#আমার তুমি ২
#পর্বঃ১৫
#তানিশা সুলতানা
“আচ্ছা মামনি আমাকে একটা কথা বলো তো? দুনিয়ায় এতো সুন্দর সুন্দর ছেলে থাকতে তুমি এই বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা কেনো হতে চাইছো? নিশ্চয় তাবিজ করেছে তোমায়?
সবাই হতদম্ভ হয়ে যায় পাপনের কথায়। তন্ময় অসহায় চোখে তাকায় বাবার দিকে। আছিয়া দাঁত কটমট করছে। সুমু কি উওর দেবে বুঝতে পারছে না আমতা আমতা করছে।
-ছি ছি ছি আমার ছেলে হয়ে একটা সুন্দরী মেয়েকে তাবিজ করে পটালি? বলি লজ্জা করলো না তোর?
আছিয়া সত্যি করে বলতে বলেছি। আমার ছেলে কোথায়? মানসম্মান পুরোপুরি ডোবার আগেই একে রেখে আমার ছেলেকে এনে দাও। বুড়ো বয়সে এতো ধকল নিতে পারছি না।
পাপন গম্ভীর গলায় বলে। তুলতুল আর তনু ফিক করে হেসে ফেলে। সুমু মুখ টিপে হাসছে। তন্ময় অসহায় চোখে তাকায় মায়ের দিকে। নাজমা আঁচলে মুখ ঢেকে ফেলে। আছিয়া কটমট চোখে তাকায় স্বামীর দিকে।
“ভীমরতি ধরেছে তোমার? কোথায় কি কথা বলতে হয় জানো না?
পাপন চুপ করে যায়। তখনই হুরমুরিয়ে সায়ান হিমু আর হাসিব ঢুকে পড়ে। সাথে দুজন উকিল আর একজন হুজুর। তন্ময় স্তব্ধ হয়ে যায়। এখনই বিয়ে করতে হবে? সুমু খুশি হয়ে যায়। মনে মনে ভাবছিলো এটাই হবে।
সায়ান ফাস্ট এইচ বক্স নিয়ে সুমুর পাশে বসে পড়ে। সুমু মুচকি হাসে। খুব যত্ন করে বোনের হাতের হ্মত জায়গা তুলোর সাথে স্যা*ভলন মিশিয়ে পরিষ্কার করে দেয়। তুলতুল মুখ বাঁকিয়ে তাকিয়ে আছে সায়ানের দিকে। বজ্জাতের হাড্ডি। সায়ান এক ফোঁটার জন্যও তাকায় নি তুলতুলের দিকে।
হিমু শাড়ি গহনা এনে তনুর হাতে দেয়।
“আমার বোনকে হালকা পাতলা সাজিয়ে নিয়ে এসো।
তনু মুখ বাঁকিয়ে সেগুলো হাতে নেয়।
” ববলছিলাম কি আমি এমনিতে খুব সাহসী। কিন্তু পুলিশ দেখলে একটুখানি ভয় ভয় করে আর কি।
শিক্ষক মানুষ। তোমাদের বাবা যদি পুলিশ টুলিশ নিয়ে আসে? ওই জঙ্গলের ইঁদুরকে ধরে নিয়ে গেলে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যদি আমাকে?
আমতা আমতা করে বলে পাপন।
“ইনি আবার এতোখন আমার ছেলেকে ভীতু বলছিলো। পুলিশের কথা মনে হতেই প্যান্ট ভেজানোর মতো অবস্থা।
ভেংচি কেটে বলেন আছিয়া বেগম। খিলখিল করো হেসে ওঠে তনু তুলতুল। সায়ান তৃহ্ম দৃষ্টিতে তাকায় তুলতুলের দিকে। সায়ানের দিকে চোখ পড়তেই থেমে যায় তুলতুল। সোজা হয়ে বসে।
” কিচ্ছু হবে না।আমি আছি তো।
গম্ভীর গলায় বলে সায়ান।
পাপনের আর কোনো কথা বলার সাহস হয় না। ঘরের শত্রু বিভীষণ। যখন তখন মানসম্মান ডুবিয়ে দিতে পারে। আগে কি কখনো ভেবেছিলো একমাএ আপন বউ এমন শত্রু হবে? জানলে তো এইটা বাদ দিয়ে ছোট বোনকে বিয়ে করতো।
নিজের ভাবনায় নিজেই দাঁত দিয়ে জিভ কাটে। এই কথা যদি একমাএ বউয়ের কানে যায় তাহলে একদম উগান্ডা পাঠিয়ে দেবে।
তুলতুল আর তনু সুমুকে সাজাতে নিয়ে যায়। সায়ান খাবার অর্ডার করে ফেলেছে। দুই জন্য বন্ধুও এসেছে সায়ানের। নীলয় আর অভি।
আপাতত হিমু হাসিব নীলয় আর অভি মিলে বাসর সাজাচ্ছে।
আছিয়া বেগম চুলায় দুধ বসিয়ে দেয়। পায়েস বানাবে। ওনাকে সাহায্য করছেন নাজমা বেগম।
পাপন সায়ানের পেছন পেছন ঘুরছে। সায়ান যেখানেই যাচ্ছে উনিও সেখানেই যাচ্ছে। উদ্দেশ্য সায়ানকে জিজ্ঞেস করা পুলিশ সত্যিই আসবে না তো?
পুলিশ আসলে উনি পালাবে। পালানোর উপায়ও খুঁজে ফেলেছে। গতকাল তুলতুলের জন্য মুখোশ কিনে এনেছে। সেটা পড়েই ছাঁদে বসে থাকবে। কেউ খুঁজে পাবে না। পেলেও ভয় পাবে।
সায়ানকেও আবার ভয় পায় পাপন। আবার অপছন্দও করে।
🥀🥀
তনুর কাছে সুমুকে সাজাতে দিয়ে তুলতুল এক দৌড়ে এসে পড়ে ভাইয়ের রুমে। সাউন্ড বক্সে সাকি গান প্লে করে সবেই হাসিব নাচ শুরু করেছিলো। নীলয় একটু একটু তাল মেলাচ্ছে আর কাজ করছে। হিমু আর অভি তো মন দিয়েই কাজ করছে।
তুলতুল সোজা গিয়ে হাসিবের সামনে দাঁড়ায়। নাচ বাদ দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় হাসিব। তুলতুল হাসিবের কানে কানে কিছু বলে। হাসিব হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাওয়ার মতো অবস্থা। তুলতুল চুপ থাকতে বলে আবার দৌড়ে বেরিয়ে যায়।
নীলয় অভি হিমু হাসিবের দিকে তাকিয়ে আছে। হাসিব ওদের সাথে বেপারটা শেয়ার করে। সবাই বড়বড় চোখ করে তাকায়।
🥀🥀
বিয়েটা সাদামাটা হলে কি হবে? সুমু একদম হিন্দি সিনেমার হিরোইনদের মতো সেজেছে। টকটকে লাল লেহেঙ্গার পড়েছে।
গা ভর্তি গহনা। সেজেছেও সেই লেভেলের। তনুকে কিছুই করতে দেয় নি। নিজে নিজেই সেজেছে।
সায়ান তন্ময়কে সাজিয়ে নিয়ে আসে। পাপন রান্না ঘরের ফ্রীজের পেছনে লুকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি পুলিশ এসে যাবে।
তুলতুলও সেজেছে একটুখানি। তনু আর তুলতুল লাল গাউন পড়েছে।
অবশেষে বিয়ে পড়ানো শেষ হয়। সুমুর খুশি আর দেখে কে?
হুজুর আর উকিল বেরিয়ে যেতেই লাফিয়ে ওঠে তুলতুল। হাসিব সাউন্ড বক্স বাইরে নিয়ে এসে “দিলবার দিলবার” গান প্লে করে দেয়। নেচে ওঠে তুলতুল তনু হাসিব অভি সুমু আর নীলয়। সায়ান হিমু আর তন্ময় সোফায় বসে আছে।
আছিয়া বেগম আর নাজমা বেগম খাবার সাজাচ্ছে আর মুচকও হাসছে। এরা খুশি থাকলেই চলবে।
পাপন গানের শব্দ পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। যাক বাবা পুলিশ আসছে না।
উনিও সুরসুর করে চলে যায় নাচ দেখতে মনে মনে নাচারও ইচ্ছে।
সুমু শশুড়কে দেখে এগিয়ে যায়। হাত ধরে নাচতে শুরু করে। পাপনকে আর পায় কে ছেলের বউ আর মেয়ের হাত ধরে উরাধুরা লাফানো শুরু দেয়। আছিয়া কটমট চোখে তাকিয়ে থাকে।
কোমর ব্যাথা করলে তখন বুঝাবে।
তন্ময় রাগে ফেটে যাচ্ছে। এই মেয়ে পাগল বানিয়ে দেবে।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে ওরা ওদের পজিশন নিয়ে নেয়। বউকে বাসর ঘরে বসিয়ে রেখে আসা হয়।
তনু হিমুর দিকে ভুল করেও তাকাচ্ছে না। হিমু সুযোগের অপেক্ষায় আছে। এই মেয়েকে আজ দেখেই ছাড়বে।
তুলতুল লাফাতে লাফাতে তন্ময়ের রুমের দিকে যাচ্ছিলো সায়ান হাত ধরে ফেলে।
এক পাশে একটু আড়ালে নিয়ে যায়। তুলতুল শুকনো ঢোক গিলে মাথা নিচু করে ফেলে।
“আমি এসেছি চোখে পড়ছে না?
সায়ান শক্ত করে তুলতুলের হাত চেপে ধরে বলে। তুলতুল আমতা আমতা করতে থাকে। একটুও লিপস্টিক দেয় নি ঠোঁটে। তাহলে এভাবে ধরেছে কেনো বুঝতে পারছে না।
” সসরি
তুলতুল রিনরিনিয়ে বলে। সায়ান বাঁকা হাসে।
“ওই ঘরের কাজ শেষ হলে ছাঁদে চলে যাবি।
তুলতুল বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নারায়। মনেমনে বলে ” বয়েই গেছে যেতে”
সায়ান পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নেয় তুলতুলের।
“না আসলে একদম তুলে নিয়ে নর্দমায় ফে*লে আসবো।
শান্ত গলায় হুমকি যাকে বলে।
” যাবো।
তুলতুল বলে।
“হুমম গুড
হাত ছেড়ে দেয় তুলতুলের। তুলতুল সায়ানের দিকে এক পলক তাকিয়ে দৌড় দেয়। কিছুটা গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। পেছন ফিরে দেখে সায়ান তাকিয়ে আছে।
“তোকে চু*বানি দিমু বুড়ি গঙ্গায়। শা*লা হনুমান। ছাঁদে তো আমি যাবোই না। কচু করবি তুই আমার।
বলেই বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দৌড় দেয় তুলতুল।
সায়ান দাঁতে দাঁত চেপে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে।
” জাস্ট ওয়েট এন্স সী বেবি”
🥀
তন্ময় রুমে ঢুকে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। রাগটা মাথা চড়ে বসেছে। ধুপধাপ পা ফেলে বিছানার কাছে আসে। এই টুকু সময়ের মধ্যে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে রুমটা।
ফুল সাজানো বিছানায় এক হাত ঘোমটা টেনে বসে আছে সুমু।
“ঘোমটা কেনো দিছো হ্যাঁ? তুমিও আবার লজ্জা পাও না কি?
নেকা।
ঠাস করে বসে তন্ময় খাটে। সুমু একই ভাবে বসে আছে।
” প্রবলেম কি তোমার? ঘোমটা সরাও না কেন? ইচ্ছে করছে তোমাকে সমুদ্রে নিয়ে চু*বানি দেই। মুখ না দেখো কথা বলতে পারি না আমি।
সুমু তবুও একই ভাবে বসে আছে। তন্ময় বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে দাঁতে দাঁত চেপে ঘোমটা তুলতে যায়। সাথে সাথে এক লাফে বিছানা থেকে নেমে পড়ে বউ।
“আমি নিষ্পাপ শিশু। আমাকে চু*বানি দিয়েন না।
হাসিব ঘোমটা তুলে কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে। তন্ময় হতদম্ভ হয়ে যায়।
খাটের তলা, আলমারির পেছন আর বেলকনির পর্দা পেছন থেকে হাসতে হাসতে বের হয় বাকি সবাই। সুমুও ছিলো ওদের সাথে। সেও হাসছে।
এখানে শুধু সায়ান নেই। তুলতুল হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে।
” বাসর ঘরে কেউ বউকে সমুদ্রে চুবানি দিতে চায় তা আজকে জানা নিষ্পাপ আমি।
হাসিব শাড়ি খুলতে খুলতে বলে।
“তোদের আজকে আমি
তন্ময় রেগে হাতা গোটাতে গোটাতে এগোতে থাকে। সবাই যার যার মতো দৌড়ে বেরিয়ে যায়। তন্ময় মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।
লেজ ছাড়া বাঁদর একেকটা।
সুমু হাসতে হাসতে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। তন্ময় দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুমেই চেঞ্জ করে নেয়।
🥀
যার যার রুমে চলে যায় সবাই। বাকি সীন কাল সকালে দেখবে।তনু হিমু খোঁজে গেছে আজকে হিমুর সাথে কাটকাট কথা বলে সব মিটিয়ে নেবে।
তুলতুল রুমে গিয়ে দরজা আটকে জামা খুলতে যায় আর তখনই নজর পড়ে বিছানার দিকে।
🥀
সুমু নীল একটা শাড়ি পড়ে বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়ে। এখনো হাসি থামছে না ওর। তন্ময়ও দাঁত কটমট করতে করতে ঠাস করে খাটে বসে আর সাথে সাথে খাট ভেঙে পড়ে যায়। তন্ময় উল্টে পাল্টে পড়ে যায়। সুমু পড়ে তন্ময়ের ওপর।
চলবে