কাছে_কিবা_দূরে #পর্ব-৫

0
188

#কাছে_কিবা_দূরে
#পর্ব-৫
বিছানায় ঘুমানোর সময় ইন্ডিয়া পাকিস্তানের বর্ডার দেয়া হয় নি শেষ পর্যন্ত। শুভ্র সিরিয়াস গলায় বলল, শোনো তানি আমার কাছে এসব ব্যপার খুব ফিল্মি লাগে। মাঝখানে বর্ডার থাকবে সেটা ক্রস করা যাবে না। ব্লা ব্লা.. এসব সিনেমায় হয়। আমার কাছে মনে হয় বৈবাহিক সম্পর্কে আগে মন ছুঁয়ে তারপর শরীর ছুঁতে হয়। তাই তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো। তাছাড়া আমার হাত, পা ছড়িয়ে ঘুমানোর অভ্যাস ও নেই। তোমারও হয়তো নেই। তবুও ইনসিকিউর ফিল করলে মাঝখানে কোলবালিশ রাখতে পারো।

তানি স্মিত হেসে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো। শুভ্র পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়লো। তানিও অনেক দিন পর নিশ্চিন্তে ঘুমালো।

সকালে শুভ্র’র ঘুম ভেঙেছে আগে। তানিকে গভীর ঘুমে মগ্ন দেখে আর জাগায় নি। একা একা খেয়েদেয়েই বেরিয়ে গেছে। তানির ঘুম ভেঙেছে বেলা হবার পর। জেগে উঠে ঘড়িতে সময় দেখে লজ্জা পেল। এতোটা বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়েছে! মাহফুজা তানিকে দেখে বলল, ঘুম কেমন হলো?

“জি ভালো।

“আসো খাবে এখন।”

“আপনারা খেয়েছেন”?

মাহফুজা কপট রাগ দেখিয়ে বলল, এই মেয়ে আপনি আপনি করছিস কেন! আমার ছেলেমেয়েরা আমাকে তুমি বলে ডাকে। তুই ও তেমন ডাকবি”।

তানি হেসে বলল, আচ্ছা।

তানি একা খেতে বসলো না। আনিকা, আর মাহফুজাও সাথে বসেছে। তানিকে যত্ন করে প্লেটে খাবার তুলে দিলো মাহফুজা। তানির ভীষণ ভালো লাগলো। ভালো লাগায় চোখে পানিও এসে গেল। এরকম যত্ন করে মা’ও ওকে খাওয়াতো। খেতে খেতে হঠাৎই তানির মন খারাপ হলো। এই বাড়ির মানুষগুলো বড্ড ভালো। এরা সত্যিই কী ভালো! নাকি বিয়ের পর প্রথম প্রথম ভালো থাকার চেষ্টা করছে! তানি সেটা বুঝতেই পারে না। আরিফের সাথে বিয়ে হবার পরও প্রথম প্রথম তার বাড়ির লোকজন কে এরকম ভালো মনে হয়েছিল তানির। কিন্তু যখন খোলস ছেড়ে আসল রুপ বেরিয়ে এলো তখন বুঝতে পারলো যে একেকটা বিষধর সাপ।

মাহফুজা অবাক হয়ে গেল তানিকে দেখে। গাল বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। কাঁধে একটা হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে তানি?

তানি সম্বিত ফিরে পেতেই চোখের পানি মুছে ফেলল। আনিকা বলল, ভাবীর মনে হয় বাড়ির জন্য মন কেমন করছে। তাই না ভাবী?

তানি নিজেকে যথাসম্ভব সামলে নিয়ে স্মিত গলায় বলল, আই এ্যাম স্যরি।

মাহফুজা তানির একটা হাত ধরে বলল, ঝটপট খেয়ে নে। খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।

সারাটা দিন আনিকা আর শাশুড়ীর সাথেই কেটে গেল। তানি রান্না করতে চাইলেও মাহফুজা দিলেন না। বললেন, নতুন বিয়ে হয়েছে এখনই রান্নাঘরে যেতে হবে না। তানিও মেনে নিলো। সারাদিন আনিকার সাথে গল্প করলো, টিভি দেখলো।
শুভ্র ফিরলো সন্ধ্যার পর। ফিরেই সোফার উপর সটান হয়ে বসে পড়লো। তানি তখন টিভি দেখছিল। মাহফুজা বাজারে গেছে আর আনিকা কোচিং-এ পড়তে গেছে। তানি শুভ্র’ কে দেখে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল,
“আপনাকে কী পানি দেব”?

শুভ্র চোখ বন্ধ রেখেই বলল, দাও।

তানি পানি এনে দিতেই শুভ্র বলল, কেমন আছ তুমি তানি?

তানি ইতস্তত করে বলল, ভালো?

“শ্বশুর বাড়ি কেমন লাগছে? ”

“ভালো। ”

“শাশুড়ী “?

“খুব ভালো “।

“ননদ”?

“খুব ভালো “।

“দেবর”?

“খুব ভালো ”

“আর বর”?

তানি এবার কোনো জবাব দিলো না। মাথা নিচু করে ফেলল। শুভ্র কৌতুকে গলায় বলল, তার মানে সব ভালো লাগলেও বর ভালো লাগে নি?

তানি বুকভরে নিঃশ্বাস নিলো। এরপর শুভ্র’র চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি তো তেমন বলি নি।

শুভ্র দুঃখিত গলায় বলল, কই সবাইকে তো খুব ভালোর সার্টিফিকেট দিলে আর আমার জন্য শান্তনা পুরস্কার হিসেবে ভালো ও বললে না।

তানি মাথা নিচু করে হাসলো। শুভ্র জবাবের অপেক্ষা করছে। তানি বলল, মোটে তো দুইদিন। এখনও তো আপনাকে বুঝে উঠতে পারিনি।

শুভ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, হে আল্লাহ আপনি দেখুন। সবাইকে বুঝে ফেলল আর আমাকে এখন পর্যন্ত বুঝলো না। এইসব শোনাও বাকী ছিলো! এইসব শোনার জন্যই কী সাত আট ঘন্টা এই কাঁধে কুমড়ো সাইজের একটা মাথা বয়ে নিয়ে এসেছিলাম?

তানি খিলখিল করে হাসলো। শুভ্রও তাল মিলিয়ে হাসলো। হাসি থামিয়ে বলল, মজা করছিলাম তানি।

তানি হাসতে হাসতেই বলল, আপনি অভিনয় করলে অনেক নাম করবেন।

শুভ্র কুর্নিশ করার ভঙ্গিতে মাথা নত করে বলল, মাই প্লেজার। এবার বলো বর দেরিতে পৌছানোয় যে মেন্টাল শক পেয়েছিলে সেটা কী কেটে গেছে।

তানি মুখ হাসি হাসি করে হ্যাঁ বলল ঠিকই, কিন্তু মনে মনে বলল, সেটা তো আপনাকে দেখেই কেটে গেছে।

শুভ্র স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল, থ্যাংকস গড। আমি তো খুব ভয়ে ছিলাম। সর্বস্ব হারিয়ে যতটা বিপাকে পড়েছিলাম তার চেয়েও বেশী টেনশন ছিলো তোমাকে নিয়ে। অলমোস্ট সাত, আট ঘন্টার লেট। তুমি যদি কিছু করে বসো! আই মিন সুইসাইড।

তানি ব্যাপার টায় মুগ্ধ হলো। বলল,
“আপনি তো আমাকে দেখেন ও নি। তবুও এতো চিন্তা করছিলেন?”

শুভ্র হেসে বলল, বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে ইউ আর মাই রেন্সপন্সিবিলিটি তানি।

শুভ্র আরও কিছু বলতে যাবে তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো।

******

দরজার ওপাশে হাসি হাসি মুখ করে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একটু দূরে আনিকাও আছে। তানি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে মেয়েটা বলল, ভাবী আমি ইরা। তোমাদের প্রতিবেশী।

তানি ইরার নাম টা এর আগেও আনিকার কাছে শুনেছে। ইরার ও বিয়েতে যাবার কথা ছিলো। কিন্তু পথে ওই দূর্ঘটনার কারনে ওরা ফিরে এসেছিল।

শুভ্র ইরার গলা পেয়ে বলল, তানি ওর নাম ইরা। ইরা না ডেকে প্যারাও ডাকতে পারো। ওর প্যারায় পাড়ায় কোনো দোকানদার টিকতে পারে না।

ইরা ততক্ষণে ঘরে ঢুকে গেছে। মারমুখী হয়ে শুভ্র’র দিকে এগিয়ে গেল, আর ঢঙ্গী গলায় বলল, ভাঁইঁয়াঁ।

শুভ্র সরে যেতে যেতে বলল, আমার সাথে বেয়াদবি করলে তোমার বিয়ে আটকে যাবার সম্ভাবনা আছে।

ইরা বলল, ধ্যাৎ আমি বিয়ে করলে তো!

শুভ্র টেনে টেনে বলল, হ্যাঁ বিয়ে করবে না কিন্তু বাচ্চার নামও ঠিক হয়ে আছে। বাচ্চার নাম টা যেন কী?

ইরা লজ্জা পেল। আনিকা তানির পাশে গিয়ে ফিসফিস করে বলল, ইরা আপুর সাথে ছোট ভাইয়ার ইটিসপিটিশ আছে।

তানি চোখ কপালে তুলে বলল, ইটিশপিটিশ! ইশ! এসব কোথায় শিখেছ!

আনিকা হেসে বলল, আমরা মজা করে মাঝেমধ্যে বলি।

তানির খুব ভালো লাগছে এসব খুনসুটি। এই অল্প সময়ে মানুষ গুলো কে এতো ভালো লাগছে। জীবন টা এখন স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।

চলবে…..

সাবিকুন নাহার নিপা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here