#অলিখিত_অধ্যায়
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৭২।
সময় যাচ্ছে আপন গতিতে। পাকিস্তানে এসেছে দু সপ্তাহের অধিক হয়ে গিয়েছে। এর মাঝেই দুই পরিবারে পাকা হলো আরো একটি বিয়ের সিদ্ধান্ত। নীহাল আর মৌমির বিয়ে। পরশু’ই প্রিয়তার পরিবার আসছে। দিলরুবা বেগমের বাড়িতে এক বিয়ের আমেজ। মৌমি এইদিকে লজ্জায় কুন্ঠিত। গাল নাক লাল হয় একটু পরপর। তার সাথে ঐ ঝগড়ুটে ছেলে নীহালের মেসেজ তো আছেই। ছেলেটা এত লজ্জায় ফেলে তাকে। একটু আগে মেসেজে লিখেছে, সে মৌমিকে লাল টুকটুকে বউ বানিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসবে। লাল ছাড়া বিয়েতে অন্য কোনো রঙের শাড়ি এলাউ হবে না। নীহালের কড়া নিষেধ। মৌমি মেনে নিল। নীহালের সাথে আজকাল ঝগড়ার চেয়ে বেশি প্রেম প্রেম আলাপ হচ্ছে তার, আর প্রতিবারই সেসব ভেবে ব্রীড়ায় আরক্ত হচ্ছে সে।
____________
অফিস থেকে ফেরার পথে ফারজাদ ড্রাইভারকে বলে গাড়ি থামাল। রাস্তার ডানেই দেখল একটা বাচ্চা কিছু ফুল নিয়ে বসেছে। সে নেমে এল গাড়ি থেকে। বাচ্চাটার কাছ থেকে গিয়ে বেশ কিছু ফুল কিনল। টাকা দিয়ে ফিরে আসার জন্য ঘুরতেই দেখল তার থেকে কিছুটা সামনেই রওফিক সাহেব। ফোনে কথা বলছেন কারোর সাথে। উপেক্ষা করে চলে আসতে চেয়েও থামতে হলো তাকে। রওফিক সাহেব’ই ডাকলেন। ফারজাদ এগিয়ে গেল। ভদ্রতার খাতিরে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ভালো আছেন, স্যার?’
‘আমার মেয়েটা ভালো নেই। এখনো সুস্থ হয়নি, আমি ভালো থাকব কী করে?’
ফারজাদ মাথা নুয়ালো। দুঃখ প্রকাশ করে বলল,
‘আমি উনার সুস্থতা কামনা করছি।’
তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটল রওফিক সাহেবের মুখে। অকপটে বললেন,
‘তোমার জন্যই যার এই অবস্থা তুমি তার সুস্থতা কামনা করছো?’
ফারজাদ ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলল। বলল,
‘আপনার ভুল ধারনা এখনো ভাঙেনি, স্যার। সময় থাকতে মেয়েকে একটু শাসন করলে হয়তো আজ আর এই দিনটা দেখতে হতো না।’
রওফিক সাহেব ক্ষিপ্ত সুরে বললেন,
‘তুমি এত নিষ্ঠুর কেন, ফারজাদ? আমার মেয়েটাকে গ্রহণ করলে কী হতো?’
ফারজাদের এসব কথা পছন্দ হচ্ছে না মোটেও। তাও শান্ত সুরে সে বলল,
‘আমার জানা নেই কী হতো। আমি পুরোনো কথা আর শুনতে চাইছি না, স্যার। বাসায় যাওয়ার দাওয়াত রইল, আমার স্ত্রীকে গিয়ে দেখে আসবেন।’
রওফিক সাহেব অবাক হয়ে বললেন,
‘তুমি বিয়ে করেছো?’
‘জি স্যার।’
‘আমার মেয়েটাকে একটা সুযোগও দিলে না?’
‘আমি দুঃখিত স্যার, তবে আপনার কথাগুলো অপ্রাসঙ্গিক। আমি আসছি, আসসালামু আলাইকুম।’
ফারজাদ চলে এল সেখান থেকে। সুন্দর মনটা বিরক্ততিতে ভরে উঠল তার। জারাকে কোনো কারণ ছাড়াই তার বড্ড অপছন্দ ছিল। আর কালোজাদুর বিষয়টার পর তো সেটার মাত্রা আরো দ্বিগুণ হয়েছে।
বাড়ি ফিরেছে সে। দরজায় শব্দ হতেই প্রিয়তা এসে খুলে দেয়। ভেতরে প্রবেশ করে ফারজাদ। ঠোঁটে লেগে আছে চমৎকার সুন্দর হাসি। পেছনে দুই হাত। প্রিয়তা সেটা খেয়াল করে বলল,
‘পেছনে কী?’
‘কই, কিছু না তো।’
প্রিয়তা একটু উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা চালাল। বলল,
‘অবশ্যই কিছু একটা আছে। সারপ্রাইজ কিছু? মৌমির বিয়ের জন্য?’
ফারজাদ হেসে হাতটা এগিয়ে আনল। তার হাতে এত ফুল দেখে চমকাল প্রিয়তা। খুশিতে চোখ মুখ উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল। জিজ্ঞেস করল,
‘কার জন্য?’
‘ফর মাই ওয়ান এন্ড অনলি বিলাভড ওয়াইফ।’
প্রিয়তা খুশি হয়ে সবগুলো নিল। বলল,
‘থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ।’
‘ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম।’
____________
‘কাল কয়টায় আসছেন?’
‘কেন কেন? আর তর সইছে না বুঝি?’
মৌমি অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
‘মোটেও তা না, এমনই জানতে চাইছি।’
অপর পাশে হাসল নীহাল। বলল,
‘মিথ্যেটাও আপনি গুছিয়ে বলতে পারেন না ঠিক।’
‘কোনটা মিথ্যে?’
‘আমার জন্য অস্থির হচ্ছেন না?’
‘না।’
‘অবশ্যই হচ্ছেন। আপনার কম্পিত স্বর জানান দিচ্ছে যে সব।’
‘রাখছি তাহলে।’
‘কেন রাখবেন? কথা শেষ হয়নি আমার।’
মৌমি ছোট্ট ঢোক গিলল। বলল,
‘আর কী বলবেন?’
‘আমাকে ভয় পান?’
‘ন না তো।’
‘তবে কথা বলার সময় এত ভীত শোনায় কেন? আগে তো এমন মনে হতো না, ঝগড়া তো বেশ উঁচু সুরে করতেন। আজকাল এত লজ্জা বাড়ছে যে?’
মৌমি ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল,
‘তখন কি আর জানতাম আপনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হবে।’
নীহাল হাসল সেই কথা শুনে। বলল,
‘জানলে বুঝি আর ঝগড়া করতেন না?’
‘ঝগড়া আমি করি না, আপনি করেন। আপনার মতো ঝগড়ুটে ছেলে আমি দুটো দেখেনি।’
‘সেইম টু ইউ।’
মৌমি কপাল কুঁচকে বলল,
‘কীসের সেইম টু ইউ? ঝগড়ুটে আপনি, আমি না।’
‘আপাতত মেনে নিচ্ছি, পুরো ভবিষ্যত তো পড়েই আছে। তখন নাহয় দেখা যাবে কে ঝগড়ুটে আর কে শান্তশিষ্ঠ, ভদ্র, ভালো মানুষ।’
‘ঠিক আছে দেখা যাবে, রাখছি এখন। কাল সাবধানে আসবেন, আমি অপেক্ষায় থাকব।’
‘কেন? ঝগড়া করার জন্য?’
মৌমি রগড় সুরে বলল,
‘না, বিয়ে করার জন্য।’
বলেই ফোনটা কেটে দিল সে। লজ্জায় আর অস্বস্তিতে বালিশে মুখ গুঁজে কাটিয়ে দিল বাকি রাতটা।
___________
বাতাসে আজ আনন্দ ঘ্রাণ। খাবারের ঘ্রাণও বটে। রান্নাঘরে দিলরুবা বেগম নানান আয়োজনে ব্যস্ত। প্রিয়তাও সাহায্য করছে তাঁকে। রান্নার মাঝেই দিলরুবা বেগম বললেন,
‘আমি আজ কত খুশি তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না, প্রিয়তা। আমার বান্ধবী আমার বাড়িতে আসছে।’
প্রিয়তার চোখে মুখেও একই উচ্ছ্বাস। বলল,
‘মা, আমারও খুশি লাগছে।’
তিনি প্রিয়তার দিকে চেয়ে বললেন,
‘বিয়ের পর নিজের পরিবারকে কাছে পেলে খুব ভালো লাগে, তাই না?’
‘জি মা, এর থেকে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না।’
দিলরুবা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে চামচ দিয়ে তরকারি নাড়াতে নাড়াতে বললেন,
‘কোনোদিন এমন সৌভাগ্য হয়নি তো, তাই বুঝতেও পারিনি। এখানে আসার পর আমি সব হারিয়েছি।’
পরক্ষণেই আবার তিনি বললেন,
‘যাকগে, পুরোনো কথা তুলে আর সুন্দর দিনটাকে নষ্ট করি না। আর তুমি যাও তো, গিয়ে গোসল টোসল করে একটা সুন্দর শাড়ি পরো।’
‘আরেকটু থাকি এখানে, তারপর গোসলে যাব।’
‘উঁহু, আর থাকতে হবে না। অনেক কাজ হয়েছে, এবার গোসলে যাও। তাড়াতাড়ি।’
দিলরুবা বেগমের কড়া আদেশের বিপরীতে রান্নাঘরে সে আর দাঁড়াল না। একটা সুতি শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।
ফারজাদ মাত্রই এসেছে অফিস থেকে। প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র টেবিলে রেখে নিজের রুমে এল সে। দরজা পার হয়ে ভেতরে গিয়ে দাঁড়াল। ভ্রু যুগলের মাঝে পড়ল তিনখানা ভাঁজ। সামনেই দাঁড়ান কলাপাতা রঙের সুতি শাড়ি গায়ে রমণীতে চোখ আটকাল তার। হাতের ব্যাগটা আস্তে করে রাখল বিছানার উপর। তারপর এগিয়ে গেল।
প্রিয়তা আলমারি খুলে দাঁড়িয়ে কিছু একটা করছে। ফারজাদের উপস্থিতি সে এখনো টের পায়নি। আচমকা শাড়ির আঁচল ভেদ করে উদরে উষ্ণ স্পর্শে চমকাল সে। ভয়ে পিছিয়ে যেতে নিলে একটা শক্ত পেটানো শরীরে পিঠ ঠেকল তার। বুঝল, মানুষটা তার’ই। ফারজাদ ততক্ষণে দু হাতের বাঁধনে আটকে নিয়েছে তাকে। ঘাড়ের উপর থুতনি ঠেকিয়ে বলে,
‘এমন করলে আমি কাজ করব কী করে?’
‘কী করেছি?’
‘শাড়ি পরেছো। অন্যায় করেছো বড্ড। অন্য কাজে এবার মনোযোগ কীভাবে দিব বলো তো?’
ঘুরে দাঁড়াল প্রিয়তা। ফারজাদের হাত তার কোমর ছুঁলো। প্রিয়তা বলল,
‘মাঝে মধ্যে সব কাজ ফেলে একটু বউকে মনোযোগ দিলে কিছু হয়না।’
ফারজাদ হাসল। বলল,
‘মনোযোগ দিলে তো তোমারই বিপদ। তখন সারাদিনের জন্য যে আটকা পড়বে।’
প্রিয়তা লজ্জায় লাল হলো। মাথা নুইয়ে বলল,
‘আটকা পড়তে আমার আপত্তি নেই।’
ফারজাদ কাছে টেনে নিল তাকে। মিহি সুরে বলল,
‘সত্যি নেই তো?’
‘না।’
প্রিয়তা ক্ষীণ আওয়াজে বলল। ফারজাদ অনুমতি পেল বোধ হয়। নিজেকে আর সংযত রাখতে পারল না। প্রেয়সীর কম্পিত চঞ্চল ওষ্ঠে যেন এক ভয়ানক মত্ততা দেখছে সে। তাই সময় খুয়ালো না আর। প্রমাণ করতে ব্যতিব্যস্ত হলো যে, এই চঞ্চল ঠোঁট তার ভালোবাসাতেই আটকা পড়বে কেবল।
চলবে…..
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/