#আমার তুমি ২
#পর্বঃ৪১
#তানিশা সুলতানা
“চরম লেভেলের খারাপ আপনি।
তুলতুল সায়ানের থেকে মুখ ছাড়িয়ে নিয়ে রেগে বলে। সায়ান গোল গোল চোখ করে তাকায় তুলতুলের দিকে।
” তুই কি? চরম লেভেলের বেয়াদব তুই। কেনো গেলি না আমাকে দেখতে?
“কেনো যাবো? কে আপনি? কে হন আমার? আপনাকে তো আমি সয্যই করতে পারি না। তো যাবো কেনো দেখতে?
সায়ানের দিকে পেছন ফিরে বসে গাল ফুলিয়ে বলে তুলতুল।
” তাহলে এখন কেনো এসেছিস?
সায়ান ভ্রু কুচকে বলে।
“আপনার বাবা ব্লাকমেইল করে নিয়ে এসেছে। আমি একটুও আসতে চায় নি। কাল এক্সাম আছে আমার। পড়তে হবে তো। এক্সাম শেষ হলে দেখে যেতাম ভাইয়ের শা*লাকে। কিন্তু কি আর করার?
” একটা হাত ভাঙা বলে ভাবিস না যে তোকে চর থা*প্প*ড় মারতে পারবো না। এক হাতেই যে শক্তি আছে না তোকে থা*প্প*ড়ে একদম বৃন্দাবন পাঠিয়ে দিতে পারবো।
“হ্যাঁ পারেন তো সেটাই। কথায় কথায় শুধু গায়ে হাত তুলতে পারেন। এটাই তো আপনার ভালোবাসা। আসলে কি বলেন তো আপনি আমাকে পছন্দই করেন না। আমি শুধুমাত্র আপনার জেদ ছিলাম। জেদের বসে আমার লাইফটা হেল করে ছাড়লেন। একবারও ভাবলেন না আমার এটা ভালো নাও লাগতে পারে।
তুলতুল বলতে বলতে কেঁদে ফেলে। অবাক হয়ে যায় সায়ান। হঠাৎ করে মেয়েটার কি হলো বুঝতে পারছে না। অনেক কষ্ট করে খানিকটা এগিয়ে আসে সায়ান। তুলতুলের হাতের ওপর নিজের হাতটা রাখে। তুলতুল সরিয়ে নিতে চাইলে সায়ান শক্ত করে ধরে।
” কি হয়েছে তোর? সত্যি করে বলবি। কেউ কিছু বলেছে? কে কি বলেছে শুধু বল।
তুলতুল সরে যায়। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে নেয়।
“কেউ কিছু বললে তাকে মা*রবেন? আপনি বলেছেন। দোষী আপনি। আপনাকে মা*রেন আপনি। আমি আপনাকেই সয্য করতে পারছি না।
চেঁচিয়ে বলে তুলতুল। সায়ান হতদম্ভ হয়ে যায়। বড়বড় চোখ করে তাকায়।
” আমাকে না রাগাস না।
তুলতুল আর কথা বলে না চলে যায় বেলকনিতে। কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। আজকের দিনটায় অন্তত তুলতুলের মনটা বোঝার চেষ্টা করতে পারতো। তা না করে থা*প্প*ড় দিতে চাইলো। কি পেয়েছে লোকটা? নিজে যেটা বুঝবে সেটাই হবে?
তুলতুলের এভাবে চলে যাওয়াতে রেগে যায় সায়ান।
“তুই দুই মিনিটে মধ্যে রুমে এসে আমার পাশে না বসলে আমি কিন্তু ব্যান্ডেজ খুলে ফেলবো।
চেঁচিয়ে বলে ওঠে সায়ান। চমকে ওঠে তুলতুল। সালমা সায়ানের রুমে আসছিলো সুপটা খেয়েছে কি না দেখতে। সায়ানের কথা শুনে আত্মা কেঁপে ওঠে ওনার।
তারাহুরো করে রুমে ঢুকে।
” কি হয়েছে আব্বা? তুলতুল কোথায়?
চিন্তিত গলায় প্রশ্ন করেন উনি। সায়ান চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস টানে। তখনই তুলতুল বেলকনি থেকে রুমে ঢুকে। সালমা বেগম টেবিলে তাকিয়ে দেখে এখনো সুপটা যেমন ছিলো তেমনই আছে। রাগ হয় ওনার।
তুলতুলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
“কি হয়েছে তোমার? কি চাইছো তুমি? স্পষ্ট করে বলতে তো হবে। আমার ছেলেকে ভালো লাগছে না? অন্য কাউকে মনে ধরেছে? তার জন্যই কি আমার ছেলের সাথে এমন করছো? জানোই তো ও তোমার জন্য কতোটা পাগল। একটু যদি হাসপাতালে গিয়ে দেখে আসতে তাহলে ছুটে আসতো না ছেলেটা। মে*রে ফেলতে চাইছো? তোমার জন্য অনেক ছেলে থাকলেও আমার নাড়ি ছে*ড়া ধন একটাই। আমার ছেলেটার কিছু হলে আমরা বাঁচবো না।
চোখ রাঙিয়ে বলেন সালমা। তুলতুল দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। সালমাকে কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। সুপের বাটি হাতে নিয়ে দেখে ঠান্ডা হয়ে গেছে। তাই নিঃশব্দে সুপের বাটি হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
” মা তুমি ওকে এসব কেনো বললে?
সায়ান রেগে বলে।
“এবার তাহলে কি করবো? তোর বউয়ের জন্য চুপ করে থাকবো? তুই বললে তাই থাকবো।
সালমাও রেগে বলে। সায়ানের বুক চিঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে। মেয়ে জাতি আসলেই অন্য রকম।
” আমি কিন্তু সব কিছু মুখ বুজে সয্য করবো না। একদম বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবো। বয়স বেড়েছে এখন একটু শান্তি চাইছি।
বলেই সালমা চলে যায়। সায়ান মাথার চুল টানতে থাকে। তুলতুলের এই রূপ সয্য হচ্ছে না। এরকম কেনো হয়ে গেলো? কি হয়েছে? কোনো ভূল করে থাকলে বলে দিক। সায়ান হাজারটা সরি বলবে। দরকার হলে কান ধরেও উঠবস করবে।
ভাবতে ভাবতেই তুলতুল চলে আসে। সুপ গরম করে নিয়ে এসেছে।
সায়ানের পাশে গোল হয়ে বসে পড়ে। সায়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ভাব সাব বোঝার চেষ্টা করতে থাকে।
“হা করেন
সুপ চামচে তুলে তাতে ফুঁ দিয়ে সায়ানের মুখের সামনে ধরে বলে তুলতুল।
“তোর কি
সায়ান কথা বলার জন্য মুখ খুলতেই তুলতুল মুখের মধ্যে চামচ পুরে দেয়।
সায়ান বড়বড় চোখ করে গিলে ফেলে।
তুলতুল আবারও মুখের সামনে ধরে। সায়ান কথা বলতে যায় আর মুখে পুরে দেয়। সায়ান বুঝে যায় বউ খেপেছে। কথা বলতে দেবে না।
তাই চুপচাপ খেতে থাকে।
খাওয়া শেষে পানি এগিয়ে দেয় তুলতুল। সায়ান খেয়ে নেয়।
” এবার বল পবলেম টা কি?
তুলতুল পাত্তা দেয় না। চুপচাপ খালি বাটি নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। সায়ান ফোঁস করে শ্বাস টানে। এ কি জ্বালা?
রান্নাঘরে তুলতুল আর সালমানের জন্য খাবার গরম করছিলো সালমা।
“আমি করে দিচ্ছি। আপনি রেস্ট করুন।
সালমার হাত থেকে হাড়িটা নিয়ে বলে তুলতুল। সালমা বড়বড় চোখ করে তাকায়। তুলতুল হাড়ি চুলায় বসিয়ে চুলা জ্বালিয়ে দেয়।
” তোমাকে এতো পাকনামি করতে হবে না। তুমি যাও আমার আব্বার খেয়াল রাখো।
শুকনো কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে বলে সালমা।
“আপনার আব্বা আর তার চোদ্দ গুষ্টিরই খেয়াল রাখবো।
বিরবির করে বলে তুলতুল।
” কিছু বললে?
সালমা শুনতে না পেয়ে জিজ্ঞেস করে।
“কিছু বলি নি তো।
তুলতুল একটু হাসার চেষ্টা করে বলে
” আপনি বরং আংকেলকে ডেকে নিয়ে আসেন। আমি খাবার রেডি করছি।
সালমা কিছুখন তুলতুলের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে যায়। তুলতুল মুখ বাঁকিয়ে কাজে মন দেয়।
খাবার রেডি করে দিয়ে রুমে চলে যায়।
সায়ান একই ভাবে বসে আছে।
“একা একা কি একটুও নরতে চরতে পারেন না?
কড়া গলায় বলে তুলতুল। সায়ান শুকনো ঢোক গিলে মাথা নারায়।
” উপর নিচ মাথা নাগালে বুঝবো কিভাবে? মুখও কি বন্ধ হয়ে গেছে না কি? একটু আগেই তো দেখলাম মুখে খই ফুঁটলো। এখন কি হলো? খই গলায় আটকে গেছে?
বুকে হাত গুঁজে বা ভ্রুটা উঁচু করে বলে তুলতুল।
সায়ান ভরকে যায়।
“কথা বলতে পারি। বরতে চরতেও পারি। শুধু হাঁটতে পারি না।
সায়ান আমতা আমতা করে বলে।
” তো এভাবে খাম্বার মতো বসে আছেন কেনো? এখুনি তো গিলিয়ে দিয়ে গেলাম। শুতে পারেন নি? না কি আপনার মাকে দিয়ে বকা খাওয়ানোর ধান্দা?
দুই মিনিট সময় দিলাম এর মধ্যেই সুয়ে পড়বেন। নাহলে শরীরের যে টুকু অংশ ভালো আছে সেটুকুও গু*ড়ো গু*ড়ো করে দিবো।
চোখ পাকিয়ে বলে তুলতুল। সায়ান শুকনো ঢোক গিলে শুয়ে পড়ে। তুলতুল সায়ানের গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিয়ে পাশেই বই নিয়ে বসে পড়ে।
“তোর পবলেম টা এখনো বললি না কিন্তু।
তুলতুল বইয়ের থেকে চোখ তুলে সায়ানের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়।
” বলতেই হবে এমনটা না। তুমি না চাইলে বলতে হবে না। যেমনটা তোমার ইচ্ছে।
সায়ান একটু হাসার চেষ্টা করে বলে৷
চলবে
রেগুলার দেওয়ার কথা দিয়েও দিতে পারি নি৷ একটা পারসোনাল ঝামেলায় আঁটকে পড়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ ঝামেলা মিটে গেছে। ইনশাআল্লাহ কালকে বোনাস সহ পর্ব দিবো।