প্রিয়_প্রাণ #সাইয়্যারা_খান #পর্বঃ৪৬

0
376

#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৬

ছেলে আর বউ নিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে এসেছে আরহাম। কোন ভাবেই চাচির সামনে থাকার বা ওর স্ত্রী, সন্তান কে রাখার ইচ্ছে আর অবশিষ্ট নেই। থাকবার কথা ও না। তোঁষা এমনিতেও ওর মা’কে সহ্য করতে পারে না। কোন ভাবেই মা’কে দেখতে চায় না। এবার যখন ওরা আসলো তখন শুধু ছলছল চোখে তাকিয়ে ছিলো ওর মা। তোঁষা ফিরেও তাকায় নি। আরহামে’র হাতটা শক্ত করে ধরে হেটে বেরিয়ে এসেছে।
পরনে থাকা বোরকা খুলে তোঁষা মুখে দিয়ে বেরিয়ে এলো। আরহাম তখন ছেলের প্যান্ট খুলে নরম প্যান্ট পরাচ্ছে। তোঁষা এক পলক দেখে কিচেনে গেলো। আরহাম রুম থেকেই ডাক দিলো,

— তুঁষ?

তোঁষা জবাব দিলো না। আরহাম পুণরায় ডাকলো,

— প্রাণ?

— উউউ বাব্বাহ।

চমকে তাকালো আরহাম। শুয়ে থাকা প্রাণ তার পা বাবা’র বুকে তুলে দিয়ে ডাকের উত্তর দিলো। আরহাম হেসে ছেলের পায়ে চুমু খেয়ে বললো,

— আপনার আম্মু’কে ডাকি বাবা। সে তো আমার প্রাণে’র টুকরো। এক টুকরো আপনি, এক টুকরো আপনার মা।

ছোট্ট প্রাণ বাবা’র দিকে হাত বাড়ালো। সে কোলে উঠতে চায়। তার শুয়ে থাকতে মোটেও ভালো লাগছে না।

তোঁষা’র কাছে গিয়ে ই কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠে আরহাম বললো,

— ডাকছি না? জবাব দিস না কেন?

— কাজ করছি না? ডাকো কেন?

ভ্রু কুঁচকায় আরহাম। এই রোগ নতুন। প্রশ্নের উত্তরে তোঁষা প্রশ্ন ই করবে। আরহাম প্রাণের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে কিচেনে ঢুকে বললো,

— কি করছিস?

— দেখো।

আরহাম তাকালো। বক্সের খাবারগুলো গরম করছে তোঁষা। জোর করে আরহামে’র মা রাতের খাবার সাথে দিয়ে দিয়েছে। তোঁষা চুপচাপ খারাপ গরম করার মাঝেই ছেলের অস্পষ্ট কথা শুনতে পেলো,

— আআমমম্মু বব্বাহ আম।

তোঁষা ভাষা বুঝলো ছেলের আম বলতে সে খেতে চাচ্ছে তবে আপাতত তোঁষা খাওয়াতে চাইছে না৷ তোঁষা রেগে আছে অথচ যার সাথে রাগ তার কোন হেলদুল নেই। রাগে কান্না পেয়ে গেলো এই মুহূর্তে। আরহাম মুখে ও ও শব্দ করে ছেলেকে হাতে তুলে নাচাতে নাচাতে তোঁষাকে বললো,

— প্রাণে’র ক্ষুধা লেগেছে। রুমে চল। আমি দেখছি বাকিটা।

তোঁষা একপ্রকার ছোঁ মে’রে ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে যেতে যেতে বললো,

— সারাক্ষণ মহিলাদের কাজ ই করে যাও। আর কিছু করার দরকার নেই।

আরহাম চামচ নাড়তে নাড়তে বললো,

— কি বললি? তুঁষ? এই….

তোঁষা চলে গিয়েছে। আরহাম কথা না বলে গুনগুন করতে করতে বাকি কাজ করে রুমে এলো। এখনও তার মুখে গুনগুন শব্দ। তোঁষা’র মুখের সামনে এসে ফুঁ দিতেই তোঁষা বিরক্ত হয়ে বললো,

— সরো।

— ঘুমাচ্ছিস?

— যাও এখান থেকে।

— কি হয়েছে বল না প্রাণ।

— কিছুই হয় নি। ওহ্ আহ্ ছাড়ো। ব্যাথা পাচ্ছি। আরহাম ভাই!

আরহাম তারাতাড়ি নিডলটা তোঁষা’র পেট থেকে বের করে নিলো। এক ফোঁটা থেকেও কম র*ক্ত বেরিয়ে এসেছে পেট থেকে। কথার মাঝেই ইনসুলিনটা পুশ করে দিচ্ছিলো আরহাম। র*ক্ত দেখে নিজেই অবাক হলো। দক্ষ হাতে পুশ করেছে সে। তাহলে কি হলো? আরহাম জানে নিডলে মাঝেমধ্যে ই সমস্যা থাকে যার জন্য র*ক্ত বেরিয়ে যায়। তোঁষা’র ব্যাথাকাতুর শব্দ যেন আরহামে’র হৃদপিণ্ডেই সুচের হুল ফুটালো। তোঁষা’র বুকে থাকা প্রাণ পিটপিট করে তাকালো। মায়ের করা শব্দে তার ঘুম ভেঙে গিয়েছে।
আরহাম তোঁষা’র পেটে আঙুল ছুঁয়ে র*ক্তটুকু মুছে নিলো। তার চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে যাচ্ছে। এই লাল, রক্তলাল চোখ তোঁষা আজ নতুন দেখে নি। দুরুদুরু করছে ওর বুকটা। আরহাম মুচড়ে ধরেছে হাতে থাকা নিডলটা। যেই না উঠে যাবে ওমনিই তোঁষা বলে উঠলো,

— প্রাণ’কে কোলে নাও।

আরহাম কথা না বলে দ্রুত পায়ে চলে যেতে নিলেই তোঁষা কিছুটা জোড়েই বললো,

— ওকে নাও বলছি নাহলে কিন্তু ছুঁড়ে ফেলে দিব৷ বুকে ব্যাথা করছে আমার। সরাও!

দরজার বাইরে পা রাখা হলো না। আরহাম ভীতু চোখে তাকিয়ে দ্রুত ছেলেকে কোলে তুলে নিলো। তার লাল চোখটাতে এখন ভয় দেখা গেলো। যদি তোঁষা ফেলে দিতো।
প্রাণ ঘুমাবে। তাই বাবা’র বুকে মুখ গুজে দিয়ে উম উম শব্দ করছে। আরহাম ওকে নিয়ে বারান্দায় গেলো। চাঁদের আলোয় ওর ছোট্ট প্রাণটাকে উজ্জ্বল দেখাচ্ছে যেন দ্যুতি ছড়াচ্ছে এই প্রাণটা। আরহাম ছেলের কপালে, গালে, চিবুকে চুমু খেয়ে বললো,

— বাবা তোমার জন্য সব ছেড়ে দিবে আব্বু। তুমি ভালো থাকো। তোমার আম্মু ভালো থাকুক। বাবা নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করছি। মেডিসিন নিচ্ছি। বাবা নিজেকে বদলে নিব প্রাণ। সত্যি বলছি।

দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে তোঁষা শুনলো সবটা। তখন যদি এমন না করত তাহলে হয়তো আরহাম সেই নিডল দিয়ে নিজেকেই আঘাত করত। তোঁষা কোন ভাবে আঘাত পেলেই সেটা নিজের উপর ফলায় আরহাম৷ তার মতে তোঁষার দুঃখ অনুভব করতে পারে সে এর মাধ্যমে।

রুমে ঘুমন্ত ছেলেকে রেখে তোঁষাকে হুট করে পাজা কোলে তুললো আরহাম। ভরকে গেলেও নিজেকে সামাল দিলো তোঁষা। আরহাম হেসে ফেললো। তোঁষা ওর গলা জড়িয়ে ধরে বললো,

— খেতে নিয়ে চলো।

— ভিন্ন কিছু খেতে মন চাইছে।

— কি?

— তোকে।

— লুচু।

— জামাই লাগি তোর।

— আরহাম ভাই লাগো আমার।

— পাঁজি হচ্ছিস প্রাণ।

— আমার আরো কিছু প্রাণ চাই।

— একটাকে ই সামলাতে পারিস না।

তোঁষা চুপ করে গেলো। আরহাম ওর কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,

— কথা বলিস না কেন?

— আর কতদিন এমন চলবে?

— কেমন?

— আমার স্বাভাবিক সংসার চাই।

— এটা কি স্বাভাবিক না?

— না।

— কি চাই?

— তুমি কাজে যাবে। আমি সংসার সামলাব। প্রাণ’কে সামলাবো। সন্ধ্যায় তুমি এক জংলী ফুল হাতে বাড়ী ফিরবে আমি দরজায় পিঠ লাগিয়ে অপেক্ষা করব। তুমি যখন ফুলটা আমার চুলে গুজে প্রাণ’কে কোলে তুলবে তখন আমি দুইজনকে ঝাড়ব। হসপিটালে যাও। প্লিজ।

— ঐ পেশায় কিভাবে যাই যার কুব্যবহার করেছে আমি।

— দোষ কারো একার নয়।

— দায় এড়াতে পারছি না।

— আমার কসম লাগে।

— মাইর খাবি তুঁষ। এসব শিরক কেন করিস?

— বলো যাবে।

— মন মানে না৷

— আমার জন্য। প্রাণের জন্য।

— যাব।

— সত্যি?

— হু।

তোঁষাকে কোলে নিয়েই আরহাম খাবার টেবিলে গেলো। আজ তোঁষা নিজ হাতে খাওয়ালো ওকে। আরহাম খেতে খেতেই ভাবলো এবার আর নয়। সে সুস্থ, স্বাভাবিক সংসার দিবে তোঁষাকে। ওদের সন্তান বড় হবে স্বাভাবিক ভাবে। কোন ত্রুটিতে নয়।

#চলবে…..

[অনেক দুঃখীত। অসুস্থ আজ অনেকদিন ধরে। এরমাঝে এতটুকু ই লিখতে পারলাম।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here