আমার তুমি ২ #পর্বঃ৩২ #তানিশা সুলতানা

0
281

#আমার তুমি ২
#পর্বঃ৩২
#তানিশা সুলতানা

সুমুকে দেখে তন্ময়ের বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। মেয়েটার মাথায় ব্যান্ডেজ। জ্বরে মুখটা লাল হয়ে গেছে। কম্বল জড়িয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। সূর্যের আলো চোখে পড়াতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলছে।
তন্ময় সুমুর পাশে এসে বসে। এই বাড়ির কেউ এখনো ঘুম থেকে ওঠে নি। হাসিব দরজা খুলে দিয়েছে।

তন্ময় সুমুর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। সুমু নরে চরে ওঠে। তন্ময় সাথে সাথে হাত সরিয়ে নেয়। সুমুর নাকে তন্ময়ের পারফিউমের গন্ধ যায়। মন বলছে তন্ময় এসেছে।
এবার সুমু পিটপিট করে চোখ খুলে। ঝাপসা চোখে তন্ময়কে দেখে চমকে ওঠে। সাথে সাথে চোখ খুলে। তারাহুরো করে উঠতে নেয়। তন্ময় উঠতে দেয় না।

“রিলাক্স
উঠতে হবে না।

সুমু আবার শান্ত ভাবে শুয়ে পড়ে। চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়।

” ভালো লাগছে এখন? কিছু খাবে? খিধে পেয়েছে?

মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে ধীর গলায় বলে তন্ময়।

“ভাইয়া তুলতুলকে নিয়ে কোথায় গেছে জানি না আমি।

সুমু চোখ বন্ধ রেখেই বলে।

” তোমার ভাই তুলতুলকে নিয়ে ফিরে এসেছে।

তন্ময় মৃদু হেসে বলে৷ চোখ খুলে সুমু। তাকায় তন্ময়ের দিকে।

“তাই বুঝি খবর নিতে এসেছেন? আমি মরে গেছি না বেঁচে আছি?

অভিমানীর সুরে বলে সুমু। তন্ময়ের হাসি মুখটা কালো হয়ে যায়। সত্যিই কি তাই? তুলতুল যতখন ছিলো না ততখন তো সুমুর কথা মনেও আসে নি। তুলতুলকে দেখে কলিজা ঠান্ডা হওয়ার পরই তো মনে পড়লো সুমুর কথা।

” আপনি তুলতুলকে যতটা ভালোবাসেন আমি হয়ত ততটা ভালোবাসি না। তবে ভালোবাসি। তুলতুলের কথা চিন্তা করি আমি। আমার ভাইয়া খুব ভালো রাখবে তুলতুলকে। আর আমি আমার ভাইকে চিনি। সে যখন ভেবেছে তুলতুলকে নিয়ে যাবে তো যেভাবেই হোক নিতোই।

এই টুকু বলে লম্বা দম নেয় সুমু। তন্ময় নিচু করে ফেলে।

“তুলতুলকে ভাইয়া ভীষণ ভালোবাসে। আমার ভাইয়ের মতো ছেলে আপনি দুটো পাবেন না। দেখতে মাশাআল্লাহ সেটা আপনিও মানতে বাধ্য।

” তোমার ভাই একটা বখাটে জানো তুমি? চেহারা আর টাকা দেখে মানুষকে মানুষ ভাবা হয় না। স্বভাব আর চরিত্র দেখে বিচার করা হয়।

তন্ময় সুমুর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে। চোখ দুটো জ্বলে ওঠে সুমুর। চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।

“আমার ভাই বখাটে না।

চিৎকার করে বলে ওঠে সুমু।

“চিৎকার করবা না। সত্যি কথা শুনলে সবারই গা জ্বলে। যাই হোক। বিয়ে তো হয়ে গেছেই। এখন মেনে নিতেই হবে। আর কোনো ওয়ে নেই তো।

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে তন্ময়।
তখন রুমে ঢোকে সালমা আর মনি।

” তুমি?

গম্ভীর গলায় বলে সালমা। তন্ময় উঠে দাঁড়ায়। সালম দেয় ওনাদের। মনি সালাম ফেরায়।

“কি চাই? কেনো এসেছো?

সালমা কাঠকাঠ গলায় বলে। তন্ময় লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। সুমু দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।

” কথাটাও ঠিক করে বলতে শিখলেন না? শুধু কি হাত পায়ে বড় হয়েছেন?

তন্ময়কে ধমক দিয়ে বলে সুমু। ভ্রু কুচকে সুমুর দিকে তাকায় তন্ময়।

“আম্মু উনি ওনার বউকে দেখতে এসেছে। মানে আমাকে। তুমি অসুস্থ হয়ে নানু বাড়িতে থাকলে বাবা যেরকম দেখতে যায় সেরকম।

সুমু কম্বল সরিয়ে আস্তে আস্তে উঠে বসতে বসতে বলে। মনি বসতে সাহায্য করে। তন্ময়ের চোখ দুটো চঞ্চল হয়ে ওঠে।
সালমা বিরক্ত হয়।

” দেখা শেষ? এবার যেতে পারো।

তন্ময় আবারও অপমানিত হয়। সুমু রেগে যায়।

“এটা কিরকম ব্যবহার আম্মু? উনি আমার হাসবেন্ড। তোমার মেয়ের জামাই।

শক্ত গলায় বলে সুমু। তখন খুকি আর হামিদা রুমে ঢুকে।

” ওই মাইয়া তুমি বেশি কথা বলবা না। কোনো হাজবেন্ট টাজবেন্ট নেই। এই ছেলের সাথে তোমার ডিভোর্স করাবো আমরা। যে ছেলে আমার নাতনির গায়ে হাত তুলেছে সেই ছেলে যে এখনো সোজা পায়ে দাঁড়িয়ে আছে এটাই অনেক।
খুকি মুখ বাঁকিয়ে বলে।

তন্ময়ের বুকের ভেতর ধক করে ওঠে। ডিভোর্স শব্দটা কানে বাজতে থাকে।
সুমু বিছানা থেকে নামে। মনি ধরতে যায় সুমু ধরতে দেয় না।
“আমি ঠিক আছি”
সুমু তন্ময়ের সামনে এসে দাঁড়ায়। তন্ময়ের হাতের ভাজে নিজের ছোট্ট হাতটা ঢুকিয়ে দেয়।

“চলুন
যেখানে আমার বরের সম্মান নেই সেখানে আমি থাকবো না। আর রইলো বাকি ডিভোর্স।
বুড়ি তোমার ডিভোর্স করিয়ে দেবো আমি।

তন্ময়ের হাসি পায়। কিন্তু হাসি চেপে সুমুর হাত ধরে হাঁটতে যায়। সালমা এসে সামনে দাঁড়ায়।

” এই শরীর নিয়ে কোথায় যাবি তুই? পাগলামির একটা সীমা থাকে সুমু। আমাদের আর জ্বালাস না।

কড়া গলায় বলে সালমা।

“পাগলামি আমি করবোই। তোমাদের এখানে আসাই আমার ভুল হয়েছে।
চলুন না

তন্ময়ের হাত ধরে টান দিয়ে বলে সুমু। হাঁটতে পারছে না বেচারা। জ্বরে শরীর কাঁপছে। তন্ময় সুমুর থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। সুমু ভয় পেয়ে যায়। তন্ময় কি ওকে নিয়ে যাবে না?
সবাইকে অবাক করে দিয়ে তন্ময় কোলে তুলে নেয় সুমুকে। সুমু হতদম্ভ হয়ে গলা জড়িয়ে ধরে সুমুর।
কোনো দিকে না তাকিয়ে হনহনিয়ে চলে যায় তন্ময়।

🥀
তুলতুল মনে মনে সায়ানের গুষ্টি উদ্ধার করছে। মানুষ কতো বড় বেহায়া হলে একটা রান্না না পারা মেয়ের হাতের রান্না খেতে চায়? বিয়ে হলে দিন ঘুরতে না ঘুরতেই অর্ডার শুরু? মঘের মুল্লুক পেয়েছে না কি?

আছিয়া আর নাজমা কতো কিছু রান্না করেছে। কিন্তু বেচারা খাটাশ কিচ্ছু খাবে না।সে তার বউয়ের হাতের রান্না খাবে।
নুডলস সেদ্ধ দিয়ে পেঁয়াজ কাটছে তুলতুল।

” শা*লা বজ্জাত। হনুমানের নানা,টিকটিকির চাচাতো ভাই,জীবনেও বউ পানি না। থুক্কু বউ তো পেয়েই গেছে আমার মতো সুন্দরী একজনকে। এখন জানটা জ্বালিয়ে খাবে। আমার হাতের রান্না খাবে। আমার হাতে কি মধু মিশিয়েছি? ভাল্লাগে না জ্বালা জ্বালা।
শান্তি আর দেবে না।

“চুপচাপ কাজ কর।

পেছন থেকে ধমক দিয়ে বলে সায়ান। চমকে ওঠে তুলতুল। চট করে ঘাড় বাঁকিয়ে পেছনে তাকায়। মোড়া টেনে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে সায়ান। তুলতুল শুকনো ঢোক গিলে।

” আপনি এখানে কেনো? রুমে তেলাপোকা দেখেছেন? এ বাবা আপনি এতবড় হাতির মতো একটা মানুষ, হনুমানের মতো চেহারা, সিংহের মতো গর্জন। আর আপনি কি না তেলাপোকা দেখে ভয় পান। মানসম্মান এখন যাবে। হাই হাই হাই একটা ভীতুর ডিমকে বিয়ে করে ফেললাম আমি?
বাই এনি চান্স যদি আপনার হাতে তেলাপোকা

“জাস্ট সাট আপ

জোরে সরে একটা ধমক দেয় সায়ান। কেঁপে ওঠে তুলতুল। সাথে সাথে এক আঙুল দুই ঠোঁটের মাঝখানে রাখে।

” পকপক বন্ধ। জাস্ট কাজে ফোকাস কর।

দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান। তুলতুল জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মাথা নারায়। সায়ানের দিকে আড়চোখে এক পলক তাকিয়ে কাজ করতে থাকে।
সায়ান বসে বসে দেখতে থাকে তুলতুলকে। একটু পরেই চলে যাবে। আবার কবে আসবে জানা নেই। পাগলটাকে রেখে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কিন্তু নিয়ে যাওয়ারও কায়দা নেই। সব মিলিয়ে পাগল পাগল অবস্থা।

“হয়ে গেছে

বাটিতে নুডলস বেরে সায়ানের সামনে ধরে বলে তুলতুল। সায়ান এক পলক নুডলসের দিকে তো আরেক পলক তুলতুলের দিকে তাকায়।

” এটা নিয়ে রুমে আয়।

বলেই সায়ান উঠে দাঁড়ায়।

“কোন রুমে যাবো? আমার রুমে? বাবার রুমে? তনুর রুমে? ভাই

সায়ান কড়া দৃষ্টিতে তাকায় তুলতুলের দিকে। চুপসে যায় তুলতুল। একটু হাসার চেষ্টা করে।
” কোন রুমে আবার? আমার রুমেই যেতে হবে। কেনো যে অযথা কথা বলি আমি।

সায়ান দীর্ঘ শ্বাস পেলে হাঁটতে শুরু করে। তুলতুল পেছন থেকে কয়েকবার মুখ বাঁকায়। দুই একটা ঘুসি দেখিয়ে বিরবির করে বকতে বকতে সায়ানের পেছন পেছন যায়।

সায়ান তুলতুলের খাটে বসে পড়ে।

“রুমে কেনো আনলেন? ভেবেছেন রান্না ভালো হবে না আর আপনি আমায় বকবেন তাই তো?
ইহহহহহ শক কতো আমাকে বকার। দারুণ ইয়াম্মি হয়েছে রান্নাটা। আমি একটু চেখে দেখেছি।

এক গাল হেসে বলে তুলতুল।

” খায়িয়ে দে আমায়।

গম্ভীর গলায় বলে সায়ান। তুলতুল বড়বড় চোখ করে তাকায়।

“আপনাকে খায়িয়ে কেনো দেবো? আপনার হাত নেই? না কি কে*টে ফেলছেন? আমি খায়িয়ে দিতে পারি না। একদিন এখনো হলো না বিয়ের এখনই হুকুম দারি শুরু। বসতে দিলে শুতে চায়। ঢং দেখে বাঁচি না।

সায়ানের সামনে নুডলসের বাটিটা রেখে মুখ বাঁকিয়ে বলে তুলতুল। সায়ান তুলতুলের এক হাত ধরে এক টানে কোলের ওপর বসিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে। চমকে ওঠে তুলতুল। সায়ানের শার্ট খামচে ধরে।

” হাতে সময় কম আমার। জলদি খাওয়াবি। কোনো কথা না।

শান্ত গলায় বলে সায়ান। তুলতুলের আর কথা বলার সাহস হয় না। ফাঁকা গলায় ঢোক গিলে নুডলসের বাটি হাতে তুলে নেয়। কাটা চামচে একটুখানি নুডলস তুলে সায়ানের মুখের সামনে ধরে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here