অলিখিত_অধ্যায় #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ৭০।

0
146

#অলিখিত_অধ্যায়
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৭০।

ফারজাদের ঘরে পা রাখল প্রিয়তা। ফারজাদ পাশেই তার। অনুচ্চ সুরে বলল,

‘আজ থেকে এই ঘরটা তোমারও।’

প্রিয়তা চোখ বুলাল চারদিকে। প্রথম আসেনি যদিও, তবে আজ অন্যরকম লাগছে। ভেতরে প্রবেশ করল প্রিয়তা। ফারজাদও এল। ফারজাদ বলল,

‘তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।’

প্রিয়তা মাথা হেলিয়ে ব্যাগটা খুলল। খুঁজে বের করল একটা সেলোয়ার কামিজ। তারপর ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে। ফারজাদ এই ফাঁকে বিছানা গুছিয়ে ডান দিকের জানলাটা খুলে দিল। বাইরে এখন পুরো-দস্তুর সকাল।

গোসল সেরে বেরিয়ে এল প্রিয়তা। তারপর ফারজাদ গেল। প্রিয়তা ব্যাগপত্র গুছিয়ে কল দিল মা’কে। কথা বলল সবার সাথে। মনটা এখন আগের থেকে হালকা। পরিচিত এই পরিবেশটা তার আগে থেকেই খুব আপন মনে হতো, আর এখন তো হাতে কলমে সেই পরিবেশের আপনজন হয়ে উঠেছে সে।

ফারজাদ বেরিয়ে এসে দেখে প্রিয়তা বারান্দায়। ফারজাদও দাঁড়ায় গিয়ে তার নিকটে। জিজ্ঞেস করে,

‘মন খারাপ?’

প্রিয়তা তাকাল। বলল,

‘না।’

‘তোমার চোখ অন্য কথা বলছে। পরিবারকে মিস করছো?’

প্রিয়তা মাথা ঝাঁকাল। ফারজাদ বলল,

‘চিন্তা করো না, কিছুদিনের মধ্যেই উনারা এখানে আসবেন।’

প্রিয়তা আবারও মাথা ঝাঁকাল। ফারজাদ এক কদম এগিয়ে হাত রাখল প্রিয়তার মাথার উপর। বলল,

‘এত মাথা নাড়ালে তো মাথা খুলে চলে আসবে।’

প্রিয়তা হাসল তার কথা শুনে। বলল,

‘না, আসবে না। আমার মাথা মজবুত অনেক।’

ফারজাদও হাসল। বলল,

‘তাই।’

‘জি।’

‘সবসময় এমন মজবুত থাক। এবার শুতে চলো।’

প্রিয়তা আবারও মাথা হেলাতেই হেসে ফেলল ফারজাদ। প্রিয়তাও হাসল সাথে। সে আর দাঁড়াল না। চুপচাপ শুয়ে পড়ল গিয়ে। ফারজাদ বারান্দার পর্দাটা টেনে দিয়ে শুতে এল। প্রিয়তা অন্যদিকে ঘুরে। ফারজাদ শুয়ে চেয়ে আছে তারদিকে। কিছুক্ষণ একই ভাবে চেয়ে থেকে আলগোছে প্রিয়তাকে নিজের কাছে টেনে নেয় সে। প্রিয়তা শ্বাস টানল জোরে। ফারজাদের বাহুডোরে আটকে শ্বাস ফেলতেও কষ্ট হচ্ছে তার। এদিকে ফারজাদ বেশ আয়েশ করে নিজের বউকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। প্রিয়তার ঘুম নেই একটুও। সে নড়ছে বারবার। ফারজাদের নিভু নিভু স্বর। জিজ্ঞেস করল,

‘নড়ছো কেন এত? আমি ঘুমাতে পারছি না তো।’

‘আমিও পারছি না। আমাকে ছেড়ে দিন তাহলেই হবে।’

‘উঁহু, এভাবেই ঘুমাও।’

‘আমার এভাবে ঘুমিয়ে অভ্যাস নেই, অস্বস্তি হচ্ছে।’

‘কয়দিন ঘুমালেই অভ্যাস হয়ে যাবে।’

তাও ফারজাদ ছাড়বে না। প্রিয়তা নড়ছে দেখে সে উল্টো তার হাতের বাঁধন আরো শক্ত করল। ছাড়া না পেয়ে পরাস্ত প্রিয়তা এভাবেই ঘুমাল পুরোটা সময়।

মৌমির ঘুম ভেঙেছে সবেই। উঠে হাতমুখ ধুয়ে বসেছে সে। এয়ারপোর্ট থেকে নেমেই সকালের নাস্তাটা করেছিল। এখন বাজে বিকেল চারটা। খিদায় এখন পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে তার। রুম থেকে বের হবার আগে একবার ফোনটা হাতে নিল। নোটিফিকেশনে দেখল চেনা নাম্বার থেকে মেসেজ। সে ওপেন করল সেটা। মেসেজে লেখা,

“আপনি তো ভারী নিষ্ঠুর মিমি চকলেট, যাওয়ার আগে একটু বিদায়টুকুও নিলেন না।”

অমনি হাসি ফুটল মৌমির ঠোঁটের কোণে। নাম্বার সেইভ না থাকলেও এই বার্তাদাতাকে সে চিনে। সে উত্তর দেয় সাথে সাথেই,

‘আমি নাহয় নিষ্ঠুর মানলাম; আপনি যদি এতই উদার মনা হোন, তবে আপনি কেন বিদায় জানালেন না আমায়। অবশ্য আমি চলে আসাতে আপনি বোধ হয় খুশি’ই হয়েছেন বেশি।’

মেসেজ দিয়ে ফোনটা রেখে রুম থেকে বেরিয়ে এল মৌমি। রান্নাঘরে গিয়ে দেখল মা আর প্রিয়তা সেখানেই। মৌমি হেসে বলল,

‘গুড মর্নিং, ভাবিজান।’

প্রিয়তা চাইল। হেসে জবাবে বলল,

‘গুড আফটারনুন।’

‘মহারানীর ঘুম ভেঙেছে তবে।’

মায়ের কথা শুনে এগিয়ে আসে মৌমি। পেটে হাত দিয়ে বলে,

‘ভীষণ খিদে পেয়েছে, আম্মি। খাবার দাও।’

‘তুমি গিয়ে বসো, মৌমি; আমি নিয়ে আসছি।’

‘তোমরা কি খেয়ে ফেলেছ?’

‘নয়তো কি আপনার জন্য বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করব?’

মায়ের কথায় মৌমি দুঃখী দুঃখী সুরে বলল,

‘তা একটু অপেক্ষা করলে কী হতো, আমাকে এখন একা খেতে হবে।’

‘ভালো হয়েছে।’

মৌমি প্রিয়তার হাত ধরে বলল,

‘খাবার নিয়ে চলো, তুমিও আমার সাথে একটু খাবে।’

প্রিয়তা মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,

‘আমার পেটে একটুও জায়গা নেই, মা আমাকে একগাদা খাবার খাইয়েছেন।’

‘তাও একটু খেও, একটু খেলে কিচ্ছু হয় না।’

প্রিয়তা হেসে বলল,

‘আচ্ছা, বেশ চলো।’

_______________

‘আব্বু, আর কতদিন? আর কতদিন আমি জেলে পড়ে থাকব? তোমার এত ক্ষমতা থেকে কী লাভ, যদি না নিজের ছেলের জামিনটুকু করাতে পারলে।’

আহাম্মেদ তাজওয়ারের রুক্ষ মুখ। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। বললেন,

‘তোমাকে ছাড়াতে পারি, এক শর্তে।’

ওয়াদি ভ্রু কুঁচকাল। বলল,

‘শর্ত? তুমি তোমার ছেলেকে জেল থেকে বের করবে তার জন্য আবার শর্ত?’

‘হ্যাঁ। কারণ, আমি ভবিষ্যতে আর কোনো ঝামেলা চাই না।’

ওয়াদি চোয়াল শক্ত করল। বাবার কথা পছন্দ মতো না হলেও সে বলল,

‘বেশ, কী শর্ত বলো।’

‘এখান থেকে বের হয়ে এমন কোনো চক্রের সাথে আর কখনো তুমি জড়াবে না।’

‘জড়াব না। কোনোকিছুই করব না, ভদ্র হয়ে যাব একেবারে। তবে ঐ ফারজাদের বুকে একটা গু লি অবশ্যই করব।’

ক্ষেপে গেলেন আহাম্মেদ তাজওয়ার। বললেন,

‘না একদমই না, এমন কিছুই তুমি করবে না।’

‘কেন, কেন করব না? ঐ লোকটা আমার কাজে বা হাত না ঢুকালে আজ আমি এই জায়গায় থাকতাম না, প্রিয়তাকে বেঁচে আমি এখন কোটি টাকার মালিক হতাম। তা না আজ ওর জন্য আমি জেলে পঁচে ম রছি, আর তুমি বলছো ওকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিব?’

আহাম্মেদ তাজওয়ার উত্তেজিত সুরে বললেন,

‘তুমি যদি এমন কিছু করো, তবে আমি কখনোই তোমাকে এখান থেকে বের করব না।’

রেগে গেল ওয়াদি। বলল,

‘তোমার ঐ ফারজাদের প্রতি এত দরদ কেন, আব্বু? ও মরলে তোমার কী?’

‘অনেক কিছু, অনেক কিছু আমার। তুমি ওর ব্যাপারে আর একটা কথাও বলবে না। যদি জামিন পেতে চাও, তবে আমার কথা মতেই চলতে হবে তোমাকে। আর নয়তো থাকো তুমি এখানেই, আমি তোমার জামিন করাব না।’

ওয়াদি অবাক হয়। বুঝতে পারে না তার বাবার ফারজাদের প্রতি এত কীসের দূর্বলতা। কেন ওকে খু ন করতে এত বাধা তাঁর। সে আপাতত শান্ত করল নিজেকে। এই জেল থেকে আগে বের হতে হবে, তারপর অন্যকিছু। তাই নরম গলায় বলল,

‘বেশ, তুমি যা বলবে তাই হবে। আমার জামিনের ব্যবস্থা করো দয়া করে।’

‘ঠিক আছে, দেখছি আমি।’

আহাম্মেদ তাজওয়ার চলে গেলেন। ওয়াদি নিজের জায়গায় ফিরে গিয়ে বসল। মাথায় অনেক চিন্তা চলছে তার। বর্তমানে বাবার ব্যবহারগুলো তার চিন্তাকে বাড়াচ্ছে। ফারজাদের প্রতি মানুষটার একটা আলাদাই টান দেখছে সে। এটা কি নিত্যান্ত’ই তার ভুল ধারণা? নাকি অন্যকিছু?

_________

বাইরে থেকে টুকটাক বাজার করে ফিরেছে ফারজাদ। হাতে ব্যাগগুলো নিয়ে বাসায় ঢুকতেই মৌমি প্রিয়তার পেটে গুঁতা দিয়ে বলল,

‘যাও, জামাইয়ের ব্যাগগুলো ধরো।’

প্রিয়তা বুঝল না প্রথমে। পরে মনে পড়ল, সে তো এখন ফারজাদের বউ, স্বামী ব্যাগ হাতে বাইরে থেকে আসলে বউদের সেগুলো এগিয়ে গিয়ে আনতে হয়, এটাই তো নিয়ম। সে কিঞ্চিৎ হেসে ফারজাদের কাছে গিয়ে দাঁড়াল ব্যাগগুলো নেওয়ার জন্য। ফারজাদ বলল,

‘তোমার নিতে হবে না, আমি রেখে আসছি।’

‘আমাকে একটা দিন।’

‘না না, পারবে না তুমি।’

বলে ফারজাদ’ই সবগুলো ব্যাগ নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকল। প্রিয়তা মৌমির দিকে চেয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘তোমার ভাই আমাকে কি মনে করেন, আমার গায়ে কোনো শক্তি নেই? আমি পারব না মানে কি? ঐ সবগুলো ব্যাগ আমি এক হাতেই তুলতে পারতাম।’

ফারজাদ রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলল,

‘ওহ, তাই! এত শক্তি তোমার?’

ফারজাদের কথা শুনে বোকা বোকা হাসল প্রিয়তা। বলল,

‘ন-না মানে, আমি তো মৌমিকে এমনই বলছিলাম। আমি শুধু দু’হাত কেন চার হাত মিলিয়েও ঐগুলো তুলতে পারতাম না।’

ফারজাদ আর জবাব না দিয়ে কেবল হাসল। তারপর নিজের ঘরের দিকে চলে গেল সে। মৌমি ঠোঁট চেপে হেসে বলল,

‘ভাইয়াকে ভয় পাও?’

‘মোটেও না, উনাকে ভয় পাওয়ার কী আছে?’

‘দাঁড়াও, ভাইয়াকে গিয়ে বলে আসি তবে।’

মৌমি উঠতে নিলেই প্রিয়তা তাকে টেনে বসিয়ে দেয়। বলে,

‘আরেহ, এগুলো আবার বলতে হয় না-কি? স্বামীদের তাদের বউয়েরা মনে মনে ভয় পায়, এগুলো প্রকাশ করতে হয় না, বুঝেছো?’

মৌমি হেসে বলল,

‘বুঝেছি।’

চলবে ….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here