#আমার তুমি ২
#পর্বঃ৫
#তানিশা সুলতানা
বাঁশ সব সময় এভাবেই বসে। এই যে এখন তুলতুলের বাঁশ তুলতুলের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে একটু একা পেলেই চি*বি*য়ে খেয়ে ফেলবে। মাসুম তুলতুল শুকনো ঢোক গিলে তন্ময়ের সাথে চিপকে আছে।
“ভাইয়া এতোখন লাগে তোর আসতে? কখন দেখে বসে আছি।
এক টানে নেকাব খুলে ফেলে তনু। বড়বড় পা ফেলে এগিয়ে আসে তুলতুল তন্ময়ের দিকে।
” আমি তো তোদের প্রাইভেসি দিতেই এতোটা সময় কাটিয়ে এলাম।
মুখ বাঁকিয়ে বলে তন্ময়। তনু আড়চোখে এক পলক হিমুর দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁ কায়।
সায়ান এক সাইডে বাইক থামায়। কালো হেলমেট খুলে বাইকের আয়নায় নিজেকে দেখে চুল ঠিক করতে থাকে। সায়ান পেছনে থাকা হাসিব নেমে পড়ে। তুলতুলের দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে লম্বা সালাম দেয়। তুলতুল মুখ বাঁকিয়ে সালামের জবাব দেয়।
“তাহলে তোরা যা
আমি তুলতুলকে নিয়ে বাসায় যাই।
আমার জন্য কিন্তু একটা আর্জেন্টিনা জার্সি কিনে আনিস। পেছনে যেনো মেসি লেখা থাকে আর মেসির ছবি যেনো থাকেই।
তন্ময় সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে। তন্ময় আর সায়ন দুজনে বেস্ট ফ্রেন্ড। দুজনেই ডিপ্লোমা ইন্জিনিয়ারিং শেষ করেছে বছর খানি আগে। এখন দুজনেই বেকার বসে আছে।
হিমু পাবলিক ভার্সিটির টিচার।
আর হাসিব অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ে।
” আমি যাই। বাইক আছে। জলদি গিয়ে আবার জলদি চলে আসতে পারবো।
সায়ান তুলতুলের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে। সাথে সাথে তুলতুল আতঙ্কে ওঠে।
“নাহহহহহহহ
চিৎকার করে বলে ওঠে তুলতুল। সবাই ভ্রু কুচকে তাকায় তুলতুলের দিকে। সায়ান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে।
” পুচকি এটাই ভালো হবে।
তন্ময় বলে।
“আআআমি বাইকে বসতে পারি না। আর উনার ভাঙা বাইকে তো একদমই উঠবো না। এমনিতেই উনি আমাকে দু’চোখে সয্য করতে পারে না। আমার সামনে আসলেই খিটখিটে বুড়ো হয়ে যায়। আমি এই খিটখিটে বুড়োর বাইকে উঠবো? জাস্ট ইমপসিবল। দরকার পড়ে জামাকাপড় নষ্ট করে ফেলবো তবুও এই লোকটার সাথে যাবো না।
ওনাকে দিয়ে ভরসা আছে? দেখা গেলো একটু দুরে নিয়েই আমাকে কিডন্যাপারদের হাতে দিয়ে দিলো। বা বাইক থেকে ফেলে দিলো। তখন কি হবে?
আমার কোমর আস্ত থাকবে?
তখন তো আমার বিয়
বাকিটা শেষ হওয়ার আগেই ঠাসসসস করে একটা থা*প্প*ড় পড়ে তুলতুলের গালে। সবাই বিরক্তি নিয়ে শুনছিলো তুলতুলের কথা। থা*প্প*ড়ের শব্দে সবাই চমকে ওঠে।
তুলতুল ছিঁটকে গিয়ে পড়ে তন্ময়ের বুকে। থা*প্প*ড়টা বেশ জোরে ছিলো। কান শা শা করছে। কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। গালটা গরম হয়ে গেছে। তন্ময় দুই হাতে আগলে নেয় তুলতুলকে।
তনু দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। অবশেষে চুপ হলো তুলতুল। মাথা ঘুরছে ওর। হাসিব জীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে রাস্তার পাশে ঘাসের ওপর বসে পড়ে। হিমু সায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।
তন্ময় বেশ রেগে গেছে। সায়ান এখনো চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে।
” দেখলি দাভাই। এই গোমড়ামুখো হনুমান আমাকে মারলো? আমার দাঁত ভেঙে দিলো। এই হনুমান আমাকে দেখতেই পারে না। যখন তখন থাপাথাপ থা*প্প*ড়ে দেয়।আমার গাল কি সরকারি?
ওনার হাত একদিন আমি ভে*ঙে দেবো। পঁচা পুকুরে চুবিয়ে রাখবো ওনাকে। চেনে না উনি আমায়। তুলতুলকে থা*প্প*ড় দেওয়া না?
মা*ম*লা করবো ওনার নামে।
আমার
“তোর বোনকে থামতে বলবি?
সায়ান রেগে জোরে একটা ধমক দিয়ে বলে। তুলতুল কেঁপে ওঠে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তন্ময়কে। এতোখন নাক টান ছিলো আর বকবক করছিলো।
তনু ফিক করে হেসে দেয়।
হিমু শক্ত চোখে তাকায় তনুর দিকে। তনু থেমে যায়।
” তুই আমার বোনকে মারলি কেনো? আমার বোন এতোই কথা বলে। আর বলবেও। আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তোর সমস্যা হলে বলে দিবি৷
বোনকে নিয়ে যাচ্ছি আমি। তোদের সাথে আর যাবো না আমি।
তুলতুলের কান্না এক মুহুর্তের মধ্যেই থেমে যায়। সায়ানের দিকে তাকিয়ে জিভ দেখায় তুলতুল। সায়ান অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেনো চোখ দিয়েই উগান্ডা পাঠিয়ে দেবে।
“হ্যাঁ দাভাই চল।
তুলতুল ভেংচি কাটে সায়ানকে। তারপর তন্ময়ের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে।
“জাস্ট একবার হাতের কাছে পাই
সায়ান চোখের ইশারায় তুলতুলকে বোঝায়। তুলতুল জিভ নারিয়ে ভেঙায়।
তনু ওদের সাথে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। হিমু হাত ধরে ফেলে।
” আপনার সাথেই আমার কথা আছে।
শক্ত গলায় বলে হিমু।
“তনু যার তার সাথে কথা বলে না
মুখ বাঁকিয়ে
বলে তনু।
হিমু আরও শক্ত করে ধরে তনুর হাত।
” ভে*ঙে ফেলবেন না কি?
তনু ভ্রু কুচকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে।
“ভাই মেইন রোডে আমার গাড়ি রাখা। যাচ্ছি আমি।
বলেই হিমু তনুকে টানতে টানতে নিয়ে যায়।
সায়ান এখনো চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। রাগে রীতিমতো শরীর কাঁপছে। ওই তুলার বাচ্চাকে জাস্ট সামনে পেলেই হলো।
🥀🥀
তনুর মেজাজ বেশ খিটখিটে হয়ে আছে। ওই হিমালয় তনুকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায় আর সেখানে একটা মেয়েকেও ডেকেছিলো। হিমু ওই মেয়েটার সাথে দাঁত কেলিয়ে কথা বলেছে আর তনু এক কোণে অসহায়ের মতো বসে ছিলো।
এক কাপ কফি দেওয়া হয়েছিলো তনুকে। সেটাই খেয়েছে আর ওদের দাঁত কেলানো দেখেছে।
বাড়ি ফেরার সময় হিমু ওই মেয়েটাকে সাথে নিয়ে গাড়িতে করে চলে যায়। তনু সিএনজি ডেকে এসেছে।
🥀
তুলতুল ফ্লোরে মাথা রেখে সোফার ওপর পা দিয়ে চিপস খাচ্ছে আর নিউজ দেখছে। কালকে ব্রাজিল টিমের খেলা আছে। সেটার নিউজ হচ্ছে এখন। বড়বড় মুছওয়ালা দুটো বেড়া টিভিতে লেকচার দিচ্ছে খেলা নিয়ে।
” এমপির বাড়িতে দাওয়াত হয়েছে আমাদের।
আছিয়া বেগম টেবিলে খাবার ফ্রিজে রাখতে রাখতে বলে। তনু একটু আগে বাড়ি ফিরিয়ে। ফ্রিজ খুলে একটা দুধের বোতল মাথায় নিয়ে তুলতুলের পাশে এসে বসে পড়ে। কাকিমার কথা শুনে মুখ বাঁকায়। তুলতুল শুনে নি মায়ের কথা।
“তোরা কখন রেডি হবি? এমপি বাড়িতে দাওয়াত হয়েছে কতোবার বলবো? দ্রুত রেডি হয়ে নে।
সাহেদা বেগম থালা বাসন টেবিলে রেখে বলে। এবার তুলতুল শোনে।
” দাভাই আমাকে যেতে দেবে না। আমি আর দাভাই যাচ্ছি না। তোমরা যাও। দাওয়াত খাই না আমি। যারা দাওয়াত খায় তারা ফকিন্নি। একটু পরে আমার জামাই খেলবে। আমি খেলা দেখবো। তোমরা যাও।
পারলে আমার জন্য একটা রোস্ট নিয়ে এসো।
আবার বইলো না আমি আনতে বলছি। বলবা মেয়েটা একা আছে ওকে রেখে আমাদের গলা দিয়ে খাবার নামছে না।
মুখে এক সাথে দুই তিনটা চিপস পুরে তা চিবতে চিবতে বলে তুলতুল।
“আমিও যাবো না। আমি ফকিন্নি না। পারলে আমার জন্যেও একটা রোস্ট নিয়ে এসো।
তনু বলে।
” তোদের দুইটারে আমি খুন্তি পে*টা করবো। এতো ঢং কেমনে করিস? ছোট টার কাছ থেকে বড়টার শিখতেছে।
জলদি রেডি হ
সাহেবা বেগম চোখ পাকিয়ে বলে। তনু কাচুমাচু হয়ে যায়। দুধের বোতলটা ঠাস করে নামায় ফ্লোরে। তুলতুল সোজা হয়ে বসে। গালে হাত বুলায়। এখনো ব্যাথা আছে। এখন ওই বাড়িতে গেলে না জানি কি করবে?
এতো রিক্স নিয়ে যাওয়াটা একদম ঠিক হবে না।
“কেউ ভালোবাসে না। সবাই খালি ধমক দেয়। আবার কেউ তো থা*প্প*ড় দাঁত ফেলে দেয়। ভালোবাসলে কি এমনটা করতে পারতো? এতো ধমক দিতো? অসহায় বাচ্চা পেয়ে যা খুশি করে গেলা। থাকবোই না আমি। চলে যাবো। নেইমার ছাড়া আর কেউ নাই আমার।
এতিম খানায় যাওয়া দরকার আমার। আম্মু এতিম খানায় দিয়ে এসো আমায়।
তুলতুল নাক টেনে গোল হয়ে বসে বলে।
” তোরে এতিম খানায়ও রাখবে না। তোর ভাঙা রেডিও শোনার ধর্য্য এতিম জানার মানুষদের হবে না।
আছিয়া বেগম দুধের গ্লাস তুলতুলের সামনে দিয়ে বলে। তুলতুল গাল ফুলিয়ে দুধের গ্লাস হাতে নেয়।
তনু ফিক করে হেসে দেয়।
“বড় মা ঠিকি বলেছো। ওর ননস্টপ বকবক শুনতে শুনতে আমি পা*গল হয়ে যাচ্ছি।
তনু মাথা ধরে বলে। তুলতুল বড়বড় চোখ করে তাকায়।
” আপনি কাকে বলছেন? নিজে তো খাওয়া আর ঘুমানো ছাড়া কিছুই পারেন না। তুলতুল তো তাও কথা বলতে পারে।
সাহেদা বেগম বলেন। তুলতুল এবার ফিক করে হেসে ফেলে।
চলবে
বানান ভুল থাকতে পারে। রিচেক দিতে পারি নি।