#আমার তুমি ২
#পর্বঃ১৬
#তানিশা সুলতানা
তুলতুল জীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। সায়ান মাথার নিচে হাত দিয়ে পেটের কাছেবালিশ নিয়ে আধশোয়া হয়ে আছে। তুলতুল ভেবে পায় না এ এখানে আসলো কিভাবে? বাড়ির কেউ দেখে ফেললে যে ঝামেলা হবে সেদিকে কোনো খেয়াল নেই? অবশ্য থাকবে কিভাবে? নিজের বাড়িতে তো যা খুশি করতে পারে। কিন্তু এখানে যে এসব চলবে না। কে বোঝাবে ওকে?
মনে মনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তুলতুল। রুমে ঢুকেই ওড়নাটা ঠাস করে ফেলে দিয়েছিলো বিছানার দিকে। সেটা আপাতত সায়ানের হাতের মুঠোয়। ভীষণ একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পরে গেছে।
এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে ওড়না টাওয়ার বা গামছা খোঁজার চেষ্টা করে। কিন্তু নাহহহ;
কোথাও কিচ্ছু নেই। থাকবে কিভাবে? তনু তো সব সুন্দর করে গুছিয়ে রাখে কাবাডে। আর ভেজা গুলো বেলকনিতে।
“আমার ভুল হয়ে গেছে। আমাকে হ্মমা করে দিন।
তুলতুল শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে।
সায়ান এক লাফে উঠে বসে। ঝড়ের গতিতে তুলতুলের কাছে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। স্তব্ধ হয়ে যায় তুলতুল। ” ভুল স্বীকার করলে মানুষ এমনটা করে?”
উওর পায় না।
ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে তুলতুলের। কিন্তু এই লোকটার দানবের মতো হাত দুটোকে ভেদ করে বেরিয়ে আসা একেবারে অসম্ভব।
সায়ান এমনিতেই বেশ লম্বা। পাঁচ ফিট এগারো হাইট। আর তুলতুল সোজা সাপ্টা পাঁচ ফিট। তুলতুলের মাথা সায়ানের বুক ওবদি। জড়িয়ে ধরায় একদম সায়ানের হার্টের কাছে কান ঠেকেছে। হৃদয়ের ধুকবুক স্পন্দন টের পাচ্ছে তুলতুল। মোচরামুচরি করতে কেনো জানি ইচ্ছে করছে না। তাই চুপচাপ পড়ে আছে সায়ানের বুক।
খুব করে ফিল করছে সায়ানকে। বুকের ভেতর এক প্রকার শান্তি অনুভব করছে। মানুষটিকে খুব ভালো লাগছে। কেনো ভালো লাগছে? এভাবে জড়িয়ে ধরেছে বলে?
উওর পায় না তুলতুল। শুধু বোঝার চেষ্টা করে হার্ট বিট গুলো কি বলতে চাইছে?
বেশ কিছুখন পরে হাত আলগা হয়ে আসে সায়ানের। তুলতুল দু পা পিছিয়ে যায়। মাথা নিচু করে ফেলে। ভীষণ লজ্জা লাগছে। এতো লজ্জা কেনো লাগছে? লজ্জায় দুই গাল ভারি লাগছে। কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে।
সায়ান এক পা এগিয়ে যায়। তুলতুলের দুই গালে হাত রাখে মুখটা একটু উঁচু করে ধরে। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয় তুলতুল।
সায়ান কিছুখন তাকিয়ে থাকে মুখের দিকে। তারপর তুলতুলের কপালে বেশ কিছুখন সময় নিয়ে ঠোঁট ছোঁয়ায়। তুলতুল এবার কাঁপতে কাঁপতে ম*রেই যাবে এমন অবস্থা। খুব করে পানির অভাব ফিল করছে। ঢোক চিপতেও অস্বস্তি হচ্ছে।
দুই হাতে জামা খাঁমচে ধরে আছে।
“আসছি
তুলতুলের মুখের ওপর পরে থাকা ছোট চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে তুলতুলকে ছেড়ে বলে সায়ান।
ব্যাস শেষ।
তারপরই বড়বড় পা ফেলে বেরিয়ে যায় তুলতুলের রুম থেকে। তুলতুল আস্তে ধীরে চোখ খুলে সায়ানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
” কি ছিলো না? হুট করে এসে লুট করে মনটা নিয়ে ফট করে চলে গেলো মন হয়?
তুলতুল শুকনো ঢোক গিলে বুকে হাত দিয়ে বিরবির করে বলে৷ এখন কপালে যেনো তার ছোঁয়া লেগে আছে মনে হচ্ছে। হাত পায়ের কাঁপনও এখনো আছে।
🥀🥀
তনু হিমুকে পায় না। সে চলে গেছে। মন খারাপ হয় তনুর। এভাবে কেনো চলে গেলো? একটু তো থাকতে পারতো?
চৌধুরি বাড়ির মেইন দরজায় একটা তালা আর গেইটে একটা তালা ঝুলিয়ে দিয়ে এসেছিলো সায়ান। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সমস্ত রাস্তা বন্ধ করেই এসেছিলো তিনভাই। বাবা কাকাদের দিয়ে বিশ্বাস নেয়। তারা যখন তখন পুলিশ নিয়ে হাজির হতো। টেনে হিঁচড়ে হলেও সুমুকে নিয়ে যেতো।
🥀🥀
সুমু এতোখনে বুঝতে পারে কেনো বারবার হাসিব বলছিলো “এই পাশটায় একদম বসবি না”
খাট এমনিতেই একটু ফাঁটল ধরা ছিলো। এসএসসি পরীক্ষায় তুলতুল জিপিএ পেয়ে উরাধুরা লাফিয়েছিলো তন্ময়ের খাটে। তখনই কট করে শব্দ হয়েছিলো। সেই থেকে তন্ময় এই পাশে খুব একটা আসে না।
তারওপর আজকে হাসিবও কয়েক একটা লাভ দিয়ে প্রায় ভেঙে দিয়ে গেছে। এটা অবশ্য তুলতুলের প্লান।
তন্ময় কোমরে বেশ ব্যাথা পেয়েছে। হাঁটতেও সমস্যা হচ্ছে। সুমু তোশক নিয়ে ফ্লোরে পেতে নেয়। তারপর বালিশ কম্বল পাশ বালিশ সব দিয়ে একদম ঠিকঠাক করে নেয়।
তন্ময় চেয়ার টেনে তাতে বসে আছে। কোমর টনটন করছে সেটা বড় কথা না। বড় কথা হলো ওর বিচ্ছু বোন কাল সারা পাড়া রটিয়ে দেবে “আমার দাভাই বাসর ঘরে খাট ভেঙে ফেলেছে”
এর মুখ কিছুতেই বন্ধ করানো যাবে না।
মানসম্মান কাল সকালেই স্বর্গে চলে যাবে।
“আমি কি মালিশ করে দেবো?
সুমু তন্ময়ের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে। তন্ময় চোখ পাকিয়ে তাকায় সুমুর দিকে।
” নাহহহ কোমর মালিশ করতে হবে না। তুমি বরং আমার গ*লা মালিশ করে আমাকে একটু রে*হাই দাও।
তন্ময়ের বলতে দেরি সুমুর গলা টি*পে ধরতে দেরি নেই। চোখ বড়বড় করে তন্ময় তাকায় সুমুর দিকে। বেশ জোরেই ধরেছে। একটু ব্যাথা পাচ্ছে।
জোরে একটু চা*প দিয়ে ছেড়ে দেয় সুমু। তন্ময় গলায় হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়।
শুকনো ঢোক গিলে। এই মেয়ে তো আ*জ*রাইল। হাসতে হাসতে খু*নও করে ফেলতে পারবে।
সুমু আলতো হেসে তন্ময়ের হাত ধরে। ইশারায় উঠতে বলে। তন্ময় বাধ্য ছেলের মতো উঠে দাঁড়ায়। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বিছানায় বসে। সুমু এক ধাক্কা দিয়ে শুয়িয়ে দেয়। তন্ময় বড়বড় চোখ করে তাকায়।
সুমু তন্ময় দিয়ে ঝুঁকে চুলে হাত বুলায়।
“আমার সাথে রেগে রেগে কথা বললে একদম খু*ন করে ফেলবো।
চুলে জোরে টা*ন দিয়ে হাসতে হাসতে বলে সুমু। ব্যাথায় “আহহ” করে ওঠে তন্ময়। চোখ মুখ কুঁচকে তাকায় সুমুর দিকে।
“সারাক্ষণ ভালোবাসবা। একটু চোখের আড়াল হলেই বউ বউ বলে ডাকবা। যখন যেখানে দেখবা সেখানেই টুপটাপ করে চুমু দিয়ে দিবা।
তন্ময়ের গ*লায় দুই হাত দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করতে করতে বলে সুমু। তন্ময় ফাঁকা গলায় ঢোক গিলে ভদ্র ছেলের মতো মাথা নারায়।
” গুড বয়।
তন্ময়ের নাকে ঠাস করে চুমু খেয়ে বলে সুমু৷ অবাকের ওপর অবাক তন্ময়। একে মেয়ে বলে মানতে নারাজ ও।
“কোথায় চুমু দিবা?
তন্ময়ের ঠোঁটে হাত বুলাতে বুলাতে বলে সুমু।
তন্ময় বাঁকা চোখে তাকায় সুমুর দিকে। উওর না দিয়ে সুমুকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। সুমু কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো না।
তন্ময় সুমুর দুই পাশে হাত দিয়ে সুমুর দিকে নাকে কামড় দিয়ে দেয়। ব্যাথা পায় সুমু৷ চোখে পানি চলে আসে। তবুও শব্দ করে না।
” আর ডিস্টার্ব করলে ব*স্তায় ভ*রে বুড়ি গঙ্গায় ফে*লে আসবো।
তন্ময় সোজা হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে বলে। সুমুও ভেজা বেড়ালের মতো তন্ময়ের বুকে মাথা রেখে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে। তন্ময় কিছু বলে না।
🥀
তুলতুল সারা বাড়ি খুঁজেছে সায়ানকে। কিন্তু কোথাও নেই। ব্লাক লিস্ট থেকে সায়ানের নাম্বার অনব্লক করে কল দিয়েছে। কিন্তু রিসিভ করে নি। গ্রেস্ট রুমেই তো থাকার কথা সবার। তাহলে গেলো কোথায়? ফজরের আজান দিয়েছে কিছুখন আগে। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করে দিয়েছে। এতো সকাল সকাল চলে যাবে?
কিন্তু মেইন দরজা তো ভেতর থেকে বন্ধ। গেলো কিভাবে?
মন খারাপ করে রুমে চলে যায় তুলতুল।
চলবে