেশ করলো ধীর পায়ে।রুমটিতে একেক জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে আছে কয়েকজন পুরুষ।সকলের ঠোঁটের কোণে ছিলো এক অন্য রকম হাঁসি ,কিন্তু তাদের ঠোঁটের কোণের হাঁসি উবে গেল যখন তাদের নজর কারলো মেহরা, আরশমান, জুনায়না।
সকলে হুড়মুড়িয়ে উঠে দাড়ালো।মেহরা,জুনায়না বন্দুক তাক করলো সকলের দিকে। আরশমান বুকে হাত গুজে দাড়িয়ে আশপাশ টায় চোখ বুলালো।
লোক গুলোর মধ্যে একজন এগিয়ে আসলো বলল,”কারা আপনারা?কী করছেন এইখানে?কী করে আসলেন এইখানে?”
জুনায়না বলল,”আরেহ ধীরে,আমরা পুলিশরাও তো এত স্পিডে প্রশ্ন করিনা যত স্পিডে প্রশ্ন আপনি করছেন।”
“এইভাবে ঢুকে এসেছেন আবার কথা বলছেন।আপনারা এইখানে কেনো এসেছেন আগে বলুন?”
মেহরা বুকে হাত গুজে ভরাট কণ্ঠে বলে,”আমরা শুধু শুধু তো আর আসিনি।পুলিশ যেই জায়গায় সন্দেহের গন্ধ পায় সেখানেই কিন্তু আসে।”
“কোন থানা থেকে এসেছেন আপনারা?কীসের সন্দেহ?”
“আমরা এইখানের তল্লাশি নিতে চাই।”
“আপনি একজন সাধারণ ইন্সপেক্টর আপনি কি করে তল্লাশি নিবেন ম্যাম।”,পিছন থেকে আরও একজন পুরুষ দাড়ালো তার ভরাট কণ্ঠে কথাটি আওড়ালো সে।
“জোর করে।”,বলে মেহরা তার সামনে দাড়িয়ে থাকা
পুরুষটিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।সকলে সঙ্গে সঙ্গে তেঁতে উঠলো।একজন হাত উঠিয়ে এগিয়ে আসলো মেহরার দিকে।মেহরা,জুনায়না একসঙ্গে ব’ন্দু’ক দিয়ে পুরুষটির হাতে স্বজোরে বা’রি বসিয়ে দেয়।পুরুষটি হাত চেপে ধরে তার।
#চলবে।