#আমার তুমি ২
#বোনাস পর্ব
#তানিশা সুলতানা
গাড়ি চলছে আপন গতিতে। সায়ান ফোন ঘাটছে। হিমু চুপচাপ ড্রাইভ করে যাচ্ছে। তুলতুলের বিরক্ত লাগছে। আরে ভাই বিয়ে করে নিয়েছিস ভালো কথা। এখন তো একটু শান্তিতে ঘুমতে দিবি না কি? তা না এখন আবার জার্নি। রীতিমতো ভীষণ বিরক্ত তুলতুল।
“ভাই বেশি রিয়েক্ট করিস না প্লিজ। এখনো আমার বিয়ে করা বাকি। ঠান্ডা মাথায় হেল্ডেল করবি সবটা।
হিমু শুকনো ঢোক গিলে বলে। সায়ান এক পলক তাকায় হিমুর দিকে। কোনো কথা বলে না।
” উনি আর মাথা ঠান্ডা? আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল। জীবনেও মাথা ঠান্ডা করতে পারবে না উনি। মাথায় তো আগুন জ্বালানো।
মুখ বাঁকিয়ে বলে তুলতুল।
“তুমি পানি ঢালবা মাথা ঠান্ডা হয়ে যাবে।
হিমু মুচকি হেসে বলে।
” নাহহহ বাবা দরকার নাই। শেষে পানি ঢলতে গিয়ে থা*প্প*ড় খেয়ে আসবো কয়েকটা। হাত তো আবার প্লেনের স্পিডে চলে।
হিমু শব্দ করে হেসে ওঠে।
“শাট আপ
সায়ান ধমক দেয়। তুলতুল শুকনো ঢোক গিলে।
“আচ্ছা কথা বলবো না। শুধু বলেন যাচ্ছিটা কোথায় আমরা? বলবেন তো? বিয়ের পরে কি মানুষ এভাবে জার্নি করে?
আমতাআমতা করে প্রশ্ন করে।
“বাসর করে। কিন্তু তুই তো এখনো ফিটার খাস তাই বাসর না করে জার্নি করছি।
সায়ান ফোনের দিকে দৃষ্টি রেখেই জবাব দেয়। লজ্জায় কান গরম হয়ে যায় তুলতুলের। থতমত খেয়ে মাথা নিচু করে ফেলে। হিমু কানে হেডফোন গুঁজে নেয়। ছোট ভাইয়ের মুখে যে লাগাম নেই ঢের জানা আছে।
তুলতুলকে চুপ করে যেতে দেখে বাঁকা হাসে সায়ান। হিমুর কানে হেডফোন দেখে নেয়। গাড়ির লাইট অফ করে দেয়। ফোনটা পকেটে রেখে চেপে বসে তুলতুলের দিকে। তুলতুল চমকে ওঠে এভাবে গা ঘেসে বসায়।
” সসরে বসেন।
রিনরিনিয়ে বলে তুলতুল। সায়ান কোমর জড়িয়ে ধরে তুলতুলের। বড়বড় চোখ করে তাকায় তুলতুল।
“বিয়ে করেছি সরে বসার জন্য?
তুলতুলের কাঁধে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে ফিসফিস করে বলে সায়ান। কেঁপে ওঠে তুলতুল৷ ছোট্ট বুকটা ধরফর করে ওঠে। হাত পা মৃদু কাঁপতে থাকে।
সায়ান এবার এক টানে কোলে বসিয়ে নেয় তুলতুলকে। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে তুলতুল। লজ্জা আর অস্বস্তিতে নিশ্বাস আটকে আসছে। মাথা পড়েছে সায়ানের বুকে।
” ককি করছেন? ভাইয়া সামনে।
তুলতুল কাঁপা কাঁপা গলায় বলে।
“সো হোয়াট? লজ্জা পাচ্ছিস?
নামিয়ে দেবো?
গম্ভীর গলায় ফিসফিসে বলে সায়ান। তুলতুল কপাল কুঁচকে ফেলে। মনে মনে হাজারটা গালি দিতে থাকে সায়ানকে। চরম লেভেলের অসব্ভ ছাড়া অন্য কোনো উপাধি দিতে পারছে না।
” চরম লেভেলের অসব্ভ আপনি।
তুলতুল বিরবির করে বলে।
“আই নো।
তুলতুলের মাথায় ঠোঁট ছুঁয়িয়ে বলে সায়ান। চুপ করে যায় তুলতুল। এর সাথে কথা বলে লাভ নাই। তার থেকে চুপ থাকায় শ্রেয়।
সায়ানের শার্ট থেকে দারুণ একটা ঘ্রাণ আসছে। তুলতুল নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিতে থাকে। লোকটা আসলেই অনেকটা কিউট। কিন্তু স্বভাব একদম জল্লাদের মতো।
এই যে এখন কি সুন্দর করে বুকের মধ্যে চেপে ধরে আছে। এতে ভালোই লাগছে তুলতুলের। আবার অস্বস্তিও হচ্ছে। অদ্ভুত একটা অনুভূতিও হচ্ছে। সব কিছু মিলিয়ে ফাঁপর লাগছে। মাথা উঁচু করে মুখটা দেখতে ইচ্ছে করছে কিন্তু যেভাবে ধরেছে মাথা উঁচু করা অসম্ভব।
হিমু কিভাবছে আল্লাহ জানে। নিশ্চয় ভাবছে আমার ভাই আর তুলতুল ভীষণ নিলজ্জ।
কান গরম হয়ে যায় তুলতুলের।
হিমুর ফোনে কল আসে। সালমান কল করেছে।
” সায়ান
হিমু পেছনে না ঘুরেই ডাকে। চমকে ওঠে তুলতুল। ছাড়ার জন্য মোচরামুচরি শুরু করে দেয়। মৃদু কাঁপছেও মেয়েটা।
“ইডিয়েট
বলেই ছেড়ে দেয় সায়ান। তুলতুল নিজের জায়গায় বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
” হুমম
“মেঝো বাবা কল দিচ্ছে। ধরবো?
” হুমম।
শুনতেই কল রিসিভ করে ফেলে হিমু।
বল আমি বউ নিয়ে শশুড় বাড়ি যাচ্ছি। বাসর ওইখানেই করবো। আর কাল সকালে তন্ময় আর শশুড় মশাই সুমুকে আনতে যাবে। ভালোমন্দ রান্না করতে বলিস।
ফোনের ওপাশ থেকে সালমান শুনতে পায় সায়ানের কথা। চোয়াল শক্ত করে ফেলে। তুলতুল চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। ছি ছি ছি এই লোকটা মানুষ না কি অন্য কিছু?
“বেয়াদবটাকে আমার সামনে আসতে বল হিমু। চাপকে ওর গাল লাল করে দেবো আমি। শয়তান ছেলে।
ফোনের স্পিকার অন করে দেয় হিমু। চিল্লিয়ে বলে ওঠে সালমান। সায়ান বাঁকা হাসে।
“বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বাচ্চাকাচ্চা সহ তোমার সামনে যাবো। বাচ্চার খেলনা কিনে রেখো। আর ইমাজিন করো দাদু বলে ডাকলে কেমন ফিল করবা।
হাই তুলে বলে সায়ান। হিমু খুক খুক করে কেশে ওঠে। সালমান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এই ছেলেকে আর কিছুই বলার নেই।
” একাউন্টে টাকা ফুরিয়ে এসেছে প্রায়। টাকা পাঠিয়ে দিও। না বলবে না একদম। আর রোজগার করার কথাও বলবে না। সময় হলে বলতে হবে না। নিজে থেকেই করবো। ভালো থেকো এমপি সাহেব।
আর তোমার কুটনি মা কে বলে দিও আমার বাচ্চাকাচ্চার নাম ঠিক করতে।
আর কিছুই বলার নেই সালমানের। সে চুপ করে যায়। হিমু কল কেটে দেয়।
🥀
রাত চারটে নাগাদ তুলতুলদের বাসার সামনে গাড়ি থামে। সবেই চোখ লেগে এসেছিলো পাপনের গাড়ির শব্দে হরবরিয়ে ওঠে। তন্ময় মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিলো। গাড়ির শব্দে তারাহুরো করে দরজা খুলে দেয়। মন বলছে তুলতুল হয়ত ফিরে এসেছে।
দরজা খুলতেই লাল টুকটুকে বউ সাজা তুলতুলকে দেখে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে তন্ময়। পাশেই সায়ান দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে খেয়াল করে নি। তুলতুলও কেঁদে ওঠে।
পাপন আছিয়া নাজমা তনু ও বেরিয়ে আসে। তুলতুলকে দেখে সবাই হতবাক হয়ে যায়। সায়ান তুলতুলকে এখানে নিয়ে আসবে কেউ কল্পনা করে নি।
“আমার সোনা। আমার তুলতুল এসেছে।
আছিয়া দৌড়ে এসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে। সায়ান ওদের পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। তনু কপালে তিনটে ভাজ ফেলে তাকিয়ে আছে সায়ানের দিকে। সায়ান গিয়ে সোফায় বসে টি-টেবিলের ওপর পা তুলে দেয়।
তনু সায়ানের পাশে এসে বসে।
” বিয়ে করছেন ভালো কথা। আবার ফিরে আসলেন যে? না মানে বলতে লজ্জা লাগছে তাও বলছি বাসর টাসর করলেন না?
তনু ফিসফিসিয়ে বলে।
“করবো তো।
সায়ান আড়মোড়া ভেঙে বলে।
” কখন?
গোল গোল চোখ করে জিজ্ঞেস করে তনু
“আজকে সারাদিন। অনেক সময় তাই না?
তনুর মাথায় গাট্টা মেরে বলে সায়ান। তনু ভাবতে থাকে।
“আপনারা বিয়ে করে নিলেন। এবার বাসর টাসরও করবেন। আর এদিকে আপনাদের জ্বালায় আমার বিয়েটা হচ্ছে না। সিরিয়ালে আমি আগে ছিলাম।
গাল ফুলিয়ে বলে তনু।
“বিয়েতে থার্ড হয়েছে তো কি হইছে? বেবিটা ফাস্ট ফাস্ট নিয়ে ফেলবা। বেবির সিরিয়ালে ফাস্ট হইবা। আইডিয়াটা দারুণ না?
তনু মুখ বাঁ কায়।
” তুলতুলের বর তো তুলতুলের মতোই হবে তাই না? যেমন বর তার তেমন বউ।
তনু ভেংচি কেটে উঠে যায়।
চলবে