#অর্ধ_নক্ষত্র ।৩৫।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati
“জোর করে।”,বলে মেহরা তার সামনে দাড়িয়ে থাকা
পুরুষটিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।সকলে সঙ্গে সঙ্গে তেঁতে উঠলো।একজন হাত উঠিয়ে এগিয়ে আসলো মেহরার দিকে।মেহরা,জুনায়না একসঙ্গে ব’ন্দু’ক দিয়ে পুরুষটির হাতে স্বজোরে বা’রি বসিয়ে দেয়।পুরুষটি হাত চেপে ধরে তার।
এরমধ্যে এক প্রকার ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায় সকলের মধ্যে।ধস্তাধস্তির মাঝেই সংখ্যা বেড়ে যায় ওপর পক্ষের,দরজা দিয়ে হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করে আরও কয়েকজন পুরুষ।আরশমান,জুনায়না সামলে নিচ্ছে সকলকে।মেহরা তাদের মাঝ থেকে সরে গিয়ে শুরু করে তল্লাশি,
ড্রায়ার খুলতেই পেয়ে যায় ই’য়া’বার একাধিক প্যাকেট,টেবিলের ওপর পাশ থেকে পেয়ে যায় বিদেশী ম’দে’র বোতল ও কয়েকধরণের অস্ত্র।মেহরা জুনায়নার দিকে চেয়ে বলে,”থানায় ফোন করছি আমি।”
মেহরা পকেট থেকে ফোন বের করে ফোন করলো থানায়।ফোন রিসিভ করা হলে মেহরা বলে,”**নম্বর গলির ২৩ নম্বর বাড়িতে ই’য়াবা সহ , ম’দে’র বোতল,ও অ’স্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।এইখানে একপ্রকার মারামারি শুরু হয়েছে, পরিস্থিতি খুবই বাজে থানা থেকে পুলিশ পাঠান আসাদ।”,বলে মেহরা ফোন কাটলো।
আরশমান সরে আসলো।মেহরার পাশে এসে দাড়িয়ে মাস্ক খুলে বলল,”মেহরা পুলিশ ফোর্স আসতে কতক্ষণ লাগবে?”
“কুড়ি মিনিটের মত।”
“পুলিশরা কী কচ্ছপে চড়ে আসবে যে এতক্ষন সময় লাগবে তাদের?”
ধস্তাধস্তি মা’রামা’রি থেমে গিয়েছে,একেকজন একেক কোণায় তাদের ব্যথিত দেহ ছেড়ে দিয়ে এক প্রকার পড়ে আছে।জুনায়না কোমড়ে দুই হাত রেখে মুখের মাস্ক খুলে বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে ,সে বলে ওঠে,”এইখানে নিশ্বাস ও ঠিক করে নেয়া যাচ্ছে না ভাই।মনে হচ্ছে বাতাস কেও মদ খাইয়ে দিয়েছে।কী গন্ধ ভাই।”
লোকগুলোর মধ্যে কয়েকজন বিস্মিত নয়নে চেয়ে আছে আরশমান এর মুখের দিকে।আরশমান ভরাট কণ্ঠে বলে,”এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?”
আরশমানকে উত্তর দেয়ার মত তাদের শক্তি নেই তারা চেয়েও পারছে না উত্তর করতে।জুনায়না হাঁটু মুড়ে বসে বলে,”তোদের স্যার আর কতদিন বাঁচাবে তোদের?এইবার দেখ একে একে তোদের কী হাল করি।”
আরশমান নজর সরিয়ে চায় মেহরার দিকে।মেহরা আরশমান এর হাতের দিকে চেয়ে থেকে বলে,”আপনি ঠিক আছেন আরশমান?”
আরশমান হাঁসলো চোখ মেরে বলল,” এইটুকুতে আমার কিছু হয় না মেহরা।”,বলে আশপাশ আবার চোখ বুলালো আরশমান অতঃপর বলল,”আর কেউ আছে তোদের?আরও আসবে কেউ?আমি থাকতে থাকতে আসতে বল তোদের লোকদের।”
একজন প্রতুত্তর করলো থামা থামা কণ্ঠে,”রোহান ভাই আসছে।”
সাফওয়ান এর পূর্বে রোহান ছিল এমপি পদে,এবং তারও পূর্বে এমপি পদে ছিলো রোহান এর বাবা।রোহান এর সঙ্গেই বেশি দেখা যেতো সাফওয়ানকে।আসিফ রোহান এরই ছোট ভাই।আসিফ,রোহান এর হাত ধরেই তো সাফওয়ান এর রাজনীতিতে প্রবেশ।
মেহরা ভ্রু কুঁচকে ফেললো,রোহান আসছে!বাহ দলের আসল মানুষটাই আসছে!
আরশমান এর ফোন বেজে ওঠে,পকেট থেকে ফোন বের করে স্ক্রিনের দিকে চেয়ে থেকে মেহরা ও জুনায়নাকে বলে,”আমার যেতে হবে।”,বলে চায় দুজনের দিকে পুনরায় বলে,”পাশের গলিতেই আমার লোকেরা আছে।কোনো প্রকার প্রয়োজন পড়লেই শুধু আকাশকে ফোন করবে।”
“হ্যাঁ তুই এমনিতেও এখন চলে যা আরশমান।”,কথাটি বলল জুনায়না।আরশমান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো বড় বড় কদম ফেলে বেরিয়ে গেলো সে।
জুনায়নার ফোন শব্দ করে বেজে উঠলো,জুনায়না হাসলো রিসিভ করলো না কেটে দিলো কল।মেহরার
দিকে চেয়ে বলল,”মেহরা চলে এসেছে ফোন উপর মহল থেকে।”
মেহরা হাঁসলো বলল,”এখন সব আমাদের মতোই চলবে।”
.
ভবনটির নিচে এসে জমা হলো পুলিশের গাড়ি, ম্যাজিস্ট্রেট এর গাড়ি সহ এসপির গাড়ি ও রোহান এর গাড়ি।ভবনের ভিতরে একে একে প্রবেশ করলো সকলে।মেহরা,জুনায়নার সম্মুখে গিয়ে দাড়ালো এসপি তার মুখে এক গম্ভীর্যতা।মেহরা বলে,”স্যার এই ভবনটিতে আগে থেকেই তদন্ত করা নিষেধ ছিল।কেনো নিষেধ ছিল আজ তা বুঝলাম।এখন স্যার যা যা পেলাম তবুও কী আপনি বলবেন যে এদের গ্রেফতার করা যাবে না তদন্ত বন্ধ করো?”
এসপি মুখ খুলবে তার পূর্বেই দরজার সম্মুখে এসে হাজির হলো প্রেস এর লোক।এসপি বড়ই অবাক হলো, প্রেসের লোকদের জানালো কে? এত দ্রুত প্রেস?জুনায়না ঠোঁট টিপে হাঁসলো।
এসপির কাছে প্রেসের লোকেরা এগিয়ে আসতে চাইলে মেহরা, জুনায়না বাঁধা দেয় বলে,”আপনারা অপেক্ষা করুন স্যার আপনাদের সঙ্গে কথা বলবে।”
এসপি বিস্ময়ের চরম শীর্ষে পৌঁছে গেলো।সে করতে এসেছিল কী হয়ে গেলো কী!
মেহরা,জুনায়না সফল।এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হলো আসামিদের।রোহান দূরে দাঁড়িয়ে মুখে গম্ভীর্জতা টেনে চেয়ে আছে মেহরা ও জুনায়নার পানে।মেহরা জুনায়নাকে চোখে ইশারা করে বলে,”চল বেরোতে হবে আমাদের।”
মেহরা জুনায়না ফিরে হাঁটা ধরলো,মুখোমুখি হলো রোহান এর।রোহান ক্ষীণ কণ্ঠেই বলল,”ভালো হলো না মেহরা।”
কথনটি শ্রবণ হতে মেহরার।সে থেমে গেলো,কঠিন কণ্ঠেই বলল,”এখন থেকে জা হবে সব ভালোই হবে মিস্টার রোহান।”
“আপনাদের পস্তাতে হবে খুব।”
জুনায়না স্বর ক্ষীণ রেখে রাগান্বিত কন্ঠে বলে,”কে পস্তাবে তা দেখা যাবে।”,বলে মেহরার হাত ধরে বেরিয়ে যায় জুনায়না।
..
ঘর্মাক্ত অবস্থায় বাড়ির সদর দ্বার পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো মেহরা।পুরো বাড়ি জুড়ে সকল মানুষের ব্যস্ততা।একেকজনের ব্যস্ততা একেক কাজ নিয়ে।মেহরা দেখলো সকলকে তার ঠোঁটের কোণে হাঁসি ফুটে উঠলো।আরশমান এর মা হীনা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে মেহরাকে দেখতে পেয়ে টেবিলের উপর থেকে গ্লাস ভরা পানি নিয়ে দ্রুত এগিয়ে এলো।মেহরা অবাক হলো হীনাকে এইভাবে এগিয়ে আসতে দেখে।হীনা মেহরার সম্মুখে এসে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলে,”মা তুমি পানি টা খাও আগে।এমন ঘেমে একাকার হয়ে আছো যে?”
মেহরা অবাক নয়নে চেয়ে থাকলো,ধীর হস্তে পানির গ্লাসটি নিয়ে পান করে নিলো গ্লাস ভরা পানি।হীনা শাড়ির আঁচল উঠিয়ে মেহরার কপালে লেগে থাকা ঘাম মুছে দিতে দিতে বলল,”উফ মা এত কী করেছো বলো তো?অনেক ক্লান্ত না মা?তুমি ঘরে যাও আমি লেবুর শরবত পাঠাচ্ছি।”
মেহরা মোলায়েম হাঁসলো।হীনার হাতটি নিয়ে নিলো নিজের হাতের মুঠোয় মাথা নিচু করে বলল,”এই অব্দি আপনার সঙ্গে একটুও ভালো করে কথা হয়নি মা।কিন্তু আপনি কত যত্ন করছেন আমার।”
হীনা হাঁসলো জড়িয়ে ধরলো মেহরাকে।মোলায়েম কণ্ঠে বলল,”ইশ মেয়ে এত ইতস্ত বোধ কেনো করো?আমি তোমার আরেক মা এখন থেকে।আমি আমার ছেলে মেয়েদের যেমন করে আগলে রাখি তোমাকেও আগলে রাখবো মেয়ে।”
মেহরা দুই হাতে জড়িয়ে নিলো হীরাকে বলল,”আপনি খুব ভালো মা।”
সদর দ্বার দিয়ে প্রবেশ করতে করতে শাশুরি বউমার মধ্যে এই অমায়িক দৃশ্যটি মুগ্ধ নয়নে চেয়ে দেখলো আরশমান।তার ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো হাঁসির রেখা।
হীনার চোখে পড়লো আরশমান।সে মেহরাকে ছেড়ে দিলো আরশমানকে উদ্দেশ্য করে বলল,”বাবা এসেছিস।ভালো হয়েছে।মেয়েটাকে নিয়ে ঘরে যা।ফ্রেশ হয়ে রেস্ট করে নে তোরা।”
মেহরা ফিরে চাইলো আরশমান এর পানে।লোকটার উজ্জ্বল মুখশ্রী লাল হয়ে আছে।আরশমান অগ্রসর হলো মেহরার দিকে।মেহরার পাশাপাশি এসে মেহরার হাত ধরে হাঁটা ধরলো নিজেদের ঘরের দিকে।মেহরা বিড়বিড় করলো,”যখন তখন হাত ধরবে।মানুষ মানে না লোকটা।শরম লজ্জার একটুও বালাই নেই তার মধ্যে।”
..
বাড়ির সামনের দিকে খালি জায়গায়টিতেই আজ রোসপশান এর অনুষ্ঠানের ব্যাবস্থা করা হয়েছে।প্রশান্ত, জুনায়না এসে পড়েছে।তারা দুজন ফাইজ এর সম্মুখে দাড়িয়ে আছে,ফাইজ বিরক্তি মাখা মুখশ্রী বানিয়ে অন্য দিকে চেয়ে আছে।জুনায়না বলে ওঠে,”সমস্যা কী ফাইজ?”
ফাইজ কণ্ঠে বিরক্তির রেশ টানলো বলল,”আমার কিছু ভালো লাগছে না জুনায়না বিরক্ত করিস না প্লীজ।”
প্রশান্ত এবার তার শান্ত কণ্ঠের রেশ টানলো বলল,”কেনো বিরক্ত লাগছে তোর?আমাদের বল ফাইজ।”
ফাইজ বিরক্তিতে ‘চ’ শব্দটি করে ওঠে।আচমকা কোথা থেকে দৌড়ে আসে জাহরা,ঠিক ফাইজ এর পাশে এসে থেমে যায়।ফাইজ এর হাত ধরে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,”ফাইজ ধূসরের জ্ঞান ফিরেছে।”
ফাইজ এর ঠোঁটের কোণে এক প্রশান্তির হাঁসি রেখা ফুটে উঠলো।হুট করেই ফাইজ জাহরার দুই বাহু চেপে ধরলো নরম কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,”হসপিটাল থেকে ফোন এসেছিল?কে বলেছে?”
জাহরা ফাইজ এর আঁখির দিকে চেয়ে বলে,”আমি এইখানে আসার আগে আবার গিয়েছিলাম হাসপাতাল।গিয়ে দেখলাম ধূসর রেসপন্স করছে।”
ফাইজ খুশিতে যেনো জাহরাকে জড়িয়ে ধরতে চাইলো জাহরা চোখ বড় বড় করে ফেললো ,পরমুহুর্তেই ফাইজ নিজের মধ্যে ফিরে এলো সঙ্গে সঙ্গে দূরে সরে গিয়ে বলল,”আই এম সরি।আসলে।”
জাহরা ঠিক হলো হাঁসলো বলল,”অনেক খুশি আপনি।বুঝতে পেরেছি আমি।”
ভোরের দিকে ধূসর মাথা ব্যাথার যন্ত্রণায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।তার নাশিকারন্ধ্র দিয়ে বেরিয়ে আসে অনর্গল র’ক্ত।ধূসর এর অবস্থা হতে শুরু করে ক্রিটিকাল।ফাইজ,হ্যাভেন,স্টিভ,জাহরা মিলে ধূসর কে আইসিউ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে।টানা চার ঘণ্টা চিকিৎসা চালানোর পরও ধূসরের জ্ঞান ফিরে আসার মত লক্ষণ খুঁজে পায় না কেউই।একসময় হ্যাভেন বলেন,ফাইজ আমরা যা ভাবছিলাম তা ঠিক করেই এগিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ ধূসরের অবস্থা বুঝে উঠতে পারছি না।ধূসর এর জ্ঞান না ফিরলে আমার মনে হয়না আমরা আর কিছুই করতে পারবো।ধূসরকে বাঁচানো সম্ভব না,ওর এই বিরল রোগের সঙ্গে অনেক লড়াই করেছি আমরা আর হয়ে উঠছে না।এখন সবই উপর ওয়ালার হাতে মিরাকেল হলে তো ভালো নাহয় আমারদের হাতে কিছুই নেই।তখন যেনো ফাইজ এর চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু।সে চেয়ে থাকে ধূসর এর পানে।একটা ছোট বাচ্চার প্রতি এই কয়েকদিনের টান তার,আর তার জন্যই অজান্তেই অশ্রু গড়িয়ে পড়া তা দেখলো জাহরা।
প্রশান্ত, জুনায়না হা হয়ে দেখছে দুজনকে।জুনায়না প্রশান্তর পাশ ঘেঁষে বলে,”প্রশান্ত চল আমরা ঐদিকে যায় এদের একা ছেড়ে দি।”,বলে জুনায়না নিয়ে গেলো প্রশান্তকে।
জাহরা ফাইজ এর কাঁধে হাত রেখে বলে,”আপনি চিন্তা করবেন না ফাইজ,ধূসরের জ্ঞান যখন ফিরেছে এবার ভালো কিছুই হবে।”
ফাইজ জাহরার দেয়া আশ্বাসে যেনো নিজেকে আশ্বস্ত করতে পারলো।জাহরার দিকে চেয়ে মিষ্টি করে হাঁসলো সে।এতটা নরম হয়তো ফাইজ কখনোই হয়নি।
তাদের দুজনের কথার মধ্যে ফাইজ এর নজরে পড়লো,মেহরা ও আরশমান।ফাইজ জাহরাকে চোখে ইশারা করে বলল,”ঐযে আমাদের আরেক কাপল চলে এসেছে।”
জাহরা ফিরে চাইলো মেহরা ও আরশমান দিকে।ঠোঁটের কোণে অমায়িক হাঁসির রেখা ফুটে উঠলো,এবার লেহেঙ্গা উঠিয়ে দৌড় লাগলো বোনের দিকে।ফাইজ জাহরার দৌড় দেখে বলে উঠলো,”এইযে তিরিংবিরিং করে দৌড়াচ্ছেন পড়লে তো নাজেহাল অবস্থা হবে জাহরা।”
জাহরা উচ্চ কণ্ঠে বলল,”আমি আপনার মত লুলা নাকি যে দৌড়াতে গিয়ে পড়ে যাব।”ফাইজ শুনলো
হাঁসলো।চেয়ে রইলো জাহরার পানে,মাঝে মধ্যেই এই মেয়েটিকে নিয়ে অনেক ভাবনা’ই জেগে ওঠে তার মনে।এই মেয়েটিকে নিয়ে আওড়ে ফেলে কত কথা।ফাইজ বুঝতে পারে না তার মনে এইসকল অনুভূতি গুলো কীসের?সে কী পছন্দ করতে আরম্ভ করেছে জাহরাকে?
জাহরা মেহরার সম্মুখে এসে জাপটে জড়িয়ে ধরে মেহরা কে।আরশমান অস্থির হয়ে বলে ওঠে,”আরেহ শালীকা ধীরে আমার বিলাইর বাচ্চার মত একটা বউ এমন করে চেপে ধরলে মরে যাবে তো!”
জাহরা ছেড়ে দিলো,আরশমান এর দিকে চেয়ে ফিক করে হেসে উঠলো।আরশমান জাহরার সঙ্গ দিয়ে হাঁসলো।মাঝে ভ্রু কুঁচকে মেহরা তাকিয়ে দেখলো দুলাভাই,শালীকার হাঁসি।মেহরা তিক্ত কণ্ঠে বলে,”এইসব কেমন কথা আরশমান।আমি বিলাইর
বাচ্চা কেনো হতে যাবো বলুন তো?”
আরশমান মেহরার হাতটি নিজের হাতের ভাঁজে প্রগাঢ় ভাবে নিয়ে বলল,”আপনি যেই তুলতুলে মেহরা। বিলাইর বাচ্চা গুলো এমন তুলতুলেই হয়।উফ কি যে সুন্দর,কী যে আরামদায়ক তাদের ছুঁয়ে দেখতে।”
মেহরা বড় সড় বিষম খেলো।জাহরা মেহরার মাথায় ফুঁ দিতে শুরু করলো ব্যাস্ত কণ্ঠে বলল,”আরেহ কী হয়েছে তোর?”
আরশমান ওয়েটার কে ডাকলো এক গ্লাস পানির জন্য।ওয়েটার দ্রুত পানি নিয়ে এলো,এনে মেহরার সম্মুখে ধরতেই মেহরা পানির গ্লাস নিয়ে ঢক ঢক পানি শেষ করে ফেললো।গ্লাসটি ওয়েটার এর হাতে দিয়ে বলল,”ভাই থ্যাংক ইউ ঠিক সময়ে পানি এনেছো।”
আরশমান বলে,”আরেহ আমাকে থ্যাংক ইউ বলুন।আমি বলেছিলাম ওকে পানি আনার কথা।”
মেহরা ধমক দিলো আরশমানকে বলল,”চুপ থাকুন একদম!সবসময় উল্টো পাল্টা কথা বলেন আপনি।”
জাহরা ঠোঁট টিপে হাঁসলো।
.
“আরশমান মেহরা মা কে ঐখানে দাড় করিয়ে কী করছিস?স্টেজের দিকে আয় জলদি।”,আমজাদ এর গলায় ভেসে এলো কথনটি।আরশমান ফিরে চাইলো বাবার দিকে বলল,”জি বাবা আসছি।”
আমজাদ ছেলের কোমল কণ্ঠের উত্তর পেয়ে বিড়বিড় করে,”ইশ ছেলে দেখি বউ পেয়ে ভদ্র হয়ে গেলো।”
পাশে দাঁড়িয়ে হীনা আড় চোখে চাইলো।সে শুনছে আমজাদ এর বলা কথন।সে বলল,”কেনো গো তুমি কী চাও আমার ছেলে অভদ্র থাকুক,আর আমার ছেলে অভদ্রই বা ছিলো কবে?”
আমজাদ অন্য দিকে ফিরে বলে,”হ্যাঁ ছেলে না বাপ অভদ্র।”
হীনা জোরে হেঁসে ফেললো,হাসতে হাসতে স্বামীর গায়ে ঢলে পড়লো বলল,”এত বছরে একটা সত্য কথা বলেছো গো।”
..
রিসেপশন এর অনুষ্ঠান আরম্ভ হলো।প্রশান্ত,জুনায়না দাড়িয়ে আছে পাশাপাশি।জুনায়না প্রশান্তর পাঞ্জাবি টেনে বলে,”এই আর কতক্ষণ এইভাবে দাড়িয়ে থাকবো?আমি কী সং নাকি যে আমাকে এইভাবে দাড় করিয়েছে।একেকজন আসবে দেখবে আবার হরেক রকম কথা বলবে।”
প্রশান্ত হাঁসলো বলল,”তোর ইচ্ছে করলে বস জুনায়না।”
জুনায়না হাত টানলো প্রশান্তর।নিজেও বসলো সঙ্গে প্রশান্তকেও বসালো।প্রশান্ত বলে উঠলো,”আমি দাঁড়াতাম বসালি কেনো?”
“আজব তুই দাঁড়িয়ে থাকবি তোর পা ব্যথা করবে না?আর তোর সকল ব্যথা যেনো আগে আমার অনুভব হয় প্রশান্ত।”
প্রশান্ত হাঁসলো বলল,”এত ভালোবাসা?”
“তোর কী মনে হয়?”
উত্তরে যেনো প্রশান্ত জুনায়নাকে এক অমায়িক হাঁসি ফিরিয়ে দিলো।
.
বিয়ে বাড়ি ও রিসেপশনে অনেক রকমের মানুষের আগমন ঘটে।সকলের মন মানসিকতা হয় না এক।এক এক করে আসছে মানুষ,আত্মীয় স্বজন দেখে যাচ্ছে বাড়ির দুই নতুন বউকে।এলো কয়েকজন আত্মীয় দল বেঁধে, গিফটের বক্স ধরিয়ে দিলো নতুন দুই বধূর হাতে।
দল বেঁধে আসা মহিলাদের মধ্যে একজন জুনায়নার দিকে চেয়ে বলল,”মাশাল্লাহ বউ তো দেখি চাঁদের টুকরো পেয়েছ প্রশান্ত।কপাল করে পেয়েছ বলতে হবে।”
জুনায়না হাঁসলো সে প্রতিউত্তর করলো বলল,”আমি চাঁদ নই বরং প্রশান্ত আমার জীবনের এক আলোক উজ্জ্বল চাঁদ।সে আমাকে নয় আমি তাকে কপাল করে পেয়েছি।”
মেহরা শাড়ির আচল ধরে মোচড়ামুচড়ি করছে এই মহিলা গুলো আসলেই বড্ডো নিচু মনের।এইবার কী তাকেও কী পরোক্ষভাবে কথা শুনাবে?
নাহ তেমনটি হলো না মহিলা গুলো একে অপরের সঙ্গে কথনে ব্যাস্ত হয়ে নেমে গেলো স্টেজ থেকে।
এবার এলো সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটি যার জন্য মেহরা অপেক্ষা করছিল।মাহিদ এলো,মেহরা উঠেই জড়িয়ে ধরলো বাবাকে।বাবার প্রতি এত টান তার।মাহিদ হাত বুলিয়ে দিলো মেয়ের মাথায়।বলল,”কেমন আছিস মা?”
আরশমান তাদের মধ্যেই বলে ওঠে,”আপনার আদরের মেয়ে খুব ভালো আছে বাবা।আমার মনে হয়না এই একদিনে এই বাড়িতে কোনো প্রকার কষ্ট হয়েছে তার।”
মেহরা হাঁসলো বলল,”হম বাবা এই বাড়ির মানুষ গুলো খুব ভালো।”
মাহিদ দেখলো মেয়ের হাঁসি।স্টেজে উঠ এলো মেহরার
মা।মেহরা মায়ের সঙ্গে কথা বললো।মেহরা এখন যেনো আর অসস্তি বোধ করছে না। তার মধ্যে থাকা অসস্তি অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।
.
আজ গানের পর্ব আয়োজন করেছে আরশমান।প্রথমেই গান গাইবে ফাইজ।আরশমান উঠে দাড়ালো,ডাকলো ফাইজকে।ফাইজ ঠোঁটের কোণে হাঁসি মিশিয়ে গিটার হাতে উঠে এলো স্টেজে।
#চলবে।