#আমার তুমি ২
#পর্বঃ৪৯
#তানিশা সুলতানা
সায়ান এতো ভালো রান্না করবে এটা তুলতুলের ভাবনাও বাইরে। ছেলে মানুষ এতো ভালো রান্না করতে পারে? বিরিয়ানি খাচ্ছে আর ভাবছে তুলতুল। সায়ান এক মনে খেয়ে যাচ্ছে আর মোবাইল দেখছে। রীতিমতো মোবাইলের দিকে তাকিয়েই খাচ্ছে। এটা তুলতুলের সয্য হয় না। মোবাইলটাকে সতিন মনে হচ্ছে। এভাবে তো চলতে পারে না। তুলতুল সামনে বসে খাচ্ছে সায়ানের দৃষ্টি থাকবে তুলতুলের দিকে। রোমান্টিক বরদের মতো খাইয়ে দেবে। পায়ের ওপর পা দেবে৷ হাত ধরবে। রীতিমতো জ্বালিয়ে মা*রবে তুলতুলকে। কিন্তু নাহহ। সে ফোন দেখছে। অনরোমান্টিকের বস্তা একটা।
তুলতুল নিজের প্লেটের একটা এলাচ নিয়ে সায়ানের পাতে রাখে। আর সায়ান সেখান থেকেই খায়। যার ফলে এলচিটা সায়ানের মুখে চলে যায়। তুলতুল বিশ্বজয়ের হাসি দেয়।
কিন্তু হায়য় সায়ান মোবাইল দেখতে দেখতে এলাচি সহ খেয়ে নেয় কোনোরকমে নাক মুখ না কুঁচকে। তুলতুল বিরবির করে সায়ানকে কয়েকটা গালি দেয়। কিন্তু নাহহ থেমে যাওয়া যাবে না। লোকটাকে জ্বালাতেই হবে।
এবার খানিকটা লবন নিয়ে বিরিয়ানির ওপর ছিটিয়ে দিয়ে দেয়। এবারও সায়ান ওখান থেকেই মুখে দেয়।
এবারে তুলতুল জ্বালাতে পারে। সায়ান নাক মুখ কুঁচকে তাকায় তুলতুলের দিকে।
“পবলেম কি তোর? এটা সেটা মেশাচ্ছিস কেনো?
তুলতুল গা ছাড়া ভাব নেয়। আয়েশ করে বসে খাবার মুখে তুলে।
” পবলেম নেই। একটু খোঁচালাম আর কি।
সায়ান ছোট ছোট চোখ করে তুলতুলের দিকে তাকায়। তুলতুল ভেংচি কাটে।
“এই মুহুর্তে প্রমাণ পেয়ে গেলাম আপনি সত্যিই আনরোমান্টিক। নাহলে কি আর এইভাবে তাকাতেন? একটুখানি দুষ্টু দুষ্টু হাসতেন। ওই যে সিরিয়ালে দেখেন না?
এ বাবা আমিও কি পাগল। আপনি দেখবেন সিরিয়াল?তুলতুল তোর মাথা শেষ।
তুলতুল নিজের মাথায় চর মেরে বলে।
” আচ্ছা আমি অনরোমান্টিক?
“১০০%। নিরামিষ ও সাথে।
সায়ান তুলতুল বা হাতটা টেনে তুলতুলে আচমকাই নিজের কোলে এনে বসে। তুলতুল হতদম্ভ হয়ে যায়। কি হচ্ছে বুঝতে কয়েক মিনিট সেকেন্ড সময় লেগে যায়। সায়ান তুলতুলের কামিজের ফাঁকে হাত ঢুকিয়ে দেয়। তুলতুল চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে এঁটো হাত দিয়েই সায়ানের হাত ধরে শক্ত করে।
“আমার রোমান্টিকতা সয্য করার ক্ষমতা আছে তো তুলারানীর?
তুলতুলের কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলে সায়ান। তুলতুল কেঁপে ওঠে। শ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে বেচারার। সায়ানের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
” ছাছাড়ুন
খেতে দেন আমায়।
তুলতুল জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে থেমে থেমে বলে।
“খেতেই তো দিচ্ছিলাম। কিন্তু তুই তো আমাকে খেতে দিলি না।
সায়ান তুলতুলের মাথায় ঠোঁট ছুঁয়িয়ে বলে।
“আমার ভূল হয়ে গেছে। এবার ছাড়ুন।
তুলতুল যত মোচরামুচরি করছে সায়ান তত শক্ত করে খাঁমচে ধরছে। এবার তুলতুল ব্যাথা পায়। আহহ শব্দ করে পিটপিট করে তাকায় সায়ানের দিকে। সায়ান তাকিয়েই ছিলো। তাই চোখাচোখি হয়ে যায়। তুলতুল চোখ নামিয়ে নেয়। সায়ানও একটু হালকা করে ধরে
” তুলার বস্তা একটু ধরলেই তো কান্নাকাটি শুরু করে দিস। আবার অভিযোগ। থা*প্প*ড় কান লাল করে দেওয়া উচিত তোর।
আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিয়ে বলে সায়ান।
“আমি একদম কাঁদি নি।
প্রতিবাদ করে বলে তুলতুল।
” তার মানে তোর ভাল্লাগছে?
সায়ান ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে। তুলতুল আমতাআমতা করে। ভূল করে ফেললো আবার। কান গুলো গরম হয়ে যায় তুলতুলের। গাল লাল হয়ে যায়। তাকাতেও পারছে না বেচারা।
“এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে আমরা আমরাই তো।
সায়ান হেসে তুলতুলের গালে গাল ছুঁয়িয়ে বলে। তুলতুল তবুও স্বাভাবিক হতে পারে না।
” আআমি লজ্জা পাচ্ছি না। আর ভালো লাগছে এটা কখন বললাম?
তুলতুল শুকনো ঢোক গিলে বলে। সায়ান তুলতুলকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু তুলতুল উঠে না। কোলেই বসে থাকে।
“ভাল্লাগছে না তাহলে উঠ।
সায়ান বলে। তুলতুল গাল ফুলিয়ে তাকায় সায়ানের দিকে।
“হনুমানটা কিচ্ছু বুঝে না।
বিরবির করে বলে তুলতুল। কিন্তু সায়ান শুনে ফেলে। আবার আগের মতো করে ধরে।
” হ্যাঁ বুঝি না। একটু বুঝিয়ে শুনিয়ে নিস।
সায়ান তুলতুলের মুখের কাছে খাবার ধরে। তুলতুল খায় না।
” এখানেই বাসর সারতে ইচ্ছে হচ্ছে?
“ফুল অর্ডার করছিলাম বেঁছে বেঁছে। আজকে আমরা কাছাকাছি আসতে চাইছি। তোর ভাষায় আমিষ হতে চাইছি আর কি। সাদামাটা ভাবে তো হয় না। তাই ফুলের ব্যবস্থা। তাই ফোন ঘাটছিলাম।
তুলতুল আবারও লজ্জা পায়। মাথা নিচু করে ফেলে।
তারাহুরো করে খেয়ে নেয় তুলতুল। সায়ান হাসে।
” পিপরেশন নিতে থাক। সামলাতে পারবি না?
বাঁকা হেসে বলে সায়ান। তুলতুল সায়ানের হাতে চিমটি কাটে। সায়ান ব্যাথা পেয়ে ছেড়ে দেয় তুলতুল এই সুযোগেই দৌড় দেয়।
“আপনি একটা চরম লেভেলের অসব্ভ।
দরজার কাছে গিয়ে থেমে বলে তুলতুল। সায়ান হেসে ফেলে।
” আই নো জাননন
সায়ান বেরিয়ে গেছে কেনাকাটা করতে। তুলতুলের পরার মতো একটা জামাও নেই। মেয়েটা তো কিচ্ছু আনে নি। তুলতুল সায়ানের ফোন রেখে দিয়েছে। সুমুকে সরি বলতে হবে তো।
সায়ান চলে যাওয়ার পরে দরজা খুলে তুলতুল। লোকটা যতখন বাড়িতে ছিলো দরজা বন্ধ করে ছিলো। ভীষণ লজ্জা করছিলো লোকটার সামনে যেতে। সায়ান অবশ্য ডেকেছে অনেকবার।
“আপনার ফোনটা রেখে যান।
শুধি এই টুকুই বলেছে তুলতুল। সায়ান বুঝে যায় মেয়েটা লজ্জা পেয়েছে। তাই আর না ঘাটিয়ে চলে যায়।
যাওয়ার আগে বলে যায়
” ড্রয়িং রুমের সোফায় রেখে গেলাম ফোন।
তুলতুল এবার সোফায় বসে ফোন করে সুমুকে। সুমু শুয়ে ছিলো। ভাল্লাগছে না তার। মাথা ব্যাথা করছে।
স্কিনে সায়ান নামটা দেখে ক্লান্তি চলে যায় সুমুর। লাভ দিয়ে উঠে বসে। কল রিসিভ করে।
“হেলো ভাইয়া। ঠিক আছো তুমি?
” সুমু আমি তুলতুল।
“ওহহ ভাইয়া কই?
” উনি একটু বাইরে গেছে। সরি বোনু। ভেরি সরি। আমার ওভাবে চলে যাওয়া উচিৎ ছিলো না। আমার জন্য তোমাকে বকা খেতে হলো। ক্ষমা করে দিও আমায়।
“ইটস ওকে। আর কখনো এমন করবে না। সংসারে থাকতে গেলে খুটিনাটি একটু পবলেম হবেই। ইটস নরমাল। আমিও তো কতো পবলেম ফ্রইস করি।
” আর এমন হবে না। পাক্কা প্রমিজ।
তুলতুল হেসে বলে। সুমুও হেসে ফেলে। কিছুখন কথা বলে কল কেটে দেয় তুলতুল।
বিকেলে একটা ছেলে এসে কিছু শপিং ব্যাগ তুলতুলের হাতে দিয়ে যায়। এখন তুলতুল সেই সব প্যাকেট নিয়ে বসে আছে। সেই প্যাকেটে একটা শাড়ি আর অনেক কসমেটিক। পারফেক্টলি সাজতে যা যা দরকার সবই আছে সেখানে।
এবার পবলেম হলো তুলতুল শাড়ি পড়বে কিভাবে একা একা? একদম যে পারে না এমনটা না। কিন্তু একা একা পারে না।
এরই মধ্যে ফোন বেজে ওঠে।
চলবে