#আমার তুমি ২
#পর্বঃ১৮
#তানিশা সুলতানা
ভয়ে সেন্সলেস হয়ে গেছে তুলতুল। সায়ান চোয়াল শক্ত করে এক হাতে ধরে রেখেছে তুলতুলকে। তুলতুল সায়ানের বুকে মাথা ঠেকিয়ে পড়ে আছে।
সুমু ঘাবড়ে যায়। ভাইয়ের রাগ সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানা আছে। এখন মেয়েটাকে যে দুই চারটা থা*প্প*ড় বসিয়ে দেবে এতে একদম সন্দেহ নেই সুমুর। তনুও ভীষণ ঘাবড়ে আছে। মাথা নিচু করে শুকনো ঢোক গিলছে। মানুষ এরকম ভ*য়ং*কর ভাবে রেগে যেতেও পারে এটা ধারনার বাইরে ছিলো তনুর।
সুলাইমান হিমু আর হাসিব এগিয়ে আসে ওদের দিকে। সুলাইমানের রাগ গলে গেছে। সুমুকে দেখে ভীষণ খুশি হয়। সুমুর থেকে একটু দুরে দাঁড়িয়ে পড়ে। সুমু চোখ ভর্তি পানি নিয়ে ছোট বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। অনুমতি চাইছে কাছে যাওয়ার।
সুলাইমান মুচকি হেসে হাত এগিয়ে দেয়। সুমু এক দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় সুলাইমান।
হিমু তনুর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। তনুর কাঁধে হাত রাখে। চমকে ওঠে তনু।
“রিলাক্স আমি।
শান্তনা দিয়ে বলে হিমু। তনু একটু হাসার চেষ্টা করে বোঝায় ঠিক আছে।
সায়ান ফোঁস করে শ্বাস টেনে কোলে তুলে নেয় তুলতুলকে। কাউকে কিছু না বলে সুলাইমানের গাড়ির পেছনের ছিটে তুলতুলকে শুয়িয়ে দিয়ে নিজে পাশে বসে।
ড্রাইভার বুঝতে পারছে না কি করবে। কাচুমাচু হয়ে বসে আছে।
” যাওয়ার জন্য কি এখন ঢাকঢোল পিটিয়ে বলতে হবে?
ধমক দিয়ে বলে সায়ান। ড্রাইভার কেঁপে ওঠে। প্রচন্ড ঘাবড়ে গেছে উনি।
হাসিব দৌড়ে আসে।
“চাচা আপনি বের হন। আমি দেখছি।
ড্রাইভার এক সেকেন্ডও সময় নষ্ট না করে নেমে পড়ে। হাসিব উঠে গাড়ি ড্রাইভ করা শুরু করে।
” ততুলতুল
তনু আমতা আমতা করে বলে।
“সায়ান পৌঁছে দেবে। তোমরা আমার সাথে চলো।
তনু বাধ্য হয়ে ওনাদের সাথে যায়। একটা রেস্টুরেন্টে বসে ওরা চার জন্য। সুলাইমান কথা বলছে সুমুর সাথে। আর তনু আড়চোখে তাকাচ্ছে হিমু দিকে। হুমু আপাতত ফোন নিয়ে ব্যস্ত। কিছু একটা করছে। নিজেকে এতিম এতিম লাগছে। এভাবে বসে থাকা যায় না কি?
তনুও নিজের ফোন ঘাটতে শুরু করে।
🥀🥀
খানিকখন পড়ে পিটপিট করে চোখ খুলে তুলতুল। মনে হচ্ছে শো শো কিছু যাচ্ছে। তার ওপর ও বসে আছে। একটু পরপর ঝাঁকি লাগছে। কেউ একজন দুই হাতে আগলে রেখেছে ওকে।কারো কোলে মাথা রেখেছে। পারফিউম আর ঘামের গন্ধ মিলে অন্য রকম একটা গন্ধ নাকে লাগছে।
চোখ খুলতেই দেখতে পায় সাদা শার্ট, গাল ভর্তি দাঁড়ি, ফর্সা মুখ, বিলাই চোখ, নাক সমান চুল গুলো পেছনে ঠেলে দেওয়া, কালো দাঁড়ির মাঝে গোলাপি দুটো ঠোঁট ওয়ালা বিশাল দেহী সায়ানকে। এক পলক দেখে আবার চোখ বন্ধ করে চিৎকার দিয়ে উঠে বসে তুলতুল।
” ও আম্মু গো তোমার মেয়েকে শয়তান বেডা কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছে। আর কখনো মেয়েকে দেখতে পাবে না। আম্মু বাঁচাও আমায়। ক*সা*ই আমাকে জ*বা*ই করে দেবে গো। আমি বাঁচতে চাই। বিয়ে করতে চাই। বারো পুএের আম্মু হতে চাই। আম্মু আব্বু দাভাই বাঁচাও আমাকে। এই বা*ঘ হালুম করার আগেই আমাকে উদ্ধার করো তোমরা। আমার গ*লা কে*টে র*ক্ত চু*ষে খাবে এই বুইড়া বেডা।
হাসিব এক ঢোক গিলে গাড়ি থামিয়ে ফেলে। কান দুটো শা শা করছে। তুলতুলের চিৎকার করে বলা কথায় ভয় পেয়ে গেছে সাথে ঘাবড়েও গেছে। তুলতুল চোখ খুলছে না। সায়ান দাঁতে দাঁত চেপে।
“ওই হনুমানের বাচ্চা। আমাকে ছেড়ে দে বলছি। তুই আমার দেহ পাবি কিন্তু মন পাবি না আগেই বলে দিলাম।
থুক্কু দেহ ও পাবি না। তার আগেই আমি তোকে গাড়ি থেকে ধা*ক্কা দিয়ে ফেলে দিবো। আমার নাম তুলতুল। আমাকে দেখে কতশত পুলিশ ভয় পেয়ে পালিয়ে যায় আর তুই তো সামান্য হনুমান। একদম মে*রে পদ্মা সেতুতে ঝু*লিয়ে রাখবো বলে দিলাম।
হাসিব পরপর কয়েকবার শুকনো ঢোক গিলে। কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। এটা মেয়ে না রেডিও? ভয়ার্তক চোখে একপলক সায়ানের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেক পলক তুলতুলের দিকে।
তুলতুল কথা শেষ করে জোরে শ্বাস টানতেই ঠাসসস করে একটা থা*প্প*ড় পড়ে তুলতুলের ডান গালে। গাড়ির দরজায় বাড়ি খায় তুলতুল। গালে হাত দিয়ে পাশে তাকিয়ে সায়ানের শক্ত মুখ দেখে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে।
হাসিব একটার পর একটা চমক পাচ্ছে। আজকেই বুঝি হার্ট দুর্বল হয়ে যাবে।
“ও আল্লাহ গো
তুমি এর বিচার কইরো। তোমার কাছেই বিচার দিলাম। এই গোমড়ামুখো হনুমানের হাতে যেনো পোকা পড়ে। হাত যেনো ভে*ঙে গুড়িয়ে যায়। সাথে যেনো চুল আর দাঁতও পড়ে। আমার বিচার শুনিও তুমি।
আমাকে মেরে মেরে ত*ক্তা বানিয়ে দিলো। লোহার মতো শক্ত হাত দিয়ে আমার তুলোর মতো নরম গালে আঘাত করে খালি। আমার দাঁত গুলো নরে যাচ্ছে। এর বিচার কি হবে না? অবশ্যই হবে।
আল্লাহ শুনছেন তো?
হাসিব দুই কানে হাত দেয়। সায়ান চাইছিলো রাগ কন্ট্রোল করতে কিন্তু এই স্টুপিট সেটা হতেই দিচ্ছে না।
আরও একটা থা*প্প*ড় বসিয়ে দেয় একই জায়গায়। এবার তুলতুলের মাথাটা ঘুরে যায়। আগের থা*প্প*ড়ে খুব ব্যাথা না পেলেও এখন দাঁত গুলো যেনো টনটন করছে। গাল দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। দুই মিনিট চোখ বন্ধ করে গাড়ির দরজায় মাথা ঠেকিয়ে ঝিমিয়ে নেয় তুলতুল।
মাথার ঝিম ধরা একটু কমতেই পানি ভর্তি চোখে তাকায় সায়ানের দিকে। হাসিব শুকনো ঢোক গিলে ঢকঢক করে এক বোতল পানি খেয়ে নেয়। এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব চেয়ে বিপদ জনক জায়গা এটাই। যখন তখন হার্ট অ্যাটাক করার সম্ভবনা আছে।
তুলতুল সায়ানের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছে। গাল টা একদম লাল টকটকে হয়ে গেছে। পাঁচ আঙুলের দাগ বসে গেছে।
সায়ান তুলতুলের থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়। মাথায় হাত ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানে।
“মা*রতে মা*রতে শহিদ দিবস বানিয়ে ফেলছে আমায়। দাঁত গুলো আজকেই পড়ে যাবে। লোহা দিয়ে তৈরি এই বেডা। আমি আজকে শেষ। আমাকে শহিদ মিনারের পাশে রেখে আসবে শয়তান বেডা।
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর বলছে তুলতুল। চোখ নাক মুখ গাল লাল হয়ে গেছে। সায়ান আবার তাকায় তুলতুলের দিকে। কসটিউব না লাগিয়ে দিলে এ থামবে না। ভেবেছিলো একে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে। কিন্তু স্টুপিটটা যে হারে বকবকানি শুরু করে দিয়েছে তাতে ডাক্তারও পাগল হয়ে যাবে। তাছাড়া সায়ানের সময় কম। এখনই আবার ঢাকায় যেতে হবে।
“হাসিব এই কেসেটাকে ছুঁড়ে ফেলার ব্যবস্থা কর।
সায়ান গম্ভীর গলায় বলে। সাথে সাথে তুলতুলের কান্না থেমে যায়। এখন কি গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে না কি?
ফাঁকা গলায় ঢোক গিলে পানি ভর্তি নাক টেনে সায়ানের হাত জড়িয়ে শক্ত হয়ে বসে তুলতুল।
হাসিব ততখনে গাড়ি স্ট্রাট দিয়ে দিয়েছে।
সায়ান ভ্রু কুচকে তাকায় তুলতুলের দিকে। তুলতুল মাথা নিচু করে ফুঁপাচ্ছে।
” হাত ছাড়ো
সায়ান গম্ভীর গলায়ই বলে।
তুলতুল কাচুমাচু হয়ে আরও একটু গভীর করে জড়িয়ে ধরে বুঝিয়ে দেয় সে কিছুতেই ছাড়বে না। সায়ান বাঁকা হাসে।
“হনুমান, শয়তানের নানা, হাতির বাচ্চা, জ*ল্লা*দের খালাতো ভাই তোরে একদিন আমি পাঁচ কচুরিপানা ভর্তি পুকুরে চু*বা*নি দিমু তাও আবার কড়া ঠান্ডার মধ্যে। আমাকে থা*প্প*ড় দেওয়ার শোধ আমি তুলবোই তুলবো। কথায় কথায় গায়ে হাত তোলা না?
হাত ভে*ঙে গলায় ঝুলিয়ে যদি না দিছি আমিও তুলতুল না।
বিরবির করে সায়ানকে বকছে তুলতুল। নাকের পানি চোখের পানি এক হয়ে যাচ্ছে।
সায়ান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
হাসিব ড্রাইভ করতে করতে সুমুকে মেসেজ দিয়ে জেনে নেয় ওরা কোথায়?
সুমুও ঝটপট মেসেজের রিপ্লাই দিয়ে জানায় ওরা রেস্টুরেন্টে।
দশ মিনিটের মাথায় সেই রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামায় হাসিব। তুলতুল এখনো ওভাবেই ধরে আছে।
” ভাই এসে গেছি।
বলেই হাসিব একপলক তুলতুলের দিকে তাকি নেমে যায়।
“ওই ফকিন্নি হাত ছাড়।
সায়ান তুলতুলের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে। তুলতুল আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে কোথায় এসেছে। যখন বুঝতে পারে জায়গাটা চেনা তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে ফেলে। বড় করে নাক টেনে নেয়।
তারাহুরো করে নামতে যায় তুলতুল। কিন্তু দরজা খুলতে পারে না। এতো এতো টানাটানির করেও লাভ হয় না। শেষ মেষ ক্লান্ত হয়ে সোজা হয়ে বসে। পাশে তাকিয়ে দেখে দরজা খুলে সায়ান নেমে গেছে আর দরজা এখনো খোলা।
” তুলার বাচ্চা তুলা তুই সত্যিই একটা গাঁধা। আরে গাধী আশেপাশে তাকিয়ে তো দেখবি না কি?? মাথা মোটা গর্ধব তুই একটা।
নিজেকে বকতে বকতে গাড়ি থেকে নামে তুলতুল।
সুমু আর তনুকে দেখে তুলতুলের আবার কান্না পায়। ঠোঁট উল্টে কান্না করে দেয়। হাসিব হিমু সুলাইমান গাড়িতে বসে গেছে।
সায়ান সুমুর সাথে কথা বলছিলো। তুলতুল কান্না করতে করতে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
“তুমি তোমার ভাইকে কিছু বলো। দেখো আমার গালটাকে লাল করে দিয়েছে। লোহার মতো শক্ত হাত দিয়ে দুুই দুইটা থা*প্প*ড় দিছে। দাঁত গুলো নরেচরে গেছে আমার। হা করতে পারছি না। কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে। এতো নি*র্যা*তন কেনো করা হয় আমাকে? তুমি এখন এর বিচার করবা। আমি সোজা কথায় বলে দিলাম।
নাক টানতে টানতে বলে তুলতুল। তনু আর সুমু মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে আছে। সত্যিই তুলতুলকে দেখে খারাপ লাগছে।
সায়ান বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।
“আর একটা কথা বললে সব গুলো দাঁত ফেলে দিবো।
চলবে