#আমার তুমি ২
#পর্বঃ৩০
#তানিশা সুলতানা
আজকেই তুলতুলের বিয়ে। তাও আবার সায়ানের সাথে। স্তব্ধ হয়ে যায় তুলতুল। এটা কি হচ্ছে? এটা হওয়ার কথা ছিলো না? সুমু সবটা জানতো? তবুও তুলতুলকে বলি দিলো? কান্না পায় তুলতুলের।
এই মুহুর্তে একটা বিশাল বড় রুমে ধবধবে সাদা খাটের ওপর বসে আছে তুলতুল। কিছুখন আগেই সায়ান ওকে রেখে গেছে এখানে। আর বলে গেছে বিয়ের কথা।
সায়ানকে বিয়ে করার কথা কখনো কল্পনাও করে নি তুলতুল। হ্যাঁ দেখতে মাশাআল্লাহ। যেকোনো মেয়েই প্রথম দেখায় নিসন্দেহে পছন্দ করে ফেলবে। তুলতুলেরও অনেকটা দুর্বলতা আছে। কিন্তু লোকটা তো তুলতুলকে ভালোবাসে না। শুধু মা*রে। এই রকম মানুষকে বিয়ে করতে চায় না তুলতুল।
তার থেকেও বড় কথা এখনো বিয়ের বয়স হয় নি ওর। বাবা মা ভাইকে ছাড়া বিয়ে কখনোই সম্ভব না।
কিন্তু এখন তো কিছু করার নেই। বাবা দাভাই শুনলে কিভাবে রিয়েক্ট করবে? সায়ানের পরিবারের সবাই জানলেই বা কি বলবে?
হাজারটা চিন্তা মাথায় এসে যায় তুলতুলের। দুই চোখ বেয়ে পানি ঝড়তে থাকে। ভীষণ রাগ হচ্ছে সুমুর ওপর। এরকমটা না করলেও পারতো। এক আবারও ভাবলো না তুলতুলের কথা? এতোটা স্বার্থপর হয়ে গেলো সুমু?
সায়ান দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে আবার দরজা বন্ধ করে দেয়। তুলতুল চুপচাপ বসে চিন্তা করছে। সায়ানের উপস্থিতি এখনো টের পায় নি৷
সায়ান এসে তুলতুলের পাশে বসে।
“তুলা
গম্ভীর গলায় ডাকে সায়ান। চমকে ওঠে তুলতুল। শুকনো ঢোক গিলে আড় চোখে তাকায় সায়ানের দিকে।
” তুই কি আমাকে বিয়ে করতে চাস না? আমাকে ভালো লাগে না? বা অন্য কোনো পবলেম? বলে দে আমায়৷ ঝামেলা চুকে যাক।
শান্ত গলায় বলে সায়ান। তুলতুল শব্দ করে কেঁদে ওঠে।
“আব্বু দাভাইকে ছাড়া আমি বিয়ে করবো না। আপনাকে আমার ভালো লাগে না এমনটা না। কিন্তু আপনি একটা গুন্ডা। আমাকে থা*প্প*ড় গাল ফাটিয়ে ফেলেন। এখন যদি আপনাকে বিয়ে করে নেই তাহলে যখন তখন আমাকে মে*রে বালি চাপা দিয়ে দিবেন। সেটা আমার জানা। দেখলাম তো বাড়ি ভর্তি ছেলে পেলে। সবার হাতেই পিস্তল বা ছুড়ি। আপনি গুন্ডাদের লিডার আর ওরা হচ্ছে আপনার সাঙ্গপাঙ্গ। সুমু ভীষণ খারাপ। কি করে পারলো আমাকে আপনার মতো একটা সাংঘাতিক মানুষের সাথে ছাড়তে? আপনি আমাকে মে*রেই ফেলবেন। আমি এতো তাড়াতাড়ি ম*র*তে চায় না।
কাঁদতে কাঁদতে বলে তুলতুল। সায়ান ফোঁস করে শ্বাস টানে।
” এতো কথা কেনো? জাস্ট বলবি বিয়ে করবি কি না? আমি এখনই বিয়ে করবো। তুই না করলে অন্য কাউকে।
সায়ান বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বলে৷ তুলতুলের কান্নার আওয়াজ বেরে যায়। ও যেমন সায়ানকে বিয়ে করার কথা কখনো চিন্তা করে নি। তেমনই সায়ানের অন্য কারো সাথে বিয়ে হবে এটাও চিন্তা করতে পারে না।
“আপনি আমাকে চুমু খেয়েছেন। এখন আবার অন্য কাউকে বিয়ে করার কথা চিন্তা করেন কিভাবে? আপনার চরিত্রে সমস্যা আছে। কিন্তু আমার নেই। আমাকে যে চুমু খেয়েছে সে ছাড়া অন্য কারো কথা আমি চিন্তাও করি না। খুব খারাপ আপনি। ভীষণ খারাপ। অন্য কাউকে বিয়ে করেন। আমার কি? আমাকে দিয়ে আসেন। থাকবো না আমি। খারাপ মানুষের সাথে সত্যি সত্যিই থাকবো না।
হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে বলে তুলতুল। সায়ান বাঁকা হাসে। দুই হাত তুলতুলের দুই গালে রেখে মাথাটা খানিকটা উঁচু করে বুড়ো আঙুল দিয়ে আলতো করে চোখের পানি মুছে দেয়। তুলতুল চোখ বন্ধ করে কাঁদছে।
” রুপাকে পাঠাচ্ছি। তোকে সাজিয়ে দেবে৷ একদম অবাধ্য হবি না।
তুলতুলের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে সায়ান। তুলতুল চুপচাপ শুনে। কিছু বলে না।
“গুড গার্ল
মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে যায় সায়ান।
🥀🥀
সুমু কেঁদেই যাচ্ছে। সবাই প্রশ্ন করে যাচ্ছে কি হয়েছে? কোনো উওর দিচ্ছে না। এদিকে এমপির ছেলে পাপন মাস্টারের মেয়ে নিয়ে ভেগে গেছে সেটা পুরো এলাকা ছড়িয়ে পড়েছে।
হাসিব সুমুকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে বাড়িতে নিয়ে এসেছে। সুমুর শশুড় বাড়ি থেকে চলে আসার পরে মনে পড়ে সুমুর ফোনটা ওর কাছে রয়ে গেছে। ফোন ফেরত দিয়ে গিয়ে দেখতে পায় সুমু রাস্তায় পড়ে আছে।
ঘন্টা হয়ে গেছে কয়েকটা সুমু কথা বলছে না। কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। কপালের রক্ত শুকিয়ে গেছে৷ কাউকে কপালে হাত দিতে দিচ্ছে না।
সালমান রেগে আগুন হয়ে আছে। সায়ানকে হাজার বার কল করেছে। সে রিসিভ করছে না।
আব্দুল্লাহ হুংকার ছেড়ে ছেলেদের বলে দিয়েছে।
“যেভাবেই হোক সায়ান যেনো বিয়েটা করতে না পারে। বিয়ে আটকে দিয়ে মেয়েটাকে সহিসালামত ভাবে বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে।
তার হুংকারে আনোয়ার আর সুলাইমান চলে গেছে ঢাকায় সায়ানকে আটকাতে।
” সুমু তুই কেনো কাঁদছিস? বল আমাদের? আঘাত কি করে পেয়েছিস? তন্ময় কিছু বলেছে? এখনই ওকে ম*রে পুঁতে দেবো আমি।
হাজারবার সুন্দর ভাবে জিজ্ঞেস করেছে সালমান। উওর দেয় নি সুমু। তাই এখন হুমকি দিয়ে বলে। সুমুর একপাশে সালমান আরেক পাশে মনি বসে আছে।
“নাহহহহহ ওকে কিছুই বলবে না। নাহলে আমি সুই*সা*ইড করবো।
সুমু আতঙ্কে ওঠে চিৎকার করে বলে।
” আচ্ছা কিচ্ছু করবে না। তাহলে তুমি বলো? কি হয়েছে তোমার? কাঁদছো কেনো? হাসিব কোথা থেকে এনেছে তোমায়? কপালে কিভাবে কাটলো?
আব্দুল্লাহ সুমুর সামনে বরাবর সোফায় বসেছে। তিনি কঠিন গলায় বলে।
“চলে যেতে বলছো আমায়? চলে যাবো? এতো প্রশ্নের উওর দেবো না আমি। চলে যাবো।
সুমু উঠে দাঁড়ায়। সালমান হাত ধরে বসিয়ে দেয়। সুমুর মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে। বাবার আদর পেয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে সুমু। দুই হাতে জাপ্টে ধরে বাবাকে।
” তোমার ছেলেকে আমি ভীষণ ভালোবাসি আব্বু। কিন্তু ও আমাকে একটুও ভালোবাসে না। ওকে খুব করে বকে দিও তুমি।
কাঁদতে কাঁদতে বলে সুমু। সুমুর কান্না দেখে সালমানেরও চোখ ভিজে ওঠে।
🥀🥀
লাল টুকটুকে বউ সাজিয়ে দিয়েছে তুলতুলকে। পা থেকে মাথা ওবদি গহনায় ঘুরিয়ে দিয়েছে তুলতুলকে। আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই চমকে ওঠে তুলতুল। লাল রংয়ের লেহেঙ্গারটা দারুণ ভাবে ফুটে উঠেছে তুলতুলের গায়ে।
“বাহহহ তুলতুল দারুণ লাগছে তো তোমায়। সায়ান টাস্কি খেয়ে যাবে।
তুলতুল লজ্জা পেয়ে যায়।
” উনি টাস্কি খাবে না আপু। আমাকে থা*প্প*ড় খাওয়াবে। জ*ল্লাদ একটা জানো? মুখে মধু নেই। কথায় রসকষ নেই। আস্ত একটা নিরামিষের বস্তা। আমাকে তুলে নিয়ে এসেছে জানো? নেহাত আমাকে চুমু খেয়েছে। নাহলে কখনোই বিয়ে করতাম না আমি।
তুলতুল গাল ফুলিয়ে বলে। রুপা বড়বড় চোখ করে তাকায়।
“চুমুও খেয়েছে?
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে রুপা।
” হ্যাঁ খেয়েছে তো। লুচু কি না? বজ্জাত একটা। আপু তুমি কিন্তু আমার দলে। ওনার সাথে ঝগড়া লাগলে তুমি আমার হয়ে কথা বলিও।একা একা ঝগড়ায় পারি না তো। থা*প্প*ড় দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। আর শুনো তুমিও একটু ওনাকে বলে দিবে যাতে কাল আমায় বাড়ি যেতে দেয়?
তোমার কথা শুনবে উনি।
রুপা মুচকি হেসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তুলতুলকে।
“আচ্ছা বাবা বলবো।
___
এতো রাতে উকিল কাজি পাওয়া যাচ্ছিলো না। রীতিমতো সায়ানের ছেলেপেলে তুলে নিয়ে এসেছে কাজি আর দুটো উকিলকে।
সায়ান আর তুলতুল পাশাপাশি বসে আছে। বড় একটা ড্রয়িং রুম। পুরোটা জুড়েই গিজগিজ করছে মানুষজন। তিন জন মেয়ে ছাড়া বাকি সবাই ছেলে। তুলতুলের এক পাশে রুপা বসে আছে। তুলতুল রুপার হাত ধরে আছে।
কবুল বলার সময় সময় নেয় না তুলতুল। খুব দ্রুতই বলে দেয়। এতে বেশ অবাক হয় সায়ানসহ উপস্থিত সবাই। সায়ানও দেরি করে না। সুন্দর ভাবেই বিয়ে সম্পন্ন হয়।
বিয়ে শেষ হতেই তুলতুলের হাত ধরে উঠে দাঁড়ায় সায়ান।
” তোরা এদিকের সব ঝামেলা মিটিয়ে ফেল। আমি যাচ্ছি
বলেই তুলতুলের হাত ধরে হাঁটা শুরু করে। তুলতুল হতদম্ভ হয়ে গেছে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। সায়ানের চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ রেগে আছে।
গাড়ির কাছে হিমু দাঁড়িয়ে ছিলো। ওদের আসতে দেখেই ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে।
“আরে আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
তুলতুল সমানে জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে। সায়ান কোনো উওর দিচ্ছে না।
চলবে