অলিখিত_অধ্যায় #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ৬৬।

0
364

#অলিখিত_অধ্যায়
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৬৬।

সকালে ছোট পরিসরে প্রিয়তা আর ফারজাদের হলুদের আয়োজন করা হলো। সবটাই করা হয়েছে মৌমির উদ্যোগে। মেয়েটা জোর করে প্রিয়তাকে একটা হলুদ রঙের শাড়ি পরিয়েছে। নীহালকে বলে কিনে আনিয়েছে সে ফুলের গয়না। সবকিছু দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে প্রিয়তাকে। প্রিয়তার এবার লজ্জা লাগছে ভারী। ফারজাদের সামনে এভাবে যাবে ভাবতেই মুখের রং রক্তিম হয়ে উঠেছে।

এইদিকে নাছরবান্দা মৌমি, তার ভাইকেও ছাড়েনি। তাকেও পরিয়েছে সাদা সুতি পাঞ্জাবী। বসার ঘরের সোফায় বসেছে ফারজাদ। লুৎফা বেগম বাটিতে করে হলুদ নিয়ে এলেন। ফারজাদের অস্বস্তি হচ্ছে বড্ড। মুখের ক্ষীণ হাসিটা তার’ই প্রতিবিম্ব।

মৌমি প্রিয়তাকে নিয়ে এল সেই রুমে। প্রিয়তার লাজুক ভাবমূর্তি। ফারজাদ চেয়ে দেখল। চোখের দৃষ্টি সেখানেই থমকাতে চাইলেও নিজেকে সংযত করল সে। এতগুলো মুরুব্বির মাঝে এভাবে তাকিয়ে থাকা যায় না। সে ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলল। প্রিয়তাকে ফারজাদের পাশে বসাল মৌমি। দিলরুবা বেগম তৃপ্ত হলেন ওদের দেখে। চমৎকার হেসে বললেন,

‘মাশাল্লাহ।’

লুৎফা বেগম উচ্ছ্বসিত সুরে বললেন,

‘যা, এবার ছেলে আর ছেলের বউকে হলুদ লাগা।’

দিলরুবা বেগম প্রথম হলুদ ছোঁয়ালেন ফারজাদ আর প্রিয়তার কপালে। তারপর একে একে বাকি সবাই। দুষ্টু মৌমি প্রিয়তার গালে একগাদা হলুদ লাগিয়ে বসল। প্রিয়তাও ছাড় দিল না। নতুন বউ বলে বসে থাকল না সে। উল্টো মুঠো ভর্তি হলুদ মাখিয়ে দিল মৌমির গালে। ওদের কান্ড দেখে এক চোট হেসে নিল সবাই।

নীহাল তখন ডাইনিং রুম-এ। পানি খাচ্ছিল। সবার গালে হালকা পাতলা হলুদ থাকলেও, তার গাল দুখানা ফাঁকা। মৌমির ব্যাপারটা মোটেও ভালো লাগছে না। সে মুঠোয় ভরে হলুদ নিয়ে এল। চুপিচুপি এসে দাঁড়াল নীহালের ঠিক পেছনে। নীহাল পানি খেয়ে ঘুরতেই আক্রমণ করে বসল মৌমি। তার গাল ভরিয়ে দিল হলুদে। নীহাল চমকায়। আচমকা আক্রমণে কিছু বুঝতে পারে না সে। মৌমি হেসে বলল,

‘সবার গালে হলুদ আছে, আপনার গালটা আর খালি থাকবে কেন? তাই লাগিয়ে দিলাম।’

বলেই সে চলে যেতে নিচ্ছিল। কিন্তু বাধ সাধল নীহালের হাতের বাঁধন। সে ঘুরে চাইল। দেখল, নীহালের মুষ্ঠিবদ্ধে তার হাত। আচমকা নীহাল হেঁচকা টান দিল মৌমির হাতে। মৌমি তাল সামলাতে না পেরে তার বুকে ধাক্কা খেল। ভড়কে তাকাল সে। নীহাল একবার দেখল আশেপাশে। অতঃপর ফিসফিসিয়ে বলল,

‘খালি আপনিই হলুদ লাগাবেন, আমি লাগাব না?’

এই বলে সে তার হলুদ ভর্তি গাল এগিয়ে মৌমির গালে ঘষল। মৌমি জমে গেল তাতে। মনে হলো হৃদকম্পন থেমে গিয়েছে তার। শরীরটা কেমন কেমন লাগছে যেন। মৌমির দু গালে ভালো মতো নিজের গাল ঘষে সরে দাঁড়াল নীহাল। হেসে বলল,

‘নাও ইট’স পারফেক্ট।’

মৌমি এখনো স্তব্ধ। কী হয়ে গেল এখনো বুঝে উঠতে পারছে না। মৌমিকে অমন অসাড় দেখে নীহাল হেসে বলল,

‘বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেলেন, আর এইটুকু সহ্য করতে পারছেন না। বিয়ের পর তো আরো অনেক কিছু হবে, সেগুলো সহ্য করবেন কী করে?’

মৌমি বিস্ফোরিত চোখে চাইল। নীহালের কথা শুনে মাথাটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে যেন। যুতসই কথা খুঁজে পাচ্ছে না। নীহাল তাকে প্রত্যুত্তর করার সুযোগও দিল না। বসার ঘরে ফিরে এল সে।

প্রিয়তা হলুদ মুছতে নিজের ঘরে এল। সবাই তখন বসার ঘরে। ফারজাদও উঠে পড়ল, পাঞ্জাবী পাল্টাতে। তবে নিজের ঘরে যাওয়ার আগে একবার প্রিয়তার ঘরের দরজার সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘আসব, প্রিয়তা?’

প্রিয়তা বলল,

‘জি, আসুন।’

ভেতরে এল ফারজাদ। প্রিয়তার রুমে প্রথম এসেছে। আশেপাশে খানিক চোখ বুলিয়ে বলল,

‘সবাই তো আপনাকে হলুদ লাগাল, কিন্তু আমি তো আর লাগাতে পারলাম না।’

প্রিয়তা লজ্জায় পড়ে আর উত্তর দিতে পারছে না। ফারজাদ এগিয়ে আসে। বলে,

‘এই মৌমি টা না, নাক বাদে তো আপনার পুরো মুখে আর একটুও জায়গা বাকি রাখেনি।’

সে হাতে করে নিয়ে আসা হলুদটা প্রিয়তার নাকে লাগিয়ে দেয়। হেসে বলে,

‘এবার বেশি ভালো লাগছে।’

প্রিয়তা আয়নার দিকে তাকাল। মুখে আর এক ইঞ্চিও ফাঁকা জায়গা নেই। নিজেকে দেখে বড্ড হাসি পেল তার। কেমন অদ্ভুত লাগছে। ফারজাদের দিকে তাকাল। বলল,

‘আমি আপনাকে লাগাব না?’

‘কী দরকার, আমার মুখে এমনিতেই অনেক হলুদ।’

‘উঁহু, আমার হাতে একটু লাগানো উচিত।’

ফারজাদ হাসল। বলল,

‘হু, তা তো উচিত’ই। ওয়েট..’

সে এগিয়ে এসে প্রিয়তার নাকের সাথে তার নাক ঘষে দেয়। ফারজাদ এমন কিছু করবে প্রিয়তা আশা করেনি। দু কদম পিছিয়ে গেল সে। ঢোক গিলল। ফারজাদ সোজা হয়ে দাঁড়াল। বলল,

‘এবার খুশি তো?’

প্রিয়তা নির্বাক, নিষ্পলক। ফারজাদ বলল,

‘একটু কি বেশিই লজ্জা দিয়ে ফেলেছি? সমস্যা নেই, বিয়ের পর অভ্যস্ত হয়ে যাবেন।’

বলেই সে হেসে বেরিয়ে এল সেই রুম থেকে। প্রিয়তা এখনো এক ঘোরে আটকে আছে। এই লোকটার ব্যবহার ক্রমে ক্রমে কেবল অবাক’ই করছে তাকে। কী আশ্চর্য, এভাবে কেউ হলুদ লাগায়।

__________________

‘প্রিয়তা, নীহাল কী বলেছে?’

‘মা, ভাইয়া তো শিওর করে কিছু বলেনি। বলেছে, ভেবে জানাবে।’

‘তোর কী মনে হচ্ছে, রাজি করাতে পারব তো?’

‘আমার মনে হয় পারবে, মা।’

‘তাহলেই হয়েছে। আমি রুবাকে বলে আসি গিয়ে।’

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এল মৌমি। প্রিয়তা তার দিকে চেয়ে বলল,

‘তোমার গালের হলুদ দেখি এখনো যায়নি, মৌমি।’

মৌমি গালে তার হাত ছোঁয়াল। মনে পড়ল তার নীহালের কথা। লজ্জা পেল সে। বলল,

‘থাক, কিছু দাগ থেকে যাওয়াই ভালো।’

প্রিয়তা তার দিকে সরু চোখে চাইল। সন্দিহান কন্ঠে বলল,

‘বাবা, এত আবেগ নিয়ে কথা বলছো যে? ব্যাপার কী, কে লাগিয়েছে হলুদটা?’

মৌমি থতমত খেয়ে বলল,

‘ক কে আবার লাগাবে, তুমি লাগিয়েছ, মনে নেই?’

‘ওহ, শুধু আমিই?’

‘হ্যাঁ।’

প্রিয়তা হাসল।

________________

‘রুবা, মনে হচ্ছে ছেলেটাকে রাজি করানো যাবে।’

‘আলহামদুলিল্লাহ, তাহলে তো আর কোনো দুশ্চিন্তাই রইল না।’

‘হ্যাঁ, এখন তুই কী চাস? বিয়েটা এখনই হোক?’

‘না না, আমি তোর মেয়েকে নিতে বাংলাদেশে এসেছি। আর তুই আমার মেয়েকে আনতে পাকিস্তানে যাবি। নীহাল আর মৌমির বিয়ে পাকিস্তানেই হবে, আমার বাড়িতে।’

লুৎফা বেগম হেসে মাথা নাড়ালেন। বললেন,

‘বেশ, তুই যা বলবি তাই হবে।’

দিলরুবা বেগম ভ্রু কুঁচকে বললেন,

‘বেয়ান হয়েছি, সম্মান দিয়ে কথা বলবে তা না আমার সাথে তুই তুকারি করছে।’

লুৎফা বেগম হেসে বললেন,

‘মার্জনা করবেন, বেয়ান সাহেবা, আমার একেবারেই মাথায় ছিল না ব্যাপারটা। আমি খুবই দুঃখিত। আপনি আবার কিছু মনে করেননি তো?’

দিলরুবা বেগম ভাব নিয়ে বললেন,

‘না, আমার মন দয়ার মন, যান ক্ষমা করে দিয়েছি। নয়তো বিয়ে ভেঙে চলে যেতাম।’

লুৎফা বেগম দিলরুবা বেগমের হাতে চিমটি কেটে বললেন,

‘তাই, যা চলে যা। আমিও দেখি তুই আমার থেকে ভালো বেয়ান আর কই পাস।’

দিলরুবা বেগম হেসে জড়িয়ে ধরলেন বান্ধবীকে। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বললেন,

‘তোর থেকে ভালো বান্ধবী’ই কখনো পাওয়া হয়ে উঠেনি আর ভালো বেয়ান তো আরো দুষ্কর ব্যাপার।’

_____________

পরদিন সকাল। প্রিয়তার হাতে মেহেদী পরিয়ে দিচ্ছে মৌমি। প্রিয়তার ইচ্ছে ছিল না যদিও, মৌমির জোরাজুরিতেই রাজি হতে হয়েছে। হাতের তালুতে মেহেদীর চিকন ফুলের মাঝে নিজের ভাইয়ের নামটা খুব যত্ন করে লেখে দিয়েছে মৌমি। প্রিয়তা সেটা আর খেয়াল করেনি। খেয়াল করেছে মেহেদী তুলার সময়। অবাক হলো সে। তারপর হাসল। পরক্ষণেই আবার লজ্জায় লাল হয়ে উঠল। আর কিছুক্ষণ পরই তার বিয়ে। জীবনের একটা চমৎকার সূচনা। একজন দূর্দান্ত মানুষকে সে পেতে চলছে। আগলে রাখতে পারবে তো আজীবন? এতসব চিন্তার ভিড়ে ওয়াদি নামের মানুষটার স্মৃতিও মনে পড়ে তার। প্রিয়তা শক্ত করে নিজেকে। ঐ মানুষটা আর তার দুঃস্বপ্নেও না আসুক কখনো। সে গোসল সেরে বেরিয়ে আসে। মৌমি সব আয়োজন নিয়ে বিছানায় বসা। প্রিয়তাকে দেখে তাড়া দিয়ে বলল,

‘জলদি আসো, আপু। নামাজ না-কি শেষ, কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই চলে আসবে।’

চলবে….

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here