#আমার তুমি ২
#পর্বঃ২
#তানিশা সুলতানা
“আআপনি এখানে কেনো এসেছেন?
জীব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রিনরিনিয়ে বলে তুলতুল।
” আমি কেনো এসেছি সেটা তোকে বলতে হবে?
পকেট থেকে হাত বের করে শার্টের কলার টেনে পেছন দিকে দিয়ে দু পা এগিয়ে এসে বলে সায়ান।
তুলতুল শুকনো ঢোক গিলে পাঁচ ছয় বার লাগাতার লাথা নারিয়ে না বোঝায়।
“আআমি আসলে
তুলতুল থেমে থেমে বলতে যায়। সায়ান একদম তুলতুলের সামনে এসে দাঁড়ায়। তুলতুল চুপসে যায়। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে দুই হাতে জামা খাঁমচে ধরে দু পা পিছিয়ে যায়।
“আমার সামনে কথা বলতে আসলে স্ট্রেট কথা বলতে হবে। কোনো আসলে নকলে হবে না।আর যদি না পারিস তো বলবি না। জাস্ট চুপ করে থাকবি।
মাইন্ড ইট
তুলতুলের মুখের ওপর পরে থাকা বেবি হেয়ার গুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে মুখটা কাছাকাছি এনে বলে সায়ান।
তুলতুল আবারও পাঁচ ছয়বার মাথা হারিয়ে হ্যাঁ বোঝায়।
” গুড
তুলতুলের কয়েকটা চুল হাতের মুঠোয় নিয়ে জোরে টান দিয়ে বলে সায়ান। ব্যা*থায় “আহহহ” বলে কুঁকড়ে ওঠে তুলতুল। চোখে পানি টলমল করে আসে।
সায়ান দু পা পিছিয়ে যায়। চোখ বন্ধ করো জোরে জোরে দুটো শ্বাস টানে।
তুলতুল মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। সায়ান বাঁকা হাসে।
“দশ বার কান ধরে উঠবস কর।
খাটের ওপর আয়েশ করে বসে বলে সূচক। তুলতুল ধপ করে চোখ খুলে তাকায় সায়ানের দিকে। দুই চোখের পানিতে ভিজে আছে।
” জলদি
যেতে হবে আমায়। কেউ এসে দেখে ফেলবে।
একটা বালিশ কোলের ওপর রেখে তাতে দুই হাত ভর দিয়ে আড়মোড়া ভেঙে বলে সায়ান। তুলতুল হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে দুই কানে হাত দেয়।
“আমাকে এতো জ্বালাচ্ছেন তো? আমি স*য্য করলেও আল্লাহ স*য্য করবে না। একটা শাঁকচুন্নি জুটবে আপনার কপালে। সারা দিন রাত ঘাড়ের ওপর বসে রক্ত চুষে খাবে। তখন মনে পড়বে এই তুলতুলের কথা। মনে পড়বে আমার ওপর করা অত্যা*চারের কথা। আমিও তখন একটুও সাহায্য করবো না। উল্টে বসে বসে মজা দেখবো আর পপকন খাবো। সাথে কোকও খাবো।
সেই দিনটা খুব বেশি দুরে নয়। খুব কাছে।
তুলতুল বিরবির করছে নাক টানছে আর কান ধরে উঠবস করে।
” সাট আপ ইডিয়েট
ধমক দেয় সায়ান। কেঁপে ওঠে তুলতুল। কানে হাত দিয়েই দাঁড়িয়ে পড়ে। দাঁত দিয়ে জিভ কেটে মাথা নিচু করে ফেলে। শুনে ফেললো না কি?
“একটাও কথা বলি নি আমি। বিশ্বাস করুন। একটাও কথা বলি নি। একদম আপনাকে অভিশাপ দেই নি। আমার কি এতো বড় সাহস আছে না কি যে আপনাকে অভিশাপ দেবো?
আমি তো আমাকেই বকছিলাম। আমিই তো স্টুপিট। নাহলে দুনিয়ায় এতো জায়গা থাকতে কেনো আপনার সাথেই ধাক্কা খাবো? আপনার মতো একটা হনুমানের সাথে। মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে গাছের সাথে বাড়ি খেয়ে স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলি। তাতে আপনাকে ভুলে যেতে পারবো। আর আপনার স্মৃতি শক্তি হারিয়ে গেলে তো আমি পাঁচ টাকার বাতাসা খাওয়াবো বাচ্চা পোলাপানদের। আপনার জন্য
বাকিটা শেষ করার আগেই ঠাস করে গালে একটা থা*প্প*ড় পড়ে তুলতুলের। থাপ্পড়টা খুব বেশি জোরে ছিলো না। কিন্তু তবুও তুলতুলের কান্না পাচ্ছে। সায়ান বেশি কথা বলা একদম পছন্দ করে না। তারপরও এই মেয়ের একদমে কথা বলা আরও পছন্দ না। মুখে বললে তো শুনতো না। তাই হাত চালাতে হলো।
এই নিয়ে দুই বার থা*প্প*ড় মারলো লোকটা।
প্রথমবার বন্ধুদের সাথে ফুসকা খাচ্ছিলো আর গল্প করছিলো। প্রচুর কথা বলতে পারে তুলতুল। একবার শুরু করলে আর থামাথামির নাম থাকে না। তো বলছে তো বলছেই। হঠাৎ একটা শক্ত হাতের থা*প্প*ড়ে মুখ বন্ধ হয়ে যায় তুলতুলের। বাকরুদ্ধ হয়ে যায় ওর বন্ধুরাও। তুলতুল গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে লোকটার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় এই হনুমান।
সেদিন বন্ধুদের সামনে কি অপমানটাই না হইছিলো তুলতুল।
তুলতুল মাথা নিচু করে গাল ফুলিয়ে চোখের পানি ফেলছে।
“কথা কম বলবি। প্রয়োজন ছাড়া একটা কথাও যেনো আমি না শুনি।
তুলতুলের যে গালে থা*প্প*ড় দিয়েছিলো সেখানে হাত ছুঁয়িয়ে দেয় সায়ান। তুলতুল মনে মনে মুখ বাঁকায়। আদিহ্মেতা।
” আসছি আমি।
বলেই দরজা খুলে চলে যায় সায়ান। তুলতুল দীর্ঘ শ্বাস ফেলে
“শা*লা বজ্জাত। আমাকে এডভাইস দেওয়ার তুই কে হ্যাঁ? তোর কথা আমি শুনবো? এই তুলতুল শুনবে? কখনোই না। আমি কথা বলবো। চামড়ার মুখ আমার। আল্লাহ মুখ দিছে তো কথা বলার জন্যই। তাহলে আমি কেনো চুপ থাকবো? বোঝা আমারে?
বিরবির করতে করতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তুলতুল। ঠোঁটে গাড়ো করে টকটকে লাল লিপস্টিক দিয়ে চুলগুলো উঁচু করে ঝুঁটি বেঁধে ওড়নাটা ঠিক করে নেয়।
তারপর চলে যায় তনুর বর দেখতে। কেমন রাজপুত্র দেখতে হবে তো।
🥀
তনুর চড়া মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যায় সোফায় বসে থাকা হাবলা মার্কা একটা ছেলেকে দেখে। কি একটা অবস্থা?
সাদা শার্ট পড়েছিল ঠিক আছে শার্টের সব গুলো বোতাম লাগিয়েছে। ফর্সা মুখটাতে একটা দাঁড়ির অংশ নেই। দেখেই বোঝা যাচ্ছে আজ কালকের মধ্যেই ক্লিন সেভ করেছে। চুলগুলো বা পাশে সিঁথি কেটেছে। চেহারায় বাচ্চা বাচ্চা ভাব।
কালো জিন্স পড়েছে শার্ট আবার ইংক করেছে। হাতা একদম কনুই পর্যন্ত নামানো আবার বোতামও লাগিয়েছে।
তনু ভীষণ বিরক্ত। এতোদিন প্রেম করেছে কতো স্মার্ট স্মার্ট ছেলের সাথে এখন বিয়ে হবে কি না হাবলা কান্তের সাথে? এটা মানা যায়? আর কাকিমার ভাষায় এটা হলো রাজপুত্র।
তনুর সাদা মনে একটাই প্রশ্ন ” রাজপুত্র যদি এমন দেখতে হয়। তাহলে হিরো আলম কেমন দেখতে হবে?
“এখানে এসে বসো।
মধ্য বয়সী একটা মহিলা গম্ভীর গলায় বলে। কাকে বলেছে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।
তনুকে পই পই করে মা কাকিমা মাথায় ঘোমটা দিতে বলেছে। এখনো পেছন থেকে কাকিমা খোঁচাচ্ছে ঘোমটা দেওয়া জন্য। কিন্তু তনু দেবে না। ঘোমটা কেনো দেবে? এই হাবলাকান্তের জন্য? ইম্পসিবল।
এমপির বাড়ির মানুষ এসেছে। তারা যদি কোনো ভাবে অসন্তুষ্ট হয়? এটা নিয়েই চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে ওনারা।
” আপি তুই আমাকে ফেলেই কেনো চলে এলি? রাজপুত্র দেখার জন্য একটুও তার সইলো না?
তুলতুল চুল ঠিক করতে করতে তনুর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে৷ কথাটা বেশ জোরেই ছিলো উপস্থিত সবাই শুনতে পেয়ে যায়। আছিয়া বেগম চোখ পাকিয়ে তাকায় মেয়ের দিকে। তনুও চোখ পাকিয়ে তাকায়।
“সাট আপ
তনু দাঁতে দাঁত চেপে চাপা ধমক দিয়ে বলে। তুলতুল আড়চোখে আশেপাশে তাকায়। সবার দৃষ্টি এখন তুলতুলের দিকে।
তুলতুল ওনাদের দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে।
” আসসালামু আলাইকুম আমি তুলতুল তাহমিনা। তাসমিমা তনুর আপন চাচাতো বোন। ইন্টার ফাস্ট ইয়ারের প
বাকি কথা শেষ হওয়ার আগেই চোখ পড়ে দরজার দিকে। চুপসে যায় তুলতুল। কারণ তুলতুলের ভাই পাপ্পু আর সায়ান আসছে।
তুলতুল শুকনো ঢোক গিলে তনুর পেছনে যায়।
“ওর কথায় কিছু মনে করবেন না। মেয়ে আমার শুধু হাতে পায়েই বড় হয়েছে। মনে মনে একদম বাচ্চা।
মেয়েকে কাছে ডেকে বলেন পাপন (তুলতুলের বাবা)
তুলতুল চুপচাপ বাবার পাশে গিয়ে বসে পড়ে। তনুকে হাতে চায়ের ট্রে দেওয়া হয়। সায়ান এসে মধ্য বয়ষ্ক মহিলা আর ওই হাবলা একান্তের মাঝখানে এসে বসে পড়ে।
” সবাইকে চা দে
তনু দাঁতে দাঁত চেপে সবাইকে চা দেয়। মেয়ে দেখতে এতোগুলো মানুষ আসে? তিনটা পুরুষ। দুইটা মহিলা আর হাবলাকান্ত আর সায়ান। এতো গুলো মানুষ এসেছে।
তনু ধবধবে ফর্সা আর গম্ভীর মহিলা টির পাশে বসে পড়ে। অন্য মহিলাটি খুব হাসিখুশি। সবার সাথেই কেমন ভাব জমাচ্ছে। আর এই মহিলা গোল গোল চোখে শুধু তাকিয়ে আছে।
তুলতুল চুপচাপ ফ্লোরের দিকে দৃষ্টি রেখে বসে আছে। সামনে আস্ত জ*ম বসে আছে। নরাচরা করতেও ভয় লাগছে। যদি ধমকায়।
পাপ্পু মা কাকির সাথে ওনাদের খাবার সাজাচ্ছে। খাবারে কোনো ভুল করা যাবে না। সব কিছু ঠিকঠাক হতে হবে।
“মেয়ে আমাদের দারুণ পছন্দ হয়েছে।
আনোয়ার চৌধুরী চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে কাপটা টি-টেবিলের ওপর রেখে বলে। তনু চমকে ওঠে।কটমট চোখে তাকায় হাবলা কান্তের দিকে। সে আপাতত মাথা নিচু করে মিটমিট করে হাসছে। গা জ্ব*লে যাচ্ছে তনুর।
” আলহামদুলিল্লাহ
শুকরিয়া আদায় করে পাপন। ভাই বিদেশ থাকে। তার মেয়ে মানেই ওনার মেয়ে। ভাইয়ের সাথে আগেই কথা বলেছেন ওনারা। ভাইয়ের বন্ধুই হলো আনোয়ার চৌধুরী। তাছাড়া এমপির ভাই পোর সাথে বাড়ির মেয়ের বিয়ের কথা পাকা হচ্ছে। এটা কি চারটি খানি কথা?
গম্ভীর মহিলাটি আড়চোখে তনুকে দেখছে। মাথায় ঘোমটা নেই বলে কথা শোনাতে চাইছেন কিন্তু স্বামীর ভয়ে বলতে পারছে না।
“আমি বলছিলাম কি?
আপি আর ওই ভাইয়াকে আলাদা কথা বলতে দেওয়া উচিৎ।
তুলতুল মাথা নিচু করে রিনরিনিয়ে বলে। সায়ান আবার সবার সামনেই থা*প্পড় না দিয়ে বসে। কথাটা বলে বেশ ভয়ে আছে তুলতুল। তনু খুব খুশি হয়। এটারই আশায় ছিলো।
” বাহহহ মামনি তো দারুণ কথা বলেছো। তুমিই ওদের নিয়ে যাও।
আশিক চৌধুরী বলেন। তুলতুল মুচকি হেসে মাথা নারায়। বাবার দিকে তাকায়। পাপন চোখের ইশারায় অনুমতি দিয়ে দেয়।
তুলতুল উঠে দাঁড়ায়।
“ভাইয়া আসুন
ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলে। ছেলেটা উঠে দাঁড়ায়। তনুকে বলার আগেই বড়বড় পা ফেলে চলে যায় নিজের রুমের দিকে
” আমিও যাই। ভাই একা নার্ভাস ফিল করবে।
তুলতুল দরজা ওবদি চলে গেছিলো। সায়ানের কথা শুনে চমকে দাঁড়িয়ে পড়ে।
“আল্লাহ এই লোক কেনো আসছে? দুইটা মিনিটও কি শান্তি পাবো না? না জানি এখন আবার কয়টা থা*প্প*ড় পড়বে।
চলবে