#আমার তুমি ২
#পর্বঃ ২৫
#তানিশা সুলতানা
তুলতুল খুব সুন্দর একটা ফন্দি এঁটে ফেলেছে। আহহহা আজকে সায়ান বাপ বাপ করে তুলতুলের পিছু ছেড়ে দেবে। তুলতুলের নাম শুনলেই ভয়ে পালাবে।
নাচতে নাচতে রান্না ঘরে যাচ্ছিলো তুলতুল। আর তখনই রান্না ঘরে থেকে বের হচ্ছিলো খুকি বেগম। ঠাসস করে ধাক্কা লেগে যায় তুলতুলের সাথে। ব্যাথা পায় তুলতুল। খুকি বেগমের সাথে শুধু একটু ছোঁয়াই লেগেছে।
তুলতুল নিজেকে সামলাতে গিয়ে একদম ফ্লোরে পড়ে যায়। ব্যাথা পাওয়া পায়ে আবারও ব্যাথা পায়। চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে ব্যাথায়।
“আল্লাহ গো এই ছেমড়ি আমাকে মেরেই ফেললো গো। অসব্ভ্য মাইয়া। চোখ কি হাতে নিয়ে ঘুরো না কি? ব্যাথা পেলাম আমি৷ ইসসস এখন হাঁটতেই পারবো না। নাতনির বাড়ি এসে এভাবে ম*রতে হবে জানলে আসতাম ই না। কেমন ঘড়ে বিয়ে করলো
খুকি বেগম বকবক করেই যাচ্ছে। এদিকে তুলতুল উঠতে পারছে না। রান্না ঘরে থেকে তন্ময় আর সুমু দৌড়ে আসে। তুলতুলকে পড়ে থাকতে দেখে তন্ময় দৌড়ে গিয়ে তুলতুলকে ধরে। সুমু দাদির পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
” দাদিমা তুমি তো পড়োও নি। ব্যাথা কিভাবে পাবে? শুধু শুধু মুখ চালাও কেন?
খুকি কটমট চোখে সুমুর দিকে তাকায়। সুমু মুখ বাঁকায়।
ততখনে সবাই চলে এসেছে।
“মা ঠিক আছো?
সালমান মায়ের কাছে এসে তাকে ধরে বলে।
” দাদির কিছুই হয় নি আব্বু। হয়েছে তুলতুলের। তাকে জিজ্ঞেস করো।
খুকি বেগম কিছু বলার জন্য মুখ খুলছিলো তখনই সুমু বলে ওঠে। তন্ময় তুলতুলকে ধরে সোফায় বসিয়ে দেয়। পায়ের গোড়ালি লাল হয়ে ফুলে উঠেছে। তন্ময় তুলতুলের পা ডলে দিচ্ছে।
সায়ান এক পাশে দাঁড়িয়ে বুকে হাত গুঁজে তুলতুলের দিকে তাকিয়ে আছে।
“মা আপনি বসেন।
হামিদা বলে।
” বসবো না। এখানে থাকবোই না আমি। এই মেয়ে ভীষণ বেয়াদব। ফেলেই দিচ্ছিলো আমাকে। কানা না কি এ?
দাঁতে দাঁত চেপে রাগে গজগজ করতে করতে বলে দাদি।
“দুই ভিন্ন প্রজাতির পাগল এক জায়গায় হলে এমনটাই হয়। এটা সিম্পল।
সায়ান বলতে বলতে চলে যায়। মুখ টিপে হেসে ওঠে হিমু হাসিব আর সুমু। সোনার রাগ হচ্ছে। এখান থেকে যেতে পারলেই বাঁচে।
“তোর ছেলে আমাকে পাগল বলে চলে গেলো? কিচ্ছু বললি না তোরা? পাগল আমি?
খুকি খেঁকে উঠে বলে।
” মা তুমি ওর কথা ছাড়ো। এসো বসবে।
খুকির রাগ কমে না। গজগজ করতেই থাকে। সুমু বরফ এনে দেয়। তন্ময় তুলতুলের পায়ে ঢলে দেয়।
“সুমু আমাকে এক মগ কফি বানিয়ে দিও তো।
তুলতুল বলে। পাশেই এমপির বাড়ির সবাই বসে আছে।
” কিহহহহহ আমাদের বাড়ির মেয়েকে কাজের অর্ডার দেওয়া হয় এখানে?
হামিদা বলে। তন্ময় দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় সুমুর দিকে। সুমু বিরক্ত হয়।
“তোমরা এতো জ্বালাচ্ছো কেনো বলো তো? এটা আমার শশুড় বাড়ি। আমাকে এখানে অর্ডার করতেই পারে।
দাদিমাও তো তোমাকে অর্ডার করে। তাহলে আমাকে করলে পবলেম কি?
সুমু রান্না ঘরে চলে যায়। হামিদা শাশুড়ীর দিকে তাকায়। সালমা আর মনি বিরক্ত হয়ে গেছে। এরা পদে পদে দোষ ধরেই যাচ্ছে। মেয়েটাকে কি এখানে টিকতে দেবে না?
সুমু এক মগ কফি বানিয়ে তুলতুলের হাতে দেয়।
” কে খাবে তুলতুল? তুমি তো কফি খাও না।
সুমু ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করে তুলতুলকে।
“তোমার ভাই।
মুখ বাঁকিয়ে বলে তুলতুল।
সুমু ঠোঁট টিপে হাসে।
” আচ্ছা চলো আমি রুমে দিয়ে আসি তোমায়।
সুমু তুলতুলকে ধরে রুমের দিকে নিয়ে যায়। তন্ময় রান্না ঘরে চলে যায়। এদের দ্রুত খাইয়ে বিদায় করতে হবে।
দরজা ওবদি এসেই তুলতুল সুমুকে চলে যেতে বলে। বাকিটা একাই পারবে। সুমুও জেদ করে না চলে যায়। তুলতুল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ভেতরে ঢোকে। সায়ান টান টান হয়ে শুয়ে আছে।
“প্রতিবন্ধী তুই? এভাবে পড়ে যাস কিভাবে? বল শক্তি নেই? নেক্সট টাইম পড়ে গেলে সারাজীবন আমার কোলে উঠে থাকতে হবে বলে দিলাম।
তুলতুলের উপস্থিতি টের পেয়ে উঠে বসে বলে সায়ান। তুলতুল ভেংচি কাটে। ঢং দেখে বাঁচি না।
” আমি পড়বোই আপনার কি?
“আমার কিছুই না। জাস্ট বললাম। কোলে নিয়ে ঘুরবো। এটাই। আর সায়ান মাহমুদ কখনো ফাঁকা কথা বলে না।
তুলতুল মুখ বাঁকায় ভীষণ বিরক্ত এই লোকটা। উষ্ঠা খাবে তুলতুল। তো ওনার কোলে নিয়ে ঘুরতে ইচ্ছে কেনো হবে? খালি ছোঁয়ার ধান্দা।
তুলতুল সায়ানের সামনে দাঁড়িয়ে কফির মগ এগিয়ে দেয়।
” আপনার কফি।
সায়ান তুলতুলের দিকে এক পলক তাকিয়ে কফিটা হাতে নিতে যায়।
আর সাথে সাথে তুলতুল মগটা ফেলে দেয়। ইচ্ছে ছিলো গরম কফিটা সায়ানের হাতে ফেলবে। এমনটাই প্লানিং কিন্তু এখন কি হয়ে গেলো? গরম কফি সায়ানের প্যান্টে পড়েছে।
তুলতুল ভয় পেয়ে দু পা পিছিয়ে যায়। সায়ান কটমট চোখে তাকায় তুলতুলের দিকে।
লোকটা কি পাথর না কি? পুরে যাচ্ছে একটু তো আর্তনাদ করতে পারতো।
“বিশ্বাস করুন আমি এমনটা ভাবি নি। জাস্ট আপনার হাতে ফেলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনি যে হাত সরিয়ে নেবেন আর কফি যে ওখানে পড়বে ভাবতেও পারি নি। এই যে আপনার মাথা ছুঁয়ে বললাম। এতোটাও পাষাণ আপনার মতো আমি না।
তুলতুল একটু থেমে জীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। সায়ানের চাহনি এমন যে কাঁচাই গিলে খাবে।
” ববব্যাথা করছে? জ্বলছে? আচ্ছা আমি পানি এনে দিচ্ছি। ও মা পানি আনলে তো ঝামেলা। ওখানে কিভাবে পানি দিবেন? তার থেকে ভালো আপনি ওয়াশরুমে ঢুকে যান। আমার দিকে এভাবে বাঘের মতল তাকিয়ে থাকলে ব্যাথা কমবে না। আমাকে হালুম করে গি*লে খেলেও ব্যাথা কমবে না। তাই এভাবে না তাকিয়ে ওয়াশরুমে যান।
আমি খুব সরি।
তুলতুল মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে বলে।
“ইডিয়েট
ইচ্ছে করে এক চর এ দাঁত ফেলে দিতে।
ধমক দিয়ে হনহনিয়ে চলে যায় সায়ান এই রুম থেকে। সায়ান যেতেই তুলতুল হাসতে হাসতে লুটোপুটি খায়।
” বেশ হয়েছে। খুব ভালো হয়েছে। হাতে ফোঁসকা পড়লে দেখতে পারতাম এখন তো দেখতেও পারবো না। কি আজিব জায়গায় পড়লো? বাপরে বাপ।
ফোঁসকা পড়েছে দেখতে পারলে অবশ্য প্রাণের জ্বালা মিটতো। তুলতুলের পেছনে লাগা না? দেখ কেমন লাগে। এরপর থেকে তুলতুল নামটা মুখে আনলেও ভয় পাবি। (খাটে গোল হয়ে বসে তুলতুল)
যাককক বাবা এতো দিনে ঘাড় থেকে হনুমান নামলো। এখন আমি বিন্দাস। বলে বলে ছেলে পটাবো আর বলে বলে প্রেম করবো।
ভাবছি এক সাথে চার পাঁচটা করে প্রেম করবো। দেখবো কে বেশি কেয়ার করে।
আহহহা এতো শান্তি আমি কোথায় রাখবো।
দুই মেলে বিছানায় শুয়ে পড়ে তুলতুল।
রান্না বান্না শেষ। টেবিলে এতো গুলো মানুষের জায়গা হবে না। তাই আগে পুরুষদল খেয়ে উঠেছে। তাদের খাবার পরিবেশ করেছে সুমু আর তন্ময়। তনু আর পাপন খাবার এগিয়ে দিয়েছে। রান্না খুব ভালো হয়েছে। সায়ান খেতে বসে নি। মায়ের কোলে মাথা রেখে সোফায় শুয়ে আছে। সালমা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
“তোমার কি হয়েছে সায়ান? বাড়িতে কেনো যাচ্ছো না? ফোন তুলছো না। গ্রামে আসলে অথচ বাড়িতে না এসে বোনের শশুড় বাড়ি কেনো আসলে? তোমার জন্য পরিবার সুদ্ধ এখানে আসতে হলো।
হামিদা বলে।
” আমার রূপ বেড়েছে না কি? যে দেখতে আসতে হবে।
সায়ান কপাল কুঁচকে গম্ভীর গলায় বলে। থমথমে খেয়ে যায় হামিদা।
“কথার ছিড়ি দেখো? এই ছেলে আমার মতো হয় নাই। দাদার মতো হয় নাই। কার মতো হইছে? আমাদের বংশের কারো তো এতো রাগ নাই।
খুকি বলে ওঠে।
” তোমার যে আগে বিয়ে হইছিলো ওই ঘরের দাদা তো ভীষণ রাগী ছিলো। তার মতোই হয়েছি।
সায়ান চোখ বন্ধ করে কপালে হাত ঠেকিয়ে বলে ওঠে। স্তব্ধ হয়ে যায় সবাই। ভাগ্যিস এখানে পুরুষ দলের কেউ নেই। খুকি বড়বড় চোখ করে তাকায়। এই ছেলে এখন মানসম্মান নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিয়েছে।
“আব্বা এসব কি কথা? এসব বলতে নেয়। পাপের কথা।
সালমা ছেলেকে শাসন করে বলে।
“তার ভাঙা রেডিও বন্ধ করলেই আমি চুপ করে যাবো।
সোজাসাপ্টা জবাব সায়ানের। এরপর আর কোনো কথা বলার সাহস পায় না কেউ। কখন কি বলে দেবে আল্লাহ মালুম।
তুলতুলের ভীষণ খিধে পেয়েছে। তনু ফ্রেশ হওয়ার জন্য রুমে ঢুকে। ফ্রেশ হয়ে যখন আসছিলো তখন তুলতুল বলে সেও যাবে। তনু ধরে নিয়ে আসে ওকে।
এমপি বাড়ির মহিলারা খেতে বসেছে। সোফা এখন ফাঁকা। শুধু সায়ান আর হিমু বসে আছে। হাসিব তার বাবা চাচাদের সামনে এলাকা ঘুরে দেখতে গেছে।সামনে ইলেকশন। এখন এলাকার লোকজনদের সাথে দেখা করাটা খুব লাভজনক।
তুলতুলকে সোফায় বসিয়ে দেয় তনু। আছিয়া মেয়েকে দেখে তারাহুরো করো খাবার বেরে মেয়ের সামনে হাজির হয়। কাজের চাপে খেতেই দিতে পারে নি তুলতুলকে। খাইয়ে ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে দেবে।
সায়ান পায়ের ওপর পা তুলে ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে আছে তুলতুলের দিকে।
চলবে