#আমার তুমি ২
#পর্বঃ৩৭
#তানিশা সুলতানা
সুখ দুঃখ হাসি কান্না মিলেই জীবন। জীবনের প্রতিটা মুহুর্ত শুধু সুখে কাটবে এটা ভাবা ভূল। সুখের পরে দুঃখ আসবেই।
ঠিক তেমনভাবেই তুলতুলের জীবনে দুঃখের সময় চলে এসেছে। খানিকক্ষণ পর পরই বুকটা কেঁপে কেঁপে ওঠে। আজকে একমাস হয়ে গেছে সায়ানের কোনো খোঁজ নেই। খোঁজটা শুধু তুলতুলই জানে না। তাছাড়া বাকি সবাই জানে। আর এটাও জানে বড়সর কোনো গন্ডগোল পেকে গেছে।
সুমুও এই বাড়িতে নেই আজ নিয়ে বিশ দিন হলো। একদিন রাত দশটায় হঠাৎই হাউমাউ করে কেঁদে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। সবাই এতো করে কারণ জিজ্ঞেস করলো কিন্তু সুমু জবাব দেয় না। তন্ময়ও সুমুর পেছন পেছন বেরিয়ে গেছিলো। আর ফিরেছে তিনদিন পরে।
তুলতুল কতো করে বাবা মা তনু তন্ময়ের কাছে জিজ্ঞেস করে গেছে কি হয়েছে? কেউ উওর দেয় না। কথা ঘুরিয়ে ফেলে। শেষে বিরক্ত হয়ে তুলতুল জিজ্ঞেস করাই ছেড়ে দিয়েছে।
এইচএসসি পরীক্ষা চলছে তুলতুলের। তিনটা পরিক্ষা সবে শেষ হয়েছে। গতকাল হিসাববিজ্ঞান পরিক্ষা। আর এখন রাত বাজে দশটা। তুলতুল পড়ার টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। পড়তে ভাল্লাগে না। মনের মধ্যে ঝড় বইছে।
“কি রে বোনু? পড়ছিস না কেনো? কালকে যে পরিক্ষা আছে।
তনু মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে। তুলতুল মাথা তুলে। এক পলক তাকায় তনুর দিকে।
” ভাল্লাগে না রে আপি। বুকটা কেঁপে ওঠে একটু পরপরই। তুই তো জানিস বল? আমার এমনটা হলেই তো কারো বিপদ হয়। কার বিপদ হলো বল? এক মাস হয়ে গেলো উনি আমার সাথে কথা বলে না। ওনাকে কল দিয়ে ফোন বন্ধ পাই।
নিশ্চয় সিম পাল্টে ফেলেছে। আমাকে আর ভাল্লাগছে না। কথা বলতে চায় না আমার সাথে। বিয়ে করে এখন আফসোস করছে।
বলতে বলতে কেঁদে ফেলে তুলতুল। তনু তুলতুলকে জড়িয়ে ধরে।
“এমনটা না বোনু। সবটা ঠিক হয়ে যাবে।
শান্তনা দিয়ে বলে তনু।
তুলতুল শব্দ করে কেঁদে ওঠে।
” এমনটাই হোক আপি। তবুও আমি একটু খবর পাই উনি ভালো আছে। সুস্থ আছে। একটু ওনার গলা টা শুনতে পাই। তাতেই হবে আমার।
কাঁদতে কাঁদতে বলে তুলতুল।
“ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি তোর উনি তোকে কল করবে।
ভরসা দেয় তনু।
🥀
আজকে বাইশ দিন পরে সায়ান চোখ মেলে তাকিয়েছে। হাত পা একটুখানি নারিয়েছে। নার্স তারাহুরো করে রিসেপশনে চলে যায়। সেখানে সুমু,সালমান, আনোয়ার, সুলাইমান, আব্দুল্লাহ হিমু আর হাসিব বসে আছে। এই বাইশ দিনে এই একজনও বাড়িতে যায় নি।
” পেশেন্ট রেসপন্স করছে।
হাঁপাতে হাঁপাতে বলে নার্স। খুশিতে চকচক করে ওঠে সাতটা চোখ। সুমু বাবার কোলে মাথা রেখে শুয়ে ছিলো। লাভ দিয়ে উঠে বসে।
“ভাইয়া রেসপন্স করেছে?
খুশিতে কান্না করে ফেলে সুমু। সবাই শুকরিয়া আদায় করে।
সুমু আর হাসিব দৌড়ে চলে যায় সায়ানের কেবিনে। পেছন পেছন সুলাইমানও যায়। বাকি সবাই ওখানেই থাকে।
সায়ান চোখ মেলে এদিক সেদিক তাকায়। মাথাটা ভারি ভারি লাগছে। হাত পায়ে বোধশক্তি নেই। মাথা নারাতে পারছে না। কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করে কিন্তু গলা দিয়ে কথা বের হয় না।
বিরক্ত হয় সায়ান। ভ্রু কুঁচকাতে গিয়েও পারে না। কারণ বা পাশের ভ্রু কেটে গেছে সেখানে সেলাই পড়েছে।
🥀🥀
মন মরা হয়ে রাস্তার এক পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে তুলতুল। এক্সাম শেষে বাসায় ফিরছে। ভালো লাগছে না বলে হেঁটেই যাচ্ছে।
সায়ানের ফেসবুক আইডি থেকে তুলতুলকে ব্লক করেছে। অথচ তিথি আছে। আজকে লুকিয়ে তিথির ফোনটা হাতিয়েছে। মেসেঞ্জারের সবার আগে সায়ানের আইডি টার দিকে নজর পড়েছে। মেবি সকালে মেসেজ দিয়েছে ” আপনার কি হয়েছে?”
তিথির জন্যই কি তুলতুলকে এতো ইগনোর?
কান্না পায় তুলতুলের। রাস্তার পাশে বড় বট গাছটার জড়ের ওপর বসে পড়ে।
এইদিকে মানুষ জন খুব কম আসে। দুই হাতে মুখ ঠেকে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে তুলতুল। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু মানুষ তো জিজ্ঞেস করবে কি হয়েছে? কি জবাব দেবে?
“তুলতুল তুমি এখানে?
কারো কন্ঠ শুনে কান্না থেমে যায় তুলতুলের। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে পেছনে ঘুরে। তিয়াসকে এখানে দেখে খানিকটা অবাক হয়।
” আপনি এখানে?
একটু হাসার চেষ্টা করে বলে তুলতুল। তিয়াস তুলতুলের পাশে বসে। তুলতুল একটু সরে বসে।
“এদিক দিয়েই যাওয়া আশা করি আমি। তুমি বোধহয় ভুলে গেছো।
তুলতুলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে তিয়াস।
” মনে ছিলো না।
“থাকার কথাও না। এখানে বসে কাঁদছো কেনো? এনি পবলেম?
তুলতুল দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
” এমনিতেই। বাড়িতে তো কান্না করার কায়দা নেই। সবাই জিজ্ঞেস করবে কি হয়েছে? আর আমি মিথ্যে বলতে পারি। তাই এখানে বসে কাঁদাই বেটার মনে করলাম।
তুলতুলের স্পষ্ট জবাব। হাসে তিয়াস।
“সায়ানের জন্য মন খারাপ?
তোমার হাসবেন্ড একটা মানুষই। আমার সাথে একটু বেশি মিশো বলে ডিরেক্ট বিয়ে করে নিলো। আবার ছেলে পেলে নিয়ে এসে আমাকে থ্রেট দিয়ে গেলো।
তুলতুল শুনে কিন্তু কিছু বলে না।
” এখন কেমন আছে সায়ান? আমরা তো প্রথম দিন মৃ*ত্যুর খবর শুনেছিলাম। পরে শুনলাম জী*বিত আছে।
বুক কেঁপে ওঠে তুলতুলের।বড়বড় চোখ করে তাকায় তিয়াসের দিকে। চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে।
“আরে রিলাক্স। আমি বলি নি। এমনটাই খবর রটে গেছিলো।
তুলতুল মাথা নিচু করে ফেলে। চোখ মুখ শক্ত করে উঠে দাঁড়ায়।
” আরে চলে যাচ্ছো না কী? কিছু কথা ছিলো।
তুলতুল শোনো না। বড়বড় পা ফেলে এগোতে থাকে।
🥀
“তুলতুল জানে?
সায়ানের পাশে বসে আছে সুমু হাসিব আর হিমু। সুমু সায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সায়ান থেমে থেমে বলে।
” ওকে কিছু জানাই নি। মেয়েটা ভীষণ নরম মনের। এমনটা শুনলে ওর কি হতো আল্লাহই জানে?
সুমু বলে।
“ওর সাথে একটু কথা বলিয়ে দে।
সুমু কিছু বলবে তার আগেই হুরমুর করে ঢুকে পড়ে সালমা মনি আর হামিদা। সালমা কান্না করতে করতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে সায়ানের ওপর।
সুমু উঠে মাকে বসার জায়গা করে দেয়।
” আমি ঠিক আছি মা।
সালমার হাতের ওপর নিজের হাতটা রেখে বলে সায়ান।
“হ্যাঁ সে তো দেখতেই পাচ্ছি কতো ভালো আছিস। ওই মেয়েটার জন্য হয়েছে। তুই সেদিন ওই মেয়েটার সাথে দেখা করতে না গেলে এমনটা হতোই না।
হামিদা বলে। বিরক্ত হয় সায়ান সুমু হাসিব আর হিমু। সায়ান চোখ বন্ধ করে ফেলে।
” মা প্লিজ। চুপচাপ থাকো। দেখছো ভাইয়ার শরীর ঠিক নেই।
হাসিব বলে।
চলবে