আমার তুমি ২ #পর্বঃ২৭ #তানিশা সুলতানা

0
287

#আমার তুমি ২
#পর্বঃ২৭
#তানিশা সুলতানা

তুলতুল ফট করে মাথা তুলে তাকায় সায়ানের দিকে। সায়ানের চোখ মুখে গম্ভীরতার ছাপ। তিয়াসের গান ভালো। খুব ভালো গায় ছেলেটা। কিন্তু এখন কি সেটা স্বীকার করবে? স্বীকার করলে রেগে যাবে কি? অবশ্য সব সময়ই লোকটার রাগ নাকের ডগায় এসে থাকে।

“বলবি না?

সায়ান গম্ভীর গলায় বলে ওঠে। ফাঁকা গলায় ঢোক গিলে তুলতুল৷ পিটপিট করে চোখের পলক ফেলে সায়ানের থেকে চোখ সরিয়ে নেয়।

” আমি তো গান সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। ভালো খারাপ ও বুঝি না। তবে সে গিটার বাজিয়ে সুর টেনে গান করলে খারাপ লাগে না।
খুব ভালো হয়ত গায় না। খুব ভালো করলে তো বড় সিঙ্গারই হয়ে যেতো তাই না?
এখন যদি আপনি থা*প্প*ড় মারার জন্য এটাকে কারণ বানান তাহলে আমি ভীষণ রেগে যাবো। সবাইকে বলে দিবো আপনি আমায় বিরক্ত করেন। সাথে এটাও বলবো আপনার জন্য আমার শ্বাসকষ্ট হয়। দাভাই ভীষণ রেগে যাবে। আপনাকে এই বাড়িতে আসতে একদম নিষেধ করে দেবে। তাতে অবশ্য আমার ভালোই হবে। আপনার কর্কশ মুখটা দেখতে হবে না। কিন্তু সুমু কষ্ট পাবে।

তুলতুল রিনরিনিয়ে বলে। সায়ান কপালে তিনটে ভাজ ফেলে তাকায় তুলতুলের দিকে। মেয়েটার মুখে এতো কথা কোথা থেকে আসে?এ মানুষ না কি রোবট?
তুলতুল আড় চোখে এক পলক তাকায় সায়ানের দিকে।

“শুনুন বাচ্চাদের দিকে সব সময় চোখ পাকিয়ে তাকাতে নেয়। তাতে তাদের কোমল হৃদয় কেঁপে ওঠে। নরম চোখে তাকাতে হয়।

সায়ান ফোঁস করে শ্বাস টানে।

তুলতুলের গায়ে পাতলা চাদর ছিলো। সায়ান টান দিয়ে সেটা নিয়ে নেয়। তুলতুল চমকে তাকায় সায়ানের দিকে। সায়ান চাদরটা নিজের গায়ে জড়িয়ে অর্ধেকটা তুলতুলের গায়ে দিয়ে দেয়। তুলতুলের হাতের কবজি ধরে এক টান দিয়ে পাশাপাশি বসিয়ে দেয়। একটুও দুরুত্ব নেই দুজনের মধ্যে।
তুলতুল অবাকের ওপর অবাক হচ্ছে। লোকটা নির্ঘাত গাঁজা খাইছে। নাহলে এতো ভালো কি করে হলো?

সায়ান এক হাতে তুলতুলের কাঁধ জড়িয়ে ধরে।
“কাঁধে মাথা রাখ।

খুব শান্ত গলায় বলে। তুলতুল চুপচাপ সায়ানের কাঁধে মাথা রাখে। সায়ানের শার্ট আর মুখ থেকে সিগারেটের তীব্র গন্ধ আসছে। তবুও ভালো লাগছে তুলতুলের। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে। তাবিজ টাবিজ করছে না কি লোকটা?

” দেখ তুলতুল। জেলাসি ঠেলার মতো মানুষ আমি না। আমি চাইলেই পারি জেলাসি হওয়ার কারণটাকে গোড়া থেকে উ*পড়ে ফেলতে। কিন্তু আমি সেটা করছি না। কারণ কি? কারণ হলো সে আমার শক্রু না। তো এবার তুই বল কি করবি?

শান্ত গলায় খু*নের হুমকি। কেঁপে ওঠে তুলতুলের ছোট্ট হৃদয়। কেঁপে ওঠে গা টা। মাথা তুলতে যায়। সায়ান তুলতে দেয় না। চেপে ধরে রাখে।
“তোকে সেদিনও বলেছি আজও বলছি তোর যত খালাতো মামাতো পাড়াতো ফুপাতো ভাই আছে। কারো সাথে কথা বলা চলবে না। এমনকি আমার ভাইদের সাথেও কম কথা বলবি। ক্লাস টিউশনি কোথাও কোনো ছেলের আশেপাশে যাওয়া যাবে না।

তুলতুল সায়ানের কথা গুলো মন দিয়ে শুনে। কিছু বলার প্রয়োজন মনে করলো না। তুলতুলের নিরবতা ভালো লাগলো সায়ানের। এমনটাই চায় ও। ও বলবে তুলতুল শুনবে। কোনো প্রশ্ন ছাড়া। অতিরিক্ত কথা বলা পছন্দ না সায়ানের। তেমনই অতিরিক্ত কথা শোনাও পছন্দ না।

” একটা কথা সব সময় মনে রাখবি
“তুই মরে গেলে সয্য করতে পারবো। কিন্তু তোকে অন্য কারো সাথে সয্য করতে পারবো না”

জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয় তুলতুল। গলা শুকিয়ে আসছে। এই মানুষটার শান্ত গলার কথায়ও কলিজা কেঁপে উঠছে। ভীষণ ভয়ংকর লাগে লোকটাকে। ঠান্ডা মাথার খু*নি লোকটা। চোখ দুটো টলমল করে ওঠে তুলতুলের। শরীর কাঁপছে।

“আআপনি আমাকে ভালোবাসেন?

তুলতুল থেমে থেমে প্রশ্ন করে বসে তুলতুল। সায়ান খানিকটা অবাক হয়।
এই সময় এরকম প্রশ্ন একদম আশা করে নি।

“আমি তোকে ভালোবাসি না। কিন্তু তোর মধ্যে আমি আমার ভালো থাকা খুঁজে পায়।

সায়ান তুলতুলের মাথার সাথে নিজের মাথা ঠেকিয়ে বলে। তুলতুল চোখ বন্ধ করে। দুই গাল বেয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। এই পানি সুখের না দুঃখের জানে না তুলতুল। তবে এই টুকু জানে বুকের ভেতরে কোথাও একটা কেমন করছে।

সায়ান দেখার আগেই হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে ফেলে তুলতুল।

ওভাবেই কেটে যায় অনেকটা সময়। সায়ান হাত উঠিয়ে ঘড়ির দিকে তাকায়। দুইটা বেজে গেছে। এখনই বের হতে হবে সায়ানকে। নাহলে সকালের আগে ঢাকা পৌছাতে পারবে না।

” তুলতুল যা রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।

সায়ান তুলতুলের কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নেয়। তুলতুল সোজা হয়ে বসে। সায়ান দাঁড়িয়ে যায়। তুলতুলকেও এক টান দিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়।
তুলতুলের দুই গালে হাত দিয়ে খানিকটা ঝুঁকে তুলতুলের দিকে।

“আমি যা বলেছি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চললে খোদার কসম সব সুখ তোর পায়ের কাছে এনে দেবো। আর নাহলে তোকে মে*রে পুঁতে রেখে দিতেও আমার হাত কাঁপবে না।

ভয়ে কাচুমাচু হয়ে যায় তুলতুল। সায়ান তুলতুলের চোখের ওপর পড়ে থাকা চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে দেয়। তুলতুল চোখ বন্ধ করে ফেলে।
সায়ান একটু সময় নিয়ে তুলতুলকে দেখে তারপর ছেড়ে দেয়।

” রুমে যা
তুলতুলের দিকে পেছন ঘুরে তাকিয়ে বলে সায়ান। সময় নষ্ট করে না তুলতুল। এক দৌড়ে চলে যায়। একবার পেছন ফিরেও তাকায় না। ভীষণ ভয়ংকর লোকটা। এই লোকটাকে নিয়ে ভাবা যাবে না কিছুতেই।

তুলতুল চলে যেতেই সায়ান পকেট থেকে ফোন বের করে। কাউকে কল করে।

“আমি রিক্স নিতে চায় না। তুলা আমাকে ভালোবাসলেও পরিবার মানবে না। আর ও ওর বাবা ভাইয়ের কথার অবাধ্য হবে না। কালকেই ওকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবো। একটা দিনও নষ্ট করবো না আমি। যা হবার পরে দেখে নেবো। ব্যবস্থা কর জলদি।

ওপাশের মানুষটার কথা না শুনেই কল কেটে দেয় সায়ান। দুই হাতে চুল খামচে ধরে আবারও দোলনায় বসে পড়ে।

” পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি।
বিরবির করে বলে সায়ান।

🥀🥀
সুমুর আজকে ভীষণ মন খারাপ। তন্ময় সত্যিই সুমুকে ভালোবাসে না। কখনো দুই দন্ড বসে গল্প করে না। একটা সখ আহ্লাদ পূরণ করে না। ঘুরতে নিয়ে যায় না। সারাক্ষণ একা একা থাকে। আগে তাও কথা বলতো একটু আতটু এখন তাও বলে না। আবার সকাল বেলা তন্ময়ের ফোনে একটা মেয়ের মেসেজ দেখেছে। মেয়েটার নাম রিয়া। নাম দিয়ে পিক দিয়ে নাম্বার সেভ করে রেখেছে।

প্রতিদিন সকালে উঠে শাশুড়ীর হাতে হাতে সাহায্য করতে ছুটে যায় সুমু। কিন্তু আজকে যায় নি। ঘাপটি মেরে শুয়ে আছে। তন্ময় সেই ভোর বেলা উঠে বাজার করতে চলে গেছে। ভূলে ফোনটা ফেলে গেছে।
ভীষণ কান্না পাচ্ছে সুমুর।
আয়নার সামনে দাঁড়ালে নিজেই নিজেকে চিনতে পারে না। সামনে থেকে ছোট ছোট করে কাটা চুল গুলো বড় হয়ে গেছে। গায়ের রং কিছুটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। প্রতি মাসে পার্লারে যায় সুমু।
দুই মাস হয়ে গেছে পার্লারে যাওয়া হয় না। একটা ড্রেস পনেরো দিনের বেশি পড়া হয় মি কখনো। কিন্তু এখানে এসে তিনটা ড্রেস দিয়েই দুই মাস পার করে দিলো।
তবুও কোনো কষ্ট নেই সুমুর। তন্ময় শুধু একটু কথা বললেই ও খুশি।

“সুমু মা আসবো?

পাপন বাইরে থেকে ডাকে। সুমু চোখ মুছে উঠে বসে। ওড়না জামা ঠিক করে নেয়।

” হ্যাঁ বাবা আসেন।

পাপন হাতে কয়েকটা শপিং ব্যাগ নিয়ে রুমে ঢুকে।

“শরীর খারাপ?

মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে পাপন। এবার বুক ফেটে কান্না আসছে সুমুর। প্রতিদিন সকল বেলা বড় বাবা ছোট বাবা বা নিজের বাবা ডেকে তুলতো ঘুম থেকে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো। এখন ভালো করে কথাও বলে না।

” নাহহ বাবা ঠিক আছি।

নিজেকে সামলে বলে সুমু।
পাপন সুমুর পাশে গিয়ে বসে।
সুমুর কপালে হাত দিয়ে চেক করে জ্বর হয়েছে কি না?

“প্রতিদিন তো তুমিই খাবার বেরে দাও আমায়। আমার সাথে বসে খাও। আজকে কি হলো? তোমাকে ছাড়া তো আমি খেতেই পারি না। বাজে অব্ভ্যাস তৈরি করে দিয়েছো।

সুমুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে পাপন। সুমু এবার কেঁদে ফেলে। নিজের পেটের কথা চেপে রাখতে পারে না সুমু। সুমুর কান্না দেখে ঘাবড়ে যায় পাপন।

” বাবা তন্ময় আমাকে ভালোবাসে না। অন্য একটা মেয়েকে পছন্দ করে। সে আজকে মেসেজ দিছে। ১০ টায় দেখা করতে বলছে।

কান্না করতে করতে বলে সুমু। পাপনের কপালে তিনটে ভাজ পড়ে। তার ছেলে তো এমন না?

“তুমি ঠিক দেখেছো?

সুমু পাপনের দিকে তন্ময়ের ফোনটা এগিয়ে দেয়। খানিকটা সময় নিয়ে দেখে পাপন। সুমু দুই হাতে মুখ ঢেকে কাঁদছে।

” মা কান্না করে না। কান টেনে ছিড়ে দেবো আমি পাপনের। সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here